Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তোমার জন্মদিনের তীরে || Shamsur Rahman

তোমার জন্মদিনের তীরে || Shamsur Rahman

যেদিন তুমি জন্ম নিলে
এক মধ্যবিত্ত ঘরে সেদিন বাংলার সবচেয়ে সুকান্ত মোরগ
ডেকে এনেছিল সর্বাধিক প্রসন্ন প্রত্যুষ। সেদিন
গাছের পাতাদের ভিড়ে ধ্বনিত হয়েছিল
অর্ফিয়ুসের বংশীধ্বনি, রঙ বেরঙের ফুলগুলো এরকম
হেসে উঠেছিল যা আগে
কেউ দ্যাখেনি। সেদিন রোদ অনিন্দ্য আবীর হ’য়ে
ঝরেছিল শহরে আর একজন জ্বলজ্বলে তরুণ কবি
তার সবচেয়ে সেরা কবিতাটি রচনা করেছিল। সেই কবিতা
সে তোমাকেই উৎসর্গ করেছিল তোমার অস্তিত্ব বিষয়ে কিছু না জেনেই।

আজ তুমি আর অস্তিত্বহীন নও সেই কবির কাছে,
যে এখন বয়সের মার খেতে খেতে
এখন অবসন্ন, যার সত্তায় সময়ের অজস্র নখরাচিহ্ন।
সে তোমার পরিচয় জানে, সে মালা পরায় তোমার গলায়, জানে
কখন তুমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলে। এখন তো তার
তোমার অনেক কিছুই জানা, প্রায় মুখস্থ।

আজ সেই কবি যখন তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন সে তোমার
ফ্রক-পরা শৈশব, প্রথম শাড়ি পরা কৈশোরকে দ্যাখে। দ্যাখে,
যৌবনের সমুদ্র থেকে প্রফুল্ল নগ্নতায় জলবিন্দু এবং
ফেনা নিয়ে উঠে আসছিলে আফ্রোদিতির মতো।
এখন সে যখন তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে
নিবিড় ভালোবাসায়, তখন তার আলিঙ্গনে বাঁধা পড়ে
তোমার শৈশব, কৈশোর আর থরথর পরথম যৈবন। সে ভাবে,
তার আগে কেউ তোমাকে প্রকৃত চুম্বন করেনি।
আজ তোমার জন্মদিন ফিরে এসেছে আরো একবার নিভৃতে
বিকশিত গোলাপের ঘ্রাণ হয়ে, দোয়েলের
গান হয়ে, জ্যোৎস্না স্নাত নদীর ঢেউয়ের নাও হয়ে। এসেই বাসন্তী ভোরে
কবিকে জড়িয়ে ধরল দু’হাতে। বুকে তুলে নিলো
তার কবিতার খাতা, উদ্ভিন্ন আবেগে
মুখ চুম্বন করল তার বহুকালের লেখনীর

তারপর কী মনে হলো, তোমার জন্মদিন
বলল কবিকে, ‘তোমার এই কবিতার খাতাটা
দেবে আমাকে? দুই মলাটের অন্তর্গত এই’ পাতাগুলি
সুখে আআম্র রাখবে। কবি মৃদু হেসে অক্ষরবৃত্তকে
ঈষৎ পাল্টিয়ে উচ্চারণ করে, এই খাতার আরশি নগরেই
বসত করো তুমি। তোমার অবয়বের সৌন্দর্য, তোমার
জন্মলগ্ন থেকেই। তোমার জন্মদিন জলকন্যা হ’য়ে
সাঁতরাতে থাকে কবির মানস সরোবরে।
উচ্ছৃত জলকণাসমূহ রূপান্তরিত কবিতার পংক্তিমালায়। সত্যি বলতে কী,
এই খাতা তোমাকেই অর্পণ করেছি, কবি বলে উদ্দীপ্ত স্বরে,
এর ওপর অধিকার তোমার চেয়ে বেশি আর কার?

তোমার জন্মদিন তাকে এত সঙ্গ দিচ্ছে ভেবে
কবি বিস্ময়ের মধ্যপথে থেকে দেখল,
তোমার জন্মদিন এক ঝাঁক প্রজাপতি নিয়ে
মেতে আছে খেলায়, কয়েকটি পায়রা আর বনদোয়েল
ঘিরে ধরেছে ওকে আদরের প্রত্যাশায়। তোমার জন্মদিনকে
কবি খুব কাছে টেনে নিয়ে জানায় অভিবাদন।
তুমি, হে সুপ্রিয়ার জন্মদিন, কবির কণ্ঠস্বর স্তব্ধতাকে বাঙ্ময় করে,
বার বার ফিরে আসবে। আমি যখন সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে
বিদায় নেবো, তখনও তোমার সত্তায় আলোচ্ছটায়
উদ্ভাসিত হবে গাছের পত্রালি; তোমার দৃষ্টির স্পর্শে
জেগে উঠবে শূন্য, নিদ্রিত পথ। তুমি প্রতিবার
এসে দাঁড়াবে এক চিলতে বারান্দায়, হাত রাখবে সেই
জানলার গ্রিলে, যেখানে একজন দৃষ্টিকাতর কবি
খুব কষ্ট করে দেখতে চাইতো শহুরে,
কৃপণ নৈসর্গিক শোভা।

তোমার জন্মদিনের তীরে বয়সী কবি
বাঁধল তার ভাঙা নৌকো। তোমার জন্মদিন চতুর্দিকে
আনন্দের রেণু ছড়াতে ছড়াতে তার রাঙা চরণ
রাখল সিএ নায়ে। আয়ত দু’টি চোখ মেলে
বলল, ‘ও রঙিলা নায়ের মাঝি, ভাসাও তোমার নাও
অকুল দরিয়ায়। একবারও ভেবে দেখল না, আকাশময়
ঘোর আন্ধার নেমে আসতে পারে,

তলিয়ে যেতে পারে ভগ্ন তরী। অনুপ্রাণিত নাইয়া তোমার
জন্মদিনের অপরূপ সৌন্দর্যে লীন হ’য়ে অপটু
দু’হাতে বাইতে লাগল বৈঠা।

কখন যে ওরা পৌঁছে গেল অভিনব সুবর্ণ রেখার তীরে
আসমানে গোধূলি ছড়িয়ে পড়ার আগে, বুঝতেই পারল না।
তোমার জন্মদিন আর সেই সাদা চুলের নাইয়া
পারুল বিছানো মাটিতে নেমে
পুঁতে দিলো একটি নিশান। উদ্দাম হাওয়ায় পত পত উড়তে
শুরু করে পতাকা, যাতে নক্ষত্রের হরফে লেখা ‘ভালোবাসা চিরঞ্জীব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress