ছোঁয়া
স্কুল ছুটির পর বোনের টানে তাড়াতাড়ি পা চালায় টিনা, নিশ্চয়ই দরজায় অপেক্ষা করছে মনি। বাড়ি ফিরে জামাকাপড় পাল্টে রান্না ঘর থেকে বাড়া ভাতের থালা নিয়ে পিঁড়ি পেতে বসে পড়ে বোন মনিকে নিয়ে। আধখানা ডিমের থেকে কিছুটা বোনের মুখে বাকিটা নিজে খায়।
স্কুলের অনেক হোমওয়ার্ক আছে। টিনা তাড়াতাড়ি ঘরটা ঝাঁট দিয়ে নেয়। মা ভাইকে নিয়ে ঘুমচ্ছে তাই দরজাটা আস্তে করে ভেজিয়ে বাইরের বারান্দায় অঙ্ক নিয়ে বসে ।
কিছু অঙ্ক জটিল সমস্যায় আটকে যায়, সন্ধ্যায় পাশের বাড়ির নব্য কাকুর কাছে শিখে আসবে টিনা। স্কুলের ফিস্ থেকে ড্রেস আগাগোড়া এই কাকুই দিচ্ছেন। বাবার স্বল্প মাইনাতে সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছিল। বাবা’কে দেখলে বড়ো মায়া হয়, চুপচাপ থাকেন আজকাল। মা স্কুলে যাওয়ার পর প্রায়ই টিনার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলেন,’মা তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? তোর মা কেন যে এমন কাজ করলো! মেয়ে দুটোকে ভাসিয়ে দিয়ে গেল।’ মা’এর মুখটা মনে পড়লেই অভিমানে দুচোখ ভরে উঠে টিনার। গাড়ি চেপে সেই যে কাকুটার সাথে চলে গেল বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে আর এলো না মা। মনি তখন বছর তিনেক। বাবা নতুন মা’কে নিয়ে এলেন,কর্মরতা, ছোট একটা প্রাইমারি স্কুলের টিচার।
এরমধ্যে মা সন্ধ্যা দিয়ে ভাইকে আর মনিকে দুধ দিয়ে যায়। টিনা মা’র দিকে তাকাতে মা বলে, ‘খরচ চালাতে পারছি না তাই দুধ কমিয়ে দিয়েছি, তুই আমাদের সাথে চা খাস।’ টিনা ঘাড় নেড়ে সন্মতি জানায়।
রাতে ঘুম আসছে না টিনার ছটফট করছে বিছানাতে। বাবাকে ডেকে কি সবকথা বলবে? মা শুনলে যদি বকাবকি করে নব্য কাকুর বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়,তাহলে তো পড়াশোনাটা বন্ধ হয়ে যাবে! দুধের মতো লেখাপড়াটাও বন্ধ করে দিতে পারে মা। নব্য কাকুর অসংলগ্ন ছোঁয়া সবে কি শুরু আর আমার নির্বাকতা?