Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তাজ্জব ব্যাপার || Samarpita Raha

তাজ্জব ব্যাপার || Samarpita Raha

তাজ্জব ব্যাপার

কে ওখানে! অন্ধকারে কার ছায়া !
বুলু এলি বাবা!!
কর্তা বলে তোমার চোখ ,মাথা সব গেছে।
সারাদিন বুলু বুলু করো না তো!!

আমি চিৎকার করে বলি , সারাদিন ধরে বলি না, বিগত দশ বছর ধরে বলছি।
নিজের তো আসলে মগজের ঘিলু শুকিয়ে গেছে।সত্তর শতাংশ স্মৃতি চলে গেছে। তিরিশ শতাংশ বেঁচে আছে।
কর্তা বলে শুধু তুমিই বলো আমি সব ভুলে গেছি। উফ্ এখনো টনটনে স্মরণশক্তি।
তুমি তো ওই এক বুলু ছাড়া কিছুই জানো না।
কে না কে বুলু !তাকে নিয়ে যত ভাবনা!!
এই যে পুজো গেলো তোমার বুলু তোমাকে শাড়ি পাঠিয়েছে?
বিজয়া দশমীর নাড়ু পাঠিয়েছে!
ওই বুলু বুলু!
কু ইঙ্গিত করছ !
ও আমাদের একমাত্র ছেলে।যাকে তুমি একসময় চোখে হারাতে।ওই ছেলে যখন বলত বাপি এটা চায় , তুমি তৎক্ষণাৎ বাজারে ছুটতে। ছেলের পছন্দের সব খাবার কিনে আনতে।
তারপর কর্তা বলে তাই নাকি গো!
সত্যি আমার বুলুর কথা মনে নেই!
তারপর থেকেই বুলুর কথা ভেবে তোমার অ্যালজাইমার রোগ হয়ে গেল।
আমার রোগ হলে চলবে কি?
তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো।
এই যে হাঁটু দুটো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ছেলে কাছে থাকলে কিছুতো ভাবা যেত। তোমাকে রাস্তাতে ছাড়লে তুমি ঠিক হারিয়ে যাবে।

অসময়ে কলিংবেলটি বাজে। এগিয়ে গিয়ে দেখি পাশের ঘরের নবাগতা প্রতিবেশী বিজয়া দশমী করতে এসেছেন।আলাপ হলো ,বেশ আনন্দ ও লাগল।
বুড়ো ও বুড়ির সংসার। কেউ আসলে আনন্দ লাগে বৈকি।তারপর মহিলার কথা তে বুঝতে পারি বিগত দশবছর হলো মহিলার বর স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। তখন সে সদ্য বিবাহিতা।তারপর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাড়ির সব কিছু পুড়ে যায়।তাই বরের স্মৃতি ফেরাতে ডাক্তারের পরামর্শে দশ বছর পরে কোলকাতায় আগমন।
তাড়াতাড়ি করে আমি কিছু রান্না করে নবাগতা মহিলাকে দিই। পরদিন মহিলার ঘরে কটা নাড়ু বানিয়ে বিজয়া করতে যাই।
একমুখ দাড়ি লোকটা বলে নাড়ু!
মহিলা (রীনা)বলে হ্যাঁ নাড়ু বলে, তুমি চেনো।রীনা বলে মাসীমা আমার স্বামী নাড়ু চিনতে পেরেছেন।
আমি একটু ভয় পাচ্ছিলাম ছেলেটিকে দেখে। কোনোরকমে পালিয়ে আসবার ছুঁতো খুঁজছিলাম। কেননা ছেলেটা টপাটপ করে দশটা নাড়ু খেয়ে নিল।আমায় বলছে আরো দাও।চলো তোমার ঘরে।
রীনা বলল , দেবেন উনি।চলো চুল দাড়ি কামিয়ে আসবে। ফেরার পথে ঠিক নিয়ে আসব। আমি ভাবছি আর কটা নাড়ু পড়ে আছে। এবার কেউ আসলে তাকে কি দেবো। আমি কাজ আছে বলে পালিয়ে আসি। বাইরে থেকে কর্তাকে তালা চাবি দিয়ে গেছি।খুলতে না খুলতেই ছেলেটা আমার ঘরে চলে আসে। তখন একটু অন্যমনস্ক ও ছিলাম।আমাদের বুলু ও নাড়ু ভালো বাসত।যখন পুরানো বাড়িতে থাকতাম তখন কৌটো করে দশমীর দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাড়ু আনত। অবশ্য আপনমনে হেসে বলি ,ও একেবারে ছোট ছিল।তারপর ইঞ্জিনিয়ার হলো।তখন কি আর এই সব করেছে।বিদেশ যাবার আগে পুরানো পাড়া ছেড়ে এই ফ্ল্যাটে উঠলাম।তারপর বুলু হারিয়ে গেল।
আমার কর্তার যে নাপিত চুল কাটে তাকে ফোন করে ডাকি। রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি, মেয়েদের মতো বড় চুল।হাতে দুটো নাড়ু নিয়ে বলে হ্যাপি বিজয়া দশমী। চুল ও দাড়ি নাকি চারবছর কাটে নি।এ কাকে দেখছি আমার বুলু। রীনা বলে আপনি আমার শাশুড়ি মা।
তারপর শৈশব থেকে সব জিনিসপত্র দেখিয়ে বুলু স্মৃতি ফিরে পাচ্ছে।
আমরা ভালো আছি।তারপর নাতি নাতনী নিয়ে আমাদের ভরা সংসার।
এবারে পুজোর কটাদিন হৈ হৈ করে কাটল।আজ বিজয়া দশমী। সারা বাড়ি নাড়ু,কুচো নিমকি,এলোঝেলো,গজা, ঘুগনি,আলুর দমের গন্ধ।
সব সামলাচ্ছে বিদেশিনী বৌমা। শুভ বিজয়া জানাতে বাড়িতে আত্মীয়দের ভীড়।তার মধ্যে নাতি নাতনী চিৎকার ঠাম্মী পাপা সব নাড়ু খেয়ে নিল।
মনে মনে ভাবি ঈশ্বর দশ বছর অনেক কাঁদিয়েছ।আর কাঁদিও না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *