Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিজেকে জানো || Tarapada Roy

নিজেকে জানো || Tarapada Roy

নিজেকে জানো

উপনিষদে অনেক ভাল ভাল কথা লেখা আছে। তার মধ্যে একটা হল নিজেকে জানো৷ মূল কথাটি বোধহয় আত্মানং বিদ্ধি।

কে আমি? আমি কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাচ্ছি। এই বিশাল বিশ্বে আমাদের কী কাজ, কী ভূমিকা; এইসব নিয়ে প্রাচীন ঋষি আমাদের মাথা ঘামাতে, চিন্তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নিজেকে জানতে বলেছেন।

এ অবশ্য খুবই জটিল ভাবনা। এর কোনও সোজা উত্তর নেই। ভাবার কোনও শেষ নেই, ইচ্ছে করলে ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাওয়া যেতে পারে।

পাগল হওয়ার ব্যাপারটা আপাতত মুলতুবি থাক। আমরা এবার একজন মোটামুটি স্বাভাবিক মানুষের গল্প লিখছি।

মানুষটির নাম বিরাজ।

বিরাজচন্দ্র নাগ একটি ছোটখাটো মানুষ। একটি ছোটখাটো অফিসে ছোটখাটো চাকরি করে। কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে। আগে রানাঘাটে বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারে থাকত। সম্প্রতি কাজের সুবিধে হবে এই অজুহাতে বউকে নিয়ে কলকাতায় এসে উঠেছে। সত্যিই তো রানাঘাট থেকে কলকাতায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা কম ঝামেলা নয়! মা বাবা একটু আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত বিশেষ বাধা হয়নি।

কলকাতায় বাসা মানে শহরতলির শেষ সীমায় গড়িয়ার ওই পাশে একটা দোতলা বাড়ির একতলায় ছোট একটা ঘর, এতটুকু বাসা। যেমন হয়, জল, বাথরুম সব কমন। রান্নার ব্যবস্থা সিঁড়ির নীচে।

বিরাজের বউয়ের নাম ভাস্বতী। সেও বিরাজের মতোই ছোটখাটো মানুষটি, বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলে ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। বিরাজের পরিবারও ছোট, তবে হয়তো সুখী বলা যাবে না।

রানাঘাটের বাড়িতে অল্প কয়েক মাসে অত লোকজনের মধ্যে ভাস্বতীর আসল রূপটা ভালভাবে প্রকাশ পায়নি। তা ছাড়া নব পরিণয়ের, নব পরিচয়ের একটা আমেজ ছিল। বিরাজ মোটেই টের পায়নি তার বউ ভাস্বতী কী জিনিস।

বিরাজের তেমন কোনও বড় দোষ নেই। শুধু এই বয়েসের যুবকদের যা হয়, সে একটু আড্ডা দিতে ভালবাসে। একটু কথার ব্যবহারটা হয়তো এখানে ঠিক হল না, বলা উচিত একটু বেশি আড্ডা দিতে ভালবাসে। সন্ধ্যাবেলা অফিস ভাঙার পর অফিসের ক্যানটিনে ঘণ্টা দেড়েক, যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্যানটিন ধোয়ামোছা সেরে, আলো নিভিয়ে, জোর করে বার করে দেওয়া হয়।

একেকদিন দল খুব ভারী হয়, সেদিন আড্ডা গড়াতে গড়াতে অফিসের ক্যানটিন ছেড়ে বউবাজারের মোড়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছায়। কোনও কোনও দিন আড্ডা এতই জমে যায়, এর পরেও রাস্তার ধারের কাঠের বেঞ্চিতে বসে গুলতানি চলে।

সব আড্ডার যেমন হয়, এই আড্ডাতেও নিয়মিত বাঁধাধরা সদস্য হল জনা পাঁচ-ছয়, বাকিরা ছুটছাট, অপেশাদার।

বলা বাহুল্য আড্ডার মধ্যমণি হল বিরাজ। বিরাজের অনুপস্থিতিতে আসর মোটেই জমে না। বিরাজ যে খুব গল্পবাজ বা আমুদে তা নয়, কিন্তু সে খুব মনোযোগী শ্রোতা এবং নানারকম খোঁজখবর রাখে। এ ছাড়া কলকাতা থেকে রানাঘাট পর্যন্ত দুবেলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে রেলগাড়ির কামরায় নানারকম মুখরোচক গল্প ও গুজবের সন্ধান পেত বিরাজ এবং যথাসময়ে আড্ডায় সেসব উগরিয়ে দিত। তবে ধীরে সুস্থে। কখনওই তড়বড় করে কিছু বলতে যেত না, যখনই আড্ডা ঝিমিয়ে পড়ত, সে একটু উসকিয়ে দিত, আড্ডা আবার ঘণ্টাখানেকের জন্যে চাঙা হয়ে উঠত।

অন্যান্য আড্ডাধারীদের মধ্যে সদানন্দ হল সবচেয়ে একরোখা। সে আড্ডার মধ্যমণি না হলেও সে আড্ডার প্রাণ। ডানকুনি না কোথায় একটা ইস্কুলে পড়ায়, থাকে বারুইপুরে। তবু ঝড়, বৃষ্টি, গণবিক্ষোভ, পথ অবরোধ সব অনায়াসে উতরিয়ে সে প্রতিদিন নিয়মিত আড্ডায় হাজিরা দেয়। এমনকী সামান্য শরীর খারাপ হলেও, ইস্কুল কামাই করলেও প্রায় যথাসময়ে বিবাদি বাগের অফিসের ক্যানটিনের আচ্ছায় তার অট্টহাস্যময় উপস্থিতি সুর্যোদয়, সূর্যাস্তের মতে, শীত, গ্রীষ্মের মতো অনিবার্য।

রানাঘাটে থাকতে এমনকী বিয়ের পরেও আড্ডা দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লাস্ট ট্রেন নাগাদ বাড়ি ফিরত বিরাজ। মধ্যরাত পেরিয়ে যেত বাড়ি পৌঁছাতে, তবে বাড়িটা ছিল স্টেশনের লাগোয়া, তাই ট্রেন থেকে নামার পরে আর দেরি হত না।

বিয়ের আগে বিরাজের বাড়ির লোকেরা তার এই দেরি করে ফেরাকে মোটেই ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি। বিয়ের পরে তার মা অবশ্য তাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন, এই বিরু, ঘরে নতুন বউ, তাকে একলা ফেলে অত রাত-বিরেতে বাড়ি ফিরিস নে।

নতুন বউ ভাস্বতী কিছু মনে করত কিনা বিরাজ তা টের পায়নি। তবে প্রথম প্রথম তারও ইচ্ছে করত, হয়তো ভাস্বতীর টানেই একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। কিন্তু আজ্ঞা কেটে বেরিয়ে পড়া অত সোজা নয়, আড্ডার একটা মায়া আছে, আকর্ষণ আছে; বউ নতুন থাকবে অল্প দিন, আর আড্ডা চিরদিনের। আর একটা চক্ষুলজ্জার ব্যাপারও তো আছে। বন্ধুবান্ধব উপহাস করবে, টিটকিরি দেবে, বিশ্রী মন্তব্য করবে বউকে জড়িয়ে, নিজের হ্যাংলাপনা নিয়ে কোনও পুরুষমানুষই এটা চায় না, বিরাজও চায়নি। সুতরাং বিরাজ সেই মধ্যরজনী অতিক্রান্ত করেই বাড়ি ফিরত। সদ্য নিদ্রোহিতা ভাস্বতীর চোখেমুখে যে আগুন ঝলসাত, সে ভাবত সেটা প্রেমজ।

রানাঘাটের বাড়ির ভিড়ে ভাস্বতীর সঙ্গে তার কথাবার্তা কমই হত। ভাস্বতাঁকে সে মোটেই বুঝতে পারেনি, তা হলে সে রানাঘাট ছাড়ত না।

কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে। বড় আশা করে গড়িয়ার শেষ প্রান্তের এই একঘরের বাসায়, এতটুকু বাসায় ভাস্বতাঁকে নিয়ে বিরাজ এসে উঠেছে। ভাস্বতী তার সামান্য ছোট সংসার তার নিজের, একান্ত নিজের সংসার, হুঁড়ি কড়াই-খুন্তি, শিল-নোড়া, জানলার পর্দা, দরজার পাপোশ, আলনা-চৌকি, (তক্তপোশ) চোদ্দোফুট বাই বারো ফুট ঘরের মধ্যে যতটা সম্ভব গুছিয়ে নিয়েছে, এমনকী দেওয়ালের এক কোণায় একটা লক্ষ্মীর পট বসিয়ে যথাসাধ্যি ধর্মাচরণের আয়োজন রেখেছে।

দুঃখের কথা, ভাস্বতীর এই ঘর গোছানোর সঙ্গে, সংসার সাজানোর সঙ্গে বিরাজের আড্ডাবাজি মিলছে না।

গড়িয়ার ঘরে এসে প্রথমে বিরাজ মোটেই কিছু টের পায়নি। সে যথারীতি প্রথম প্রথম সেই আগের মতোই, আড্ডা দিয়ে বেশি রাত করে বাড়ি ফিরতে লাগল।

গোড়ার দিকে দু-একদিন ভাস্বতী কিছু বলেনি, কিন্তু ক্রমশ সে কঠোর হতে লাগল। প্রথমে সে দরজা খুলতে দেরি করতে লাগল। অত রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে একঘণ্টা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সোজা কথা নয়।

কিন্তু সে-ও ছিল মন্দের ভাল। এরপর দেরি করে এলে ভাস্বতী কঠোর, নিষ্ঠুর সব মন্তব্য করতে লাগল। অন্য একদিন দরজায় তালা দিয়ে দোতলায় বাড়িওয়ালার স্ত্রীর কাছে শুয়ে রইল, বাড়িওয়ালা কাজে কোথায় বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালার স্ত্রী একা ঘরে শুতে ভয় পান। পুরো দোতলাটা ফাঁকা। ভাস্বতী বলেছিল, কোনও অসুবিধে নেই, আমি আপনার কাছে শোব। গৃহস্বামীনী ভদ্রতাবশত প্রশ্ন করেছিলেন তোমার বর? ভাস্বতী স্রেফ মিথ্যে জবাব দিয়ে দিল, ওর কোনও অসুবিধে নেই। ও আজ রানাঘাটে যাবে।

কিছু বুঝতে না পেরে, কিছুই না জেনে সেদিন সারারাত বিরাজ তালাবন্ধ ঘরের সামনে বারান্দায় দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসে কাটিয়েছিল।

দুঃখের বিষয় এর পরেও বিরাজের চরিত্র সংশোধন হল না। কিছুটা আড্ডার নেশায়, কিছুটা বন্ধুদের বিদ্রুপের ভয়ে সে আচ্ছা তাড়াতাড়ি ছেড়ে আসতে পারল না। দু-একবার চেষ্টা যে করেনি তা নয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে উঠতে পারেনি। বিরাজের খেয়াল ছিল না যে বিয়ের আগে ভাস্বতী পাড়াগাঁয়ের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিল। ক্রমশ মৌখিক কটুক্তির সঙ্গে ভাস্বতী হস্তচালনা শুরু করল। রীতিমতো প্রহার যাকে বলে তাই।

অত রাতে বাড়ি ফিরে দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকা মাত্র মাথায় বা পিঠে খটাখট হাত-পাখার বাড়ি খাওয়া খুবই দুঃখের। আর, বউ মারছে এ নিয়ে তো চেঁচামেচিও করা যায় না।

নিঃশব্দ নিয়মিত প্রহৃত হতে হতে বিরাজ ক্রমশ সংশোধিত হতে লাগল।

কিন্তু সংশোধনের পথে বহু বাধা। ইতিমধ্যে ভাস্বতী সন্তানসম্ভবা হয়েছে, একসঙ্গে যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছে। এবার নিজের টানেই বিরাজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করতে লাগল।

কিন্তু প্রথম যেদিন সে আড্ডা থেকে তাড়াতাড়ি কেটে পড়ার চেষ্টা করল বাচ্চাদের শরীর খারাপ এই সাবেকি অজুহাতে, বন্ধুরা কিছু সন্দেহ করেনি।

বিরাজ চলে যেতেই আড্ডাটা কেমন যেন মিইয়ে পড়ল। সদানন্দ একা সামাল দিতে পারল না। সেদিন রাত আটটার মধ্যেই আড্ডা ভেঙে গেল।

পরের দিনও যখন বিরাজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করল, সবাই মিলে বাধা দিল। সেদিন বহু কষ্টে রাত নটা নাগাদ বাড়ি ফিরতে পেরেছিল সে। কিন্তু তাতে অব্যাহতি পায়নি সে, সেদিন বউ তাকে একটা খুন্তি দিয়ে পেটে খোঁচা দিয়েছিল।

ব্যাপারটা বেশিদিন চাপা রইল না। বন্ধুরা ক্রমে ক্রমে জেনে গেল ভাস্বতী বিরাজকে মারধর করে, বিরাজ ভাস্বতাঁকে ভয় পায়, খুব ভয় পায়।

ব্যাপারটা বন্ধুরা ভাল মনে মেনে নিতে পারল না। তারা ঠিক করল বিরাজকে সাহসী করে তুলতে হবে, তাকে আড্ডায় আটকাতে হবেই।

কিন্তু বিরাজ অসহায়, সে বউকে ভয় পায়। এ ঘটনা আর বিস্তারিত করে লাভ নেই। শুধু শেষ যেদিন বিরাজ আড্ডা চিরদিনের জন্যে চলে এল, সেইদিন সদানন্দের সঙ্গে তার বাক্যালাপের কিয়দংশ উদ্ধার করছি।

.

তুই কখনও ভেবে দেখেছিস, তুই একটা কাপুরুষ, কাপুরুষ নম্বর ওয়ান? সদানন্দ চাপা আক্রোশের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল।

বিরাজ কোনও উত্তর দিল না, মাথা নিচু করে বসে রইল।

মৌন থাকা মানেই স্বীকার করে নেওয়া এইরকম একটা পুরনো প্রবাদ আছে।

সুতরাং ধরে নেওয়া যায় যে, বিরাজ স্বীকার করল যে সে কাপুরুষ, কিন্তু পুরনো বন্ধু, প্রাণের বন্ধু সদানন্দ বিরাজচন্দ্রের এই মৌনতা মেনে নিল না।

আরও নিষ্ঠুরভাবে, দাতে দাঁত চেপে কমষ করে চিবিয়ে চিবিয়ে সদানন্দ আবার আক্রমণ করল, বলে ফেলল, তুই একটা নপুংসক।

ক্ষীণ প্রতিবাদ জানাল বিরাজচন্দ্র, চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল, এ কথা বলিস কী করে? জানিস আমার যমজ ছেলে আছে। তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল সদানন্দ, তা হলে এত ভয় পাস কেন? তুই আর তোর যমজ ছেলে। দলেবলে তোরা তিনজন আর ভাস্বতী না আধসতী কী যেন নাম তোর বউয়ের, সে তো একা, তাকে এত ভয় পাস কী জন্যে?

বিরাজ নিরুত্তর।

কে সদানন্দকে বোঝাবে যে নিতান্ত শিশু, দুই যমজ পুত্রসন্তান কীভাবে রক্ষা করতে পারে তাকে, আর তা ছাড়া তারা যে মায়ের পক্ষে না গিয়ে বাপের পক্ষেই যাবে তারই বা নিশ্চয়তা কী।

বিরাজের স্তব্ধতা আরও ক্ষিপ্ত, প্রজ্বলিত করে তুলল প্রাণের বন্ধু সদানন্দকে। এবার মোক্ষম কথা বলল সে, আসলে তুই একটা ছুঁচো, একটা ইঁদুর, একটা নেংটি ইঁদুর।

এতক্ষণে ম্লান হেসে বিরাজচন্দ্ৰ কবুল করল, সদানন্দের অভিযোগ মোটেই সত্যি নয়, সে মোটেই ইঁদুর, ছুঁচো কিংবা নেংটি ইঁদুর নয়।

রাশভারি ফৌজদারি উকিলের মতো সদানন্দ জেরা করল, এ বক্তব্যের সমর্থনে কোনও প্রমাণ আছে?

অধিকতর ম্লান হেসে বিরাজচন্দ্র বলল, অবশ্যই আছে।

এই প্রথম বাধা পেয়ে সদানন্দ একটু থমকে গিয়ে বলল, একটু আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করল, কী প্রমাণ দিতে পারিস তুই, তুই যে ইঁদুর নয়, সে কথাটা বোঝানোর জন্যে।

বিরাজ বলল, খুব সোজা প্রমাণ। আমি যে ইঁদুর নই, সেটা আমি বুঝতে পেরেছি এইজন্যে যে, আমার বউ মানে ভাস্বতী, ইঁদুর দেখে ভীষণ ভয় পায়। আমি যদি ইঁদুর হতাম তাহলে আমাকে দেখে ও নিশ্চয় ভয় পেত।

অবশেষে শেষ তীর নিক্ষেপ করল সদানন্দ। বলল, তাহলে তুমি একটা আরশোলা।

বিরাজ অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে জবাব দিল, না আমি আরশোলাও নই। আমার বউ আরশোলাও খুব ভয় পায়।

বিরাজচন্দ্র এবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ছুটে গিয়ে সদানন্দ তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, তাহলে তুমি কী?

গমনের গতি বিন্দুমাত্র না থামিয়ে, রোষকষায়িত ভাস্বতীর মুখমণ্ডল স্মরণে রেখে উপনিষদের ভাষায় উত্তর দিল বিরাজ, সেটাই তো জানার চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress