Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জরি

আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে জরি। টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছে ঠোঁটে। ঠোঁট দুটোকে দেখাচ্ছে সুন্দর। আশিককে একটা বিঘত চুমু খেলে কেমন হয় এখন! বিছানায় এখনো খালি গায়ে শুয়ে আছে সে। স্বামীকে যখন ইচ্ছা চুমু খেলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু চুমু খেলে বিপদও আছে। আশিক আর তখন তাকে সহজে ছাড়বেনা। একটা চুমুর বিনিময়ে এক হাজারটা চুমু দিয়ে ছাড়বে। থাক বাবা দরকার নেই। আকাশি রঙের শাড়িটা এখন আর ভালো লাগছেনা। অথচ শখ করে কিনেছিলো নিউমার্কেট থেকে। এই শাড়ি পাল্টে অন্য শাড়ি পড়লে হয়। আলমারি খুলে সে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়িটা বের করে। শাড়ি পাল্টানো ঝামেলার বিষয়। ম্যাচ করে ব্লাউজও পড়ো। শাড়ি পড়ার কাজটাও ঝামেলার। কুচি ঠিকমতো না হলে বেখাপ্পা লাগে।

জরির মা নাহিদা আক্তার খুব গুছিয়ে শাড়ি পড়তে পারেন। সামান্য একটা আটপৌরে শাড়িও তিনি পড়বেন খুব গুছিয়ে। মায়ের গুণ নাকি মেয়েরা তেমন একটা পায় না। কথাটা ঠিক না। জরি মায়ের সব গুণই পেয়েছে। সবুজ শাড়ির সাথে মিল রেখে সবুজ রঙের একটা বড় টিপ কপালে দিতে পারলে বেশ হতো। সমস্যা হচ্ছে বড় টিপ পাওয়া যাচ্ছেনা। ছোট টিপেই কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কাজল জিনিসটা জরির মোটেও পছন্দ না। চোখে দিলে কেমন লেপটে থাকে। ঝামেলার মনে হয় কাজল জিনিসটাকে। আসল বিষয় সেটা না, রাশেদ ভাই জরিকে বলতো কাজল দিলে তোকে দেবীর মত দেখতে লাগে। অনেকদিন পর হঠাৎ রাশেদ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় একটু মন খারাপ লাগছে।

অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া রাশেদ ভাই ঘোষণা করে দিলো তিনি চাকরি বাকরি কিছুই করবেন না। কবিদের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। সবাই প্রথম পাত্তা দেয়নি। সত্যিই দেখা গেলো রাশেদ পথে পথে ঘুরে। মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাথাভর্তি এলোমেলো চুল।
এই মানুষটাকে জরি ভালোবেসে ফেলেছিলো। ভালোবাসার মানুষকে হুটহাট মনে পড়লে কেন জানি মন খারাপ লাগে।

রাশেদ ভাইয়ের কথা থাক। জরি খুব যত্ম করে গায়ে সেন্ট মাখে গ্রীবা আর চুলে। ভুরভুর করে মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে যেন সমস্ত শরীরে। জরির খালা প্যারিস থেকে উপহার পাঠিয়েছেন গত জন্মদিনে। ফরাসি সেন্ট পৃথিবী বিখ্যাত। কে বলেছিলো জানি কথাটা। রাশেদ ভাই। ঘুরেঘুরে রাশেদ ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। আজ জরির দ্বিতীয় বিয়ে বার্ষিকি। সন্ধ্যয় তারা রেষ্টুরেন্টে খেতে যাবে। তারপর রিকশায় ঘুরবে সমস্ত শহর।

রাশেদ ভাই একসময় বদ্ধ পাগল হয়ে গিয়েছিলো। দরজায় তালা দিয়ে রাখতে হতো। জরি একদিন দেখতে গেলে স্বাভাবিক হেসে বললো, শেষমেশ পাগল হয়ে গেছি। পাগল না হলে অন্যরকম জীবন কাটাতাম।
কিভাবে জীবন কাটাতেন?
তোর মত একটা মেয়েকে বিয়ে করতাম। কে জানে তোকেই হয়তো বিয়ে করতাম। কাজল দিলে যেসব মেয়েদের দেবীর মত দেখায় তাদেরকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে। হাহাহা।
হাসছেন কেন?
পাগলের হাসি। কিছু মনে করিস না। পাগলের কান্না অথনা হাসি ধরতে নেই।

জরির যেদিন বিয়ে হয়ে গেলো সেই রাতেই রাশেদ ফ্যানের সাথে রশি ঝুলিয়ে সুইসাইড করে। জরি জানতে পারে বিয়ের তিনদিন পর। আজ তাহলে রাশেদ ভাইয়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

আশিক উঠে দেখে জরি ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কাঁদছো কেন জরি?
জরি কান্না থামায়। আশিক বারবার জানতে চায় কাঁদছো কেন। মা বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে?
আশিক কাজটা সহজ করে দেয়। জরি কেবল মাথা নাড়িয়ে বলে, হুঁ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *