নক্ষত্র প্রদীপ
আমি মামাতো ননদ লুনার পঁচিশ বছরের বিবাহবার্ষিকিতে এসেছি। বেশ ভাল লাগছে। ওরা তিন বোন। ছিপলি লুনা আর লালি। সবাইকে দেখছি একেবারে পাকা সংসারী।তাদের ছেলে মেয়েরা যেন নক্ষত্র।দেখছি ছিপলি কেমন মন মরা হয়ে বসে আছে।আমি কাছে যেতেই হেসে বলল, বসো টুকাই বৌদি। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল মানুষ করতে পারলাম আর কই। আমি অবাক একি বলছে ছিপলি। পড়তে পড়তে ক্যাম্পাসিং এ চাকরি কি সবাই পায়? এতো তোমার ভাগ্য যে ছেলে প্রাইভেট ইনফোসিস কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে।সরকারি চাকরি না হোক এতেই বা সুযোগ সুবিধা কম কি। দুই ছেলের একজন তো কাছে আছেই। বড়জন না হয় দূরে।
ছিপলির মন যে এতক্ষণ কোথায় ছিল কে জানে। ধাক্কা দিতেই সে যেন এ জগতে ফিরল।রুমালে চোখ মুছে বলল,জান টুকাই বৌদি আজ সকাল থেকেই মনটা অন্যমনস্ক। আজই সে যাবে দিল্লি।অফিসের গাড়ি এসে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে। রাত সারে এগারোটায় ফ্লাইট ছাড়বে। সেই ছোট্ট ছেলেটা আমার আজ কি সুন্দর করে নিজেকে গোছাতে শিখে গেছে।কথাও কি সুন্দর গুছিয়ে বলে।একাই বহুদূরে যেতে পারে।সাহস দেখে অবাক যেমন হই তেমন বুক ভরে আনন্দ অনুভব করি। সে আনন্দ বাঁধ ভেঙে নোনা জল অধর ছুঁয়ে যায়। কাটিয়ে দিল দুই বছর ব্যাঙ্গালোরে।
দিল্লি থেকে ফিরে আমার কাছে আসবে। সেখান থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে রওনা দেবে নেদারল্যান্ডসে। সামনের মাসেই জয়েন করবে। এত আনন্দের মাঝে আজ আমার বাবাকে আমি খুব মিস করি। সে যদি আজ ইহলোকে থাকতো তার থেকে আনন্দ কেউ বেশি পেত না। বিদেশ যাত্রার আগে হয়ে যেত আমার বাড়িতে মিলন উৎসব।
কিন্তু জানো টুকাই বৌদি ওর বাবাই বেশি মন খারাপ করে। আমিও যে করি না তা নয়। সে বলে বড় ছেলে তার গর্ব। কিন্তু কত দূরে। আমিও বলতে ছাড়ি না। ছোট ছেলেইবা কম কিসের। সে তো ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। বিপদে আপদে ছোট ছেলেই তো পাশে থাকে। বড় ছেলে যেন দূরের নক্ষত্র। আর ছোট ছেলে আমার ঘরের প্রদীপ। সে তো ঘর আলোকিত করে। বাঃ ছিপলি তুমি ঠিকই বলেছ।