নকশা আছে মনোব্যাপী, ছন্দোময় নিঝুম গড়ন-
প্রাচীন সুরাই যেন, যৌথ কারুকর্মে কান্তিমান।
এই নকশা জ্বলজ্বলে, প্রাণবান কখনো নিতান্ত
চেনা, কখনো বা মায়া, বহুমুখী রহস্যে অচেনা।
ফুলের কেয়ারি বুঝি এই নকশা, যেখানে পাখির
ছায়া পড়ে, রৌদ্রানন্দ ঘন হয়, জ্যোছনা গহন
গীতধারা, নিরিবিলি সৃজনপ্রবণ আর মালী
অলস অমনোযোগী হ’লে কেবলি উৎপন্ন হয়
রাশি রাশি পরগাছা, কোনো কোনো ঋতু ভয়ানক
নিষ্ফলা, রোরুদ্যামান দিনরাত্রি, পত্রপুষ্পহীন
ডাল কাঁপে বিরান হাওয়ায়। কারো কারো বেলা যায়
সুরাইয়ে একটি রেখা এঁকে, ভাগ্যবান হ’লে কেউ
মুখচ্ছবি আঁকে কোনো; নকশা বড়ো শোণিত পিপাসু,
ক্রমাগত সত্তার বিশদ ক্ষয়ে নকশা জায়মান।
অন্তর্গত এই নকশা বিশ্বপ্লাবী তুমুল আঁধারে
নিত্য প্রাণ জাগানিয়া সুগভীর সংকেত নিরালা-
সে সংকেতে একটি মানুষ অন্য মানুষের কাছে,
খুব কাছে চলে আসে, যদিও পরস্পরের দেখা
হয় না কখনো; এভাবেই অন্তরালে পরিচয়
প্রসারিত চিরদিন মানুষের মধ্যে দিকে দিকে।
সে এক আশ্রয় বটে ভ্রান্তিহীনরুপে মানসিক।
যেমন ওষ্ঠের সঙ্গে চুম্বনের, আপেলের সাথে
তার অন্তর্গত গুঢ় রসসিক্ত মাংসের সম্পর্ক,
বলা যায়, তেমনি এক সম্পর্ক মনের চিরকাল
নকশার সহিত। এই নকশা থেকে দূরে কেউ কেউ
সহসা পালাতে চায়, তছনছ করে দিতে চায়
তাকে, বড়ো বেশি এলোমেলো, তবু নকশা থেকে যায়
রূপান্তরে, অস্তিত্বের গীতময়তায় বন্দনীয়।