Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 13

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

এখন মজিদ খাঁর একটু পরিচয় আবশ্যক।
মজিদ খাঁর মাতাপিতা জীবিত নাই। অতি শৈশব হইতে তিনি মাতৃপিতৃহীন। মজিদের পিতার সহিত মনিরুদ্দীনের পিতার খুব হৃদ্যতা ছিল। মজিদের পিতা তেমন সঙ্গতিসম্পন্ন ছিলেন না, মৃত্যুকালে তিনি মনিরুদ্দীনের পিতার হস্তে প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ভারসহ মজিদকে সমর্পণ করিয়া যানা্‌। মনিরুদ্দীনের পিতা একজন বড় জমিদার–পূর্ব্ববঙ্গে তাঁহার বিস্তৃত জমিদারী। বিশেষতঃ তিনি নিজে দয়ালু ও পরোপকারী ছিলেন। তিনি মজিদ খাঁর জন্য যথেষ্ট য্ত্ন লইয়াছিলেন, তাহা তাঁহার মৃত বন্ধুর পক্ষে আশাতীত। তাঁহার যত্নে এবং তত্ত্বাবধানে মজিদ খাঁ সুশিক্ষিত হইয়া উঠিলেন। বিশেষতঃ জমিদারী কাজ-কর্ম্মে মজিদ খাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য প্রকাশ পাইতে লাগিল। মজিদ খাঁ শ্রমশীল, বুদ্ধিমানা্‌ এবং সচ্চরিত্র। মনিরুদ্দীনের পিতা তাঁহাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করিতেন। জমিদারী সংক্রান্ত প্রায় সকল কাজই মজিদ খাঁ দেখিতেন। এমন কি মনিরুদ্দীনের পিতা তাঁহার সহিত পরামর্শ না করিয়া কোন কাজ করিতেন না; কিন্তু নিজের একমাত্র পুত্র মনিরুদ্দীন ঠিক ভিন্ন পথে চালিত হইলেন-একেবারে বিলাসীর অগ্রগণ্য হইয়া উঠিলেন; বিষয়-সম্পত্তি রক্ষার দিকে তাঁহার আদৌ দৃষ্টিপাত ছিল না। তাহার পর পিতার মৃত্যুতে যখন একেবারে অগাধ সম্পত্তি তাঁহার হাতে আসিয়া পড়িল, উদ্দাম যৌবনের আবেগে তিনি তখন ধূলিমুষ্টির ন্যায় স্বর্ণমুষ্টি উড়াইতে লগিলেন। মধুপূর্ণ মধুচক্র দেখিয়া অনেক মোসাহেবও আসিয়া জুটিল। মজিদের তাহা অসহ্য হইত; তিনি বন্ধুভাবে মনিরুদ্দীনকে অনেক বুঝাইতেন, কাজে কিছুই হইত না; কিন্তু ইহা লইয়াই ইদানীং মনিরুদ্দীনের সহিত মজিদের বনিবনাও হইল না। মজিদ স্বতন্ত্র বাটীতে উঠিয়া গেলেন। মনিরুদ্দীনেরও নিজের গন্তব্য পথের একটা অন্তরায় সরিয়া গেল মনে করিয়া, মনে মনে সন্তুষ্ট হইলেন। মজিদের সমক্ষে তাঁহার অনেক বিষয় কুণ্ঠা উপস্থিত হইতে-নির্ব্বিঘ্নভাবে যাহা-ইচ্ছা-তাহা করিতে পারিতেন না; কিন্তু এক বিষয়ে তাঁহার বড় অসুবিধা হইল। বৈষয়িক কাজ-কর্ম্মে তাঁহার কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল না। মজিদের উপরেই তিনি নির্ভর করিতেন। যৌবনাবেগে মনিরুদ্দীনের চিত্ত একান্ত উদ্দাম ও উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠিলেও তাঁহার প্রতি মজিদের যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল। মনিরুদ্দীনের পিতার স্নেহানুগ্রহে তিনি মনুষ হইয়াছেন, তাহা মজিদ সর্ব্বদা সর্ব্বান্তঃকরণে অনুভব করিতেন। ভিন্নস্থানে বাসা লইয়াও তিনি মধ্যে মধ্যে আসিয়া বৈষয়িক কাজ-কর্ম্ম দেখিয়া যাইতেন; সত্‍‌পথে টানিয়া আনিবার জন্য মনিরুদ্দীনকে উপদেশও দিতেন; কিন্তু মনিরুদ্দীন যতদূর নীচে নামিয়া পড়িয়াছেন, সেখান হইতে তাঁহাকে টানিয়া তুলিয়া আনা বড় শক্ত। একযাত্রায় পৃথকা্‌ ফল-উভয়ে সমবয়ষ্ক, বাল্যকালে এক বিদ্যালয়ে পাঠ করিয়াছেন, একসঙ্গে খেলা করিয়াছেন, একই ব্যক্তির স্নেহেলালিত-পালিত হইয়াছেন; এখন উভয়ের মতি উভয়বিধ পথে চালিত হওয়ায় উভয়ের মধ্যে পূর্ব্ব সদ্ভাব কিছু হ্রাস পাইয়া আসিল। পরে যাহা ঘটিবে, মনিরুদ্দীনের পিতা তাহা বুঝিতে পারিয়াই তিনি নিজের উইলে মজিদ খাঁ যাহাতে বার্ষিক ছয় শত টাকা প্রাপ্ত হন, তাহার সুবন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন। অদ্যাপি মনিরুদ্দীন বিবাহ করেন নাই। তাঁহার পিতা কয়েকবার বিবাহ দিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তখন মনিরুদ্দীন বাইজী ও সরাপ লইয়া একবারে উণ্মত্ত। অনেক বিবচনার পর পিতা সে সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়াছিলেন।
মজিদ খাঁ এখন কলিঙ্গাবাজারের পূর্ব্বাংশে বৃদ্ধা হামিদার বাড়ীতে বাস করেন। সেখানে আরও চারি-পাঁচজন মুসলমান ভদ্রলোক বাস করিয়া থাকেন। তন্মধ্যে কেহ মোক্তার, কেহ সওদাগরী অফিসের কেরাণী, কেহ বা উমেদার-সে পরিচয় আমাদিগের নিষ্প্রয়োজন। মজিদ খাঁ কাহারও সহিত মিশেন না। তিনি হামিদার বাটীর দ্বিতলস্থ দুইটি প্রকোষ্ঠ ভাড়া লইয়া বাস করিতেছেন।
মজিদ খাঁর বয়ঃক্রম এখন আটাশ বত্‍‌সর। বয়সে যুবক হইলেও সকল বিষয়ে তাঁহার বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল; তাঁহার ন্যায় সচ্চরিত্র যুবককে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দেখিয়া বিস্মিত হইবার কথা; কিন্তু অনেক ভাল লোকেরও পতন হয়।
মজিদ খাঁ কিছু দীর্ঘাকৃতি-দেহের বর্ণ গৌর। মুখখানি সুন্দর-দেখিয়া তাঁহাকে বুদ্ধিমানা্‌ বলিয়া অনুমান হয়।
দেবেন্দ্রবিজয় যখন তাঁহার সহিত দেখা করিতে হামিদার বাড়ীতে উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি টেবিলের উপরে হেঁট হইয়া একখানি ইংরাজী সংবাদপত্র মনে মনে পড়িতেছিলেন। তাঁহার মুখখানি মলিন, ললাটে চিন্তার রেখাবলী প্রকটিত, মস্তকের কেশ অবিন্যস্ত নহে, বিশৃঙ্খলভাবে কতক ললাটের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে। চক্ষুঃপ্রান্ত কালিমাঙ্কিত; দেখিয়া বোধ হয়, মজিদ খাঁ যেন উপর্য্যুপরি তিনটা বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করিয়াছেন।
দেবেন্দ্রবিজয় কক্ষমধ্যে প্রবিষ্ট হইলে মজিদ খাঁ বিস্ময়পূর্ণদৃষ্টিতে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress