নিউ ইয়ার, তুমি কোথা থেকে আসিয়াছ!
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায় সকলে।
কিন্তু জানেন কি, বর্ষবরণের ইতিহাস কত প্রাচীন? এই রীতি অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছরের পুরনো। বর্ষবরণকে ঘিরে নানা দেশে নানা ট্র্যাডিশন।
বারোটা বাজলে যে মজা উল্লাস, হইহুল্লোড়ে ফেটে পড়া যায়, নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন না থাকলে এই গ্রহবাসী কি তা জানতে পারত?
নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের সেই দিন ক্ষণ তারিখ বলা সম্ভব নয়। মনে করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে এই বর্ষবরণের রীতি শুরু। তবে এ কথা ঠিক যে, ১ জানুয়ারিতেই নিউ ইয়ার হবে, এমনটা কিন্তু সব ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
যেমন জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউ ইয়ার হয় ১ মার্চ। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে জুলিয়াস সিজারের আমলে প্রথম ১ জানুয়ারিকে নববর্ষের শুরু হিসেবে ধরা হয়। ইংল্যান্ডে এই রীতি চালু হয় অনেক পরে ১৭৫২-এর আশপাশে।
নতুন বছর, নতুন নতুন সব কিছু। ফলে সেলিব্রেশনের সঙ্গেই মিশে আছে উপহার দেওয়া-নেওয়া। রয়েছে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বহু বিবিধ আচার-সংস্কার। যেমন অনেকে নিউ ইয়ারে একে অপরকে ডিম উপহার করেন। এই ডিম আগামীতে সু-উৎপাদনের প্রতীক।
ট্র্যাডিশন সম্পর্কে বলতে গেলে অবশ্যই জানাতে হয় মলিবডোম্যান্সির কথা। নববর্ষে বহুকাল ধরে ফিনল্যান্ডের মানুষ এই বিশেষ রীতি পালন করে আসছে।
কী এই মলিবডোম্যান্সি?
ফিনল্যান্ডের মানুষ একটি বড় পাত্রে ঠান্ডা জল নেয়। তারপর শিসা জাতীয় ধাতুকে গরম করে। ততক্ষণ ধাতুটি উত্তপ্ত হতে থাকে, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি তরলে পরিণত হচ্ছে। এর পর সেই উত্তপ্ত তরল ধাতুকে ফেলে দেওয়া হয় ঠান্ডা জলের সেই পাত্রের মধ্যে। মুহূর্তে সেই ধাতু আবার কঠিন হয়। জল থেকে তুলে আনা সেই ধাতুকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তার পর সেই ধাতুর সামনে হয় বিশেষ প্রার্থনা।
ডেনমার্কে মানুষ আবার একে অপরের বাড়ির সামনে প্লেট ছোড়াছুড়ি করে। তারা মনে করে, এই প্রথার মাধ্যমে বহু মানুষ একত্রিত হতে পারবে। মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব গাঢ় হবে।
স্প্যানিশরা ৩১ ডিসেম্বর রাতে ১২টি টাটকা আঙুর খেয়ে নববর্ষকে বরণ করে নেয়। মনে করা হয়, ১৮৯৫ থেকে এই ভাবে আঙুর খেয়ে বর্ষবরণের রীতি শুরু। ওই আঙুরগুলিকে পবিত্র ও শুভ মনে করেন সেখানকার মানুষ। তেমনই গ্রিকরা আবার নববর্ষে বাড়ির প্রবেশ দ্বারে পেঁয়াজের থোকা ঝুলিয়ে রাখেন।
ট্র্যাডিশন নিয়ে কথা হচ্ছে আর ফুডিং নিয়ে হবে না?
সারা পৃথিবী জুড়েই নিউ ইয়ারের খাওয়া-দাওয়ার একটা খুব রিচ রীতি রেওয়াজ রয়েছে। স্বাভাবিক যে কোনও উৎসবই তো পালিত হয় জিভের স্বাদ আর পেটের পুজো দিয়ে। যেমন জাপানি মানুষজন একটি বিশেষ লং নুডলস খেয়ে নিউ ইয়ার পালন করেন। এই লম্বা চাউমিন তাদের বিশ্বাসে লম্বা জীবনের প্রতীক।
পতুর্গাল, হাঙ্গেরি, অষ্ট্রিয়া আর কিউবাতে উৎকর্ষ ও প্রগতির প্রতীক হিসেবে পর্ক খাওয়ার রীতি রয়েছে।
তেমনই গ্রিস, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডে আংটির মতো দেখতে কেক পেস্ট্রি খাবার চল আছে।
সেলিব্রেশনেরও বিভিন্ন রেওয়াজ এই প্রেক্ষিতে জেনে রাখা ভালো।
আমেরিকার টাইমস স্কোয়ারে ৩১ জানুয়ারি ঠিক রাত ১১টা ৫৯মিনিটে নিউ ইয়ার বল ড্রপ করার রীতি এবং তার পর চোখ ধাঁধানো আতসবাজির খেলা, সঙ্গে লাউড মিউজিকের নেশায় সারা বিশ্বের মানুষ সেখানে জড়ো হয়। এ বছর অবশ্য,বিশে বিষের কারণে সেই আশায় খানিকটা জল পড়েছে।
ডাচরা আবার বর্ষশেষের অন্তিম প্রহরে আতসবাজি ফাটানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রিসমাস ট্রিকে পুড়িয়ে খোলা রাস্তার উপর দল বেঁধে বনফায়ার করেন।
আর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে ৪০ মাইল ধরে রাস্তার দু’ধারে মানুষ ৩১ ডিসেম্বর রাতে জড়ো হন। কেবল বাজির খেলা আর বর্ষবরণ করবেন বলে।