দ্বিজপদর ঘরে লোকের ভিড়
রোজ সকাল থেকেই দ্বিজপদর ঘরে লোকের ভিড়। সে একাধারে এই গাঁয়ের ইঞ্জিনিয়ার, সায়েন্টিস্ট, ডাক্তার, দার্শনিক, ভবিষ্যদ্বক্তা, ডিটেকটিভ এবং পরামর্শদাতা। সে ম্যাজিক জানে, কুংফু ক্যারাটে জানে, লাঠি বা তরোয়ালও চালাতে পারে বলে শোনা যায়। একটা লোকের মধ্যে এত গুণ থাকায় গাঁয়ের লোকের বড্ড সুবিধে হয়েছে। আজ সকালেই গোবিন্দবাবু তাঁর অচল ঘড়ি, সরলবাবু তাঁর ট্রানজিস্টর রেডিয়ো, ফুচুবাবুর মেয়ে শিউলি তার মুভু-খসা ডলপুতুল, রমেশবাবু তাঁর চশমার ভাঙা ডাঁটি আর ধীরেনবাবু তাঁর টেপ রেকর্ডার সারিয়ে নিয়ে গেলেন। এখন হারাধন তার হারানো গোরুর সন্ধান, গোবর্ধনবাবু তাঁর পুরনো আমাশার ওষুধ, বিপুলবাবু তাঁর মেয়ের কোষ্ঠীবিচার, নব আর শ্রীপতি তাদের পুরনো ঝগড়ার মীমাংসার জন্য বসে আছে।।
দ্বিজপদর বয়স বেশি নয়। সাতাশ-আঠাশের মধ্যেই। ইতিমধ্যেই আশপাশের দশ বারোটা গাঁয়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় দিনদিন তার খদ্দের বাড়ছে। সকালের দিকটায় তার দম ফেলার সময় থাকে না। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হরিমাধব কড়া ধাতের ছেলে। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সে বারান্দায় চেয়ারে বসিয়ে রাখে, একে-একে ঢুকতে দেয়। তবে ভি আই পি হলে অন্য কথা।
এই যেমন কাশীবাবু। তাঁরা এই গাঁয়ের তিন নম্বর ভি আই পি। নবদ্বীপ সরকার আর কুলদাকান্ত রায়ের ঠিক পরেই। হওয়ারই কথা। কাশীবাবুর দাদু শশীবাবু রিটায়ার্ড দারোগা, বাবা নসিবাবু প্রাক্তন মিলিটারি। কাশীবাবু তেমন কিছু হতে না পারলেও ওকালতি পাশ। তাই কাশীবাবুকে আটকাল না হরিমাধব। বরং সেঁতো হাসি হেসে বলল, “ভাল তো কাকু?”
গম্ভীর একটা ই’ দিয়ে কাশীবাবু ঘরে ঢুকে পড়লেন। “ওহে দ্বিজপদ, একটা বড় মুশকিলে পড়া গিয়েছে।” দ্বিজপদ খুব মন দিয়ে নবগ্রামের খগেন তপাদারের বাপকেলে গাদা বন্দুকটার ঘোড়া সারাচ্ছিল, মুখ না তুলেই বলল, “খাঁদু গড়াই তো?”
কাশীবাবু অবাক হয়ে বললেন, “তুমি কী করে জানলে?”
“সে আর শক্ত কী? একটু আগেই বটু আর বিশু এসেছিল, তারাই বলে গেল। বিশুর বিশ্বাস খাঁদু গড়াই পিশাচসিদ্ধ, বটুর ধারণা ভূত।”
“তা ওরকমই কিছু হবে বোধহয়। বাবামশাইকে তো প্রায় হিপনোটাইজ করে ফেলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সে একজন ভয়ংকর ডাকাতের ভাইপো।”
“যান, হয়ে গিয়েছে।” বলে বন্দুকটা খগেন তপাদারের হাতে দিয়ে তাকে বিদেয় করে একটা ন্যাকড়ায় হাতের কালি মুছতে মুছতে দ্বিজপদ বলল, “সেও শুনেছি। রাখালহরি গড়াই।”
“হ্যাঁ। সে নাকি মস্ত ডাকাত।”
দ্বিজপদ একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “খুব ভুল শোনেননি কাশীদা। রাখালহরি এই তল্লাটের লোক নয়, সম্প্রতি নীলপুরের জঙ্গলে এসে থানা গেড়েছে। সে এমনই ভয়ংকর যে, কানাইদারোগার অবধি ঘুম ছুটে গেছে। পরশুদিন দারোগাবাবু এসে দুঃখ করে গেলেন। বললেন, খিদে হচ্ছে না, পেটে বায়ুর প্রকোপ বেড়েছে, প্রেশার হাই, ঘনঘন বাথরুম পাচ্ছে।”
কাশীবাবু কাঁদোকাঁদো হয়ে বললেন, “ওসব যে আমারও হচ্ছে হে। সকালবেলাটায় বেশ ছিলুম, কিন্তু এখন বড় কাহিল লাগছে।”
“আচ্ছা, আপনার ওসব হতে যাবে কেন? আপনার নামে তো আর রাখালহরি নোটিশ দেয়নি!”
কাশীবাবু অবাক হয়ে বলেন, “নোটিশ! কীসের নোটিশ ?”
“সরকার বাহাদুরের তরফে রাখালহরির মাথার দাম এক লাখ টাকা ধার্য করে থানায় নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাখালহরি তার পাশেই পালটা নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে, দারোগার মাথার দাম সে দু’লাখ টাকা দেবে।”
“বলো কী! এত আস্পদ্দা! কানাইদারোগার দাপটে যে বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়।”
“এখন আর খাচ্ছে না। বাঘ দেখলেই গোরু এখন অন্য ঘাটে জল খেতে যাচ্ছে। কানাইদারোগার কোমরের বেল্টে পাঁচটা ফুটো আছে, লক্ষ করেছেন কি? তাঁর পেটের যা বেড় ছিল, তাতে প্রথম ফুটোতেই বেল্ট বেশ আঁটসাঁট হত। এখন পাঁচ নম্বর ফুটোতে বেল্ট আটকেও তাঁর পাতলুন ঢলঢল করে। আম থেকে আমসি হয়ে গেছেন। এই হারে চলতে থাকলে একদিন এমন সূক্ষ্ম-শরীর-প্রাপ্ত হবেন যে, আপনার সামনে দিয়ে গটগট করে হেঁটে গেলেও আপনি কানাইদারোগাকে দেখতেই পাবেন না। থানায় একজন সেপাই ছুটি নিয়ে দেশে গিয়েছিল, সে ফিরে এসে দারোগাবাবুকে চিনতে না পেরে স্যালুট পর্যন্ত করেনি!”
চোখ কপালে তুলে কাশীবাবু বললেন, “বলো কী! দারোগাকে স্যালুট করেনি! সব্বোনেশে ব্যাপার। না হে, এ দেশে আর থাকা যাবে না।”
“এতেই ঘাবড়ে গেলেন কাশীদা! এখনও তো আপনাকে আসল কথাটা বলাই হয়নি।”
কাশীবাবু কাহিল মুখে বললেন, “এর পর আর কী কথা থাকতে পারে বলো তো! কানাইদারোগারই যদি এত হেনস্থা হয়, তবে আমরা তো কোন ছার! আকাশে ভগবান আর মর্ত্যধামে দারোগা পুলিশ ছাড়া আমাদের আর ভরসা কী বলো!”
“সে তো বটেই। তবু বাকিটা শুনলে কলির শেষে কী ঘটতে চলেছে তার একটা আঁচ পাবেন। রাখালহরি গড়াই সম্পর্কে আপনার কিছু জানা আছে কি?”
“না হে বাপু। শুধু শুনেছি, সে খাঁদুর খুড়ো।”
দ্বিজপদ মুচকি হেসে বলে, “তবু সেটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। সে হল ডাকাতেরও ডাকাত। সাধারণ ডাকাতরা গেরস্তর বাড়িতে চড়াও হয়ে লুঠপাট করে। রাখালহরি তা তো করেই, উপরন্তু সে ডাকাতদের উপরেও চড়াও হয়ে তাদের সর্বস্ব লুটেপুটে নিয়ে যায়। আগে যে-এলাকায় সে ছিল, সেখানে তার অত্যাচারে তিনজন ডাকাত সর্বস্বান্ত হয়েছে, দু’জন বিবাগী হয়ে গিয়েছে, একজন গলায় দড়ি দিতে গিয়ে স্যাঙাতদের হস্তক্ষেপে বেঁচে যায়, একজন পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, দু’জন গিয়ে জেলখানায় আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচেছে।”
কাশীবাবু হাঁ করে চেয়ে থেকে বললেন, “আর তারই ভাইপো কিনা আমাদের বাড়িতে বসে ডাল-রুটি সাঁটাচ্ছে! লোকটাকে যে এক্ষুনি পুলিশে দেওয়া দরকার!”
“ব্যস্ত হবেন না কাশীদা। রাখালহরির ভাইপো শুনলে পুলিশ তার ধারেকাছে যেতেও সাহস পাবে না। আর তার কিছু হলে রাখালহরিই কি আপনাকে আস্ত রাখবে? রাখালহরির ওয়ারিশন বলতে শুধু ওই ভাইপোটাই আছে। বংশে বাতি দিতে ওই একমাত্র শিবরাত্রির সলতে। রাখালহরির বয়স হয়েছে। লাখো লাখো টাকার একজন উত্তরাধিকারী চাই। তা ছাড়া সে বুড়ো হলে তার দলের হাল ধরার জন্যও উপযুক্ত লোক চাই। তাই রাখালহরি এখন হন্যে হয়ে তার ভাইপোকে খুঁজছে।”
“ওরে বাবা! তারা তো তা হলে এল বলে!”
“ঘাবড়াবেন না। রাখালহরি যত ভয়ংকরই হোক, এই পরগনার ডাকাতরাও তাকে ছেড়ে কথা কইবার পাত্র নয়। তাদের তো
প্রেস্টিজ বলেও একটা ব্যাপার আছে। জল্লাদ-প্রহ্লাদ, গুঁফো গণেশ, হাড়ভাঙা হারাধন, লেঠেল ললিত বা সড়কি সতীশ, এরা কি কিছু কম যায়? রাখালহরিকে ঢিট করার জন্য তারা এখন সব এককাট্টা হচ্ছে। ঘনঘন গোপন বৈঠকে বসছে। রাখালহরির ওয়ারিশকে তারাও খুঁজছে।”
“দ্বিজপদ, তোমাকে একটা কথা কইব?”
“কী কথা কাশীদা?”
“তুমি কি জানো যে, ঝড়ে জানালার ভাঙা কপাট যেমন আছাড়ি পিছাড়ি করে, আমার বুকের ভিতরটায় এখন তেমনই হচ্ছে! আমাকে আর বেশি ভয় দেখানোটা কি তোমার উচিত? এখন হার্ট ফেল হয়ে গেলে এতটা পথ হেঁটে বাড়ি যাব কী করে? এখনও নাওয়াখাওয়া বাকি?”
“হার্ট ফেল হওয়া কি সোজা ? আপনার হল বীরের বংশ, ঠাকুরদা শশীরাম হরিরামপুরের ডাকসাইটে দারোগা ছিলেন, বাবা নসিরাম ছিলেন লড়াকু মিলিটারি।”
কাশীবাবু চিন্তিত মুখে বললেন, “সেটাও বুঝি রে ভাই! আমার ভিতরেও যে বীর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তা নয়। ইচ্ছেও যায়, তবে কী জানো, ওই ভয় ব্যাটাকে নিয়েই মুশকিল, যখনই বীরের মতো কিছু করতে যাই, তখনই ওই ব্যাটা ভয় এসে এমন বাগড়া দেয় যে, কাজটা ফসকে যায়। এই কদিন আগে মাঝরাতে চোর এসেছিল, জানালায় খুটখাট শব্দ শুনে ঘুম ভাঙতেই ‘চোর চোর’ বলে চেঁচাতে গিয়েছি, অমনি পাশ থেকে ভয় ব্যাটা মুখ চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলল, চুপ, চুপ, খবরদার চেঁচাসনি! চোরের কাছে অস্তর থাকে জানিস না?’এই তো গত হাটবারে সকালবেলায় মহিমবাবুকে ষাঁড়ে তাড়া করেছিল। ভাবলাম, যাই, ষাঁড়টাকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে বুড়ো মানুষটাকে রক্ষে করি। হাতে লাঠিও ছিল। কিন্তু যেই তেড়ে যাব বলে পা বাড়িয়েছি, অমনি পিছন থেকে ওই ব্যাটা ভয় একেবারে কোমর জাপটে ধরে বলল, ‘পাগল নাকি? ওই খ্যাপা ষাঁড়ের মুখখামুখি হতে আছে রে আহাম্মক? মানুষ তো অদৃষ্ট নিয়েই জন্মায়। মহিমবাবুরও অদৃষ্টে যা আছে তাই হবে, তুই বাগড়া দেওয়ার কে?’ তোমার কাছে কি ভয় তাড়ানোর কোনও ওষুধ আছে হে দ্বিজপদ?”
দ্বিজপদ বলে, “আহা, ভয়কে তাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? আছে থাক না, তবে ভয়েরও মাঝে মাঝে ঝিমুনি আসবে, কিংবা ধরুন, মানুষের মতো তারও হয়তো ছোট বাইরে বা বড়-বাইরে পাবে, কিংবা ধরুন, পায়ের ঝিঝি কাটাতে ভয় হয়তো বারান্দায় পায়চারি করতে গেল, সেই ফাঁকে কাজ হাসিল করে নিলেই হয়।”
“কাজ হাসিল! কীসের কাজ হাসিল হে?”
“শক্ত কাজ করলে যে আপনার অম্বল হয়, একথা কে না জানে! কাজটা শক্ত তো নয়ই, বরং কাজ বললেও বাড়াবাড়ি হয়। কাজ না বলে বরং বলা ভাল, এই একজনকে একটু চোখে-চোখে রাখা আর কী।”
“আহা, সে আর শক্ত কী? নড়াচড়া বেশি না করতে হলেই হল, হুডযুদ্ধ যে আমার সয় না, এ তো তুমি ভালই জানো!”
“তা আর জানি না! আপনার হল আদরের শরীর, সেবার আপনার দাদু শশীরামের হাম হওয়ায় তিনি হাটে যেতে পারেননি, তাই হাটবারে আপনাকে মোট আড়াই কেজি আলু বয়ে আনতে হয়েছিল বলে আপনি এক হপ্তা শয্যাশায়ী ছিলেন, সে কথা কি ভোলা যায়? তারপর সেই যে আপনার বাবামশাই নসিরাম একখানা ছোট তোশক ছাদে নিয়ে রোদে দিতে বলায় আপনার কম্প দিয়ে জ্বর এসেছিল, সেকথা কি বিস্মরণ হওয়ার? তারপর ধরুন, গত বছর যে আপনি গোরুর গাড়ির ধর্মঘটের দরুন দেড় মাইল হেঁটে মাসির বাড়ি নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে হাঁটুর ব্যথায় কাতর হয়ে দেড় ডজন রসগোল্লা খেয়েই ক্ষান্ত দিয়েছিলেন, সে কথা বলে যে মাসি আজও হা-হুতাশ করেন, একথা কে না জানে বলুন! আপনাকে শক্ত কাজ দিলে ভগবান কি আমাকে ছেড়ে কথা কইবেন?”
“আরে, ওসব পুরনো কথা আবার কেন? কাজের কথাটাই হোক ! কার উপর নজর রাখতে হবে?”
“আজ্ঞে, লোকটার নাম খাঁদু গড়াই।”
“ওরে বাবা! শুনেই বুকটা কেমন করছে! তা ছাড়া উঁকিঝুঁকি মারা খুব খারাপ। উঁকিঝুঁকি মারলে আমার বড় গা শিরশির করে।”
দ্বিজপদ খুব চিন্তিত মুখে ছাদের দিকে চেয়ে গলা চুলকোতে চুলকোতে বলল, “তাই তো কাশীদা, বড় মুশকিলে ফেলে দিলেন। ভাবছি, বিজয়বাবুকে এখন কী বলি! সম্বন্ধটা যখন আমিই করেছি, তখন আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে। তিনি বড় আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন যে!”
কাশীবাবু তটস্থ হয়ে বললেন, “আহা, বিজয়বাবুকে আবার এর মধ্যে টানা কেন?”
“তিনি সাতবেড়ের শিকারি বিশ্বজয় রায়ের নাতি। বাবা ভুবনজয়ও ছিলেন পক-প্রণালী জয়ী বিখ্যাত সাঁতারু, কামট, কুমির, হাঙরকেও ডরাতেন না। আপনি যে এত ভিতু, সেটা পাঁচকান হলে বিজয়বাবু তাঁর মেয়ে বঁচির সঙ্গে আপনার বিয়ে দেওয়ার কথা আর কখনও উচ্চারণ করবেন কি? তাঁর তো ধারণা শশীরামের নাতি, নসিরামের ছেলে কাশীরামও বাপ-দাদার মতোই ডাকাবুকো লোক।”
“আচ্ছা, আচ্ছা, না হয় খাঁদু গড়াইয়ের উপর নজর রাখব’খন। ও আর এমন কী শক্ত কাজ?”
“কাজ খুবই সোজা। খাঁদু কখন খায়, কখন ঘুমোয়, বাঁ ধারে কাত হয়ে ঘুমোয়, না ডান ধারে, হাঁ করে ঘুমোয় কিনা, নাক ডাকে কিনা, এই সব আর কী! তারপর ধরুন, দুপুরে বা নিশুতরাতে কোনও সন্দেহজনক লোক তার কাছে যাতায়াত করে কিনা বা সে কাউকে কোনও ইশারা ইঙ্গিত করে কিনা। কিংবা তার ঝোলায় কোনও অস্ত্রশস্ত্র আছে কিনা। পারবেন না?”
কাশীবাবু আমতা আমতা করে বললেন, “তা পারা যাবে বোধহয়।”
“খুব পারা যাবে, খুব পারা যাবে। তারপর শুধু নজর রাখাই নয়, মাঝে মাঝে তার কাছে গিয়ে একটু খেজুরে আলাপও জুড়ে দেবেন। এই জিজ্ঞেস করলেন, বাপু হে, তুমি কি মিষ্টি পছন্দ করো, না ঝাল? লাল রং ভালবাসো, নাকি বেগুনি? ঠান্ডা ভাল না গরম? এরকম আগড়মবাগড়ম যা খুশি বলে গেলেই হল, দেখবেন কথার ফাঁকে হয়তো টক করে আসল কথাটা বেরিয়ে আসবে।”
কাশীবাবুর মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। জিভ দিয়ে ঠোঁটটা চেটে নিয়ে বললেন, “সে তো বুঝলুম, কিন্তু আসল কথাটা কী?”
“সে কি আমিই জানি। এ হল ছিপ ফেলে বসে থাকার মতো ব্যাপার, মাছ উঠবে কিনা তার ঠিক নেই।”
“বুঝেছি। কী কুক্ষণে যে খাঁদু গড়াই এসে জুটল কে জানে!”
“ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন কাশীদা।”
কাশীবাবু একটু উত্তেজিত হয়ে বলেন, “এর মধ্যে মঙ্গলটা কী দেখলে শুনি! খাঁদু গড়াই হল ডাকাতের ভাইপো, তার উপর তান্ত্রিক পিশাচসিদ্ধ মানুষ। ওরকম বিপজ্জনক লোকের উপর নজর রাখা মানে তো সিংহের খাঁচায় ঢুকে পড়া, প্রাণ হাতে করে কাজ, এর মধ্যে মঙ্গলটা আসে কোত্থেকে?”
“নগদানগদি সব বোঝা যাবে না দাদা, ধৈর্য ধরতে হবে।”
“আর ধৈর্য! বাবামশাইকেও বলিহারি, যাকে-তাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেন। এই তো গত বছর এক সাধুকে ধরে এনেছিলেন তার কাছে আকাশে ওড়া শিখবেন বলে। শেষ পর্যন্ত সেই সাধু মায়ের একছড়া হার, দাদুর পকেটঘড়ি, তিনটে কাঁসার থালা, আমার গরদের পাঞ্জাবি আর নরহরির নতুন গামছাখানা নিয়ে পিঠটান দিল। তবু কি তাঁর শিক্ষা হয়? এবার কী হবে কে জানে!”