জীবনবাবুর পায়রা
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হিটারটা জ্বালিয়ে দুকাপ চা করতে বসলাম। চা হয়ে গেল, দাদা পাশের ঘর থেকে প্রতিদিন এর আগেই বেরিয়ে আসে, কোনও কোনও দিন একটু দেরি হয় অবশ্য, তবে এই সময়টা আমি দাদার ঘরে যাই না। দাদা মাথাটা নীচের দিকে পা দুটো উপরদিকে দিয়ে আসন করে, কোনও কারণে গেলে ওই উলটো মাথা রেখেই কথা বলে। এইরকম ভাবে কোনও কথাবার্তা সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা, ব্যাপারটা আমার মোটেই সুবিধার মনে হয় না। তাই পারতপক্ষে এই সকালের দিকে আসনের সময়টায় আমি দাদা না উঠে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
কিন্তু দাদা আজ কিছুতেই আসছে না। বড় বেশি দেরি করছে, চা ঠান্ডা হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে সেই অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি, ঠিক মুখোমুখি নয় মুখোপায়ে–আমার মুখ আর দাদার পা সামনাসামনি দাদার ঘরে ঢুকলাম। এ কী, ঘর ফাঁকা! আলনায় জামাকাপড় নেই। দাদাও নেই।
এরকম আগেও কয়েকবার হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বালিশের নীচে হাত দিলাম, হ্যাঁ একটা চিঠি রয়েছে।
খোকন,
বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সহিত জল, আলো এবং দোতলার দুমদাম শব্দ লইয়া তুমি যে গোলমাল করিতেছ আমি তাহা বাড়াইতে চাহি না। জীবনবাবুর অত্যাচারে গৃহত্যাগ করিলাম। ইতিপূর্বে আমি জীবনবাবুকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তিনি যেন কখনও বাদামি রঙের পায়রা না কেনেন। কাল বিকালে দেখিলাম জীবনবাবু একটি নহে একজোড়া বাদামি রঙের পায়রা খরিদ করিয়া আনিয়াছেন।
তোমার হয়তো মনে আছে, ক্লাস সেভেনে পড়িবার সময় বলরামদের একটি বাদামি রঙের পায়রা আমার ডান গালের আঁচিলটা ঠুকরাইয়া দিয়াছিল, এখনও পূর্ণিমা অমাবস্যায় আঁচিলটি টনটন করে। জীবনবাবুর অন্যান্য পায়রাগুলিকে তবু সহিয়াছিলাম, কিন্তু একই বাড়িতে দুইটি ঐরূপ কুৎসিত রঙের পায়রার সঙ্গে বসবাস আমার পক্ষে সম্ভব নহে বুঝিতেই পারিতেছ।
আমি চলিলাম। খুঁজিবার চেষ্টা করিও না, অন্যান্যবারের মতোই জব্দ হইবে। ভালভাবে থাকিও। আমার লাল মাফলারটি শালকরের নিকট রহিয়াছে, শীতকালে ব্যবহার করিও।
ইতি
১৭ই বৈশাখ, বুধবার
আঃ দাদা
এ রকম বছরে এক-আধবার ঘটেই। খুব ঘাবড়াবার কিছু নেই, প্রায় অভ্যাস হয়ে গেছে। কোনও কোনও কারণে দাদা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তারপরে একদিন একা একাই ফিরে আসে। ফুটপাথে থাকা যায় না, দিনের বেলায় জুতো পালিশ করে সেখানে, রাত্তিরে ঘুমোলে মনে হয় সারা শরীরটা কে যেন ব্রাউন রঙের জুতোর কালি দিয়ে পালিশ করছে। ভীষণ অসুবিধে, ফুটপাথে কি থাকা যায়, ভিখিরিরা ঘুম থেকে ধাক্কা দিয়ে তুলে ভিক্ষা চায়। ফিরে এসে এই সব উলটোপালটা কথা বলে–যেন আমরাই তাকে ফুটপাথে বসবাস করতে পাঠিয়েছিলাম।
তবু একটা চিন্তা হয়,–কোথায় গেল, কী করবে? চায়ের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এতক্ষণে নিশ্চয় জুড়িয়ে বরফ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে ফিরে আসি। এসে যা চোখে পড়ল–গা জ্বলে যায়। সেই বাদামি রঙের পায়রা দুটো চায়ের পেয়ালা থেকে চুচুক করে চা খাচ্ছে। মাথা গরম হয়ে গেল। দেয়াল থেকে ব্যাডমিন্টনের র্যাকেটটা তুলে ছুঁড়ে মারলাম। দিদিমার দেওয়া জাপানি পাম গাছের নীচে নদীতে নৌকো, পাখি এইসব আঁকা আমাদের বড় শখের কাঁচের পেয়ালা দুটো চুরমার হয়ে গেল। এতদিন যত্ন করে রাখা শিয়ালকোটের র্যাকেটটা দুখানা হয়ে গেল। রাঙাকাকা এনে দিয়েছিল, এখন আর এসব র্যাকেট পাওয়া যায় না। কিন্তু পায়রা দুটোর কিছুই হয়নি। তারা নিশ্চিন্তে উড়ে গিয়ে পাশের বাড়ির কার্নিশে বসে বকম বকম করতে লাগল।
ভয়ংকর রাগ হল জীবনবাবুর ওপর। এই কালীঘাটের পুরনো বাড়িটা আমরা কেনার অনেক আগে থেকে এই বাড়ির একতলার ভাড়াটে জীবনবাবু। আমরা খালি বাড়িই চেয়েছিলাম, কিন্তু জীবনবাবু উঠলেন না। এক কথায় আমরা ভাড়াটে সুদ্ধ বাড়ি কিনলাম। এই কথাটা দাদা মাঝেমধ্যেই জীবনবাবুকে বলত, দেখুন, আপনাকে সুদ্ধ আমরা এই বাড়ি কিনেছি। আপনি আমাদের কেনা, আমাদের কথামতো চলবেন। জীবনবাবু লোক খারাপ নন, কিন্তু ভীষণ খুঁতখুঁতে। কলে জল কম আসছে, ইলেকট্রিকের তার পুরানো হয়ে গেছে, ছাদে দুমদাম শব্দ হচ্ছে এইসব নানা আপত্তি। আর তার ওপরে এই পায়রা পোষা। এই বাদামি দুটো নিয়ে বোধ হয় সতেরো আঠারোটা পায়রা হল তার। কিন্তু এই নিয়ে কিছু বলবার জো নেই। দাদা একবার শায়েস্তা করার জন্যে একটা বিড়াল ধরে এনেছিল, কিন্তু একটা গোদা পায়রা বিড়ালটাকে এমন ঠুকরে দিল যে সেইদিন রাত্রে বিড়ালটা আমাদের কামড়ে-খামচে একাকার, রক্তারক্তি কাণ্ড।
সাতদিন, পনেরো দিন, একমাস গেল, দাদার কোনও পাত্তা নেই। এতদিনে ফিরে আসা উচিত ছিল। খুব চিন্তায় পড়লাম। কোথায় কী করছে, কী খাচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দাদার ঘরে উঁকি দিই, দাদা এল নাকি? রাস্তায় কতবার যে মনে হয় দাদা পেছন থেকে ডাকছে খোকন! খবরের কাগজে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃত্যুসংবাদ দেখলে বুকটা কাপে। তবু দাদা ফিরল না।
এর মধ্যে একদিন সকালে একটা শুটকো মতন লোক, চোখ দুটো ঝকঝক করছে, মাথার চুল ন্যাড়া করা, আমার কাছে এল। এসে বলল, হামার নাম চুনুলাল আছে।
লোকটাকে চিনতে পারলাম না। বললাম, তোমার কী চাই, কী করো তুমি?
হামি টেরেনে মালপত্তর সরাই।
ট্রেনে মালপত্র সরাও! কুলির কাজ করো নাকি? আমি কুলি দিয়ে কী করব?
আরে নেহি নেহি বাবু, কুলি নেহি। লোকটা আমার অজ্ঞতাতেই বোধ হয় একটু হাসল, তারপর বলল, হামি এই বাবুলোক টেরেনে ঘুমিয়ে-উমিয়ে পোড়লে উসকো টেরাঙ্ক, সুটকেস এই সব নিয়ে চোলে যাই। এই চোট্টা আছি। চুনুলালকে একটু লজ্জিত দেখল।
চোট্টা! সে কী, এখানে কী? আমি পুলিশকে প্রায় ফোন করতে যাই আর কী।
চুনুলাল বলল, বড়বাবু হামাকে ভেজলেন।
বড়বাবু, কোন বড়বাবু? আমি অবাক হই।
এই চিঠি লিজিয়ে। কাপড়ের ময়লা গিট থেকে চুনুলাল একটা দুমড়ানো কাগজ বের করে দিল: হামি আর বড়বাবু একসাথ রাণাঘাট জেইলমে ছিলাম। আমার খালাস হয়ে গেল। বড়বাবু বললেন–এই চিঠিটা হামারা ছোটা ভাইকা দে না।
দাদার চিঠি। রাণাঘাট জেল থেকে।
খোকন,
ভালই ছিলাম। জেলখানায় কেহ পায়রা প্রতিপালন করে না। চোরবাটপাড়ের ভয়ও নাই, কেননা সবাই এখানে।
অবশ্য নানা জনে নানা কথা বলে। আমাকে আড়ংঘাটা স্টেশন হইতে সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য পুলিশ ধরিয়া রাণাঘাট চালান দিয়াছে। কেহ বলিতেছে আমি গুপ্তচর, কেহ বলিতেছে খুন। করিয়া পাগলা সাজিয়াছি, কেহ বা অনুমান করিতেছে পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়া আকস্মিক আঘাতে মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু আমি যে সত্যিই পাগল, ধরা না পড়িলেও মাথার গোলমাল থাকিত, ইহা ইহাদের কিছুতেই বোঝানো যায় না। সে যাহা হউক, ভাবিয়াছিলাম সমস্ত জীবন এইখানেই কাটাইয়া দিব, কিন্তু সম্প্রতি এক অসুবিধা হইয়াছে।
এতদিন পশ্চিমদিকের সেলে ছিলাম। এক অতি দুর্দান্ত কয়েদি আসায় তাহাকে সেখানে রাখিয়া আমাকে পূর্বদিকের সাধারণ কয়েদিদের সেলে স্থানান্তরিত করা হইয়াছে। তাহাতে আপত্তির কিছু নাই, কিন্তু অসুবিধা এই যে, এইদিকে পাঁচিলের পাশে একটি তেঁতুল গাছ রহিয়াছে। তুমি নিশ্চয় জান, তেঁতুল গাছের ছায়ায় আমার ভীষণ অম্বল হয়, চোয়া-ঢেকুর। লাপসি খাইতে কী রকম তাহা লিখিয়া লাভ নাই কিন্তু লাপসির চোয়া-ঢেকুর, খোকন, কী লিখিব? তুমি জানো, জানলা দিয়া তেঁতুল গাছের ছায়া পড়িত বলিয়া আমি জ্যাঠামহাশয়কে বলিয়া শিবনাথ স্কুলে পড়া ছাড়িয়া দিয়াছিলাম, এখন রাণাঘাট জেলও ছাড়িতে হইবে।
এই পত্র টেলিগ্রাম মনে করিয়া অবিলম্বে চলিয়া আইসো।
২০শে জ্যৈষ্ঠ শুক্রবার
ইতি
আঃ দাদা
পুনশ্চ: পরম স্নেহাস্পদ চুনুলালকে পাঠাইলাম। তাহাকে মিষ্টি খাওয়াইয়ো।
চুনুলালকে জল-টল খাইয়ে আমি তখনই ঊর্ধ্বশ্বাসে রাণাঘাটের দিকে ছুটলাম। প্রথমে দাদার সঙ্গে জেলে দেখা করলাম। দাদার এতবড় দাড়ি হয়েছে!
দাদা, এতবড় দাড়ি হয়েছে? আমি অবাক হয়ে দাদাকে দেখতে লাগলাম।
দাদা একটু হাসল, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলি বুঝি, দাড়ির কথা লিখিসনি। একমাস বাইরে বাইরে, আরে বোকা, দাড়ি হবে না! শুধু শুধু পয়সাগুলো জলে দিয়েছিস।
সুখের কথা, দাদা জীবনবাবু বা পায়রাগুলোর কথা বিন্দুমাত্র জিজ্ঞাসা করল না।
ছুটলাম আদালতের দিকে। পেশকারের সঙ্গে দেখা করে সব বললাম। তিনি বললেন, সবই বুঝলাম, কিন্তু আদালত শুনবে কেন? পাগল প্রমাণ করতে হবে!
কী করে পাগল প্রমাণ করতে হয়? এই প্রশ্নে পেশকার যা বললেন তার সারমর্ম এই যে একটি পাগল প্রমাণ করতে গেলে অন্তত আরও পাঁচটি প্রয়োজন। আমাদের কালীঘাট হলে আমি শতাধিক পাগল জোগাড় করতে পারতাম। কিন্তু এই অচেনা রাণাঘাটে পাগলই বা পাব কোথায়, আর তারাই বা আমার অনুরোধ রাখবে কেন?
তখন আমাকে পেশকার বললেন, কিছু খরচ করলে অবশ্য জিনিসটা সেরে ফেলে দেয়া যায়।
ঠিক আছে, যা নায্য দেবো। আমি স্বীকৃত হলাম।
দেড়টা নাগাদ দাদা খালাস হয়ে গেল। পেশকারের কথা ভুলেই গেছি। দেখি পেছনে পেছনে পেশকার আসছেন।
কী চাই? দাদা ধমকে উঠল।
আজ্ঞে, মামলার খরচটা! পেশকার আমাকে বললেন।
খালাস হলাম আমি, আর খরচ দেবে ও। আমি দেবো চলুন আমার সঙ্গে জেলখানায়। সেখানে আমার জিনিসপত্র টাকা-পয়সা রয়েছে। আমি দিয়ে দেবো। দাদার রক্তবর্ণ চোখ দেখে পেশকার আর কিছু বললেন না। আস্তে আস্তে পিছু পিছু হটতে লাগলেন। জেলখানা বেশ দূর, জ্যৈষ্ঠ মাসের দুপুর, পিচ গলছে রাস্তায়। দাদা বলল, খোকন, তিনটে আইসক্রিম নে তো।
পেশকার বললেন, আমার জন্যে নেবেন না, আমার দাঁতে ব্যথা।
দাদা বলল, ঠিক আছে, আমি দুটো খাব। তারপরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পেশকারকে বলল, আইসক্রিম খেলে না। টাকাও পাবে না।
টাকা পাব না মানে এত খেটে খালাস করলাম, পেশকার মৃদু আপত্তি জানালেন। খালাস তো করল হাকিম। আপনার কী? দাদা গর্জে উঠল। হাকিমকে তো আমিই বলে দিলাম, পেশকার বিনীতভাবে জানাল। বলার কিছু ছিল না। ভাগুন। জানেন হাকিম আমার মেলোমশায়! দাদা একটা মিথ্যে কথা বলে।
পেশকার গজগজ করতে করতে চলে যায়, আমি তো জানলুম। কিন্তু হাকিম কি সেটা জানেন?
জেলখানা থেকে দাদার মালপত্র ছাড়িয়ে বেরোলাম। বেরোবার সময় দাদা জেলারকে বলল, চললাম। সকলেরই খালাস হয়, তোমার আর খালাস নেই। উন্নতি হলে বড় জেল, না হলে এই ছোট জেল। থাকো সারাজীবন।
কলকাতায় দাদাকে নিয়ে এসে পৌঁছলাম। আশ্চর্য, দাদা জীবনবাবু বা তার পায়রাগুলোর ব্যাপারে কোনও কথাই বলল না। শুধু মধ্যে মধ্যে বাঁকাচোখে পায়রাগুলোকে দেখতে লাগল।
পরদিন রবিবার। জীবনবাবু সকালের দিকে স্নান-টান করে প্রত্যেক রবিবার কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যান। জীবনবাবু যেই বেরিয়ে গেলেন দাদা মোড়ের মাথার মডার্ন স্টেশনার্সে গিয়ে এক কৌটো লাল আর এক কৌটো কালো রঙের জুতোর কালি কিনে আনল। বুঝতে পারলাম, একটা কিছু মতলব মাথায় আছে। তারপর বারান্দায় বসে এক মুঠো চাল ছিটিয়ে দিল। চাল দেখে আস্তে আস্তে পায়রাগুলো নেমে এল। দাদাও একটু একটু করে হাত বাড়িয়ে এক একটা পায়রা ধরে আর বুরুশে কালি মাখিয়ে সাদা পায়রাগুলোকে কালো রং আর কালো পায়রাগুলোকে লাল রং করে দিল। বাদামি রঙের পায়রাদুটোকে খুব যত্ন করে কোথাও কালো কালি, কোথাও লাল কালি পালিশ করা হল। বাধা দিয়ে কোনও লাভ নেই, আমি কিছু বললাম না।
গোটা দশেক নাগাদ জীবনবাবু কপালে সিঁদুর-টিটুর দিয়ে ফিরে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে হুলুস্থুলু কাণ্ড। আঠারোটা পায়রা পাগলের মতো পরস্পর মারামারি আরম্ভ করেছে।
আমার পায়রাগুলো গেল কোথায়, এই বিশ্রী রঙের পায়রাগুলো এল কোত্থেকে? জীবনবাবুর কণ্ঠস্বরে কী ছিল কে জানে, হঠাৎ সেই আঠারোটি হিংস্র পায়রা সমবেতভাবে জীবনবাবুকে আক্রমণ করল। জীবনবাবু প্রথমে ছাতার নীচে গিয়ে বসে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কোনও সুবিধা হল না, ঠুকরে ঠুকরে পায়রাগুলো মাংস তুলে নিল। তখন লেপ। লেপের নীচে আশ্রয় নিলেন জীবনবাবু। সন্ধ্যার দিকে পায়রাগুলো কোথায় চলে গেল।
জীবনবাবু উচ্চবাচ্য না করে একটা ঠেলাগাড়ি ডেকে এনে মালপত্র তুলতে লাগলেন। একটি কথাও বললেন না। দাদা তখন নেমে গিয়ে বলল, কী খবর জীবনবাবু, কোথায় যাচ্ছেন?
জাহান্নামে! জীবনবাবু খেঁকিয়ে উঠলেন।
সেটা আমরা না পাঠালে আপনি যেতে পারেন না। আপনাকে সুদ্ধ আমরা এই বাড়ি কিনেছি। আপনাকে ছাড়লে তো যাবেন! দাদা বলল, তারপর যোগ করল, আচ্ছা ঠিক আছে! যাও বীর, তুমি মুক্ত।
পরদিন সকালে খবরের কাগজ কিনতে গিয়ে হাজরার মোড়ের দক্ষিণ কোণের ল্যাম্পপোস্টে একটি বিজ্ঞাপন নজরে পড়ল–
বিজ্ঞাপন
নির্ঝঞ্ঝাট মধ্যবয়সি ভদ্রলোকের জন্য ঘরভাড়া চাই–দেয়াল বা ছাদ না থাকিলেও চলিবে। যদি কোনও পরোপকারী ভদ্রলোক ঘরের সন্ধান দিতে পারেন চিরকৃতজ্ঞ থাকিব। এই ল্যাম্পপোস্টের নীচে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আটটা হইতে নয়টা নীল জামা গায়ে দিয়া দাঁড়াইয়া থাকিব, দয়া করিয়া যোগাযোগ করিবেন।
বিনীত
জীবনলাল দাস।
ঠিকানা–নাই।