Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 22

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

শ্রীমান্ শ্রীশচন্দ্রের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। শিক্ষকের নিকটে মেধাবী ছাত্র যেমন মুখস্থ পাঠ আবৃত্তি করিতে থাকে, ঠিক তেমনই ভাবে শ্রীশচন্দ্র, মজিদ ও জোহেরার কথোপকথনের যাহা কিছু শুনিয়াছিল, দেবেন্দ্রবিজয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া সমুদয় ‘জলবত্তরলং’ বলিয়া গেল। অধিকন্তু তাঁহারা যেরূপভাবে হাত-মুখ নাড়িয়া কথা কহিয়াছিলেন, সুদক্ষ অভিনেতার ন্যায় শ্রীশ তাহাও দেবেন্দ্রবিজয়কে ঠিক প্রদর্শন করিতে ত্রুটি করিল না। ইহাতে অনেক স্থলে শ্রোতা দেবেন্দ্রবিজয়কে অতিকষ্টে হাস্যসংবরণ করিতে হইয়াছিল।
শ্রীশের মুখে দেবেন্দ্রবিজয় যাহা শুনিলেন, তাহাতে এ পর্য্যন্ত তিনি এই হত্যাকাণ্ডের যে সকল সূত্র বাহির করিয়াছিলেন, সেই সূত্রাবলীতে আর একটি নূতন গ্রন্থির সংযোগ হইল। অনন্তবিধ চিন্তায় তাঁহার মস্তিক পূর্ণ হইয়া গেল। কিছুতেই তিনি ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিলেন না, মজিদ কেন এরূপ ব্যবহার করিতেছেন। খুনের রাত্রিতে দিলজানের সহিত যে তাঁহার দেখা হইয়াছিল; কেন তিনি ইহা কিছুতেই এখন স্বীকার করিতে চাহেন না? কারণ কি? তিনি এখন বলিতেছেন, যে স্ত্রীলোকের সহিত তাঁহার দেখা হইয়াছিল, সে দিলজান নহে; ইহাতে তাঁহার কি ফলোদয় হইতেছে? কে তাঁহার কথা বিশ্বাস করিবে? যাহাতে তাঁহার প্রতি কাহারও সন্দেহ না হয়, সেইজন্য তিনি এই মিথ্যাকথা বলিয়া অনর্থক নির্দ্দোষ সপ্রমাণ করিবার চেষ্টা করিতেছেন। রাত্রি এগারটার পর গনির মা দিলজানকে পুনরায় আসিতে দেখিয়াছে। আর গনির মা’র যদি ভুলই হয়-সে দিলজান না হইয়া যদি আর কেহই হয়-তাহা হইলে কে সে স্ত্রীলোক? মজিদের কথার ভাবে বুঝিতে পারা যাইতেছে, রাত্রিতে সেখানে এমন কোন স্ত্রীলোক আসিয়াছিল, যাহার নাম প্রকাশ করিলে সম্ভ্রমের হানি হইতে পারে। ভাবে বোধ হয়, মজিদ যেন কোন ভদ্রমহিলার সম্ভ্রম রক্ষার জন্যই এইরূপ ব্যগ্রতা প্রকাশ করিতেছেন। যদি তাহা সত্য হয়, সেই স্ত্রীলোক দিলজান না হইতে পারে। দিলজান ভদ্রমহিলা ছিল না, এবং হানি হইতে পারে-এমন সম্ভ্রমও তাহার কিছুই ছিল না। কে তবে সেই স্ত্রীলোক? কাহার জন্য মজিদ এমন বিব্রত হইয়া উঠিয়াছেন? মজিদ অতি অদ্ভুত প্রকৃতির লোক-এ জগতে তাঁহার দ্বিতীয় নাই দেখিতেছি। আমাকে তাঁহার অন্তরের ভিতরে ভাল করিয়া প্রবেশ করিতে হইবে; নতুবা সহজে তাঁহাকে ঠিক বুঝিতে পারিব না।
এইরূপ ভাবিতে ভাবিতে ঝাঁ করিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের আর একটা কথা মনে পড়িয়া গেল। তবে কি সেদিন রাত্রে মনিরুদ্দীনের বাটীতে যে স্ত্রীলোকের সহিত মজিদের সাক্ষাৎ হইয়াছিল, সে সৃজান বিবি? হয়তো সৃজান মনিরুদ্দীনের সহিত দেখা করিতে আসিয়াছিল, ঘটনাক্রমে মজিদের সহিত তাহার দেখা হইয়া গিয়াছিল। মজিদ হয়তো ভিতরের কথা সকলই জানিতেন। যাহাতে সৃজান বিবি এই গর্হিত সঙ্কল্প পরিত্যাগ করে, সেজন্য হয় ত তাহাকে অনেক বুঝাইয়া থাকিবেন; এবং সেই কথা লইয়াই হয়তো দুজনের বচসা হইয়া থাকিবে। অসম্ভব নয়, তাহাই ঠিক-তেমন গভীর রাত্রে ভিন্ন স্থানে গিয়া নির্জ্জনে একজন পর-পুরুষের সহিত সাক্ষাৎ করা কোন ভদ্রমহিলার পক্ষে একান্ত অবৈধ ও নিন্দনীয় সে কথা সাধারণে প্রকাশ করাও ঠিক নহে। এই সকল কারণ বশতঃ অবশ্যই মজিদ এখন কথা একেবারে চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছেন। এখন তাহা প্রকাশ করিলে সৃজান বিবির সম্ভ্রম হানি না হইতে পারে; কেন না, সে নিজের মান-সম্ভ্রম একেবারে জলাঞ্জলি দিয়া মনিরুদ্দীনের সহিত উধাও হইয়া গিয়াছে; কিন্তু মজিদের চরিত্রে সকলেই দোষারোপ করিবে।
এই অনুমান সত্য হইলেও ইহার সহিত দিলজানের খুনের কি সংশ্রব আছে? কিছুই না। দিলজানকে কে খুন করিল? সৃজান বিবি কি তবে দিলজানকে খুন করিয়াছে? না, তাহা কখনই সম্ভবপর নহে।
শ্রীশের মুখে দেবেন্দ্রবিজয় যে সকল কথা শুনিয়াছিলেন, তাহাই মনে মনে আলোচনা করিতে লাগিলেন। সহসা তাঁহার চিন্তাস্রোত ভিন্ন পথে প্রবেশ করিল। তিনি ভাবিতে লাগিলেন, সৃজান বিবি যে শেষ রাত্রিতে গৃহত্যাগ করিয়াছিল, মজিদ ও জোহেরার কথোপকথনে তাহার প্রমাণও পাওয়া যাইতেছে। তাহা হইলে সেদিন রাত্রে এগারটার পর যে রমণীর সহিত মজিদের দেখা হইয়াছিল,-সে কখনই সৃজান হইতে পারে না। এখন আমাকে সন্ধান করিয়া বাহির করিতে হইবে, মনিরুদ্দীনের বাটীতে রাত্রিতে মজিদের সহিত যাহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল সেই রমণীই বা কে; এবং এদিকে ঠিক সেই রাত্রে যে রমণী সৃজানের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিল, সেই রমণীই বা কে। আরও সন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে, ঠিক কোন্ সময়ে সৃজান গৃহত্যাগ করিয়াছিল। এই সকলের প্রকৃত সন্ধান যতক্ষণ না পাইতেছি, ততক্ষণ আমাকে অন্ধকারের মধ্যেই থাকিতে হইবে। আর যদি কাল গোলাদিঘীতে গিয়া কার্য্যোদ্ধার করিতে পারি, তাহা হইলে সকল রহস্যই প্রকাশ পাইবে-আর কোন সন্ধানের আবশ্যকতা থাকিবে না। হত্যাকারী বড় সহজ নহে; তাহাকে যে সহজে ধরিতে পারিব, এমন বোধ হয় না। উপন্যাসের সর্ব্বশক্তিমান্, সর্বজ্ঞ নিরাকার গোয়েন্দাদিগের মত ক্ষমতা এবং প্রভাব মাংসাস্থিবিশিষ্ট কাহারও থাকে না-আমারও নাই। গ্রন্থকারের কল্পনায় তাহারা সকল বিষয়েই অবলীলাক্রমে কৃতকার্য্যে হইতে পারে; সকল বিষয়েই অমানুষিক প্রভাব বিস্তার করিতে পারে।
তাহাদিগের মত অনন্যসুলভ ক্ষমতা, সর্ব্বজ্ঞতা আমার মত এ শরীরী গোয়েন্দা কোথায় পাইবে? অনেকস্থলে আমার ভ্রম হইতে পারে, ভ্রমক্রমে আমি ভিন্ন পথেও চালিত হইতে পারি; এবং সকল বিষয়ে কৃতকার্য্যে না হইতেও পারি। তবে চেষ্টা করিলে এক-সময়ে-না-এক-সময়ে যে, যথাস্থানে আমি উপনীত হইতে পারিব, এ বিশ্বাস আমার নিজের মনে খুব আছে। হয় ত ইহাতে দিলজানের হত্যাকারীর কোন একটা উদ্দেশ্য আছে। যে উদ্দেশ্যই থাক্ না কেন, আমি কাল রাত্রি নয়টার পর গোলদিঘীতে গিয়া তাহার সঙ্গে দেখা করিব-ধরিবার চেষ্টা করিব। দেখা যাক্, কাজে কতদূর কি করিতে পারি।
দেবেন্দ্রবিজয় পকেট হইতে নোটবুকখানি টানিয়া বাহির করিয়া এইরূপ মন্তব্যগুলি লিখিতে লাগিলেন;-
১। হত্যাকারী কোন্ উদ্দেশ্যে এরূপ পত্র লিখিতেছে? আমাকে যদি সে ভয়ই না করে, তবে হাজার টাকার উৎকোচ দিতে চাহে কেন?
কাল রাত নয়টার পর গোলদিঘীতে গেলে, তাহা অনেকটা বুঝিতে পারিব। যদি তাহার উদ্দেশ্যটা মন্দ হয়-বলিতে পারি না-তাহাকে ধৃত করিবার জন্য লোক মোতায়েন রাখিতে হইবে।
মন্তব্য-কাল রাত নয়টার পর গোলদিঘীতে যাইতে হইবে।
২। গত বুধবার (যে রাত্রে দিলজানের লাস মেহেদী-বাগানে পাওয়া গিয়াছিল) রাত্রি এগারটার হইতে বারটার মধ্যে কোন্ স্ত্রীলোক মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে গিয়াছিল, তাহার সন্ধান গ্রহণ।
একমাত্র মজিদের নিকটে সে সন্ধান পাওয়া যাইতে পারে। গনির মা বলিতেছে, দিলজান; কিন্তু মজিদ তাহা একেবারে উড়াইয়া দিতেছেন। এখন দেখিতে হইবে, তদুভয়ের মধ্যে কে প্রকৃত মিথ্যাবাদী।
মন্তব্য-মজিদের সহিত দেখা করিয়া যে কোন কৌশলে হউক, সেই স্ত্রীলোকের নামটি বাহির করিয়া লইতে হইবে।
৩। সেই খুনের রাত্রিতে যে স্ত্রীলোক সৃজান বিবির সহিত দেখা করিতে গিয়াছিল, তাহার আকৃতি কিরূপ, বয়স কত, যদি সম্ভবপর হয়, নামটা জানিবার জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। এই খুনের মাম্লায় কোন-না-কোন বিষয়ে সেই স্ত্রীলোক জড়িত থাকিতে পারে। মুন্সী জোহিরুদ্দীনের বাটীর কোন-না-কোন ভৃত্যের নিকটে ইহার সন্ধান হইতে পারে।
মন্তব্য-ভৃত্যদিগের মধ্যে যে এ বিষয়ের কিছু জানে, এমন একজনকে হস্তগত করিতে হইবে।
৪। সেই খুনের রাত্রে ঠিক কোন্ সময়ে দিলজান গৃহত্যাগ করিয়াছিল; গৃহত্যাগ করিবার পূর্ব্বে ও পরে কখন কোথায় গিয়াছিল-কোথায় কি করিয়াছিল, তাহার গতিবিধির অনুসন্ধান করিয়া দেখা খুব প্রয়োজন।
চেষ্টা করিলে তাহাদের কোন ভৃত্যের নিকটে ইহারও কিছু-না-কিছু জানিতে পারিব।
মন্তব্য-রহস্যটা একটু পরিষ্কার হইয়া আসিলে-ঘটনা-সূত্রে ইহা আপনা হইতেই সব প্রকাশ হইয়া পড়িবে।
৫। যে বিষাক্ত ছুরিকায় দিলজান খুন হইয়াছে, সেই ছুরিখানা কোথায় গেল, তাহা খুঁজিয়া বাহির করা চাই।
সম্ভব ইহা মজিদের নিকটে পওয়া যাইবে।
মন্তব্য-গোপনে তাহার শয়ন-গৃহ অনুসন্ধান করিতে হইবে। নিজের দ্বারা বিশেষ সুবিধা হইবে না; অপর কাহারও দ্বারা-শ্রীশ আছে।
৬। দিলজানের পূর্ব্বজীবনী সংগ্রহ করিতে হইবে।
লতিমন বাইজীর নিকটে কিছু কিছু সংগ্রহ হইতে পারে। দিলজান অনেক দিন তাহার নিকটে ছিল; অবশ্যই দিলজানের কিছু কিছু খবর লতিমন জানে।
মন্তব্য-লতিমন বাইজীর সঙ্গে আর একবার দেখা করিতে হইবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *