দোলপূর্ণিমা
জ্যোৎস্না ব্যস্ত ছিল ঘরের কাজে।হঠাৎ শুনলো “বসন্ত এসে গেছে!”
বাইরে বেরিয়ে এলো। বসন্তের প্রতীক্ষায় বসে আছে সেই কবে থেকে ,কই !
মৃদুমন্দ বাতাস তার শরীর ছুঁয়ে স্নিগ্ধ-পরশ দিয়ে চলে গেল। আনন্দের হিল্লোলে শিহরিত হলো ।শিমুলের ফাঁকা ডালগুলি ফুলে ভরে গেছে। দূরে শুকনো রুক্ষ জমির উপর পলাশের ডালে আগুন রাঙা ফুল গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।সমস্ত জায়গাটা আলোময় হয়ে উঠেছে। আম্র-মুকুলগুলি মৃদুমন্দ বাতাসে আন্দোলিত হয়ে মিষ্টি গন্ধে ভরিয়ে তুলেছে। ভ্রমরের দল গুণগুণিয়ে ঘুরছে বসন্তের আগমনের বার্তা নিয়ে। মন ভরে গেল সুখের গন্ধে। বসন্ত সত্যিই এসে গেছে। কিন্ত কোথায় সে!
বসন্তের খোঁজে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ঘর ছাড়িয়ে সবুজ ঘাসের পথটা ধরে এগিয়ে যেতে থাকলো। পথের শেষে বনের ধারে খালি গায়ে উত্তরীয় জড়ানো এক যুবক বলে ওঠে-
“কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছ? “
“বসন্তকে,”
“আমিই বসন্ত ! আমার কাছে এসো। “
“তুমি বসন্ত! “
” হ্যাঁ আমিই বসন্ত, যার জন্য তুমি অপেক্ষা করে আছো। আমি আসছি বলেই না এতসব আয়োজন। বোঝো না কেন! আমি এসেছি তোমায় আপন হাতের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে দেব বলে। “
এগিয়ে এসে হাতটি ছুঁয়ে দেয়। পৃথিবীর সব রঙ এসে জোটে জ্যোৎস্নার মুখে। মুখখানি মুহূর্ত মধ্যে রাঙা হয়ে ওঠে। লজ্জা রাঙা মুখখানি কোথায় লুকোবে বুঝতে না পেরে বসন্তের বুকের মাঝেই মুখখানি গুঁজে দেয় পরম নির্ভরতায় । বলিষ্ঠ দুটি হাত জ্যোৎস্নাকে টেনে নেয় বুকের মাঝে।পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে কপালে এঁকে দেয় চুম্বনচিহ্ন। বসন্তের সেই সপ্রেম আলিঙ্গনে আবদ্ধ জ্যোৎস্না ভয়ে, আনন্দে শিহরিত হয়। গলতে শুরু করে বুকের ভেতর জমে থাকা বেদনার স্তূপ। থরথর করে কেঁপে ওঠে। দেখতে দেখতে বসন্তও জ্যোৎস্নার শরীর এক হয়ে লীন হয়ে যায় সেই নির্জন বনপথে। উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত পৃথিবী বাঁধভাঙা হাসিতে সদা আনন্দময়ী হয়ে উঠেছে। আজ দোলপূর্ণিমা!