অনেকগুলো গোলাপ এসে জড়ো হয়
একটি বিষণ্ন সিঁড়িতে, বলে, আমরা ফুটিনি কোনও বাগানে
অথবা ঝিঁ ঝিঁ-ডাকা বিরানভূমিতে,
আমরা প্রস্ফুটিত একটি উদার, সহিষ্ণু বুকে,
যে-বুকের বিশালতা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের
চেয়েও অধিক বিশাল;
যে-বুকের গভীরতা সঙ্গোপসাগরের চেয়েও অধিক গভীর।
আমাদের জন্ম হয়েছে বুকের ক্ষতরূপে সেজে ওঠার জন্যে।
সেই গোলাপগুচ্ছ বলে, আমাদের চোখে অশ্রুধারা নেই,
আমাদের দৃষ্টিতে ভরা আগুনের ফুলকি,
যা সর্বক্ষণ জ্বালা ধরাবে ঘাতকদের পিটপিটে চোখে,
আমাদের পাপড়িতে কোনও পেলবতা নেই,
ওরা প্রত্যেকে একেকটি লাল পাথর, যাদের বৃষ্টিতে দিশেহারা
ঘাতকেরা মৃত্যু ভিক্ষা করবে
প্রতি মুহূর্তে মরণের কাছে। পৃথিবীর সবচেয়ে হীন,
কুৎসিত জীব ব’লে লানতের বকলেস ঝুলবে ওদের গলায়।
তিনি সেই বিশালকায় পুরুষ, এক-বু
গোলাপ নিয়ে দাঁড়াবেন, তাঁর মাথা ছোঁবে মেঘমালা,
গলায় বাজকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলবেন,-
হায়, ওরা আমাকে একুশ বছর ভাল ক’রে দেয়নি দেখতে
গ্রীষ্মের আমবাগানের ছায়া, বৈশাখী ঝড়;
হায়, ওরা আমাকে একুশ বছর ভাল ক’রে দেখতে দেয়নি
বর্ষার ভরা নদী আর কদম ফুল;
হায়, ওরা আমাকে ভালো ক’রে দেখতে দেয়নি শরতের
নীল আকাশের নিচে হাওয়ায়-দোলানো কাশফুল;
ওরা আমাকে একুশ বছর ভাল ক’রে দেখতে দেয়নি
হলুদ হেমন্তের ফসল, মেঠো ইঁদুর, আর কুয়াশার বিষণ্ন জাল;
ওরা একুশ বছর আমাকে ভাল ক’রে দেখতে দেয়নি
বাংলার শীতের পাখি আর রকমারি নক্শি পিঠা,
হায়, ওরা আমাকে একুশ বছর ভাল ক’রে দেখতে দেয়নি বসন্ত-পলাশ,
শহীদ মিনারের অগণিত পুষ্পার্পণ,
এবং একুশের ছায়ানটের অনুষ্ঠান, বইমেলা।
তিনি তাঁর ইতিহাসচিহ্নত তর্জনী উঁচিয়ে বলবেন-
আমার চামড়া, হাড়, মাংস, মেদ, মজ্জা সমেত ফিরে এলাম কি
এলাম না, সেটা কোনও কথা নয়। আমি তোমাদের মধ্যে ছিলাম,
আছি, থাকব কৃষকের হাসিতে, শ্রমিকের পেশীর ঝলকে, মেঘনার
মাঝির গুণ টানায়, শঙ্খচিলের উড়ালে, পদ্মার ইলিশের
ঝলসানিতে, ছাত্রছাত্রীর উৎসবে, রাজনৈতিক কর্মীর অঙ্গীকারে,
কবির স্বপ্নকাননে পথ চলায়, প্রত্যূষের বৃষ্টিভেজা পথের দিকে চেয়ে থাকায়,
হঠাৎ ভাতশালিখ দেখে নেচে-ওঠা শিশুর জল্লাসে।