চোখের মণি
আনন হলো মনের দর্পণ, আর নয়ন হলো সে দর্পণের মধ্যমণি।
চোখের নজর দিয়েই নাকি মানুষকে চেনা যায়, ঐ ব্যক্তিবিশেষের চোখ থেকেই, এ কৃতিত্বের দাবী রাখেন অনেকেই, আমি বলব অন্য কথা, ঐ চোখের ও চোখের মণির রঙ ।
এ প্রসঙ্গে, প্রথম যে উল্লেখযোগ্য কথা না বললেই নয় সেটা হলো —” মেলানিন” যা কিনা যুক্ত ঐ চোখের মণির রঙ বিষয়েই কিছুটা। কথাটি এসেছে, গ্রীক শব্দ “melas” মানে dark বা black ।
এক কথায় “মেলানিন” হলো আমাদের দেহে বিশেষ ত্বকে অবস্থিত এক রাসায়নিক রঞ্জক পদার্থ। অনেক ধরনের মেলানিনের মধ্যে ” ইউমেলানিন” সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের শরীরে, নানা রঙের সংমিশ্রণে আবার অনেক রঙের মধ্যে প্রধানত কালো ও বাদামী ছোপই প্রবল প্রকট ।
পৃথিবীতে এতো লোকের বাস, তাদের ত্বকের তারতম্য কত, তামাটে, বাদামি, অল্প কালো, ঘোর কালো, হলদে, সাদা, লালচে, ইত্যাদি। সব ঐ “মেলানিন জিনগত”— কোন ব্যক্তিবিশেষের, কৃতিত্ব বা গর্বের কিছু নেই। অথচ ঐ নিয়েই না কত লড়াই।
“মেলানোসাইটস” ( melanin cell) ত্বকে জোরদার হয়ে ওঠে সূর্য রশ্মি UVB তে আর সেখানে কিছুটা প্রতিরোধেই আধিক্য বাড়ে ঐ “মেলানিন ” নামক আমাদের শরীরে উপস্থিত রঞ্জক রাসায়নিক দ্রব্যটির। এজন্য, অসিত চর্মের লোকের থেকে শ্বেত চর্মের ব্যক্তিদের চর্ম ক্যানসার ( malignant melanoma ) হবার সম্ভাবনা বেশি। শ্বেত চর্মে মেলানিন আধিক্য কম থাকায়, তা স্পর্শকাতর হয়। শ্বেতাঙ্গরা Tanned হবার জন্য সমূদ্র বেলাভূমিতে সময় অতিবাহিত করে, (সূর্য কিরণের UV অংশ ও লবনাক্ত বাতাস),যাতে ত্বকে মেলানিন রঞ্জক পদার্থ বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে অনেক কিছু বলবার অবকাশ রাখে, সে কথা থাক্। মূল প্রসঙ্গেই আসি, এবং মূল কথাও শুধু আমাদের শরীরের নানা রঙ নির্ভর করে ঐ মেলানিনের দাপটেই। According to the American Academy of Ophthalmology— ( প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি কোন এক Ophthalmologist নই)। একটা ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তা হলো চোখের মণির রঙ, যেমন, কালো, হলদে, বাদামি, সবুজ, নীল, পাশুটে কত রকম। এও মেলানিনের কারসাজিতে। আর কিছুটা নির্ভর করে ব্যক্তিগত তথা বংশগত “জিন” এর প্রভাবে। কেমন এক অদ্ভুত ব্যাপার হয়, যখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যদিও সচরাচর নয়, দেখা যায়, কোন মানুষের দু-চোখের মণি দু রঙের। বিজ্ঞানে একে বলা হয় “Heterochromia Iridis” অবশ্যই অতি কম সংখ্যার ব্যাপার। মানুষ ছাড়া বেড়ালদের বা Cat জাতীয় পশুদের মধ্যে আর খুব কম কুকুরের মাঝেও কিছু কিছু দেখা যায়। (নীচে সব ছবিতে উল্লেখ করা আছে)। congenital বা বংশগত কারণ ছাড়াও , অনেক সময়, কোন দুর্ঘটনা, ভীতিপ্রদ আঘাত, ঘটনা বা ব্যাধির প্রকোপে যেমন ডায়াবেডিস, চোখে গ্লোকুমা, টিউমার ইত্যাদির ফলেও এমনটা ঘটে ।
চোখের দুটো মণিতে আবার একই ভাবে দু-রঙের বৈচিত্র্যও দেখা যায়। অর্থাৎ symmetrical ।
এই Heterochromia Phenomenon দেখা যায় ফর্সা ত্বকের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই বেশি তুলনামূলক ভাবে কালোদের চেয়ে। না, এতে দৃষ্টির কোন ব্যাঘাত হয় না। বরং বলা বাহুল্য, বরং সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণ হয়। স্বভাবতই নজর কাড়ে। কিছু( প্রায় ৯/১০জন) সেলিব্রেটির এমনটা আছে। যেমন যুগপৎ বাদামি ও সবুজ চোখের Jane Seymour ( Actress), David Bowie গায়ক ও গীতিকার।
শোনা যায় Alexzander the Great ,তারও নাকি ছিল।
[ একটু প্রসঙ্গান্তরে যাই, actress Elizabeth Taylor এর চোখে আর এক বিশেষ ব্যাপার ছিল— extra eye lashes from natural eye line gland যা কিনা খুব কম মানুষেরই হয়, বলা হয় “Distichiasis” এটা কিছু কিছু অন্য প্রজাতির “ম্যামেলস্” দের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং অবশ্যই সৌন্দর্য বর্দ্ধক ]
তবে ঐ রঙ্গীন চোখের মণিতে নজর কাড়া অক্ষতিকারক নীরিহ খামখেয়ালী মেলানিন মর্জির মতলবও শুধুমাত্র “সৌন্দর্য বৃদ্ধি ” করাই, তাই এটা লিখতে এতো ইচ্ছে হলো।