শেষ রাতে যখন অমলেশ বাসায় ফেরে,
রাস্তায় ফিকে আলোতে আপনজন হয় ছায়া৷
ছায়াসঙ্গীর সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমাগত হেঁটেই চলে–
ট্রেন থেকে নেমে তিন মাইল পর তার বাসা৷
রাতের অন্ধকারে ঘুম চোখে সাইকেল চালানো মুশকিল।
কতদিন হয়েছে সাইকেলটা ভাঙা পড়ে আছে।
বোনের স্কুল থেকে পাওয়া সাইকেল কী চালানো যায়!
তাহলে বোনের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে ।
অমলেশ হোগলার বন পেরিয়ে যখন জীর্ণ কুটিরে পৌঁছায়,
তখন ঠিক ভোর হবো হবো৷
আচমকা কোনো গাছে কাকের কা-কা-কা রব ভেসে আসে,
আর শোনা যায় পেঁচার করুণ কান্না!
দূরে বড় রাস্তায় ভেসে আসে চৌকিদারের জাগতে রহো…ডাক,
অন্ধকার মেঠো পথে লাইট পোষ্টের হালকা আলোয় কানে ভেসে আসে কুসুমিকার গানের রেওয়াজ৷
তখন অমলেশ বুঝতে পারে তার জীর্ণ কুটীর এসে গেছে।
চেনা অচেনা শত বাড়ির মাঝে
তার কুটিরে শোনা যায় উফ কী কষ্ট!
হয়তো অমলেশের দীর্ঘ পথের দীর্ঘশ্বাস!
পাশের বাড়ির কুসুমিকা দীর্ঘশ্বাসে অনুভব করে বুঝতে পারে তার অমলেশ ফিরে এলো।
কুটির ও সিমেন্টের বাসায় ইগো, সম্মানের ব্যাপার থাকে
কখনো ভালোবাসা টিকে থাকতে পারে না!
অমলেশ শুধুমাত্র ঘরে ফেরে মা বাপ হারা ছোট্ট বোনের জন্য৷
সকাল হতেই বাড়ির সামনে ভ্যান রিক্সায় বসবার সময়
অমলেশ ও কুসুমিকার চোখে চোখে চাওয়া ও মৃদু হাসি,
কুসুমিকা বুঝতে পারে অমলেশের চোখ চিকচিক করছে
হয়ত তার বোনকে কোনো বিপদ এলে রক্ষা করি।
অমলেশ ফেরে তার একমাত্র চৌদ্দ বছরের বোনের জন্য,
চলতে থাকে অমলেশের জীবন।
বোন মাধ্যমিক দেবার পর কোথায় যে হারিয়ে যায়,
অমলেশ রোজ ছুটে ছুটে ভোর রাতে বাড়ি ফেরে
পাশের বাড়িতে আর কুসুমিকার গান ভেসে আসে না!
দীর্ঘকাল অমলেশ তার বাড়িতে আর ফিরে আসে না
বোন তার স্বামী ও বাচ্চা নিয়ে আজো দাদার অপেক্ষায়…
কুটির থেকে আজ দালান বাড়ি!
অমলেশ ও কুসুমিকা আজ কোথায়!