আলোর শেষ কণিকাটুকু
আলোর শেষ কণিকাটুকুও গেল মিলিয়ে। ছায়াচ্ছন্ন হয়ে গেল চরাচর। থেমে গেল বিশ্বের সমস্ত গান। যে-গান সুর সংগ্রহ করেছে কোটি কোটি মানুষের কলরব আর পাখির কলস্বর থেকে, বাতাসের দীর্ঘশ্বাস আর মর্মরিত অরণ্য থেকে, মহাসমুদ্রের গর্জন আর নদীর ঝিরিঝিরি থেকে; সুর সংগ্রহ করেছে গাড়ির শব্দ, যন্ত্রের শব্দ, মাটির গায়ে গাঁইতি শাবল আর লোহার গায়ে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ থেকে,—সে-গান আর কোনোদিন ওর কাছে সত্য হয়ে উঠবে না। ওর ঘুম ভাঙাতে পারবে না।
নির্বাণহীন এক বয়লারের উত্তাপে তরল হয়ে যাওয়া রুপোর স্রোত প্রবাহিত হয়ে চলেছে অনন্তকালের পৃথিবীর ওপর দিয়ে, সে-স্রোত হার মেনে মাথা হেট করল শুধু ওই ঘুমন্ত চোখজোড়ার কাছে।
অথচ এই কিছুক্ষণ আগেও আলোর জন্যে কী ব্যাকুল আকুতি ফুটে উঠেছিল ওর কণ্ঠস্বরে।
জানলাটা খুলে দাও না, আলো আসুক।
বিকৃত সেই স্বরটা একটা আর্তনাদের মতো আছড়ে পড়েছিল বাতাসের গায়ে, তার থেকে ঘরের মেঝেয়। অন্তত তাই মনে হয়েছিল কমলাক্ষর।
তারপর সেই শেষ একটা মোচড়।
রাত্তির হয়ে গেল, আলো জ্বালছ না কেন?
উঠতে চেষ্টা করেছিল, উঠতে পারেনি। আলোর জন্যে আকুলতাও করেনি আর। গত সন্ধ্যার মতো হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে খোঁজেনি-কোথায় বসে আছ তুমি? আমি যে দেখতে পাচ্ছি না।
কমলাক্ষ উঠে দাঁড়ালেন।
বসে থাকবার সময় নয়। এখন তো এই এতবড়ো বিপদের দায়িত্বটা সমস্ত নিতে হবে তাকে। উপায় কি, মানুষের চামড়া রয়েছে যখন গায়ে। নিথর হয়ে যাওয়া মানুষটার দিকে তাকালেন একবার। অদ্ভুত রকমের অচেনা লাগছে।
কিন্তু অচেনা ছাড়াই বা কি? সাতটা দিন আগেও তো পৃথিবীর শত শত কোটি অদেখা লোকের দলেই ছিল ও। মাত্র কয়েকটা দিনের জন্যে এসে কী আশ্চর্য রকম জড়িয়ে পড়লেন, ভেবে অবাক লাগছে কমলাক্ষর।
বন্ধু নয়, আত্মীয় নয়, হোটেলওয়ালা। সম্পর্ক শুধু পয়সার লেনদেনে। তবু আর একটা হিসেবও রাখতে হয় বইকি। পৃথিবীর কাছেও একটা ঋণ থাকে যে মানুষের। মানুষ হয়ে জন্মানোর ঋণ।
কমলাক্ষ বিছানার পাশের টুলটা ছেড়ে উঠলেন। সদ্যমৃতের মাথার কাছে প্রায় মৃতের মতোই নিথর হয়ে বসেছিল যে-মানুষটা, তাকে উদ্দেশ করে আস্তে প্রায় অস্ফুটে বললেন, কোথায় কোথায় টেলিগ্রাম করতে হবে, তার ঠিকানাটা–
পাথরের দেহে সাড়া জাগল না, শুধু পাথরের মুখে স্বর ফুটল, কোথাও না। একটা যান্ত্রিক স্বরে উচ্চারিত হল কথাটা।
কোথাও না। মানে আপনাদের আত্মীয়স্বজনদের
যন্ত্রের মধ্য থেকে যন্ত্রের শব্দের মতোই ভাবহীন, আবেগহীন, নিতান্ত নির্লিপ্ত উত্তরটা কমলাক্ষকে বিমুঢ় করে দেয়। আমাদের কোনো আত্মীয় নেই।
বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কমলাক্ষ, সত্যিই বিমূঢ় হয়ে রইলেন অনেকক্ষণ।
এরপর আর কোন প্রশ্ন করবেন?
তবু তো করতেই হবে। নইলে কী করবেন? একটা কোনো ব্যবস্থা তো করা চাই।
এখানে কোনো কেউ চেনাশোনা–
এখানে? পাথরের প্রতিমা মুখ তুলল এবার। বুঝি বা একটু হাসলই। তারপর বলল, এখানের বাসিন্দারা কেউ আমাদের মুখ দেখে না। শুধু আপনাদের মতো এই বাইরের বোর্ডারদের নিয়েই দিন চলে যায় আমাদের। হঠাৎ আর একটু সত্যি হাসিই হাসল বোধ হয় ও বলল, মানে চলে যেত।
চলে যেত!
এরপর আর কিভাবে দিন চলবে, আদৌ চলবে কি না—সে-কথা জানা নেই ওর। কমলাক্ষ এই সাত দিনেও যার নাম জানেননি, জানবার চেষ্টাও করেননি। জানা দরকার একথা ভাবেনইনি।
এখনও ভাবলেন না। শুধু ভাবলেন, তাই তো! আমি কেবলমাত্র এদের প্রবাস বোর্ডিঙের বাইরের বোর্ডার, তা ছাড়া আর কি?
কমলাক্ষ কি তবে এদের বিপদ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না? কমলাক্ষ এ-ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘর থেকে সুটকেসটা হাতে তুলে নিয়ে সোজা স্টেশনে চলে যাবেন? সম্ভব নয়?
একেবারে অসম্ভব? কমলাক্ষ তো জীবনে আর কখনও এই পলাশপুরে আসবেন না। ওই যে মানুষটা সম্পূর্ণ ভাবলেশশূন্য মুখ নিয়ে যান্ত্রিক স্বরে শুধু জানিয়ে দিল, ওদের কোনো আত্মীয় নেই, এখানে কেউ ওদের মুখ দেখে না, কমলাক্ষকেও তো জীবনে কখনও আর তাকে মুখ দেখাতে হবে না।
তবে কেন এই অনাসৃষ্টি অদ্ভুত অবস্থাটার মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছেন কমলাক্ষ?
কেন দাঁড়াচ্ছেন, কেন দাঁড়াবেন, সেকথা ভাবতে পারলেন না কমলাক্ষ। দাঁড়াতে হবেই, এই চরম সিদ্ধান্তটা জেনে নিলেন। তাই খুব ধীরে বললেন, আমি তো এখানের কিছুই জানি না। কোনো সমিতি-টমিতি আছে কি?
সকার সমিতি কথাটা মুখে বাধল। শুধু বললেন সমিতি।
ও এবার বিছানার ধার থেকে উঠে এল। তেমনি কেমন এক রকম হাসির মতো করেই বলল, আছে কি না আমিও ঠিক জানি না, দরকার হয়নি তো-তবে আমি বলি কি—নিজেরাই কোনো রকমে–
নিজেরাঅ্যা মহিলাটি কি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেলেন নাকি?
স্পষ্ট সে-সন্দেহ প্রকাশ না করলেও বিস্ময় প্রকাশ না করে পারলেন না কমলাক্ষ, বিস্ময়টা হয়তো বা একটু উত্তেজিতই হল। নিজেরা নিজেরা মানে? বলছেন কি আপনি?
মহিলাটির সর্বাঙ্গে এখনও সধবার ঐশ্বর্যরেখা, তবু ভয়ানক রকমের বিধবা বিধবা লাগছিল ওকে। ওর ঠোঁটের রেখায় যেন বালবিধবার শুষ্ক বিষণ্ণতা।
কমলাক্ষর মনে পড়ল ভদ্রমহিলা সেই পরশু সকাল থেকে এই দুদিন রোগীর বিছানা ছেড়ে ওঠেননি, জলবিন্দুটি পর্যন্ত মুখে দেননি। পুরো দুরাত ঘুমোননি। তার ওপর এই দুর্ঘটনা। শুকনো তো লাগবেই।
কমলাক্ষ চোখ নামালেন। একটু বেশিক্ষণ চেয়ে থাকা হল মনে হচ্ছে।
মহিলাটি অবশ্য কমলাক্ষর ওই দৃষ্টি আর দৃষ্টি নামানোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন না। নিতান্ত সহজভাবেই উত্তরটা দিলেন, তা ছাড়া আর কোনো উপায়ও তো দেখছি না। শ্মশান শুনেছি এখান থেকে বেশি দূর নয়। আমি আছি, করুণাপদ আছে, আর প্রায় স্পষ্টই হেসে উঠল ও এবার, আর আপনি তো আছেনই। আপনি তো আর চলে যেতে পারছেন না? তিনজন মিলে যা-তোক করে
আচ্ছা আপনাদের এখানের লোকগুলো কী কমলাক্ষ এবার বিস্ময়ের সঙ্গে একটু বিরক্তি প্রকাশ না করে পারেন না। মানুষ না জানোয়ার? এই রকম একটা বিপদের সময়ও–
এই রকম একটা বিপদই তো এই দীর্ঘকাল ধরে চাইছিল ওরা। চাইছিল অথচ পাচ্ছিল না, কত হতাশায় ছিল! এতদিনে যদি দিন পেয়েছে তার সদ্ব্যবহার করবে না?
কমলাক্ষ একটুক্ষণ থেমে থাকেন। থেমে থেমে বলেন, জানি না এমন একটা অদ্ভুত অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার কারণটা কি আপনাদের জানতে চেয়ে বিব্রত করতেও চাই না, শুধু বলছি—আপনার ওই সমস্যা-সমাধানের প্রস্তাবটা বাস্তব নয়। থাক ও নিয়ে আপনি আর মাথা ঘামাবেন না, আমি বেরচ্ছি, যা হয় একটা ব্যবস্থা হবেই। কেবল আপনার ওই করুণাপদকে বলবেন, কোথাও থেকে কিছু ফুল যদি জোগাড় করে আনতে
ফুল! ওঁর জন্যে ফুলের কথা বলছেন?
এতক্ষণের ভাবশূন্য সাদাটে মুখটায় হঠাৎ যেন এক ঝাঁক রক্তকণিকা এসে ভিড় করে দাঁড়ায়, ঠেলাঠেলি করে।
কমলাক্ষ আর একবার চোখ নামান। শান্ত স্বরে বলেন, মৃতকে আর কি দিয়ে সম্মান জানানো যায় বলুন? পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার কালে এইটুকুই তো তার শেষ পাওনা?
.
নাঃ, বাসিন্দা এখানে খুব বেশি নেই। দুচারজন রিটায়ার্ড ভদ্রলোক এদিকে-সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। হয়তো বা সস্ত্রীক, হয়তো বা একা। একারা বিপত্নীক কি সংসার-বিদ্বেষী সেকথা বলা শক্ত। অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী-পুত্র-সংসারের সঙ্গে কিছুতেই বনে না, এমন লোকের সংখ্যা সংসারে বিরল নয়। হয়তো অমনোমত খাওয়া-দাওয়া নিয়ে হয়তো বা সংসারের খরচ-পত্রের প্রশ্ন নিয়ে। রিটায়ার করলে যে টাকা কমে যায়, সে-সত্যটা মানতে রাজী নয় অনেক মহিলাই।
তেমনি বাড়ির কর্তারা মাঝে মাঝে বেশ কিছুদিন করে বসবাস করে যান এখানে সুসময়ের তৈরি ইটকাঠের আশ্রয়টুকুর মধ্যে।
বাড়িগুলো সারানো আর হয়ে ওঠে না, দেওয়ালগুলো বালি ঝরা, রেলিঙগুলো মরচে ধরা, কার্নিশের কোণ ভাঙা, একদার ফুলবাগান শুকনো আগাছার জঞ্জাল, তবু তার মধ্যেই বেশ কাটান তারা। কোনো একটা যাহোক মতো দেহাতি চাকর জোগাড় করে, তাকে দিয়ে দুবেলা মুরগির ঝোল আর ভাত রাঁধিয়ে ক্ষুগ্নিবৃত্তি করেন, আর লাঠি একগাছা হাতে নিয়ে দুবেলা শহর প্রদক্ষিণ করে বেড়ান। আর সেই সূত্রে শহরে যে যেখানে আছে তাদের নাড়ির আর হাঁড়ির খবর নিয়ে বেড়ান।
অবশ্য এমনটা খুব বেশি সংখ্যায় নেই। সস্ত্রীকই আছেন অনেকে। ছেলেমেয়েরা বড়ো হয়ে গেছে, যে যার পথ দেখেছে, শেষ জীবন পরস্পরে পরস্পরের আশ্রয় হয়ে মফঃস্বলের বাড়িটিতে এসে বাস করেছেন। তাদের সংসারে অবশ্য লক্ষ্মী, ষষ্ঠী, ইতু, ঘেঁটু থেকে শুরু করে মোচার ঘন্ট, কচুর শাক, গোটাসিদ্ধ পর্যন্ত কিছুরই ত্রুটি নেই। তবে সময়েরও অভাব নেই। তারাও অপরের জীবনের নিভৃতে উঁকি না দিয়ে পারেন না।
না করলে কি নিয়ে থাকবে? কর্মহীন জীবনকে উপভোগ করতে কজন জানে? কজন শিখেছে সে-আর্ট?
তা এ ছাড়া আর যত বাড়ি সবই প্রায় পড়ে থাকে বুকে এক-একটা ভারী তালা ঝুলিয়ে। পাছে জানলা-দরজাগুলো কেউ খুলে নিয়ে যায়, তাই নামকা ওয়াস্তে একটা করে মালি নামধারী ফঁকিবাজ ব্যক্তি থাকে। ছুটিছাটায় কখনও বাড়ির লোকেরা বাড়িতে এলে তবে তাকে বাড়ির ধারে কাছে দেখতে পাওয়া যায়। তখন সে ঘাস চাঁছে ভাঙা বেড়ার দড়ি বাঁধে, দেয়ালের উই ভাঙে।
পুজোয় সময় জায়গাটা ভরে ওঠে, রঙে লাবণ্যে করবে।
প্রবাস বোর্ডিঙেও সে সময় চাঞ্চল্য জাগে। সেই তো মরসুম। নইলে সারা বছরে কে কত চেঞ্জে আসে! কমলাক্ষর মতো কে আসে গরমের ছুটিতে!
তা যারা থাকে, তারা প্রবাস বোর্ডিঙের মালিক মালিকানির সঙ্গে মুখ দেখাদেখি রাখে না কেন, এও তো একরহস্য!
শুধু যে মুখ দেখে না তা নয়, খদ্দেরও ভাঙায়। অন্তত ভাঙাতে চেষ্টা করে। সে-কথা মনে পড়ল কমলাক্ষর পথ চলতে চলতে।
বেশিদিনের কথা তো নয় যে ভুলে যাবেন। মাত্র সাতটা দিন আগেই তো।
পলাশপুর স্টেশনে নেমেছিলেন কমলাক্ষ সুটকেসটা আর বেডিংটা নিয়ে। কলকাতা থেকে একটা বাড়ি মাসখানেকের জন্যে ভাড়ার ব্যবস্থা করে এসেছিলেন, মনটা তাই বড়ো নিশ্চিন্ত আর খুশি-খুশি ছিল। গরমের ছুটির একটা মাস থেকে যাবেন এখানে। সেই একটা মাসে কলেজের খাতা দেখা থাকবে না, ঝামেলা থাকবে না। শুধু খাবেন ঘুমাবেন আর বই পড়বেন।
পড়া তো হয় না। কত ভালো ভালো বই নীরব অভিযোগের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে কমলাক্ষর দিকে, যেন বলতে চায় মলাটটা পর্যন্ত ওলটাবার যদি সময় নেই তোমারি, কেন তবে কিনেছ আমাদের? কেন বন্দী করে রেখেছ তোমার শেলফের খাঁজে খাঁজে?
ওরা ঠিক টের পায় কমলাক্ষর অন্তরাত্মা কতখানি তৃষিত হয়ে থাকে, শুধু মলাট ওলটানো নয়, একেবারে ওদের ঘরের দরজা খুলে অন্তঃপুরে ঢুকে পড়ার জন্যে?
কিন্তু কোথায় সেই সময়?
কমলাক্ষর সমস্ত অবসরটুকু অবিরত টুকরো টুকরো করে কেড়ে নিয়ে চলেছে বন্ধুজন পরিজন, ব্যাগার খাটুনি, বাড়তি কাজ।
সুটকেসের সবটাই প্রায় বাছাই বাছাই বই ভরে নিয়ে চলে এসেছিলেন কমলাক্ষ। একজন বন্ধুর মাধ্যমে বাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে ফেলে। কলকাতা থেকেই বাড়ির চাবি দিয়ে দিয়েছে বাড়িওলা। তা ছাড়া আনন্দে বিগলিত আর বিনয়ে আনত হয়ে বলে দিয়েছে, সব আছে মশাই আমার বাড়িতে। চৌকী চেয়ার আনলা বালতি শিল-নেড়া-গেরস্তর যাবতীয় প্রয়োজন। তবু দেখুন ভাড়ায় আমি গলা কাটি না। নইলে উইথ ফার্নিচার বলে বিজ্ঞাপন লাগালোক, গিয়ে দেখবেন—হ্যাঁ, অমুক বাবু ভাড়াটের সুবিধে অসুবিধে বোঝে কি না।
তা বুঝেছিলেন কমলাক্ষ। হাড়ে হাড়েই বুঝেছিলেন।
স্টেশন থেকে সাইকেল রিকশাটাকে ঠিকানা বুঝিয়ে বুঝিয়ে আর নিজে তার কাছ থেকে পথ বুঝে বুঝে প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে যখন ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, সূর্যদেব তখন টেবিলের ফাঁইল ঝেড়েঝুড়ে তোলবার তাল করছেন।
কমলাক্ষ তাড়াতাড়ি চাবি খুলে ফেলে অন্তত আলো জ্বালার ব্যবস্থাটা করে ফেলবেন ঠিক করে রিকশাটাকে দাঁড় করিয়ে তালায় চাবি লাগালেন।
কিন্তু দীর্ঘদিনের মরচে ধরার শোধ নিতেই বোধ করি তালা এবং চাবি অসহযোগিতা করে বসল। খুলতে পারলেন না কমলাক্ষ।
তবে চাবি খুলে তারপর ভিতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে, এমন অসুবিধে ঘটিয়ে রাখেনি বাড়িওলা। এখানে সেখানে জানলার কপাট সপাটে খুলে নামিয়ে রেখেছে বুদ্ধি করে।
হাঁ-করা সেই জানলার ফোকরে চোখ ফেলে দেখতে পেলেন কমলাক্ষ, মানে ঝুল আর মাকড়সার জালের জাল; করে যেটুকু চোখে পড়ল তা এই—তিনটে পায়ায় ইট লাগানো একপেয়ে একটা আটফাটা চৌকির ওপরে রড়ভাঙা আলনার স্ট্যান্ড দাঁড় করানো, তার তারই পাশে মরচেয় কালো হয়ে যাওয়া একটা বালতি উপুড় করা।
ব্যস্। আর কোথাও কিছু না।
অথবা যদিও কিছু থাকে, যথা—জলের কলসী, শিল-নোড়া, মাকড়সার জালের আচ্ছাদন ছিন্ন করে সেগুলি আর কমলাক্ষর দৃষ্টিতে ধরা দিল না।
উইথ ফার্নিচার এই বাড়ির চেহারা দেখে মিনিট কয়েক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কমলাক্ষ ফের রিকশায় উঠলেন। বললেন, চল, আবার স্টেশনে চল।
রিকশাচালক বোধ করি অবস্থাটা অনুধাবন করতে পারে, তাই প্রশ্ন করে জেনে নয়, বাবুর কী উদ্দেশ্যে আগমন, এবং জানান দেয়, এই বাড়ির বাড়িওলাটা পয়লা নম্বরের জোচ্চোর। বহুৎ লোককে এই রকম তকলিফ দেয়।…তা বাবু যখন ছুটি নিয়ে চেঞ্জে এসেছেন, ফিরে কেন যাবেন? থাকবার জায়গার সন্ধান সে দিতে পারে।
কেন? কোনো হোটেলওয়ালার দালাল বুঝি তুই? প্রশ্ন করেছিলেন কমলাক্ষ।
লোকটা জিব কেটেছিল। সে সেরকম লোক নয়। আর সেই হোটেলের মালিকও দালাল রাখবার মতো লোক নয়। বাবু নেহাত বিপদে পড়েছে বলেই দয়ার্দ্র হৃদয়ে খবরটা দিচ্ছে সে। তা বাবু সেখানে যেতে চায়, কোনো বাঙালিবাবুর বাড়িতে নিয়ে গিয়েও উঠিয়ে দিতে পারে! বাঙালি দেখলে বাঙালিবাবুরা যত্ন করলেও করতে পারে।
নাঃ, বিনি পয়সার যত্নে কাজ নেই। ভেবেছিলেন কমলাক্ষ। তারপর বলেছিলেন, সে সব থাক। দেখি তোর বোর্ডিং হাউসটি কেমন?
প্রথম ঝোঁকে পত্রপাঠ স্টেশনে ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও সত্যিই ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। এত তোড়জোড় করে আর এত আশা নিয়ে আসা!
তাছাড়া সংসারের লোকেরাই বা বলবে কি? কি বলবে বন্ধুজনেরা? কমলাক্ষ যে একটি রাম ঠকা ঠকেছেন, কমলাক্ষর গালে চড়টি মেরে যে আগাম এক মাসের ভাড়া আদায় করে নিয়ে ধুরন্ধর বাড়িওলা কমলাক্ষকে মর্তমান প্রদর্শন করেছে, এই খবরটা কি ঘোষণা করে বলে বেড়াবার মতো?
ফিরে গেলে ওই বোকা বনে যাওয়ার খবর তো ত্রিজগতে ঘোষিত হতে এক ঘণ্টা সময় লাগবে না।
.
শহরের প্রায় একপ্রান্তে—প্রবাস বোর্ডিঙের সামনে যখন এসে দাঁড়ালেন কমলাক্ষ, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। বাইরের বারান্দায় একটা হ্যারিকেন জ্বেলে রাখা হয়েছে। বাইরের দিকে দেখা গেল, না কাউকে।
সত্যি বলতে কি, চিরকেলে কলকাতার মানুষ কমলাক্ষর কাছে এই সম্পূর্ণ অজানা অচেনা এই অন্ধকার বাড়ি, হ্যারিকেনের ছায়া-ছায়া আলো, খুব একটা প্রীতিকর হল না। বরং একটু ভয় ভয়ই করল।
কে জানে কি ধরনের জায়গা? রিকশাওলাটাই বা লোক কেমন? এরা কোনো চোর ডাকাত জাতীয় নয় তো? এইভাবে ফাঁদ পেতে–
আবার নিজের চিন্তায় নিজেই লজ্জিত হলেন। কি যা-তা ভাবছেন! কমলাক্ষর বাড়িওলা যদি এই মধুর ইয়ারকিটি না করত, কমলাক্ষ যদি বাড়ির তালা খুলে মালপত্র নিয়ে রিকশাওলাকে ছেড়ে দিতেন, কাকে ফাঁদে ফেলতে আসত সে?
মানুষের উপকারকে, মানুষের শুভেচ্ছাকে অবিশ্বাস করার মতো নীচতা আর কি আছে!
ডেকে দিয়েছিল রিকশাওলাই।
করুণাপদ বেরিয়ে এসেছিল। সাড়া পেয়ে। একাধারে যে এই বোর্ডিঙের চাকর পাচক হিসেবরক্ষক।
কি চাই? প্রশ্ন করেছিল করুণাপদ।
কমলাক্ষ সংক্ষেপে অবস্থা বিবৃত করে বলেছিলেন, এ তো আমাকে ধরে-করে নিয়ে এল এখানে। জায়গা আছে নাকি থাকার?
সংকল্প করছিলেন অবশ্য, আজ রাতটা তো কাটাই, তারপর বোঝা যাবে সকাল হলে।
করুণাপদ বলল, আছে জায়গা। এই তো ব্যবসা বাবুর। তবে এই ভরা গরমে তো বড়ো একটা আসে না কেউ, তাই ঘর-দোর তেমন পরিষ্কার করা নেই। আজ্ঞে, মানে পরিষ্কারই আছে, সে তো মায়ের এক কণা ধুলো থাকবার জো নেই। তবে বিছানাপত্তরের জুতটা তেমন–
বিছানা আমার সঙ্গেই আছে। বলেছিলেন কমলাক্ষ। ঈষৎ চিন্তাভাবনার মাঝখান থেকে।
কি বলল লোকটা? মায়ের।
মা আবার কী বস্তু? হোটেলওয়ালীর হোটেল না কি? তা হলেই তো বিপদ গুরুতর। কিন্তু ও যে মা না কি বললে—এটুকু জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা করল। বিছানার খবরে হৃষ্ট করুণাপদ বলল, বিছানা আছে? তবে আর কি! চলুন। ঘর দেখিয়ে দিই, জল তুলে দিই, হাত পা মুখ ধোবেন তো? বাবু একটু বেরিয়েছেন, এখুনি এসে যাবেন।
বাবু! তবু ভালো!
কমলাক্ষ ভাবলেন, তবু এবারের যাত্রাটাই দেখছি অযাত্রা। এর থেকে বরাবরের মতো ছুটির দুচারটে দিন পুরী-টুরিতে কাটিয়ে এলেই হত। বেশি লোভ করতে গিয়ে দেখছি সবটাই লোকসান।
কর্তাটি আবার অনুপস্থিত। সে লোককে একবার দেখলেও তবু হোটেলের পদমর্যাদা সম্পর্কে একটু অবহিত হওয়া যেত। অবিশ্যি চাকরটা খুব খারাপ নয়। এর অনুপাতে কর্তা হলে ভালোই হবে আশা করা যায়।
আচ্ছা তা এইটুকু তো বাড়ি। এর মধ্যে আবার হোটেলের ব্যবসা চলে কি করে? নিজেরাও তো থাকে।
ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলেন নির্দিষ্ট ঘরে। বাড়ির ভিতরকার দালান দিয়ে গিয়ে পিছন দিকে খানতিনেক ঘর, বাড়ির সঙ্গে ঠিক লাগোয়া নয়, একটু ছাড়া। এই তিনটি নিয়েই তা হলে হোটেলের লপচপানি!
করুণাপদ বোধ করি মুখের ভাষা পাঠ করতে পারে। তাই বিনীত কণ্ঠে বলে, হোটেল বলতে তেমন কিছু নয় বাবু, ওই বলতে হয় তাই বলা। হোটেল না বললে এখানকার হতচ্ছাড়া লোকগুলো যে বুঝতেই পারে না। রিকশাওলা বলুন, মুটে বলুন, দাই মালি যা বলুন, ওই হোটেল বললেই বোঝে ভালো। তাই পুরনো নাম উঠিয়ে দিয়ে এই প্রবাস বোর্ডিং নাম দেওয়া। নইলে সাইনবোর্ড উলটে দেখবেন, ওপিঠে লেখা আছে প্রবাস-আবাস। মায়ের নিজের দেওয়া নাম। যাক সেকথা বাবু, নামে আর কি করে! থেকে দেখুন ব্যবস্থা কেমন!…দেখুন মা-বাবু কেমন লোক!…মানে ব্যবসাদার তো আর নয়, নেহাত চলে না বলেই তাই।
কমলাক্ষর এবার আর বুঝতে অসুবিধে হয় না।
কর্তা গিন্নি (খুব সম্ভবত নিঃসন্তান) দুজনে এই পরবাস আবাসে বাস করেন, এবং ওই তিনখানি ঘর থেকেই কিছু আয়-টায় করে চালান।
তা মন্দ নয়। নেহাত হোটেল হোটেল হবে না। তবে বেশি গায়ে-পড়া আত্মীয়তা না করতে এলেই হল।
বাকি ঘর দুখানা তো খালিই রয়েছে মনে হচ্ছে, তালা ঝুলছে দেখা যাচ্ছে। কেউ নেই, নাকি তালা দিয়ে বেড়াতে গেছে। ওঃ না, চাকরটা যে বলল এসময় কেউ আসে না, যাক বাঁচা গেছে।
যেরকমটি ইচ্ছে করেছিলেন কমলাক্ষ, সেই রকমটিই জুটে গেল বোধ হয়। বরং বাড়তি কিছু ভালোই হল।
ভাড়াটে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার ঝামেলা নিজে নিতে হত। যত সংক্ষেপেই করো হতই কিছু ঝাট। চাকর একটা খুঁজতে হত, কে জানে সে ব্যাটা সব ছিষ্টি চক্ষুদান করে পালাতে কিনা, এ তবু একটা গেরস্থ বাড়ির মধ্যে।
বাড়ির মধ্যে ঢুকে এসে আর সেই গা ছমছমানি ভাবটা থাকে না। ভিতরে একটা জোরালো আলো জ্বলছে, আর দালানের দৃশ্য-সজ্জায় একটি গৃহস্থ ঘরের চেহারা পরিস্ফুট হচ্ছে।
এক কোণে জলচৌকীর ওপর ঝকঝকে মাজা বাসন, টুলের ওপর গেলাস ঢাকা দেওয়া জলের কুঁজো, দেয়ালে লাগানো ব্রাকেট আলনায় কিছু জামাকাপড়।
না, শাড়ি নয় অবশ্য। ধুতি শার্ট এই সব তবু সবটা মিলিয়ে একটা লক্ষ্মীশ্রী।
এই আপনার ঘর বাবু। এইটাই হল গে সর্বাপেক্ষা উত্তম। মানে পূব দক্ষিণ দুদিক পাচ্ছেন।
সর্বাপেক্ষা উত্তম শুনে মৃদু হেসে বলেন কমলাক্ষ, তা সর্বাপেক্ষা উত্তমটি আমাকে দিয়ে দিচ্ছ, তোমাদের অন্য খদ্দের এলে রাগ করবে না?
রাগ? রাগ মানে? করুণাপদ উদ্দীপ্ত স্বরে বলে, অগ্রে যে আসবে তারই অগ্রভাগ। এই হচ্ছে জগতেব আইন। তা ছাড়া সে ভয় কিছু নেই বাবু। বললাম তো এ-সময় কেউ আসে না। যা ভিড় ওই আপনার পুজো থেকে শীতকালটি অবধি। বাকি বছর প্রায় বন্ধই পড়ে থাকে।…দাঁড়ান, আপনার হোল্ডঅল খুলে বিছানা বিছিয়ে দেই।
থাক থাক্ করে উঠেছিলেন কমলাক্ষ। বলেছিলেন, অত কিছুতে দরকার নেই, বিছানা তিনি হোল্ডঅল খুলে নিয়ে পেতে নেবেন। এখন শুধু একটু জলের দরকার।
করুণাপদ ছাড়েনি। বলেছিল, জল তো দেবই, চলুন না গোসলখানায়! তা বলে বিছানা আপনি নিজেই পেতে নেবেন? বলেন কি?
হোল্ডঅল খুলে পরিপাটি করে বিছানা পেতে দিয়ে আলনায় তোয়ালে ঝুলিয়ে রেখে চলে গিয়েছিল সে জল দিতে।
সেই অবসরে ঘরটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে নিয়েছিলেন কমলাক্ষ। ঘরটি ভালোই। বেশ শুকনো পরিষ্কার, ধুলোশূন্যই বটে। চৌকিটি মজবুত পালিশ করা, আলটি সভ্যভব্য। ঘরের এক কোণে ছোট্ট একখানি টেবিল, আর একখানি কাঠের চেয়ার।
তা হোক। কাঠের হোক। আস্ত মজবুত। সেই ভাড়াটে বাড়িটার ফার্নিচারের দৃশ্য স্মরণ করে আর একবার মনে মনে হাসলেন কমলাক্ষ।
যাক, ভগবান যা করেন ভালোর জন্যেই। বন্ধ করা জানলাগুলো খুলে দিলেন কমলাক্ষ। পাশে একট জানলা থেকে কুয়োর পাড়টা দেখা যাচ্ছে। বাকি সারি সারি তিনটে জানলা পিছনের খোলা জমির দিকে। এই দিকটাই দেখছি দক্ষিণ। বাঃ! আজ অন্ধকার, কিন্তু যেদিন চঁদ উঠবে, রাত্তির বেলা জানলা খুলে শুতে বড়ো চমৎকার লাগবে তো! অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন কমলাক্ষ। অন্যমনস্ ২য় সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
একটা অননুভূত অনুভূতিতে মনটা কেমন আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।
Fন্ধকারও যে দেখতে এত ভালো লাগে, তা তো কোনোদিন জানতেন না কমলাক্ষ। অন্ধকার দেখলেনই বা কবে? ভদ্রলোকেদের বেড়াতে যাবার উপযুক্ত জায়গাগুলির কোনোখানে আর অন্ধকার রেখেছে আধুনিক ব্যবস্থা?
কিন্তু অন্ধকারেরও কি একেবারেই দরকার নেই? ভাবলেন কমলাক্ষ। আছে দরকার। নিশ্চয় আছে। অবিরত চড়া আলো দেখতে দেখতে চোখের স্নায়ু শিরাগুলো যে ক্লান্ত হয়ে ওঠে, পীড়িত হয়ে ওঠে। গাঢ় ঘন কোমল এই অন্ধকার যেন কমলাক্ষর সেই ক্লান্ত হয়ে ওঠা, পীড়িত হয়ে পড়া স্নায়ু শিরাতে স্নিগ্ধ একটা ওষুধের প্রলেপ বুলিয়ে দিচ্ছে।
বাবু জল দিয়েছি।
চমকে উঠলেন কমলাক্ষ। ওঃ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দেখছি। তাড়াতাড়ি ফিরে দাঁড়ালেন। বললেন, কই, তোমার বাবু এসেছেন?
আজ্ঞে আসেননি, এই এসে যাবেন আর কি। তা তার জন্যে আপনার কিছু আটকাবে না বাবু। যা কিছু করবার মা আর আমিই করি। চলুন রাত হয়েছে খেতে বসবেন।
কমলাক্ষ কুণ্ঠিতভাবে বললেন, কিন্তু চার্জ-টার্জ কি রকম–
সে এমন কিছু নয় বাবু। খাওয়া থাকা নিয়ে দিন সাড়ে চার টাকা। তা খাওয়া আপনি চারবেলাই পাবেন। সকালে চা ডিমসিদ্ধ—
থাক্ থাক্–লজ্জিত কমলাক্ষ ব্যস্ত হয়ে বলেন, সে যা হয় হবে। চার্জ তো কমই। কিন্তু এখুনি যে খেতে বসিয়ে দিতে চাইছ, পাবে কোথায়? আমার জন্যে তো আর রান্না করে রাখনি?
করুণাপদ একগাল হেসে বলে, কী যে বলেন বাবু, একটা মানুষের খাওয়ার জন্যে আবার ভাবনা! বলি বাবুর জন্যে তো আছে কিছু, তার ওপর দুখানা ভাজা আর লুচি করে দিলেই-সে আপনি কিছু ভাববেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবু তো আর রাত এগারোটা বারোটার ইদিকে—ইয়ে চলুন বাবু চলুন, খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ুন, বাবুর সঙ্গে দেখা আপনার গিয়ে সেই কাল সকলেই
করুণাপদ হঠাৎ থামতে বাধ্য হয়। দালানের ওদিক থেকে অনুচ্চ একটি স্বর আসে, করুণা, বাজে কথা থামিয়ে একটু এদিকে এস তো!
কমলাক্ষর হঠাৎ মনে হল, এরা নিশ্চয়ই বেশ ভদ্রই। গলার সুরটা মার্জিত, কথার ধরনটা সভ্য।