ছমছম
আগেরকার দিনে মেয়েদের খুব ছোটতে বিয়ে হত—পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে—
মেয়ে যখন বারো-তেরোতে শিশু থেকে কুমারী হতো—-তখন মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হতো— এরপর স্বামীর সাথে থাকতে পারত।
বাবুলের সতেরো বছর বয়স যখন— বিয়ে হয়েছিল বিষ্ণুপুরের কালিয়াগঞ্জে বনমালী বাবুর আট বছরের মেয়ে সবিতার সঙ্গে—- প্রায় পাঁচ বছর আগে।
মেয়ের এখন তেরো আর বাবুলের বাইশ—
বাবুলরা মেয়ের বাড়ির চিঠির আশায় থাকে—-হঠাৎ একটা চিঠি আসে—-তাতে লেখা আমার মেয়ে বড় হয়েছে—-জামাই এসে নিয়ে যায় যেন—-নিয়মানুসারে জামাইকে আনতে যেতে হয়—–চিঠিটা বৃহস্পতিবার এসেছে—–শুক্রবার আর শনিবার শ্বশুরবাড়ির প্রনামির জিনিস কেনাকাটি করা হয়।
ব্রজমোহন বাবু বাবুলকে রবিবার প্রত্যুষে রওয়ানা করবার মনস্হির করেন।
চিঠিতে ঠিকানা আছে —তাই চিঠিটা ব্যাগের মধ্যে নিয়ে দুর্গা দুর্গা করে যাত্রা শুরু করে—- ট্রেনে উঠে চিঠিটা বার করে দেখে চিঠিটা বেশ পুরোনো—-এক বছর আগে লেখা—-বাবুল ভাবে ভুল করে লিখেছে—
জানালার ফুড়ফুড়ে ঠান্ডা হাওয়ায় তন্দ্রা আসে বাবুলের—-ভাবতে থাকে চিঠিটা এক বছর আগের লেখা নয় তো।
রাত বারোটায় টিটির ধাক্কায় বাবুলের ঘুম ভাঙ্গে—বিষ্ণুপুর নামবেন তো??
বাবুল বলে বিষ্ণুপুর এসে গেছি-??–
“ঘড়ির সময় দেখুন রাত এগারোটায় পোঁছানোর কথা ছিল—- সেটা বারোটায় পৌঁছালো”।
বাবলু ভাবে কি ঘুমাচ্ছিলাম রে বাবা—গাড়ি এত দেরী করে পৌঁছালো সেটাও টের পায়নি।
টিটি বলে আপনি কি বনমালীদার জামাই-???
—আপনি কি বৌকে নিতে এসেছেন??
বাবুল অবাক হয়ে বলে— আপনি জানলেন কি করে??
ঐ এক বছর ধরে বনমালীদার গাড়ির চালক এসে খোঁজ করে—আপনার এক বছর আগে আসার কথা ছিল—-তা এতদিনে এলেন??
বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বাবুল শ্বশুরবাড়ি যায়—-অনেক রাত বাড়ি শুদ্ধ লোক ঘুমাচ্ছে—-মাথার উপর একটা হুতুম পেঁচা হুপ শব্দ করেউড়ে গেল।শেয়ালের কান্না,কুকুরের উচ্চস্বরে চিৎকারে গা ছমছম করছিল।পর মুহূর্তে ভাবে যাক বাবা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে গেছে ।জামাই বলে কথা ,নিশ্চয় আদর যত্নের ত্রুটি করবেন না।
জামাই এসেছে কলরব শোনা যায়। সবার ঘোমটায় মুখ ঢাকা—–কোনটা যে বৌ বোঝা যাচ্ছিল না—রাত দুটোয় এক থালা ভাত,ডাল,আলুভাজা,মাছভাজা খেতে দিল—হঠাৎ বাবুল বলে লেবু দেবেন।
হ্যাঁ বলে বৌ জানলা দিয়ে লেবু পেড়ে দিল।এক সেকেন্ভের জন্যে বাবুলের মাথা ঘুড়ে যায় ।
কত দূরে গাছ বৌ লেবু পারল কি করে????
ভাত খাবার পর হাত ধোবে—সেটার জন্য লম্বা হাত জল নিয়ে আসে—-হঠাৎ হাড় হীম হয়ে পড়ে ——শাশুড়ীর গায়ে হাত লাগতে।ঠান্ডা বরফের মতো হাত। বৌকে নিয়ে শুতে যায়।ভোরের আগে হঠাৎ লক্ষ করে বৌয়ের মুখ।ওমা এত কঙ্কাল।ভয়ে চিৎকার করতেই চার পাঁচটা ভূত বলে কি হলো ঁজামাই??
এক বছর ধরে তুমি আসবে বলে সবিতা মা অপেক্ষা করেছিল। তারপর বাবুল ঘর থেকে রাম রাম করে কোনভাবে বেড়িয়ে আসে।
মনে প্রশ্ন আসে—সবাই কঙ্কাল কেন? ।দৌড়ে হাঁফাতে হাঁফাতে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ট্যাক্সিতে উঠে—ট্যাক্সি চালক বলে কি হলো জামাইবাবু?? দিদি শ্বশুরবাড়ি যাবে না??
” চলে যাচ্ছেন জামাইবাবু”??
হ্যাঁ ,”শীঘ্রই স্টেশনে চলো”—
আচ্ছা আপনি এই বাড়ির লোকদের চেনেন???
তুমি জানো বাড়ির সবাই মারা গেছে-??—হ্যাঁ তো— সব জেনে তাহলে স্টেশন থেকে আনলে কেন??সব একটা করে কঙ্কাল—-তার উপরে শাড়ি পরা—-চালক না বোঝার ভান করে বলে—তা কেমন দেখতে ওদের??
দেখো তো আমার মতো কিনা?
তাকিয়ে দেখে চালক ও ভূত।তারপর ভোরে অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছুটতে ছুটতে স্টেশনে এসে পোঁছায়।
স্টেশনে স্টেশন মাষ্টার শুনে বলে— গত বছর চীনা মহামারীতে ঐ গ্রামের সবাই মারা গেছে—-।
আমি তো ঐ গ্রামের ছেলে —তা জানব না।বাবুল বলে আপনি তো বেঁচে আছেন?? ওনার দিকে বাবুল তাকিয়ে দেখে—“উনি ও কঙ্কাল”।
ঐ দেখে অজ্ঞান স্টেশনে।কে বা কারা সকালে চোখে মুখে জল দিচ্ছেন।চোখ মেলতেই বলে ভূ—ত।
না দেখুন আমরা মানুষ—কি হয়েছিল—- ওদের ঘটনাটা বলে—-লোকজনের ভীড়—সবাই বলে এক বছর ধরে এই ভূতগুলি মুক্তি পাওয়ার জন্য নানান চেষ্টা করছে।
আপনি আজ এক্ষুনি ওদের আত্মার মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধ করুন।
বাবুল বলে রাতের অন্ধকারে গেছি চিনতে পারব না।তাছাড়া আমি বাড়ি যাব।সবাই ওর সাথে শ্বশুরবাড়ি যায়।সকলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে।ওনারাই পুরোহিতের ব্যাবস্হা করে দেন।
” শ্বশুরবাড়ির সকলের আত্মারা মুক্তি পায়”
খুব ভাল লাগল