Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দলের নাম ব্ল্যাক ড্রাগন || Muhammad Zafar » Page 2

দলের নাম ব্ল্যাক ড্রাগন || Muhammad Zafar

অনুর বাসা থেকে বের হয়ে আমরা চারজন কথা বলতে বলতে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। চঞ্চল বলল, “বুঝলি, ভালো একটা ক্লাব মানে হচ্ছে ভালো একটা আস্তানা।”

টিটন বলল, “ঠিক বলেছিস।”

অনু বলল, “নামটা যখন ভালো হল না, তখন আস্তানাটা খুব ভালো হওয়া দরকার।”

আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, “কী বললি? নামটা ভালো হয় নাই?”

“হয় নাই তো। কালা গুইসাপ একটা নাম হল?”

“মোটেও নাম কালা গুইসাপ না, নাম হচ্ছে ব্ল্যাক ড্রাগন!”

“ঐ একই কথা। ইংরেজিতে ব্ল্যাক ড্রাগন বাংলায় কালা গুইসাপ।”

আমি রেগেমেগে বললাম, “বাংলায় মোটেও কালো গুইসাপ না।”

“তা হলে বাংলায় কী?”

“এটা একটা নাম। নামের আবার বাংলা ইংরেজি আছে? রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে কী তুই নবাব বাঙ্গাল বাঘ বলিস?”

আমার কথা শুনে চঞ্চল হি হি করে হাসতে লাগল। বলল, “নবাব বাঙ্গাল বাঘ! এই নাম শুনলে সুন্দরবনের সব রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুইসাইড করবে!”

টিটন বলল, “ঐসব ছেড়ে এখন বল আমাদের ক্লাবের আস্তানাটা কোথায় হবে। গোপন আস্তানা হতে হবে, কেউ যেন জানতে না পারে।”

চঞ্চল বলল, “আমাদের বাসার দোতলায় হতে পারে। আমি যে ঘরটা ল্যাবরেটরি বানিয়েছি তার পাশের ঘরটা খালি আছে।”

আমি বললাম, “উঁহু। কারো বাসায় বানানো যাবে না। তা হলে সবাই জেনে যাবে।”

“তা হলে কোথায় বানাবি?”

চঞ্চল বলল, “একটা ট্রি হাউজ বানালে কেমন হয়?”

“ট্রি হাউজ?”

“হ্যাঁ। গাছের উপরে একটা গোপন আস্তানা।”

“কোন গাছে?”

“একটা গাছ খুঁজে বের করতে হবে। বড় একটা গাছ।”

অনু বলল, “মিশকাত মঞ্জিলে বড় বড় গাছ আছে।”

“মিশকাত মঞ্জিল!” আমাদের সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

মিশকাত মঞ্জিল শুনে চোখ বড় বড় হওয়ার কারণ আছে। আমাদের পাড়া থেকে নদীর দিকে কিছু দূর হেঁটে গেলে দেয়াল ঘেরা যে বিশাল জায়গাটা আছে তার ভেতরে মিশকাত মঞ্জিল। বাইরে থেকে বোঝা যায় না ভেতরে একটা বড় দালান আছে, গাছপালা ঝোঁপঝাড় দিয়ে ঢাকা তাই পুরানো দালানটা দেখাও যায় না। এক সময় সেখানে মানুষজন থাকত, আজকাল কেউ থাকে না। কেন থাকে না সেটা নিয়ে নানা রকম গল্প চালু আছে। সবচেয়ে বেশি চালু গল্পটা হচ্ছে এরকম : এই বাড়ির মালিক মিশকাত খান খুবই অত্যাচারী ধরনের মানুষ ছিল, তার না কী ডাকাতের দল ছিল। মিশকাত খানের বাসায় ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে কাজ করত। একদিন হঠাৎ করে সেই ছোট মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেল। মেয়েটার বাবা নেই, মা খোঁজ পেয়ে এসেছে মিশকাত খানের সাথে দেখা করতে। মিশকাত খান মা’কে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। বাচ্চা মেয়েটির মা তখন মিশকাত মঞ্জিলের বাইরে দাঁড়িয়ে দুই হাত উপরে তুলে খোদার কাছে বলেছে, “খোদা যেই মানুষ আমার মাসুম বাচ্চাকে খুন করেছে তুমি তাকে নির্বংশ করে দাও। আমার আদরের ধনকে যে নিয়ে গেছে তুমি তার আদরের ধনকে নিয়ে যাও। সে আমাকে যে কষ্ট দিয়েছে তুমি তাকে সেই কষ্ট দাও। তার মুখে পানি দেবার জন্যে যেন কেউ না থাকে। শিয়াল-কুকুর যেন তার লাশ টেনে ছিঁড়ে খায়।”

মিশকাত মঞ্জিলের দারোয়ান সেই মাকে বাড়ির সামনে থেকে তাড়িয়ে দিল। মা কোথায় গেল সেটা আর কেউ জানতে পারল না। কিন্তু তারপর মিশকাত মঞ্জিলে ভয়ংকর সব ব্যাপার ঘটতে থাকল। সবার আগে মারা গেল মিশকাত খানের ছোট বউ। মিশকাত খান অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়েকে জোর করে ধরে এনে বিয়ে করেছিল। সেই বউয়ের সারা শরীরে দেখা গেল গুটি বসন্ত। ভুগে ভুগে মারা গেল সে। বসন্ত রোগের ভয়ে তার অনেক কর্মচারী ও কাজের লোক পালিয়ে গেল। ছোট বউ মারা যাবার কিছুদিন পর বড় বউ গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল। তারপর তার ছেলেমেয়েগুলো একজন একজন করে মারা যেতে লাগল। একজন মারা গেল পানিতে ডুবে। একজন মারা গেল পাগলা কুকুরের কামড়ে। একজন মারা গেল আগুনে পুড়ে। একজন মারা গেল বিষ খেয়ে। ঝড়ের রাতে একজন মাথায় বাজ পড়ে মারা গেল। একজন মারা গেল বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে। শেষ জনের লাশ পাওয়া গেল জঙ্গলে, মুখটা কেউ খুবলে খুবলে নিয়ে গেছে, কীভাবে নিয়েছে কেউ জানে না। এই বাড়িতে অন্য যারা ছিল তখন তারাও একজন একজন করে চলে গেল। পুরো বাড়িতে রয়ে গেল শুধু মিশকাত খান একা।

আস্তে আস্তে মিশকাত খানের মাথা খারাপ হয়ে গেল। মুখে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল, কোটরের মাঝে লাল জ্বলজ্বল চোখ, লম্বা লম্বা নখ। সে একা একা এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আর বিড়বিড় করে নিজের সাথে কথা বলে।

এই এলাকার অনেক মানুষ দেখেছে গভীর রাতে মিশকাত খান তার বাড়ির ছাদের রেলিং ধরে হাঁটছে আর তার পিছু পিছু সাদা কাপড় পরা অনেকগুলো ছায়ামূর্তি হাঁটছে। সবাই ধারণা করে সেগুলো মিশকাত খানের বউ ছেলেমেয়ের প্রেতাত্মা। সেগুলো কোনো কথা বলে না, নিঃশব্দে মিশকাত খানের পিছনে হেঁটে যায়।

আরো যখন রাত গম্ভীর হয় তখন একটা ছোট মেয়ের ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যায়–কখনো কখনো আবার খিলখিল করে রক্ত শীতল করা হাসি।

কাজেই অনু যখন মিশকাত মঞ্জিলের কথা বলল, আমরা সবাই রীতিমতো চমকে উঠলাম। টিটন বলল, “সর্বনাশ! ঐ ভূতের বাড়িতে? আমি ওর মাঝে নাই।”

আমিও মাথা নাড়লাম, বললাম, “মাথা খারাপ? আমাদের জানের মায়া নাই?”

চঞ্চল বলল, “জানের মায়া? তোর জান কে নিতে আসছে?”

“ভূত।”

চঞ্চল বলল, “এই দুপুরবেলা কটকটে রোদের মাঝে তোর ভূতের কথা বলতে লজ্জা করল না?”

“এখন কটকটে রোদ ঠিক আছে। যখন সন্ধ্যা হবে তখন? যখন রাত হবে তখন? তুই তখন যেতে পারবি মিশকাত মঞ্জিলে?”

চঞ্চল গম্ভীর গলায় বলল, “পারব।”

টিটন বলল, “থাক। এতো সাহসের দরকার নাই।”

“এর মাঝে সাহসের কিছু নাই।”

চঞ্চল গম্ভীর গলায় বলল, “ভূত বলে কিছু নাই। যদি থাকত তা হলে এতোদিনে ভূতকে বৈজ্ঞানিকেরা ধরে ফেলত। ভূতদের চিড়িয়াখানা থাকত, সেখানে নানা রকম ভূত থাকত। আমরা টিকিট কেটে সেই সব ভূত দেখতে যেতাম।”

আমি বললাম, “বেশি বড় বড় কথা বলবি না। ভূতেরা যদি তোর কথা শুনে তা হলে তোর খবর আছে।”

চঞ্চল বলল, “কেন? কী হবে?”

“তোকে ধরে নিয়ে তাদের চিড়িয়াখানায় আটকে রাখবে। ভূতের বাচ্চারা টিকিট কেটে তোকে দেখতে আসবে!”

আমার কথা শুনে চঞ্চল হি হি করে হাসল যেন আমি খুব একটা মজার কথা বলেছি।

আমরা কথা বলতে বলতে হাঁটতে হাঁটতে কীভাবে কীভাবে জানি মিশকাত মঞ্জিলের কাছেই চলে এসেছি খেয়াল করিনি। ভাঙা গেটটার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম, টিটন ভেতরে উঁকি দিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে বলল, “বাবারে বাবা!”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী?”

“কিছু না।”

“তা হলে বাবারে বাবা বললি কেন?”

“ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি। আমার ইচ্ছে হলে আমি বাবারে বাবা বলব, মা’রে মা বলব, চাচারে চাচা বলব, তোর কী?”

এই হচ্ছে আমাদের টিটন। তার সাথে কথা বলাই মুশকিল! কথায় কোনো ছিরি ছাদ নেই, কোনো যুক্তি নেই।

চঞ্চলও ভাঙা গেটটা দিয়ে ভিতরে উঁকি দিল। তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আয় ভেতরে ঢুকি।”

টিটন বলল, “তোর মাথা খারাপ হয়েছে?”

“মাথা খারাপের কিছু হয় নাই। চল ভেতরটা কেমন দেখে আসি।”

আমরা কেউ ঢুকতে রাজি হলাম না বলে চঞ্চল একাই রওনা দিল। সেটা প্রমাণ করে আমরা সবাই ভীতুর ডিম তাই আমিও শেষ পর্যন্ত চঞ্চলের সাথে ভেতরে যেতে রাজি হলাম। আমাদের দুজনকে ভেতরে ঢুকতে দেখে অনুও ভেতরে যেতে রাজি হল তখন টিটনের আর না যেয়ে উপায় থাকল না। এমনিতে অন্য সবকিছুতে টিটনের সাহসের কোনো অভাব নেই কিন্তু ভূতের ব্যাপার হলেই তার এক ফোঁটা সাহস থাকে না।

মিশকাত মঞ্জিলের ভেতরে আমরা কখনো উঁকি দেইনি, আজ ভেতরে ঢুকে আবিষ্কার করলাম সেখানে অনেক জায়গা। বড় বড় গাছ, সেই গাছে পাখি কিচিরমিচির করছে। আসলে দালানটি বেশ অদ্ভুত, দেয়ালটি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো দরজা-জানালা নেই। আমরা চঞ্চলের পিছু পিছু পুরো দালানটার চারদিক দিয়ে একবার ঘুরে এলাম। তখন টিটন বলল, “অনেক দেখা হয়েছে, আয় এখন যাই।”

চঞ্চল বলল, “এসেছি যখন তখন বিল্ডিংয়ের ভেতরটা দেখে যাই।”

টিটন বলল, “ভেতরে? সর্বনাশ!”

“সর্বনাশের কী আছে? দেখছিস না এখানে কিছু নাই।”

চঞ্চল একাই বিল্ডিংয়ের ভেতর ঢুকে গেল তাই শেষ পর্যন্ত আমরাও তার পিছু পিছু গেলাম। ভেতরে অনেকগুলো ঘর, সব ঘরই ফাঁকা। এক-দুইটা ঘরের দরজা আছে, বহুদিন ব্যবহার করা হয়নি বলে কজায় মরচে পড়ে গেছে। খোলার সময় ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে। দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাওয়া যায়। সেখানে একটা বারান্দা, গাছের পাতা, জঙ্গল আর খড়কুটো দিয়ে ঢেকে আছে। দেয়ালে শ্যাওলা পড়েছে, এক জায়গায় ইটের ফাটলে একটা বট গাছ। দোতলার ঘরগুলো বেশ বড়। বহুদিন কেউ ব্যবহার করেনি তাই ধুলোবালি, গাছের পাতা, খড়কুটো দিয়ে বোঝাই। পিছনের দিকে একটা অংশের ছাদ ধসে পড়েছে, মনে হয় এদিকে আগুন লেগেছিল তাই সবকিছু পুড়ে গেছে।

চঞ্চল বলল, “এই মিশকাত মঞ্জিলই হতে পারে আমাদের গোপন আস্তানা।”

টিটন বলল, “কক্ষনো না।”

“কেন না?”

“আমরা কী ভূতের বাচ্চা না মানুষের বাচ্চা? ভূতের বাচ্চা হলে ঠিক আছে, মানুষের বাচ্চা হলে ঠিক নাই।”

“দেখছিস না কতো জায়গা খালি পড়ে আছে। বড় বড় গাছগুলোর কোনো একটাতে বানাব ট্রি হাউজ!”

টিটন মুখ শক্ত করে বলল, “আমার ট্রি হাউজের দরকার নাই। খালি জাগারও দরকার নাই।”

ঠিক তখন হুটোপুটির একটা শব্দ হল আর হঠাৎ করে দেখলাম ছোটখাটো ছাই রঙের একটা জন্তু কোথা থেকে যেন ছুটে বের হয়ে গেল। আমরা সবাই চমকে উঠলাম, টিটন ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল।

চঞ্চল বলল, “বেজি!”

টিটন বলল, “এখন বেজি বের হয়েছে। একটু পরে বের হবে শেয়াল। তারপর বের হবে বাঘ।”

বেজিটা যেখান থেকে বের হয়েছে চঞ্চল সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “আজব ব্যাপার!”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী আজব ব্যাপার?”

“বেজিটা কোথা থেকে এলো? এখানে তো দেয়াল। দেয়ালের ভেতর থেকে বেজি বের হয় কেমন করে?”

টিটন বলল, “মনে হয় ওটা বেজি ছিল না। ওটা ভূত ছিল।”

“ভূতের আর কাজ নাই, বেজি সেজে ঘুরে বেড়াবে!”

চঞ্চল দেয়ালটার কাছে গিয়ে দেয়ালটা পরীক্ষা করল, আমিও তার সাথে পরীক্ষা করলাম। নিচে একটু গর্ত, যে গর্তটা দিয়ে বেজিটা বের হয়েছে। আমি বললাম, “এই যে এই ফুটো দিয়ে বের হয়েছে।”

“কিন্তু ফুটোর অন্যদিকে কী আছে? বেজিটা থাকে কোথায়?”

“পাশের ঘরে।”

“তা হলে সে পাশের ঘর দিয়ে পালাল না কেন? এদিক দিয়ে পালাল কেন?”

অনু বলল, “তার কারণ বেজিটা তোর মতো সায়েন্টিস্ট না। সে জানে না তার দিক দিয়ে বের হওয়ার কথা। সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অনুষ্ঠান দেখে নাই।”

“ফাজলেমি করবি না। পশু-পাখির বুদ্ধি তোর থেকে বেশি।”

আমি বললাম, “পাশের ঘরটা দেখলেই বোঝা যাবে কেন সেদিক দিয়ে বের হয় নাই। আয় দেখি।”

আমরা পাশের ঘরে গেলাম, টিটন খুব বিরক্ত হয়ে আমাদের পিছু পিছু এলো, ঘরের দেয়ালটা দেখে আমরা বুঝতে পারলাম কেন বেজি এদিক দিয়ে বের হয়নি। তার কারণ এদিকের দেয়ালে কোনো ফুটো নেই! টিটন পর্যন্ত অবাক হয়ে বলল, “আজব ব্যাপার!”

আমরা তখন আবার আগের ঘরে গেলাম, ফুটোটা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, ভেতরে অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। চঞ্চল বলল, “একটা লাঠি হলে খুব ভালো হত তা হলে গর্তে ঢুকিয়ে দেখতাম অন্য দিক দিয়ে লাঠিটা বের হয় কি না।”

ঘরে নানা রকম জঞ্জাল কিন্তু লম্বা লাঠির মতো কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। বাইরে বড় বড় গাছ আছে তার একটা ডাল ভেঙে আনা যায় কিন্তু তার জন্যে আবার বাইরে যেতে হবে। এই মুহূর্তে কেউ বাইরে যেতে চাইছে না। চঞ্চল গম্ভীর হয়ে ঘরের চারদিকে তাকাল তারপর পা দিয়ে এক মাথা থেকে অন্য মাথা মাপল। তারপর বাইরে গিয়ে বারান্দাটা পা দিয়ে মাপল তারপর পাশের ঘরে গিয়ে মাপল। মাপামাপি শেষ হলে বলল, “ভেরি ইন্টারেস্টিং।”

“কী হয়েছে?”

“এখানে একটা গোপন কুঠুরি আছে।”

“গোপন কুঠুরি?”

“হ্যাঁ। দুইটা ঘর পনেরো পনেরো তিরিশ পা। কিন্তু বারান্দা হচ্ছে আটত্রিশ পা। তার মানে দুই ঘরের মাঝখানে আট পা লম্বা একটা ঘর। সেই ঘরের কোনো দরজা নাই।”

অনু বলল, “শুধু বেজির জন্যে একটা দরজা!”

চঞ্চল বলল, “সেই জন্যেই তো আমরা এটা আবিষ্কার করতে পারলাম! বেজিটাকে থ্যাংকু দেওয়া দরকার।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এই ঘরে কী আছে?”

টিটন বলল, “গুপ্তধন!”

অনু বলল, “কিংবা মানুষের কঙ্কাল।”

চঞ্চল বলল, “আমাদের দেখতে হবে।”

“কীভাবে দেখবি?”

টিটন বলল, “শাবল দিয়ে দেয়ালটা ভেঙে ফেলতে হবে।”

চঞ্চল তখন বাড়াবাড়ি গম্ভীর মুখে বলল, “উঁহু। প্রথমে ভিতরে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা ঢুকিয়ে ভিডিও করে দেখব কী আছে। তারপর ঠিক করব কী করা যায়।”

“তুই ক্যামেরা কোথায় পাবি?”

“জোগাড় করতে হবে।”

আমি বললাম, “দেখলি। আমরা আমাদের ব্ল্যাক ড্রাগন ক্লাবটা মাত্র খুলেছি সাথে সাথেই অ্যাডভেঞ্চার। সাথে সাথে গুপ্তধন!”

অনু বলল, “সাথে সাথে বেজি। সাথে সাথে গুইসাপ!”

আমি বললাম, “মোটেও গুইসাপ না। বেজি।”

টিটন বলল, “ভূত!”

“কোথায় ভূত?”

“এই গোপন ঘরটার ভিতরেই মনে হয় আটকা আছে। দেয়ালটা ভাঙতেই হাউমাউ করে বের হবে।”

চঞ্চল বলল, “যদি বের হয় তা হলে সেটা হবে গুপ্তধন থেকেও দামি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে সেটা কোটি টাকায় বিক্রি করতে পারবি?”

অনু বলল, “যদি ভূতটা ভালো হয় তা হলে তাদেরকে আমাদের ক্লাবের মেম্বারও করে ফেলতে পারি!”

টিটন গরম হয়ে বলল, “খবরদার ভূত নিয়ে ঠাট্টা করবি না।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *