Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবন-মরীচিকা || Hemchandra Bandyopadhyay

জীবন-মরীচিকা || Hemchandra Bandyopadhyay

জীবন এমন ভ্রম আগে কে জানিত রে।
হয়ে এত লালায়িত কে ইহা যাচিত রে।
প্রভাতে অরুণোদয়, প্রফুল্ল যেমন হয়,
মনোহরা বসুন্ধরা কুহেলিকা আঁধারে।
বারিদ, ভূধর, দেশ, ধরিয়ে অপূর্ব্ব বেশ,
বিতরে বিচিত্র শোভা ছায়াবাজী আকারে।
কুসুমিত তরুচয়, ব্রহ্মাণ্ড ভরিয়ে রয়,
ঘ্রাণে মুগ্ধ সমীরণ মৃদু মৃদু সঞ্চারে।
কুলায়ে বিহঙ্গদল, প্রেমানন্দে অনর্গল,
মধুময় কলনাদ করে কত প্রকারে।
সেইরূপ বাল্যকালে, মন মুগ্ধ মায়াজালে,
কত লুদ্ধ আশা আসি স্নিগ্ধ করে আত্মারে।
পৃথিবী ললামভূত, নিত্য সুখে পরিপ্লুত,
হয় নিত্য এই গীত পঞ্চভূত মাঝারে।
ব্রহ্মাণ্ড সৌরভময় মঞ্জু কুঞ্জ মনে হয়,
মনে হয় সমুদয় সুধাময় সংসারে।
মধ্যাহ্ণে তাহার পর, প্রচণ্ড রবির কর,
যেমন সে মনোহর মধুরতা সংহারে।

না থাকে কুহেলি অন্ধ, না থাকে কুসুমগন্ধ,
না ডাকে বিহগকুল সমীরণ ঝঙ্কারে।
সেই রূপ ক্রমে যত, শৈশব যৌবন গত,
মনোমত সাধ তত ভাঙে চিত্তবিকারে।
সুবর্ণ মেঘের মালা, লয়ে সৌদামিনী ডালা,
আশার আকাশে আর নিত্য নাহি বিহারে।
ছিন্ন তুষারের ন্যায়, বাল্য বাঞ্ছা দূরে যায়,
তাপদগ্ধ জীবনের ঝঞ্ঝাবায়ু প্রহারে।
পড়ে থাকে দূরগত জীর্ণ অভিলাষ যত,
ছিন্ন পতাকার মত ভগ্ন দুর্গ প্রাকারে।
জীবনেতে পরিণত এই রূপে হয় কত
মর্ত্ত্যবাসিমনোরথ, হা দগ্ধ বিধাতা রে!
ধর্ম্মনিষ্ঠাপরায়ণ, সুচারু পবিত্র মন,
বিমলস্বভাব সেই যুবা এবে কোথা রে।
অসত্য কলুষলেশ, বিঁধিলে শ্রবণদেশ,
কলঙ্কিত ভাবিত যে আপনার আত্মারে।
বামাশক্তি বামাচার, শুনিলে শত ধিক্কার,
জ্বলিত অন্তরে যার সে তপস্বী কোথারে?
কোথা সে দয়াদ্রচিত্ত, সঙ্কল্প যাহার নিত্য,
পরদুঃখ বিমোচন এ দুরন্ত সংসারে।

অত্যাচার উৎপীড়ন, করিবারে সংযমন,
না করিত যেইজন ভেদাভেদ কাহারে।
না মানিত অনুরোধ, না জানিত তোষামোদ,
সে তেজস্বী মহোদয় বাঞ্ছা এবে কোথা রে।
কত যুবা যৌবনেতে, চড়ি আশা বিমানেতে,
ভাবে ছড়াইবে ভবে যশঃপ্রভা আভারে।
তুলিবে কীর্ত্তির মঠ, স্থাপিবে মঙ্গলঘট,
প্রণত ধরণীতল দিবে নিত্য পূজা রে।
কেহ বা জগতে ধন্য, বীরবৃন্দে অগ্রগণ্য,
হয়ে চাহে চরণেতে বাঁধিবারে ধরারে।
স্বদেশ হিতৈষী কেহ, তাবিয়ে অসীম স্নেহ,
ব্রত করে প্রাণ দিতে স্বজাতির উদ্ধারে।
কার চিত্তে অভিলাষ, হবে শারদার দাস,
পীবে সুখে চিরদিন অমরতা সুধারে।
কালের করাল স্রোতে, ভাসে যবে জীবনেতে,
এই সব আশালুদ্ধ প্রাণী থাকে কোথা রে।
কিশোর গাণ্ডীবধারী, যামদগ্ন্য দৈত্যহারী,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালিদাস কত ডোবে পাথারে।
কতই যুবতী বালা, গাঁথে মনোমত মালা,
সাজাইতে মনোমত প্রিয়তম সখারে।

হৃদয় মার্জ্জিত করে, আহা কত প্রেমভরে,
প্রিয়মূর্ত্তি চিত্র ক’রে রাখে চিত্ত-আগারে।
নব বিবাহিত কত, পেয়ে পতি মনোমত,
ভাবে জগতের সুখ ভরিয়াছে ভাণ্ডারে।
এই সব অবলার, কিছু দিন পরে আর
দেখ মর্ম্মভেদী শেল দেয় কত ব্যথারে।
দেখ গে কেহ বা তার, হয়েছে পঞ্জরসার,
শুষ্ক হয়ে মাল্যদাম শূন্যে আছে গাঁথা রে।
মনোমত নহে পতি, মরমে মরিয়ে সতী,
উদ্‌যাপন করিয়াছে পতিসুখ-আশারে।
কৃতান্তের আশীর্ব্বাদে, দিবানিশি কেহ কাঁদে,
বিষম বৈধব্য দশ নিগড়েতে বাঁধা রে।
দারুণ অপত্যতাপে, দেখ গে কেহ বিলাপে,
অন্নাভাবে জননীর কোথা বক্ষঃ বিদারে।
আগে যদি জানিতাম, পৃথিবী এমন ধাম,
তা হলে কি পড়িতাম আনায়ের মাঝারে।
কোথা গেল সে প্রণয়, বাল্যকালে মধুময়,
যে সখ্যতা পাশে মন বাঁধা ছিল সদা রে।
সহপাঠী কেলিচর, অভেদাত্মা হরিহর,
এবে তাহাদের সঙ্গে কতবার দেখা রে।

পতঙ্গপালের মত কর্ম্মক্ষেত্রে অবিরত,
স্বকার্য্য সাধনে রত, কে বা ভাবে কাহারে।
আহা পুনঃ কত জন করিয়াছে পলায়ন,
মর্ত্ত্যভূমি পরিহরি শমনের প্রহারে।
গগন-নক্ষত্রবৎ, তাহারাই অকস্মাৎ,
প্রকাশে ক্বচিৎ কভু মৃদুরশ্মি মাখারে।
আগে ছিল কত সাধ, হেরিতে পূর্ণিমা চাঁদ,
হেরিতে নক্ষত্র-শোভা নীলনভঃ মাঝারে।
দিনদিন কত বার, জাগ্রতে নিদ্রিতাকার,
স্বপ্নে স্বপ্নে ভ্রমিতাম নদহ্রদকান্তারে।
বসন্ত বরষাকালে, পিকরব, মেঘজালে,
হেরিতে দামিনীলতা, কি আনন্দ আহা রে।
সে সাধ তরঙ্গকুল, এবে কোথা লুকাইল,
কে ঘুচালে জীবনের হেন রম্য ধাঁধাঁ রে।
বিশুদ্ধ পবিত্র মন, স্বর্গবাসী সিংহাসন,
পঙ্কিল করিল কে রে দগ্ধচিতা অঙ্গারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *