Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিষিদ্ধ লোবান || Syed Shamsul Haque » Page 14

নিষিদ্ধ লোবান || Syed Shamsul Haque

শাড়ি

শাড়িটা পায়ের কাছ থেকে কুড়িয়ে নেয় বিলকিস। শাড়ি পরিবার নানা রকম কৌশল জানার সুখ্যাতি যার, সে এখন লজ্জা নিবারণ করে মাত্র।

কয়েকজন সৈনিক ও একজন ক্যাপ্টেন ছুটে এসেছিল, মেজর নিঃশব্দে তাদের চলে যেতে ইঙ্গিত করে।

ক্যাপ্টেন জানতে চায়, কোনো সাহায্য করতে পারি, স্যার?

মেজর মাথা নাড়ে।

ক্যাপ্টেন ও সৈনিকেরা চলে যায়। কেবল দরোজার প্রহরী দাঁড়িয়ে থাকে। তারই প্রহরাধীন ছিল। মেজর নিঃশব্দে তাকে ইশারা করে সরিয়ে নিয়ে যেতে। সৈনিকটি উবু হয়ে হাত ধরে টেনে নেবার উদ্যোগ করতেই এই প্রথম বিলকিস কথা বলে ওঠে। সংক্ষিপ্ত প্ৰবল একটি শব্দ।

না।

তার কণ্ঠস্বরে আকস্মিকতায় বিস্ময় বোধ করে মেজর।

না।

মেজর একটু চিন্তা করে প্রহরী সৈনিকটিকে চলে যেতে ইশারা করে। অনেকক্ষণ নিষ্ক্রিয়তার পর মেজর ক্লান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে বলে, মৃতদেহ আমি পছন্দ করি না। পরাজয়ের কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয়।

বিলকিস অতি ধীর পায়ে প্রদীপের লাশের পাশে এসে দাঁড়ায়।

একই ধীর গতিতে সে হাঁটু গেড়ে বসে। অনেকক্ষণ ধরে প্রদীপের টক-টকে লাল রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকে। পেট্রোম্যাকসের আলোয় অবিশ্বাস্য উজ্জ্বল দেখায়, এমনকি কৃত্রিম মনে হয় এই রক্ত। গেলাসটা খুঁজে না পেয়ে মেজরের স্মরণ হয় নিজেই সে ছুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলেছিল। তখন সরাসরি ফ্ল্যাক্স থেকেই গলায় খানিকটা ঢালে সে। গেলাস অথবা প্রদীপের জন্য খানিকটা খেদ তার কণ্ঠস্বরে লক্ষ করা যায়।

ওকে এখন তোমরা কী করবে? প্ৰদীপের দিকে চোখ রেখেই বিলকিস উচ্চারণ করে।

মেজর সে প্রশ্নের উত্তর দেয় না।

বন্দুক কেড়ে নিতে গেল কেন? প্ৰাণটা হারাল।

নীরবতা।

মেজর বলে চলে, প্ৰাণ অবশ্য হারাত। স্বীকারোক্তি পাবার পর ইন্ডিয়ায় পাঠানো হতো। রসিকতাটি মনে করে মেজর মৃদু হেসে ওঠে।

তোমারা কি ওকে ফেলে রাখবো?

মেজর নিঃশব্দে মৃদু মৃদু হাসে।

যেমন বাজারে ফেলে রেখেছ?

মেজর ফ্ল্যাক্স থেকে শেষ ফোঁটাটুকু পর্যন্ত গলায় ঢেলে পা সমুখে লম্বা করে দেয়।

আমার দিকে ফিরে তাকাও।

বিলকিস নত হয়ে প্রদীপের চোখ দুটো বুজিয়ে দেয়।

জান? আমি কখনো হিন্দু মেয়েকে ন্যাংটো দেখি নি।

অন্তত সে বিশ্বাস করেছে। এরা ভাইবোন। তাই বিলকিসকেও হিন্দু ধরে নিয়েছে।

চোখ বুজিয়ে দিয়ে হাত সরিয়ে নেয় না বিলকিস। প্ৰদীপের গালের ওপর তার দুটি হাত স্থির হয়ে থাকে।

আমাকে একটা কথা বল, হিন্দু কি প্রতিদিন গোসল করে?

নীরবতা।

হিন্দু মেয়েদের গায়ে নাকি কটু গন্ধ?

নীরবতা।

তাদের জায়গাটা পরিষ্কার?

নীরবতা।

শুনেছি, মাদী কুকুরের মতো। সত্যি?

নীরবতা।

শুনেছি, হয়ে যাবার পর সহজে বের করে নেওয়া যায় না?

নীরবতা।

আমাকে কতক্ষণ ওভাবে ধরে রাখতে পারবে?

বিলকিস প্রদীপের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেজরের দিকে তাকায়–আমি এর সৎকার করতে চাই।

তোমাকে এখন বাধ্য করতে ইচ্ছে করছে।

আমার ভাইয়ের সৎকার আমি করব।

বিলকিস উঠে এসে মেজরের সমুখে দাঁড়ায়। দ্রুত নিজের পা টেনে নেয় মেজর। কাপড় খুলে ফ্যালে।

চোয়াল চিবিয়ে মেজর উচ্চারণ করে। তার চোখ বিস্ফারিত হতে থাকে। কপালের পাশে শিরা দীপ দপ করে।

বিলকিস স্থির কণ্ঠে বলে, আগে আমার ভাইয়ের সৎকার করব।

ধীরে চোয়াল শিথিল হয়ে আসে মেজরের, মিলিয়ে যায় কপালের শিরা, চোখ স্মিত হয়। উঠে দাঁড়িয়ে মেজর বিলকিসের কাঁধে হাত রাখে। সঙ্গে সঙ্গে সরে যায় বিলকিস।

ঠিক আছে। সৎকার হবে। আমি বলি নি, অত্যন্ত সহিষ্ণু আমি?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress