Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জাভেদ আখতার || Sankar Brahma

জাভেদ আখতার || Sankar Brahma

জাভেদ আখতার (কবি, গীতিকার এবং চিত্রনাট্যকার)

জাভেদ আখতার (হিন্দি: जावेद अख्तर, উর্দু: جاوید اختر‎‎;) জন্ম: ১৭ই জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে।
বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৮ বছর।
তিনি একজন কবি, গীতিকার এবং চিত্রনাট্যকার। তিনি ভারতের মূলধারার একজন লেখক এবং তার বেশীরভাগ সফল এবং জনপ্রিয় চিত্রনাট্যের কাজগুলো সেলিম খানের সাথে করেছেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১০ টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।

তাঁর আসল নাম ছিলো জাদু। তার বাবার লেখা একটা কবিতা “লম্বা,লম্বা কিসি জাদু কা ফাসানা হোগা” থেকে এই নাম নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ‘জাদু’ নামের সাথে মিল রেখে জাভেদ নাম নেন।
তিনি লখনউয়ের কলভিন তালুকদার কলেজ এবং মিন্টো সার্কেলে পড়াশোনা করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশান পাস করেন।
১৯৬৪ সালের ৪ই অক্টোবরে আখতার মুম্বই আসেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পে কাজ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি কোনো কাজ নিতে সমর্থ হননি।
সেলিম খানের সাথে প্রথম জাভেদ আখতারের সাক্ষাৎ হয় সরহাদি লুটেরা ছবি তৈরির সময়। এই ছবি ছিলো সেলিম খানের সর্বশেষ অভিনীত ছবিগুলোর একটা। এরপর তিনি চিত্রনাট্য লেখার দিকে মন দেন। এই সময় থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেলিম খান চিত্রনাট্য লিখতেন আর জাভেদ আখতার তাকে ডায়ালগ দিয়ে সাহায্য করতেন। সেই সময় থেকে তারা সেলিম-জাভেদ জুটি নামে ব্যাপক পরিচিতি পান। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত তারা এভাবেই কাজ চালিয়ে যান।
রাজেশ খান্না প্রথম সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারকে তাঁর ‘হাতি মেরে সাথি’ চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ দেন।
এছাড়াও তাদের ব্যবসাসফল জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে:-
১). যাদু কি বারাত (১৯৭৩ সাল),
২). জাঞ্জির (১৯৭৩ সাল),
৩). হাত কি সাফাই (১৯৭৪সাল),
৪). দেবর (১৯৭৫ সাল),
৫). শোলে (১৯৭৫ সাল),
৬). প্রেমাদা কান্নিকি,
৭). চাচা ভাতিজা (১৯৭৭ সাল),
৮). ডন (১৯৭৮ সাল),
৯). ত্রিশূল (১৯৭৮ সাল),
১০). মনুশুলু চেছিনা দঙ্গালু (তেলুগু ছবি),
১১). যুগনধার,
১২). দোস্তানা (১৯৮০ সাল),
১৩). ক্রান্তি (১৯৮১ সাল),
১৪). জামানা (১৯৮৫ সাল) এবং
১৫). মি. ইন্ডিয়া (১৯৮৭ সাল)।

তারা একত্রে প্রায় ২৪টির মত চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন; যেমন: ২টি তেলুগু চলচ্চিত্র, মনুশুলু চেছিনা দঙ্গালু, যুগনধার এবং একটি কন্নাটা চলচ্চিত্র প্রেমাদা কান্নিকি। তাদের লেখা ২৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ২০টি ব্যবসাফল হিট চলচ্চিত্র। তাদের লেখা চিত্রনাট্য বক্স অফিসে তেমন সাফল্য দেখাতে না পারা চলচ্চিত্র গুলি হল; আখিরী দাও (১৯৭৫ সাল), ইমান ধর্ম (১৯৭৭ সাল), কালা পাত্থর (১৯৭৯ সাল), এবং শান (১৯৮০ সাল)। তারা ১৯৮২ সালের ব্যক্তিগত বিষয়ের কারণে আলাদা হয়ে যান। সেলিম-জাভেদ জুটিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সফল চিত্রনাট্যাকার হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

আখতার ২০০৯ সালের ১৬ই নভেম্বর রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন।

আখতার ‘হানি ইরানি’-কে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই সন্তান – ফারহান আখতার এবং জয়া আখতার জন্মগ্রহণ করে। ফারহান এবং জয়া দুজনেই অভিনয় করছেন। বাবা আখতার আর ছেলে ফারহান বেশ কিছু ছবিতে এক সাথে কাজ করেছেন। যেমন – ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘লক্ষ্য’, ‘রক অন!!’ এবং ‘জিন্দেগি না মিলেগি’ ‘দোবারা মেয়ে’ জয়ার সাথে।

জাভেদ আখতার ‘হানি ইরানি’কে তালাক দেন এবং উর্দু কবি কাইফি আজমির মেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমিকে বিয়ে করেন।

তিনি পাঁচ বার জাতীয় পুরস্কার পান, এছাড়াও পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন তার কবিতা সংগ্রহ “লাভা”র জন্য। ২০২০ সালে তিনি ‘রিচার্ড ডকিন্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন।


।। জাভেদ আখতারের কিছু কবিতা ।।

জাভেদ আখতার তরুণ কবিদের পরামর্শ দিয়েছেন, ভাল কবিতা লিখতে হলে, পূর্বসূরী কবিদের কবিতা যত পার পড়।

( উর্দু থেকে তর্জমা করেছেন- সফিকুন্নবী সামাদী )

১). ক্ষুধা
————————-

চোখ খুলে গেছে আমার
জীবিত হয়েছি আমি আবার
পেটের অন্ধকার থেকে
মগজের কুয়াশা অব্দি
সাপের মতো এক
শিরশিরে অনুভব আসে মনে
আজ তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন আজ

আশ্চর্য এক নৈঃশব্দ্য
জমাট বেঁধে আছে ঘরে
কেবল এক মেঝে আর এক ছাদ
আর চারিদিকে দেয়াল
আমার সাথে সম্পর্কহীন যেন সব
সকলেই দর্শক হয়ে কেবল দেখছে আমাকে
সামনের জানালা গলিয়ে
তপ্ত রোদের রশ্মি
পড়ছে বিছানার ওপর
বিঁধে যাচ্ছে আমার চেহারায়
এতোটা সূঁচালো এই কিরণ
যেন আমার আত্মীয়দের
তামাশা আমার গরীবী নিয়ে
চোখ খুলে গেছে আমার
আজ আমি ফাঁপা শূন্য
কেবল আবরণটুকু রয়েছে আমার
আজ আমার বিছানায়
শুয়ে আছে আমার কঙ্কাল
নিজের মৃত চোখে
দেখছি কামরাটাকে
আজ তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন আজ

দুপুরের তপ্ত হাওয়ায়
উদ্দেশ্যহীন পায়ে
এক সড়কের ওপর চলেছি
সরু সড়কের
দু’দিকেই দোকানের সারি
শূন্য-শূন্য চোখে
প্রতিটি দোকানের ফলক
দেখতে পাই কেবল
এখন আর পড়তেও পারছিনে সেসব
মানুষজন আসছে যাচ্ছে
পাশ দিয়ে চলে যায়
কেমন যেন কুয়াশাচ্ছন্ন সব
মানুষগুলো যেন চেহারাবিহীন
এইসব দোকানের শোরগোল
পথ চলতি গালাগাল
রেডিওর আওয়াজ
যেন দূরের শব্দ
আসছে যেন মাইল-মাইল দূর থেকে
যাকিছুই শুনছি আমি
যাকিছুই দেখি আমি
স্বপ্নের মতো মনে হয়
যেন আছেও আবার নেইও
দুপুরের তপ্ত হাওয়ায়
উদ্দেশ্যহীন পায়ে
এক সড়কের ওপর চলেছি
উল্টোদিকের পথের কোণে
পানির কল দেখা যায়
এই পানি এতো শক্ত কেন
আটকে যাচ্ছে কেন গলায়
আমার পেটে যেন
ঘুষি মারছে কেউ
মাথা ঘুরছে আমার
শরীরে ঘামের ধারা
শক্তি নেই আর শরীরে
আজ তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন আজ

চতুর্দিকে কেবল অন্ধকার
নির্জন ঘাটে আমি একা
পাথরে বাঁধানো সিঁড়ি
সিঁড়ির ওপর আছি শুয়ে
এখন আর উঠতে পারছিনে আমি
আকাশের দিকে তাকাই
আকাশের থালায়
চাঁদ এক রুটির মতো
চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে
ডুবে যাচ্ছে দৃশ্যাবলী
সমস্ত দুনিয়া ঘুরছে যেন

আমার ঘরে চুলো ছিল
রোজ খাবার তৈরি হত সেখানে
রুটি যেন ঝলকে ওঠা সোনা
গরম গরম এই খাবার
চোখ আর খুলতে পারছিনা
আমি কি তবে মরে যাচ্ছি
অনন্য ছিলেন আমার মা
প্রতিদিন নিজের হাতে
আমাকে খাওয়াতেন তিনি
কে শীতল হাতে
স্পর্শ করছে আমার চেহারা
‘এই এক গ্রাস হাতির
এই এক গ্রাস ঘোড়ার
এই এক গ্রাস ভালুকের’
একি মৃত্যু নাকি অচৈতন্য
যা-ই হোক এই তো আশীর্বাদ
একি মৃত্যু নাকি অচৈতন্য
যা-ই হোক এই তো আশীর্বাদ
আজ তৃতীয় দিন ছিল
তৃতীয় দিন ছিল আজ

২). আজব কাহিনী
————————

আজব কাহিনী আমাদের
যখন এই দুনিয়া বুঝেছিল
তুমি তোমার দুনিয়ায় বাস করছ
আমি আমার দুনিয়ায় বাস করছি
তখন আমরা সমস্ত দৃষ্টি থেকে দূরে
এক দুনিয়া গড়েছিলাম
যা আমার ছিল
তোমারও ছিল
যেখানে পরিবেশের মধ্যে
দুজনের স্বপ্ন জেগে ছিল
যেখানে বাতাসের মধ্যে
আমাদের ফিসফিসে কথা মিশে ছিল
যেখানে ফুলের গায়ে
দুজনের আকাঙ্ক্ষার সব রঙ
নিজেদের মেলে ধরেছিল
যেখানে দুজনের স্পর্ধার
হাজার ঝরনা টগবগ করছিল
না আশঙ্কা ছিল না দুঃখ-বেদনা ছিল
শান্ত নিস্তব্ধতার গভীর এক সমুদ্র ছিল
আর আমরা ছিলাম

আজব কাহিনী আমাদের
সমস্ত দুনিয়া
যখন জানতে পারল
যে আমরা সমস্ত দৃষ্টি থেকে দূরে
এক দুনিয়া গড়েছি তো
প্রতিটি চোখের ভ্রু যেন আমাদের দিকে ধনুক তাক করে দাঁড়াল
সকল কপালে দেখা দিল
দুঃখ আর ক্রোধের গভীর রেখা
কারো মুখ থেকে কটুবাক্য বেরিয়ে এল
কারো কথায় ছিল নির্জলা তিক্ত স্বর
কেউ কেউ চাইল
দেয়াল তুলে দিতে আমাদের মাঝখানে
কেউ কেউ চাইল
আমাদের দুনিয়াটাকেই মুছে দিতে
কিন্তু দুনিয়াকে হারতেই হত
দুনিয়া হেরে গেল
পুরো দুনিয়াকে মানতে হল
আমাদের বিবেচনার জমিন একই রকম
আমাদের স্বপ্নের আকাশও ছিল এক
কিন্তু এই কাহিনী অনেক পুরানো
দুনিয়া আমাদের ওপর
এখন কিছুকাল মেহেরবান আছে
আজব কাহিনী আমাদের
যখন দুনিয়া
সেই কবে স্বীকার করে নিয়েছে
আমরা একই দুনিয়ায় থাকব
সত্য তো আসলে এই
তুমি তোমার দুনিয়ায় বাস করছ
আমি আমার দুনিয়ায় বাস করছি

৩). পরাজয়
———————

কালো টিলার ওপর একাকী দাঁড়িয়ে সে শোনে
হাওয়ায় গুঞ্জরণ করছে তার পরাজয়ের সুর
দৃষ্টির সম্মুখে
রণভূমি যেখানে
ভয়হীন স্বপ্নদের দলিত আর জখম শরীর
পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চারিদিকে
বিশৃঙ্খল
অনেকেই নিহত হয়েছে
আর যাদের শ্বাস চলছে
ফোঁপাচ্ছে তারা
যে কোনো মুহূর্তে নিহত হবে
তার স্বপ্নেরা
তার সিপাহীরা
তার বীরপুরুষেরা
ঘর থেকে বেরিয়ে কত দেশ জয় করেছে
ঝুঁকিয়েছে কত আত্মাভিমানী বাদশাহর মস্তক
দুর্গের দেয়াল ভেঙে পড়ে সালাম করত তাকে
শুধু পৌঁছুবার প্রয়োজন ছিল
থর থর করে খুলে যেত সকল দুর্গের
সমস্ত মহলের দরজা
তার চোখে সেসব দিনের দৃশ্য ছিল সজ্জিত
জমিন সোনালী ছিল
আর আসমান ছিল নীল
কিন্তু এই স্বপ্নের বাহিনীতে কে জানত একথা
প্রত্যেক কাহিনীরই একটা শেষ থাকে
হাজার লেখা হোক বিজয়ের কথা তিল তিল করে
কিন্তু পরাজয়েরও কোনো এক ঠিকানা আছে
দিগন্তে হামাগুড়ি দেয় পিঁপড়ের দল
সত্রুর সেনানী তা দেখতে পায়
পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে
শিকারী বেরিয়েছে তার শিকারের জন্য
জমিন বলছে
এই চক্র নিকটতর হচ্ছে
হাওয়া বলছে
এখন ফিরে যাবার সময়
কিন্তু ফিরে যাবার রাস্তা তো বানানো হয়নি
যখন আসছিল এ খেয়াল আসেনি কখনো
ফিরে দেখে
সামনে সমুদ্র
কিনারায় তো কিছুই নেই
কেবল এক ছাইয়ের স্তূপ
এ তো তারই জাহাজ
কাল যাকে নিজেই জ্বালিয়েছিল সে

হন্তারকদের আওয়াজ কাছে আসতে থাকে
কালো টিলার ওপর একাকী দাঁড়িয়ে সে শুনতে পায়।

৪). বৃক্ষে জড়ানো লতা
———————————-

এক পুরানো
আর ঘন বৃক্ষের শাখায় জড়িয়ে থাকা
লতায়
পুরো বৃক্ষের রঙ
তার সুগন্ধ
লেপ্টে ছিল
ওই লতাও বৃক্ষের এক অংশ হয়ে ছিল
বৃক্ষটি বিষয়ে
কাহিনী ছিল অনেক
লতার কোনো উল্লেখ ছিলনা সেখানে
তার ছিল এক নীরব কাহিনী

বৃক্ষে রঙীন বসন্ত ছিল
লতায়ও যেন ছিল
মৃদু মুচকি হাসি
সুকুমার ফুল ফুটেছিল
কিন্তু
একদিন সেই মৌসুম বদলায়
আর দুরন্ত বিষ-বায়ু
বৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে
চারদিক থেকে যখন আছড়ে পড়ে
এমন মনে হয়েছিল
বদ-হাওয়ায় বৃক্ষ
পাতা অব্দি ধ্বংস হবে
এমন মনে হয়েছিল
সমস্ত শাখা ভেঙে পড়বে
এমন মনে হয়েছিল
সমস্ত শেকড় উপড়ে আসবে
দুয়েক মুহূর্তে
বৃক্ষ জমির ওপর
মুখ থুবড়ে পড়বে
কিন্তু যা ঘটল
সেই কাহিনী শোনার মত

বৃক্ষ যখন কেঁপে ওঠে
লতার দেহ-মনে যেন
এক বিজলি দৌড়ে যায়
রেশমের মত লতার প্রতিটি তন্তু
যেন লোহার তার হয়ে ওঠে
আর লতা
সমস্ত ভঙ্গুর শাখাকে
এমন ভাবে বাঁধে
বৃক্ষের সমস্ত ঘায়েল শরীরে
এমন ভাবে জড়িয়ে থাকে
বৃক্ষের সমস্ত জখম ডালকে
এমন ভাবে ধরে রাখে
যতই বিষ-বায়ু হোক
বৃক্ষের গায়ে মাথা ঠুকে ঠুকে
পরাজিত হয়
হাঁপিয়ে ওঠে
পেরেশান হয়ে
হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে

সময়ের খেলা সত্যি আশ্চর্য
লতা নিজের বাহুতে এখন বৃক্ষকে সামলায়
ধীরে-ধীরে
ঘায়েল শাখায় শাখায়
আবার পাতা বেরুচ্ছে
ধীরে-ধীরে
নতুন মূল গজাচ্ছে
আর জমির গভীরে প্রবেশ করছে তারা
লতায় যেন
এক নতুন মৃদু হাসির সুকুমার ফুল ফুটে উঠেছে

৫). আজব মানুষ ছিলেন তিনি
——————————————–
( শাবানা আজমির পিতা কবি কাইফি আজমি
স্মরণে লেখা)

আজব মানুষ ছিলেন তিনি
ভালোবাসার গান ছিলেন
প্রতিবাদের সুর ছিলেন
কখনো তিনি কেবলই ফুল ছিলেন
কখনো তিনি শুধুই আগুন ছিলেন
আজব মানুষ ছিলেন তিনি

তিনি দরিদ্রকে বলতেন
দিন বদলাতেও পারে
তিনি জালিমকে বলতেন
তোমার মাথায় যে সোনার মুকুট রয়েছে
তা একদিন গলেও যেতে পারে

তিনি বন্ধনকে বলতেন
আমি তোমাকে ছিঁড়ে ফেলতে পারি
তিনি আয়েশকে বলতেন
আমি তোমাকে ত্যাগ করতে পারি
হাওয়াকে তিনি বলতেন
আমি তোমাকে ঘুরিয়ে দিতে পারি

তিনি স্বপ্নকে বলতেন
তোমাকে সত্য বানাবো আমি
তিনি আকাঙ্ক্ষাকে বলতেন
আমি তোমার সহযাত্রী
তোমার সাথে চলবো আমি
তুমি যত দূরই ঠিক করো না কেন তোমার গন্তব্য
কখনো ক্লান্ত হবো না আমি

তিনি জীবনকে বলতেন
তোমাকে আমি সাজিয়ে তুলবো
তুমি আমার কাছে চাঁদ চেয়ে দেখো
আমি চাঁদ নিয়ে আসবো

তিনি মানুষকে বলতেন
মানুষকে ভালোবাসো
ধ্বংসোন্মুখ এই মানবজমিন
একে একটু সুন্দর করে তোলো

আজব মানুষ ছিলেন তিনি

তিনি জীবনের সমস্ত বেদনা
সকল দুঃখ
প্রতিটি অত্যাচারকে বলতেন
আমি তোমাদের সঙ্গে জিতবোই
তোমাদের তো মিটিয়ে দেবে
একদিন মানুষ
ভুলিয়ে দেবে এই দুনিয়া
কিন্তু আমার কাহিনী তো অন্যরকম
সেইসব চোখ যেখানে রয়েছে স্বপ্ন
সেইসব হৃদয় রয়েছে যেখানে আকাঙ্ক্ষা
সেই সব বাহু রয়েছে যাতে শক্তি
সেই সব ঠোঁট রয়েছে যাতে ভাষা
থাকবো আমি তাদের মাঝে
যখন চলে যাবো

( হিন্দি থেকে তর্জমা করেছেন- কবি দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য )

৬). প্রত্যেক সুখেই কিছু অপূর্ণতা আছে
——————————————————

প্রত্যেক সুখেই কিছু অপূর্ণতা আছে।
আনন্দচ্ছল চোখেও আদ্রতা আছে ।
দিনেরা নীরবে মাথা নত করে ছিলো।
রাতের স্পন্দন থেমে আছে ।
কাকে কী বোঝাবো জানা নেই
চেতনা আর হৃদয় আঢ়ষ্ঠ হয়ে আছে।
স্বপ্ন ছিলো নাকি কেবলমাত্র ধুলো।
যা চোখের পাতায় লেগে আছে
কাকে বলেছি মনের সব কথা
সারা শহরে উত্তেজনা রয়ে গ্যাছে।
ইচ্ছেরা ছাই হয়ে গ্যাছে তবু
আগুন কোথাও এখনও জ্বলছে।

৭). নিজেকে নিজের করেছি যতো বুঝতে পেরেছি
———————————————————-

নিজেকে নিজের করেছি যতো বুঝতে পেরেছি ।
গলে যাওয়া নীল রত্ন চুঁয়ে বয়ে চলেছে সময়,
নীল ঘন নীল এই নীরবতা।
কোথাও মাটি পাইনা , কোথাও আকাশ নেই এখানে
শিহরিত এই একাকীত্ব, পাতা ঝরা।
বলে চলেছে কেবলমাত্র তুই আছিস এখানে
কেবলমাত্র আমি আছি
আমার নিঃশ্বাস রয়ে গ্যাছে, রয়েছে হৃদয় কম্পনগুলো
এতোই গভীর, এতোটাই এই একাকিত্বতা
আমি কেবলমাত্রই আমি
আজ বুঝতে পারছি, আমিই কেবলমাত্র আমার নিজস্ব।

৮). তোমাকে দেখে মনে এলো
———————————————–

তোমাকে দেখে মনে এলো
জীবন সূর্যের আলো, তুমি ঘন ছায়া !
আজ মন আরও কিছু আশা সঞ্চয় করেছে
আজ আবার মনকে আমি বুঝিয়ে চলেছি।
তুমি যদি চলে আসো তবেই ভাববো আমি
আমি কী হারিয়েছি, কী পেয়েছি।
আমি যা গুনগুন করতে পারিনা
সময় এমন গান কেনো গেয়ে চলেছে!

————————————————————

[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া।
তথ্য নির্দেশিকা –

১). Chopra, Anupama (২০০০ সাল)। Sholay: The Making of a Classic। Penguin Books India। পৃষ্ঠা – ১৬. আইএসবিএন 0-14-02997-0X.

২). “সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি”। – ২রা ডিসেম্বর ২০১৩ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-০২.

৩).http://www.bollywoodhungama.com/movies/features/type/view/id/3718/
Sholay, through the eyes of Salim Khan, ,Rediff.com

৪). “Javed Akhtar, Dua nominated to Rajya Sabha – India – DNA”। Dnaindia.com। ১৭ই নভেম্বর ২০০৯ সাল। সংগ্রহের তারিখ – ৩রা মার্চ ২০১৩ সাল।

৫). “Transcript of the Javed Akhtar Chat”। rediff.com। ২৪শে অক্টোবর ২০১২ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩রা মার্চ ২০১৩ সাল।

৬). “Honey Irani on Divorce, Survival & Shabana Azmi”। iDiva.com। সংগ্রহের তারিখ ৩রা মার্চ ২০১৩ সাল।

৭). “রিচার্ড ডকিন্স পুরস্কার পেলেন জাভেদ আখতার”। এনটিভি অনলাইন। ৮ই জুন ২০২০ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ – ৮ই জুন ২০২০ সাল।

৮). Chopra, Anupama, Sholay – The Making of a Classic (Penguin Books) ২০০০ সাল। আইএসবিএন ০-১৪-০২৯৯৭০-X

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress