জামাইষষ্ঠী
বিজন বাবু বাংলার শিক্ষক।
স্কুল আর ছাত্র পড়িয়ে সময় কাটান—ভীষণ রসিক মানুষ—-তবে মনে একটা চাপা কষ্ট আছে —-সেটা কাউকে ও শেয়ার করেন নি—এমনকি একমাত্র মেয়ে টিয়াকেও নয়।
টিয়া বিবাহিতা—তারই স্নেহের ছাত্র রিতমকে বিবাহ করেছে।
ওরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজন বাবুর কাছে বাংলা পড়েছে—তারপর দুজনেই যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং করে ভালো কোম্পানিতে চাকরী করে—বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মাতৃহারা টিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন।
টিয়া কখনো মার কথা প্রশ্ন করেনি,
বাবাই ছিল সব।
কোনোদিন মায়ের অভাব বোঝে নি।
আজ টিয়ার প্রথম জামাইষষ্ঠী— বাবার বাড়িতে ওরা এসেছে।
মা মারা যাবার পর থেকেই রাঁধুনিপিসী টিয়ার বাপের বাড়িতে আছেন—পিসী কত রান্না করেছেন।
-টিয়ার বাপের বাড়িটাই মামারবাড়ি—-বাবা ও মায়ের বিবাহর সময় দাদু যৌতুক দিয়েছিলেন—-মামবাড়িতে দাদু ও দিদা আছেন—-টিয়ার মামা জার্মানিতে পড়তে গিয়ে ওখানকার মেয়ে বিয়ে করে দেশে ফেরেননি—- তাই বিপত্নীক বাবা
দাদু – দিদাকে ছেড়ে যেতে পারেন নি । পিসী রান্না করে প্রতিদিন দাদু – দিদাকে দিয়ে আসেন।
রিতম শ্বশুরকে বারান্দায় আনমনে বসে থাকতে দেখে।
স্যার বলে ডাকতেই—বিজনস্যার সম্বিত ফিরে পান।
হতভাগা এখনো স্যার বলে ডাকবি-??
বাবা বলে ডাকতে পারিস না-??
-রিতম বলে বাবা বলব— তুমি যদি মায়ের গল্প শোনাও।
হা হা করে হেসে বিজন বলে— এতক্ষণতো তোর শাশুড়ি মাকে গান শোনাচ্ছিলাম।
“এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে
এসো না গল্প করি”
এটা তোমার মায়ের পছন্দের গান ছিল।
বিজন জীবনের গল্প বলা শুরু করেন–
শিলিগুড়ির ছেলে,এম এ পাশ করার পর কলকাতায় স্কুল মাস্টার হন— টিয়ার দাদুর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন—তখন টিয়ার মা বাংলায় অনার্স নিয়ে বি.এ পড়ছিলেন— পড়ার কিছু আটকে গেলে বিজনের কাছে আসতেন।আমার বীনাকে ভালো লেগে যায়।
আমার বীনাকে লেখা প্রথম প্রেমপত্র দাদুর হাতে পড়ে—ব্যাস মন দেওয়া নেওয়ার আগেই বিয়ে।
ব্রাহ্মণ হয়ে কায়স্থর মেয়েকে বিবাহ—বিজন ত্যাজ্যপুত্র হয়—তাই সেই থেকে শ্বশুরবাড়িতে বিজন থাকতেন।
বিয়ের পর বিজন জানতে পারেন বীনা অন্য একজনকে ভালবাসেন—বাবাকে কিছু জানাতে পারেননি কারণ যাকে ভালবাসে সে লন্ডনে পড়তে গেছে।
বীনা অগত্যা বিজনের সঙ্গে ঘর করে—টিয়ার ও জন্ম হয়।
আমি বীনাকে জিজ্ঞাসা করতাম তোমার বন্ধু র খবর পেলে??
বীনা বলত —এখন আমি টিয়ার মা—তোমার বৌ—তারপর আমাদের জীবন চলছিল।
এরমধ্যে বীনার দাদা জার্মান গিয়ে আর ফিরলেন না—আমি ক্রমেই জামাই থেকে ছেলেতে পরিণত হলাম।
একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি!!!
বীনা গলায় দড়ি দিয়েছে।
চিঠিতে জানতে পারি— বীনার প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল— সে বীনাকে তার কাছে সব ছেড়ে যেতে বলেছেন—–না গেলে প্রেমিক সুইসাইড করবেন।
অতীতে!! প্রেমতো একবারই এসেছিল নীরবে—-সবতো শেষ করে চলে গেছিলে।–এখন আমি টিয়ার মা।
বীনা প্রেমিকের নাম ঠিকানা রেখে গেছিলেন।
বিজন তুমি এই ঠিকানায় গিয়ে একটু জানিয়ে দিও —আমি আর নেই।
রিতম বলে বাবা তারপর?????
বিজন একটু থেমে বলে—যখন জানাতে যায় ঐ প্রেমিককে—- দেখি দিব্বি ঘর করছেন এক বিদেশিনীর সঙ্গে— সে নাকি বীনাকে পরখ করতে চেয়েছিল— বরকে কতটা ভালবাসে।
এই ঘটনা টিয়ার অজানা —ওকে কিছু বলিস না—যদি ওর মা কে ঘৃণা করে !!!
জামাই বলে বাবা শিলিগুড়ির ঠিকানাটা দেবে-।
আমি টিয়াকে নিয়ে তোমার বাড়ি যেতে চাই-।
হঠাৎ ধুপ করে পড়ে যাবার আওয়াজ শুনে বিজন ও রিতম ছুটে যায়—-দেখে টিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে—-মায়ের মৃত্যু—- বাবার এত কষ্ট—-সব শুনে মাথাটা ঘুরে যায়।
এক সপ্তাহ বাদে টিয়া ও রিতম শিলিগুড়ি যায়—ওরা দাদু ও ঠামের সঙ্গে বাবার সুসম্পর্ক করতে পেরেছিল।
টিয়া ভাবে মায়ের সঙ্গে বাবাকে যদি মেলাতে পারতাম!!!
কত ভাল হত—সেটা তো আর হবার নয়।