জব্দ
ঠানদি মারা যাওয়ার পর,ঠাকুর্দা মনের দুঃখে বিবাগী হলেন।ঠানদি মোটা কালো হলেও খুব রসিক ছিলেন,আমাকে নাগর বলে ডাকতেন।
বছরখানেক যেতে না যেতেই ঠাকুর্দা
ফিরে এলেন,আমাদের বয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করে।
লম্বা ছিপছিপে গড়র।টানাটানা চোখ, পানপাতা মুখ,কমলাকোয়া ঠোঁট,একবার তাকলে চোখ ফেরানো যায় না,সত্যি এমন রূপসী।বুড়ো বয়সে কি করে যে এমন রত্ন নিয়ে এলেন,ভেবে আমরা অবাক হই।
বুড়ো টাকার কুমির।
আগের ঠানদির কাছে যেমন আমরা যেতে পারতাম,এর কাছে তেমন যেতে পারলাম না।আমি পটলা নিজেদের মধ্যে আপসোস করি,তবু চেষ্টা ছাড়ি না।
কারণে অকারণে ঠাকুর্দার খোঁজ খবর নিতে যাই নানা ছল ছুতায়।কিন্তু কিছু লাভ হয় না।আমার চেয়েও সেয়ানা পটলা।সে বলে একবার চোখে চোখ পড়লে,কাজ গুছিয়ে নেবো।আমরা উঁকি-ঝুঁকি মারতে ছাড়ি না।নানা ফন্দি ফিকির খুঁজি। কিন্তু সে সুযোগ আর আসে না।
একদিন শুনি পাড়ার কার্তিক দারোগার সাথে নাকি তার খুব ঘনিষ্ঠতা।
আমরা ছি ছি করে উঠি।ঘৃণায় আর দারোগার ভয়ে আমরা দূরে সরে আসি।
হঠাৎ নতুন ঠানদি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।শ্মশানের কাজ সেরে,আমরা ফিরে এসে দয়াল ঠাকুর্দার বারান্দায় এসে বসি।
ঠাকুর্দা হুঁকো টানতে টানতে বৈরাজ্ঞের সুরে বলেন,ভারী সতি-সাদ্ধি ছিলেন তোদের নতুন ঠানদি।শুনে আমরা চোখ
চাওয়া চাওয়ি করি।পটলা তিনবার খুক খুক করে কেশে ওঠে।পটলার কাশি শুনে,
ঠাকুর্দা বলে ওঠেন,বিশ্বাস হচ্ছে না তোদের?
আমি বলি,তিনি মরে স্বর্গে গেছেন।থাক না এসব আলোচনা এখন?পটলা বলল,দোষ তো ঠানদির নয়,দোষ ওই বদমাশ কার্তিক দারোগার।
ঠাকুর্দা বলে ওঠেন,দোষ কারোই ছিল না।তোদের ছোক্ ছোক্ ভাব দেখে,ওটা আমিই রটিয়ে ছিলাম,তোদের বাগে রাখতে।শুনে আমরা সম্ভিত হয়ে যাই।বুড়ো এভাবে আমাদের জব্দ করবে ভাবতে পারিনি।