Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তিমির বিদার || Bani Basu » Page 16

তিমির বিদার || Bani Basu

এ দিকে বিশুদার অনুরোধে হুগলি ডি-আই অফিসে আবার যেতে হল। দেড় মাস হতে চলল, এখনও টুঁ শব্দ নেই। পতিতকাকা শয্যা নিয়েছেন। হঠাৎ বিশুদা আমার দিকে মুখ তুলে বলল— শামুকে নিয়ে যেতে তোর অসুবিধে আছে? আমি একটু চমকে যাই। চালাক লোক, বিশুদা ঠি-ক লক্ষ করেছে।

বলল— কী তাজ্জব কাণ্ড দ্যাখ! ডি আই পর্যন্ত এম এল এ-কে মিছে কথা বলছে, বললে পতিতপাবন সেনের অর্ডার বেরিয়ে গেছে, পূর্ত ভবনে খোঁজ নিতে। তা পতিতকাকা তো এখনও কোনও চিঠিপত্র পাননি। এদিকে বেচারি শয্যাশায়ী। যেতেও পারছেন না।

—শামু যেতে রাজি?

—সে ভার আমার। তুই রাজি কি না বল।

—শামু কি হাত-ফাত তুলবে না কি?

—আরে না না, একটু কড়কে দেবে।

—আমি তো কিছু কম কড়কাইনি।

—দ্যাখ! আবার আমি ফোন করেছি ডি-আইকে। বলছে ক’দিন ছুটিতে ছিল। রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট জানে না। তোদের পাঠাচ্ছি বলে দিয়েছি, যা কিছু দরকারি ইনফর্মেশন কি কাগজপত্র যেন তোদের হাতেই দেয়। এই নে পতিতকাকার লেটার অফ অথরিটি। আমি অ্যাটেস্ট করে আমার সিল দিয়ে দিয়েছি।

সুতরাং শামুর সঙ্গে আবার হুগলির ট্রেনে চড়ে বসি। ট্রেনে আজ সেই তাসপার্টি নেই দেখলাম। থাকলে আজ মজা মন্দ হত না। শামু একেকটাকে একেক দিকে ছুড়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে দৃশ্যটা বড্ড দেখতে সাধ হচ্ছে।

কেষ্টবাবু মুখ নিচু করে নস্যি নিচ্ছিলেন। রুমাল দিয়ে উদ্বৃত্ত নোংরা ঝেড়ে মুখ তুলেই আমাদের দেখে স্থির।

—সেই পতিতপাবন সেনের কেস না?

—আজ্ঞে।

—তাঁর দু’-চারটে ভুল বেরিয়েছে, কাগজপত্র ঠিক নেই।

—পাঁচ বছর পরে সেটা বলবার টাইম হল? —শামু ঠাণ্ডা গলায় বলল।

—তা কী করব! কাজ কি কম না কি? প্রতিদিন হাজার হাজার টিচার রিটায়ার করছে।

আমি বলি—কী কাগজ চাই আর?

—উনি যে বছর এম এ দিয়েছেন তার লাস্ট ডেট।

—তাই বুঝি? এটা লাগে?

—না লাগলে আর বলছি কেন?

—ওটা যদি জোগাড় করে আনা যায়ও তখন বলবেন পরীক্ষায় যে যে গার্ড দিয়েছিল, তাদের নাম চাই। সেগুলোও যদি জোগাড় হয়ে যায় তখন গার্ডদের বাপের নাম, শালার ঠিকানা, অকুপেশন এগুলোও দরকার হবে তো!

—বাজে কথা বোলো না ছোকরা— কেষ্ট খেঁকিয়ে ওঠে— যা লাগে তাই-ই বলেছি।

শামু হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে বলল—ঠিকাছে ঠিকাছে— রুণু তোরা ছেরাদ্দের সময়ে জিনিসের বদলে, মাথা-টাথা না কামালে তার বদলে বামুনকে মূল্য ধরে দিস না?

—তা দিই।

—এ শালাকেও মূল্য ধরে দে। পতিতকাকার চিঠিটা আমরা আজকেই হাতে হাতে নিয়ে যাব। আর ওই পূর্ত না ফূর্তর চিঠিটা আমরাই রেজিস্ট্রি ডাকে ফেলব। দে শালাকে।

কী জিনিস বেশি ছিল শামুর গলায় আমার থেকে, জানি না, লোকটা একটাও কথা বলতে পারল না।

—কত? কুইক।

ঢোঁক গিলছে, ঠোঁট চাটছে লোকটা। বুঝতে পারছে না এটা ফাঁদ কি না। আশেপাশে আজ কেউ নেই। ক্লোজ দাঁড়িয়ে শামু একটার পর একটা পাঁচশো টাকার নোট বার করছে। আমি এই সময়ে টুক করে ডি-আইকে ডেকে আনি।

—টাকা কীসের? অ্যাাঁ এত টাকা? —ডি-আই পেছন থেকে ধাক্কা খাওয়া গলায় বলে উঠলেন।

আমি শামুরই মতো মস্তানি গলায় বললাম, ইনি পুরুত বামুন, সার মূল্য না ধরে দিলে কাজ করেন না। পতিতপাবন সেন শয্যাশায়ী। বুড়ো বয়সে দিনের পর দিন ব্যাচের পর ব্যাচ ছাত্র পড়িয়ে যাচ্ছিলেন, খাটুনিটা সহ্য হয়নি, একেবারে বিছানা নিয়েছেন। কী করি বলুন, কারওর দ্বারাই কিছু হল না, এম এল এ, ডি আই, কেউ সিধে করতে পারলেন না এই টেঁটিয়া কেরানিটাকে। আপনার সামনেই তাই এটাকে ঘুষ দিয়ে যাচ্ছি, সাক্ষী থাকুন।

—এ কী কাণ্ড, ছি, ছি, ছি। কেষ্টবাবু!

—আমি তো নিইনি সার।

—জানেন আপনারা ঘুষ দেওয়াও একটা দণ্ডনীয় অপরাধ।

—বিলক্ষণ জানি— শামু বলল, তা দেওয়ার জন্যে নয় আমায় জেল খাটান, কিন্তু নেওয়ার জন্যে এ নস্যিদানিটাকেও খাটাতে হবে। ও বলছে নেয়নি, ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে ও নিচ্ছিল, বহুদিন ধরে নিচ্ছে। আপনি আসাতে বাধা পড়েছে। কথাটা আপনিও জানেন।

—আপনারা বসুন বসুন। আমি নিজে এক্ষুনি চিঠি তৈরি করে দিচ্ছি।

ঘণ্টাখানেক পরে পূর্ত ভবনের চিঠিখানা পাই, সেটা রেজিস্ট্রি করে আমরা সেই একই দোকানে এসে বসি যেখানে পতিতকাকার সঙ্গে বসে লাঞ্চ খেয়েছিলাম।

বললাম— কী রে শামু। কী খাবি? তোর খাওয়া পাওনা।

বলল— মাল্লু খাওয়াতে পারিস? মাল্লু? মাথাটা গরম হয়ে গেলে বুঝলি শরীরটাও গরম করতে লাগে। নইলে ব্যালান্স থাকবে না। তোর তো আবার এ সব চলে না।

—চলবে না কেন? কিন্তু আজ নয়। আজ পতিতকাকার চিঠিটা ওঁর কাছে পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।

—বহুত মায়া-দয়া তোর শরীরে, না রে রুণু? তবু আমার বোনটাকে রমজান আলির থাবা থেকে বাঁচাবি না! বোনটা মাধ্যমিক পাশ করল ফার্স্ট ডিভিশনে। আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। জানিস তো ওকে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছি?

—এইটাই তো কাজের কাজ করেছিস শামু। বোনটাকে সাপোর্ট দে, বিয়ে শাদির কথা এখনই ভাবছিস কেন? রমজান আলির সাধ্য কী তোর বোনকে বিয়ে করে তুই যদি না দিস!

—এই ক্ষমতাটা আমার নেই। কেন, কী বৃত্তান্ত তুই বুঝবি না রুণু।

—এ কথাগুলো বলিসনি শামু, আমার খারাপ লাগে।

চা খেতে খেতে গুম হয়ে বসে রইল শামু। কিছুক্ষণ পরে বলল —রমজান বহোৎ খতরনাক মাল আছে, তোকে সাবধান করে দিলুম রুণু। যা বাড়ি যা।

—তুই যাবি না?

—আমার এখানে এক দোস্ত আছে, চলে যাচ্ছি। ওর কাছে মাল পাওয়া যাবে। একসঙ্গে বসে না খেলে মজাও নেই।

আর দিন পনেরোর মধ্যে পতিতকাকার পেনশনটা হয়ে গেল। এরিয়ার সব জমা পড়ল ওঁর অ্যাকাউন্টে। একদিন কোনওমতে কাকাকে ট্যাক্সি করে পূর্ত ভবনে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। বাকি যা করার আমিই করেছি। অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথম টাকা তুলে আনলাম আমিই। কাকিমাকে বললাম— কাকাকে মুরগির স্যুপ খাইয়ে যান, আর মৌসাম্বির রস।

—আমি এমনিই সেরে গেছি রুণু। পতিতকাকা হাসিমুখে বলেন।

—ওটা তো একটা সাময়িক ফিলিং কাকা, শরীরটার দিকে নজর দিন। নেগলেক্ট করবেন না। কাকিমা আপনারও কিন্তু চেহারা ভাল ঠেকছে না। মুরগির স্যুপটা আপনাকেও খেতে হবে।

—অনেক ধার হয়ে গেছে, বুঝলে বাবা!

—কত?

—তা লাখ টাকার মতো।

—বেশ তো শোধ দিয়ে দিন। স্যুপটাও খান। অসুবিধে তো কিছু দেখছি না।

—তুমি আমাদের জন্যে যা করলে, জীবনে কোনওদিন ভুলব না…

পতিতকাকা এমন করতে লাগলেন যেন আমি আমার পকেট থেকেই পেনশন, গ্র্যাচুইটিগুলো ওঁকে দিয়েছি দয়া করে। টাকাগুলো ওঁর প্রাপ্য ছিল না।

কী জোচ্চোর এই সিস্টেম! পাঁচ বছরেরও বেশি একজন সাধারণ মাস্টারমশাই মানুষকে বসিয়ে রাখে! ভেতরটা রাগে জ্বলছে। কিছুদিন আগেই কাগজে খবর বেরিয়েছিল একজন মাস্টারমশাই এ রকম ভিক্ষে করছেন। কাগজে বেরোতে নাকি কেসটার সুরাহা হয়। না কি! কেউ তো দেখতে যাচ্ছে না সত্যি সুরাহা হয়েছে কি না! এখন, মানুষটার জীবন থেকে এতগুলো বছর যে বিনাদোষে উঞ্ছবৃত্তি করে, দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায় নিদ্রাহীন কেটে গেল, তার কমপেনসেশন দেবে কোন শালা?

বিশুদা ঘুরন চেয়ারে এক পাক ঘুরে গিয়ে বললে— একটা মস্ত উপকার তুই করলি রুণু! তোদের মতো তরুণরা যদি এভাবে এগিয়ে আসে, তবেই সমাজটার সর্বাঙ্গীণ দুরবস্থার একটা সুরাহা হবে।

আমার কেমন রাগ হয়ে গেল, বলি— তা তোমরা রয়েছ কী করতে? জন-প্রতিনিধি বলে কথা! ভোট দিয়ে পাঠিয়েছি। তার পরেও সমাজের সর্বাঙ্গীণ দুরবস্থার সুরাহা আমাদের মতো বেকার তরুণদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছ? বাঃ!

—পতিতকাকার জন্যে শেষ পর্যন্ত আমায় কী করতে হয়েছে জানিস?

—কী?

—মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলি— আপনাদের পার্টির লোক না হলে কি মাইনে পেনশন…এ সবও দেবেন না দাদা!—ছি ছি ছি এ কী বলছেন! উনি বললেন। —পেনশনার ভদ্রলোক কোনও পার্টিরই না। আর আমি ওঁর জন্যে বলছি। তা বিরোধী এম এল এ-র কথা তো আপনাদের ডি আই পর্যন্ত গ্রাহ্য করছে না। পাঁচ বছর পার হয়ে ছ’-বছর হতে চলল পতিতপাবন সেন পেনশন, গ্র্যাচুইটি, কোনও এরিয়ার কিচ্ছু পাননি। একটা মানুষের চলে? এ তো ধরে বেঁধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া, নয় কি? এর চেয়ে তো পেনশন-প্রাপ্ত ষাট বছুরেদের ওপর দিয়ে একটা স্টেনগান চালিয়ে দিলেই হয়। টট্টর টট্টর টট্টর, ব্যস সব শেষ।

উনি সঙ্গে সঙ্গে আমার সামনে হুগলি ডি-আই অফিসে ফোন করলেন। নিজে। তবে পতিতকাকার কেসটা হল।

আমি বললাম, হ্যাঁ অন পতিতকাকাজ বিহাফ আমি, আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ বিশুদা। কিন্তু এই কৃতজ্ঞতাটারও ভেবে দেখতে গেলে কোনও মানে হয় না।

—কেন বল তো! —বিশুদা অবাক হয়ে সামনে ঝুঁকে বসল।

—প্রথমত পেনশনটা যে শালা আটকে ছিল, সেই কেষ্টা একটা পেটি ক্লার্ক সে সাহসটা কোত্থেকে পায়, হৃদয়-ফিদয়ের কথা ছেড়েই দিলাম। লোয়ার ডাউন একটা সিসটেমের নাট-বল্টু যখন এমন হয়, তখন দোষটা কিন্তু ওপরে যারা আছে তাদের, সে তোমার ওই মন্ত্রীই বল, আর তোমার মতো এম এল এ-ই বল।

—আমার দোষটা কোথায় রুণু! আমি আমরা কি পাওয়ারে আছি।

—গ্যারান্টি দিতে পারো, পাওয়ারে এলে স্বর্গরাজ্য না হোক, এ সবের প্রতিকার হবে? অন গড, তোমার ইষ্ট দেবতার দিব্যি, গ্যারান্টি দিতে পারো?

বিশুদা কিছুক্ষণ থতমত খেয়ে রইল। জাস্ট ক’ সেকেন্ড। তারপর বলল—চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু গ্যারান্টি কী করে দেব বল। ধর সমাজটা সর্বস্তরে পচে গেছে। রাস্তায় ময়লা ফেলতে হয় না এটুকু শেখাতেই জান চলে গেল। তার পর এত মানুষ। একেবারে থিকথিক থিকথিক করছে। কতক জন্মাচ্ছে, কতক নেবারিং স্টেট থেকে এসে যাচ্ছে, কতক আবার বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এসে যাচ্ছে। ইনফিলট্রেশন। অনেস্টলি একটা চেষ্টা করতে পারি, তার পরেও দেখ, আমরা এক একটা দল, টিম ওয়ার্ক করি, সব কিছু দলের নির্দেশে হয়। ইনডিভিজুয়ালি কিছু করার সুযোগও কম। আমার নিজের তো ইচ্ছে করে একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ে দিই। মানুষ জন্মাবে নির্দিষ্ট হারে, সবাইকার জীবিকার ব্যবস্থা থাকবে, কেউ কাউকে অনর্থক ঘোরাবে না, ঘুষঘাষ নেবে না, কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলবে না, নর্দমায় প্লাস্টিক ফেলবে না। হাসপাতাল হবে স্বর্গের মতো, স্কুল-কলেজে মনুষ্যত্বের শিক্ষাও দেবে। আরও কত সাধ, স্বপ্ন দেখি, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। কিন্তু দ্যাখ এত-র পরেও, পতিতকাকার কেসটা এভাবে করে দেবার পরও তোরা হয়তো আমায় ভোট দিবি না।

—তুমি তো বলছ গ্যারান্টি দিতে পারছ না, তা হলে?

—গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে রুণু, তুই আমার নিজের ছোট ভাইটির মতো তাই বলছি দল আছে না? নিজের দল। অন্যের দল। তুমি যেই একটু শক্ত হাতে সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা করছ, জনগণ অভিমানে মুহ্যমান, সেই সময়ে অন্য দলগুলো এই অভিমানের ফায়দা তুলবে। পদযাত্রা, আইন-অমান্য, বনধ্‌, মিটিং করে করে এসব অন্যায়, আমরা এর প্রতিবাদ করি এইসব বলে জনগণকে কনফিউজ করে দেবে! একটা ডামাডোল, হট্টগোল, তারপর আবার যে কে সেই।

—গোলি মারো দলকে!

বিস্ফারিত চোখে বিশুদা বলল— আমার দলকে আমায় গোলি মারতে বলছিস, তোর সাহস তো কম নয়!

—গোলি মারো, ওয়ান অ্যান্ড অল। যারা শুধু নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে, ভাল কাজ করলেও করে সুদ্ধু ভোটের জন্যে, ভোটবাক্সের দিকে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে, গোলি মারো সেই পার্টি সিস্টেমকে।

—তো তার বদলে কোন সিস্টেম আসবে?

—সে বড় বড় মাথারা ভাবুন। আমাদের কথা তো বড় নাইভ শোনায় কি না! আসি বিশুদা।

বিশুদাকে মুহ্যমান রেখে আমি বেরিয়ে আসি। আরও দু’ কথা আমাদের তরফে শোনাতে পারতাম বিশুদাকে। আমার বা দীপুর এত দিনেও কিছু হল না কেন? আমরা তো একেবারে ফ্যা ফ্যা নই! দীপু বেচারি একটা স্কুলের চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে আছে। আমার কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এস টি ডি, আই এস ডি বুথে চারদিক ছেয়ে গেছে এখন, আর সে ক্ষেত্রেও গদাকে আমায় তোলা দিতে হবে। কাজেই ও চিন্তাও ছেড়ে দিয়েছি। এখন বিশুদা যা জোগাড় করতে পারে। কর্পোরেশনে বিশুদার যথেষ্ট হোল্ড আছে, জগাদা বলছিল। একটা অন্তত ইন্টারভিউয়ের সুযোগও কি পেতে পারি না? আসল কথা, বিশুদা আমার বা দীপুর কারওই ভোট সম্পর্কে শিওর নয়। দাসখত লিখে দিতে হবে পায়ে, তবে যদি একটা বিস্কুট দয়া করে কুকুরের মুখে ছুড়ে দেয়। অথচ বিশুদা নিজে কী? কলেজ ড্রপ-আউট। জাস্ট গদার মতো। ছাত্র-পরিষদ করত, তারপরে যখন রাজনীতির বৃহত্তর আসরে নামল তখন কংগ্রেস ভাঙছে, ইন্দিরা-কংগ্রেস ভাঙল, বিশুদাও ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরিয়ে এল। নিতাইকাকা বিশুদার রাজনৈতিক গুরু, তার সঙ্গে বিশুদার মুখ দেখাদেখি নেই। বিশুদা তবু ভদ্রভাবে কথা বলে, নিতাইকাকা সোজাসুজি বলে— বিশে ওই ছুঁচোটা? ওর কাছে যাস নাকি? ও তো একটা ফোর-টোয়েন্টি! অথচ নিতাইকাকা নিজেই বা কী! কংগ্রেস ভাঙার সময়ে এ কংগ্রেস ও কংগ্রেস বিস্তর ঘাটের জল খেয়েছে। আদর্শ না কচু! কোন ফ্যাকশনে থাকলে খাবার সুবিধে, দাপিয়ে বেড়াবার সুবিধে এটাই দেখেছে। নিতাইকাকাও কলেজ ড্রপ-আউট। পতিতকাকার থেকে বছর দশেকের জুনিয়র। পতিতকাকাই একবার বলেছিলেন, নিতাই সব ক’টা পরীক্ষা টুকে পাশ করেছে। তার ওপর ছিল তোতলা। অথচ এখন অত ভাল বক্তৃতা দেয় কেমন করে কে জানে? মানুষ চেষ্টা করলে কী না পারে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress