ছেলেবেলা
রুদ্র ছেলেবেলায় খুব চঞ্চল ছিল। দৌড়াতে খুব ভালোবাসতো। তাই হাঁটা অপেক্ষা দৌড়াদৌড়ির সব কাজ করতো। তবে বাটুল হওয়ায় সকলেওকে নিয়ে মজা করত। স্কুলের স্পোর্টসে হান্ড্রেড মিটার রানে কখনো সেকেন্ড হয়নি। বাঁশি বাজানোর আগে ও রেডি হয়ে যেত। রুদ্রর মা বসে দেখতো খুব মজা পেত। অনেকে তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক কিছু উপদেশ দিতেন। রুদ্রর মা কিছু বলতো না। ফার্স্ট হওয়ার পর রুদ্র ঊর্ধ্বশ্বাসে তার মায়ের কাছে দৌড়ে আসত। আনন্দে মা ওকে কোলে তুলে নিত। বেশ গর্ব হত ছেলের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পড়াশোনায় ও মোটামুটি ছিল। একটু ফাঁকি দেওয়ার অভ্যাস। মা তাই দুঃখ পেত। অন্য সমস্ত বিষয়ে রুদ্রর আগ্রহ ছিল। গান বাজনা, নাটক, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়ে। অনন্য মানে রুদ্রর বন্ধু পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। তাই ওদের মায়েরা নিজেদের একটা আলাদা দলে সরিয়ে নিয়েছিল। রুদ্রর মত কয়েকজন কষ্ট পেত বৈকি। এভাবেই দিন যায়। ওদের স্কুলে মায়েদের কত গ্রুপ। তারা একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, মাঝেমধ্যে কারোর বাড়িতে পিকনিক। রুদ্র দের অবস্থা সেরকম ভাল নয়। কোনভাবে দিন চলে। তবু ভালো স্কুলে পড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। তাই সকাল হতেই অভিভাবিকা দের নানা রকমের শাড়ি পরার প্রতিযোগিতা। এভাবে দিন চলে। নানা আদব কায়দায় ঝলমল করে। কমদামি পোশাকের মানুষের সাথে সকলে পা মেলায় না। রুদ্র তার গান নাটক কম্পিউটার মন দিয়ে করে চলেছে। একেবারে ছেলেবেলা থেকে নাটকে সুন্দর অভিনয় করতো। কত বড় বড় হলে অভিনয় করছে। কবি শঙ্খ ঘোষ, নাটকের শাঁওলি মিত্র, কেতকী দত্ত কোন নাটক দেখে ওকে কোলে তুলে আদর করতেন। ক্রমে খেলা রুদ্রর কাছে প্রাধান্য পাচ্ছিল। ড.কুন্তল রায় এর কাছে ওর শিক্ষা শুরু হলো। পি কে ব্যানার্জীর কাছ থেকে ও পেল পুরস্কার। ক্রমে ও অনুশীলন বাড়িয়ে দিল। তার মধ্যে চলল পড়াশোনা। এভাবেই রুদ্রর সাথে চললো ওর মায়ের স্বপ্নভরা দিনগুলো। সব জায়গায় ওর মা সঙ্গে যেত। সেসব দিন ছিল খুব সুন্দর। রুদ্র ক্লাস ফাইভ হল। প্রত্যেক বছর দুর্গা পুজোর অষ্টমীর সন্ধ্যায় ওর নতুন নাটক মঞ্চস্থ হত। মা সারাদিন রিহার্সাল করাত। কালীপূজায় চলে যেত বিভিন্ন হলে। সেখানে নাটক মঞ্চস্থ হত। একবার কালীপুজোয় বাজির মশলা হাতে মেখে আগুনে হাত ঝলসে গিয়েছিল রুদ্রর। পরের দিন ছিল সোদপুর লোকসংস্কৃতি ভবনে একটি শো। কী ভয়ানক হাত নিয়ে অদম্য শক্তির জোরে নাটকে অভিনয় করেছিল। ওইটুকু শিশু, তার ইচ্ছাশক্তিকে দেখে আমি স্যালুট জানিয়েছিলাম। যেকোনো বিষয়কে ভালবাসতে হয়। অনুশীলন দরকার। তবেই তার লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। হ্যাঁ রুদ্র পেরেছিল তার অদম্য শক্তির জোরে, তার লক্ষ্য তে পৌঁছে ছিল। তাইতো নাটক টা সকলের ভালো লেগেছিল। রুদ্রর মা হরসেশে চেয়ারে বসে ভাবতো ছেলেটার মনের জোর টার কথা। এত দুরন্ত হয়েও কত বাধ্য হতো মাঝেমধ্যে। পড়াশোনার চাপ বেড়ে গেল। কত পুজো নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন হলে শো করতে গিয়ে, তবুও ওর মধ্যে ছিল অসাধারণ প্রতিভা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি। যেসব বন্ধু এবং তার মায়েরা নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল, তারা কেউ কেউ আবার মিলিত হল। পড়াশোনায় ভালো হলেই সে ভালো ছেলে – এ ধারণা ভুল। শিশুদের মধ্যে থাকে অনেক প্রতিভা। কোনটা বিকশিত হবে আমরা জানতেও পারিনা। তাই ওদের উৎসাহ দেওয়ার দরকার আমাদের। এভাবে রুদ্রর ছেলেবেলাটা কাটলো। ওর মায়ের মুখে হাসি এল।