নব-ভারতের হলদিঘাট (প্রলয়শিখা)
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট,
উদয়-গোধূলি-রঙে রাঙা হয়ে
উঠেছিল যথা অস্তপাট।
আ-নীল গগন-গম্বুজ-ছোঁয়া
কাঁপিয়া উঠিল নীল অচল,
অস্তরবিরে ঝুঁটি ধরে আনে
মধ্য গগনে কোন পাগল!
আপন বুকের রক্তঝলকে
পাংশু রবিরে করে লোহিত,
বিমনানে বিমানে বাজে দুন্দুভি,
থরথর কাঁপে স্বর্গ-ভিত।
দেবকী মাতার বুকের পাথর
নড়িল কারায় অকস্মাৎ
বিনা মেঘে হল দৈত্যপুরীর
প্রাসাদে সেদিন বজ্রপাত।
নাচে ভৈরব, শিবানী, প্রমথ
জুড়িয়া শ্মশান মৃত্যুনাট, –
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব ভারতের হলদিঘাট।
অভিমন্যুর দেখেছিস রণ?
যদি দেখিসনি, দেখিবি আয়,
আধা-পৃথিবীর রাজার হাজার
সৈনিকে চারি তরুণ হটায়।
ভাবী ভারতের না-চাহিতে আসা
নবীন প্রতাপ, নেপোলিয়ন,
ওই ‘যতীন্দ্র’ রণোন্মত্ত –
শনির সহিত অশনি-রণ।
দুই বাহু আর পশ্চাতে তার
রুষিছে তিনটি বালক শের,
‘চিত্তপ্রিয়’, ‘মনোরঞ্জন’,
‘নীরেন’ – ত্রিশূল ভৈরবের!
বাঙালির রণ দেখে যা রে তোরা
রাজপুত, শিখ, মারাঠি, জাঠ!
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।
চার হাতিয়ারে – দেখে যা কেমনে
বধিতে হয় রে চার হাজার,
মহাকাল করে কেমনে নাকাল
নিতাই গোরার লালবাজার!
অস্ত্রের রণ দেখেছিস তোরা,
দেখ নিরস্ত্র প্রাণের রণ;
প্রাণ যদি থাকে – কেমনে সাহসী
করে সহস্র প্রাণ হরণ!
হিংস-বুদ্ধ-মহিমা দেখিবি
আয় অহিংস-বুদ্ধগণ
হেসে যারা প্রাণ নিতে জানে, প্রাণ
দিতে পারে তারা হেসে কেমন!
অধীন ভারত করিল প্রথম
স্বাধীন-ভারত মন্ত্রপাঠ,
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।
সে মহিমা হেরি ঝুঁকিয়া পড়েছে
অসীম আকাশ, স্বর্গদ্বার,
ভারতের পূজা-অঞ্জলি যেন
দেয় শিরে খাড়া নীল পাহাড়!
গগনচুম্বী গিরিশের হতে
ইঙ্গিত দিল বীরের দল,
‘মোরা স্বর্গের পাইয়াছি পথ –
তোরা যাবি যদি, এ পথে চল!
স্বর্গ-সোপানে রাখিনু চিহ্ন
মোদের বুকের রক্ত-ছাপ,
ওই সে রক্ত-সোপানে আরোহি
মোছ রে পরাধীনতার পাপ!
তোরা ছুটে আয় অগণিত সেনা,
খুলে দিনু দুর্গের কবাট!’
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
নব-ভারতের হলদিঘাট।