দেয়াল আমাকে খুব শান্ত স্বরে বলে নানা কথা;
কিছু তার বুঝি সোজাসুজি, কিছু বা বুঝি না। তবু
কান পেতে থাকি যতক্ষণ পারি, দিই মনোযোগ,
পাছে কোনো গূঢ় কথা শ্রুতির ওপারে চলে যায়
উপেক্ষিত অতিথির মতো। দেয়াল শোনায় এক
বালকের বিষাদ কাহিনী, যে হাওয়ায় কথকের
মুদ্রা এঁকে দূর দিগন্তের কোলে মেঘে মেঘে নেচে
বেড়াবার সাধ মনে জ্বালিয়ে রাখতো অগোচরে।
মাঝে মাঝে দেয়ালের কণ্ঠস্বরে ভাসে অতিদূর
নবীন যুবক এক, যার শরীরে দেবতা কিছু
বুলিয়েছে হাত স্নেহ ভরে; সে যুবক কী সহজে
কখনো প্রবেশ করে নীল পদ্মে, কখনো দোয়েল
তার খুব কাছে এসে দেখায় গলার ক্ষত, যেন
শুশ্রূষা প্রার্থনা করে। সেই সদ্য যুবা মধ্যরাতে
অকস্মাৎ জেগে উঠে অদেখা নারীর ধ্যান করে,
রাত জেগে স্থাপত্য গড়ে তোলে নিরিবিলি
খাতার কুমারী পাতা জুড়ে। কখন যে সে যুবক
নেপথ্যে স্বপ্নের কাচ-গুঁড়ো নিয়ে খেলা তার ভোলে,
রাখে না খেয়াল কোনো যেমন বনের পাখি আর
প্রস্ফুটিত ফুল কারো তারিফের মুখাপেক্ষী নয়।
দেয়াল হাজির করে আমার সম্মুখে একজন
প্রৌঢ়কে, জীবন যাকে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে দিয়ে
চেয়েছে নোওয়াতে খুব ঠেলে নিয়ে বার্ধক্য সীমায়,
অথচ সে, প্রায় বুড়ো, উঁচু রেখে জেদী মাথা হেঁটে
যায় তারুণ্যের দীপ্তি ছড়িয়ে সত্তায় কথা বলে
রহস্যের আঁধারের সঙ্গে, ভালোবাসে কী গভীর।
দেয়াল দেখায় তাকে বহুকাল পরে অনুপমা
গৌরীকে, যে স্নান সেরে সরোবরে উঠে আসে ঘাটে;
প্রায়-বুড়ো লোকটা তাকেই পেতে এতকাল শুধু
হেঁটেছে অধীর প্রতীক্ষায় প্লাটফর্মে দীর্ঘ পুড়ে পুড়ে।