Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঘৃণা || Ashutosh Mukhopadhyay

ঘৃণা || Ashutosh Mukhopadhyay

রোজই রাত নটা নাগাদ টার্মিনাস থেকে বাসে উঠি। ফেরার সময় তাই সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন ওই লোকটার বাস জোটে। দোতলা স্টেট বাসের একতলার কণ্ডাক্টর সে।

প্রায়ই তার বাসে উঠি বলে মুখ-চেনা। তার কর্কশ স্বভাবের দরুনও মুখ-চেনা। উঁচু লম্বা চেহারা, চওড়া বুকের ছাতি। মাথায় আঁকড়া চুল। রুক্ষ চোয়াড়ে মুখ। গায়ের রং তামাটে, কালচে। পরনে ময়লা খাকি প্যান্ট, গায়ে বুকখোলা খাকি কোর্তা–ভিতরের বিবর্ণ তেল-চিটে গেঞ্জিটা চোখের পক্ষে পীড়াদায়ক।

আমার মনে হত কণ্ডাক্টরি করতে হয় লোকটার সেই রাগ রাজ্যসুদ্ধ যাত্রীর ওপর। একদিন আমার সঙ্গেই লেগে গেছল একটু। টিকিট চাইতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার কাছে দশটা টাকার চেঞ্জ হবে?

–না। খুচরো না নিয়ে ওঠেন কেন?

আমিও রুক্ষ জবাব দিলাম, খুচরো নিয়েই উঠেছি। দরকার ছিল বলে আছে। কিনা জিজ্ঞেস করেছিলাম। একটা সিকি তার হাতে দিলাম।

প্রায় শেষ প্রান্তের যাত্রী আমি, পঁচিশ পয়সাই ভাড়া। লোকটা টিকিট দিয়ে চলে গেল। একটু বাদেই ফিরে এসে হাত বাড়ালো, দিন।

আমি মাথা নাড়লাম।–দরকার নেই, আপনার ব্যবহারেই খুশি হয়েছি।

লোকটার অপ্রসন্ন দুচোখ আমার মুখের ওপর থমকালো। বলল, এ চাকরি করলে আর ব্যবহার মোলায়েম রাখা যায় না, বুঝলেন? ওই দেখুন, দেখুন বাস গড়ের মাঠ আর উনি গেটে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছেন! ও মশাই, বলি ভিতরেও হাওয়া খাওয়ার জায়গা আছে, উঠে আসুন!

টেরিলিন পরা গেটে-দাঁড়ানো শৌখিন তরুণটি মুখ লাল করে উঠে এসে বলল, ভদ্র ভাষায় কথা বলতে পারেন না?

লোকটা দুপা এগিয়ে তার ওপর দিয়ে গলা চড়ালো–অপর লোকের সুবিধে অসুবিধের কথা না ভেবে আপনি উঠেই গেটে গঁাট হয়ে দাঁড়ালেন–তার পরেও ভদ ভাষা যোগাতে পারলে তো ভাষার পণ্ডিত হয়ে বসতাম, বাসের কণ্ডাক্টরি করতে আসব কেন?

অনেকে হেসে উঠেছিল।

আর একদিন তো গোটাকতক ছোকরা যাত্রীর সঙ্গে হাতহাতি শুরু হয় আর কি। সামনের লেডিস সীট-এর দিকে গিসগিস ভিড়, পিছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। লোকটা ঘেমে নেয়ে বারপাঁচেক ডেকে উঠেছে, পিছনে চলে আসুন না মশাইরা, সব ওদিকে ভিড় করছেন কেন?

কে কার কথা শোনে! শেষে তিক্ত-বিরক্ত হয়ে লোকটা অল্পবয়সী কটা ছেলের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ওদিকে এত কী আনন্দ মশাই আপনাদের–ভিড়ের চোটে আধমরা হবার দাখিল, তবু ওখানেই দাঁড়িয়ে আনন্দ করা চাই–এদিকে সরে আসতে পারেন না?

ব্যস, এই থেকেই হাতাহাতি লাগে আর কী! গরম বচসার ফলে কণ্ডাক্টরের মুখ দিয়ে আরো যে কথা বেরুলো, তাই শুনে ওদিকের মহিলাদের মুখ লাল হবার কথা। ভিড়ের দরুন তাদের মুখ দেখতে পাইনি।

কণ্ডাক্টরের স্ব-পক্ষেও জনাকতক যাত্রী বচসায় যোগ দেবার ফলে সে-যাত্রা সত্যিকারের হাতহাতিটা হল না। টিকিট দেখতে চাওয়া, ঘণ্টা দেওয়া ইত্যাদি ব্যাপারে লোকটার রুক্ষ ব্যবহার আমি আরো দিন-কয়েক লক্ষ্য করেছি। আমার ধারণা, এর দরুন লোকটাকে যাত্রীদের হাতে একদিন না একদিন নিগ্রহ ভোগ করতে হবে।

সকলের সেটা ছুটির দিন। আমাদের কাগজের অফিস খোলা। ঝমঝম বৃষ্টির ফলে বেরুতে সেদিন রাত দশটা হয়ে গেল। টার্মিনাসের বাসে উঠে দেখি সেই লোকটারই বাস।

বাস ফাঁকা। মাত্র পাঁচ-সাতজন লোক। কণ্ডাক্টর একেবারে পিছনের আগের সীটটাতে বসে নিবিষ্ট মনে সমবয়সী এক ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা কইছে। তাদের ঠিক পিছনের কোণের সীটটাতে আমি বসলাম। ফাঁকা বাস পেলে ওই সীটটাই আমার পছন্দ।

বসার পরেই যে কথা কানে এলো তাতে বোঝা গেল অনেক দিনের পুরনো বন্ধু তারা এবং অনেক দিন বাদে দেখা হয়েছে। আমি বসতে বসতে শুনলাম, ভদ্রলোক বলছে, তোর ভাইদের কারো কারো সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হয়, তোর কথা জিজ্ঞেস করলে ভালো করে জবাবই দেয় না–প্রায় চার বচ্ছর বাদে দেখা হল তোর সঙ্গে, মনে করে একবার এলেও তো পারিস!

জবাবও কানে এলো।–এ ঘন্টার চাকরিতে জান কয়লা হয়ে গেল, সময় পাই কোথায় বল! তার ওপর ফাঁক পেলেই মুদি-দোকানে বসতে হয়, নইলে ভগ্নিপতিটির তো কুমীরের পেট-কড়া চোখ না রাখলে দেবে সব সাবাড়ে!

কণ্ডাক্টর আমার দিকে পিছন ফিরে বসে আছে। তার বন্ধুর মুখ সামনের দিকে। আমার মুখ বাইরের দিকে। বন্ধু জিজ্ঞেস করল, ভগ্নিপতির সঙ্গে শেয়ারে বিজনেস বুঝি?

–বিজনেস! কণ্ডাক্টরের গলায় একটু যেন কৌতুক ঝরল। পাঁচ হাত বাই পাঁচ হাত চালার নীচে কিছু মশলাপাতি, তেল, নুন, আলু, কয়েক হাঁড়ি গুড়, কিছু দড়ি দড়া আর কিছু আতপ চাল–প্রকাণ্ড বিজনেস!…তবু সময়ে ওটুকু করেছিলাম বলে গুষ্টিসুষ্ঠু উতরে গেলাম। হ্যাঁ ভগ্নিপতিই দেখছে এখন, চার আনা শেয়ার পায় আর কম করে চার আনা চুরি করে।

হুইসল বাজতে সে বসে বসেই হাত তুলে দড়ি টেনে ঘণ্টা বাজালো। গাড়ি ছেড়ে দিল। একবার ঘুরে বসে আমার টিকিটটা কেটে নিল। টিকিট কাটা হয়নি এমন যাত্রী আর কেউ আছে কিনা দেখল। তারপর বন্ধুর দিকে ফিরে বসল আবার।

এরপর বাসস্টপ এলে যন্ত্রচালিতের মতই ঘণ্টা দিচ্ছে, গেট দেখছে। দুই-একজন। যাত্রী নামছে, দুই-একজন উঠছে। আলাপের ফাঁকেও লোকটার সেদিকে চোখ আছে। উঠে টিকিট কেটে আবার বন্ধুর কাছে এসে বসছে।

এবারে তাদের অনুচ্চ মোট সংলাপটুকুর একটা চিত্র আঁকার বসনা।

বন্ধু : জমিটা তোর নিজের শুনলাম?

কণ্ডাক্টর : হুঃ, একেবারে জমিদার বলতে পারিস। কলকাতা থেকে সতের মাইল দূর, এই তো এগারোটার ডিউটি শেষ হলে রাত্রি দেড়টায় পৌঁছব।…তবু সেই হুজুগের সময় ধার-ধোর করে আড়াইশ টাকায় দুকাঠা জমি কিনে ফেলেছিলাম বলে ফুটপাথে থাকতে হচ্ছে না!

পাকা দালান তুলেছিস?

আটচালার ইমারং-ওই রক্ষা করতে প্রাণান্ত! কবে ফিরে দেখব সব সমান হয়ে গেছে!

কেন?

স্বাধীন হয়েছি না আমারা এখন? কথায় কথায় দিনেদুপুরে বুকে পিঠে ছুরি আর মাথায় ডাণ্ডা। আমাদের শালা মরণ-দশা, রামে মারলেও মারবে, রাবণে মারলেও মারবে। কতজন তো হুমকি দিয়ে রেখেছে–দেখে নেবে!

কেন?

কারণ দরকার হয় না, কারণ সব্বাই নিজেরাই তৈরী করে নেয়। মদ খাবার চাদা দিতে আপত্তি করলে তোমার পেট ফেঁসে যেতে পারে!

স্বল্পক্ষণের বিরতি। উঠে দুটো টিকিট কাটা, ঘণ্টা বাজানো এবং ফিরে এসে বসা।

বন্ধু : যাক, ছেলে-পুলে কী তোর বল দেখি?

কণ্ডাক্টর : একটা মেয়ে।

সেকি রে! প্রেম করে মেয়েটাকে মামার খপ্পর থেকে বার করে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে কত কাণ্ড করে, বিয়ে–তারপর এতদিনে মাত্র একটা মেয়ে!

ওই সামলাতে প্রাণান্ত।

কেন, তোর পরের ভাই দুটো তো দাঁড়িয়ে গেছে!

দাঁড়িয়ে বুদ্ধিমানের মত সরে গেছে।…মেজটাকে আই-এ পরীক্ষার পর। স্টেনোগ্রাফি পাশ করিয়েছিলাম, আর সেজটাকে স্কুল ফাইন্যালের পরে টেকনিকাল স্কুলে ঢুকিয়েছিলাম। দুজনেই ভালো করছে এখন। ওদের মুখ চেয়ে আশায় আশায় কতদিন একবেলা খেয়ে কাটিয়েছি আমি আর বউ। যাক গে, ভাল থাক।

তার পরের জন?

চেষ্টাচরিত্র করে বি. কম. পড়াচ্ছি, সামনের বার পরীক্ষা দেবে।…ওটা বোকা, থাকলে থেকেও যেতে পারে। ওর বউদিকে খুব পছন্দ।

ছভাই তো তোরা, তার পরেও তো দুটো আছে।…তোর কাছেই থাকে, না?

হ্যাঁ, যাবে আর কোন চুলোয়!…ওরা ছোট, স্কুলে পড়ছে আর কু-সঙ্গে মিশছে। এক-একদিন ধরলে আধমরা করে ছাড়ি, কিন্তু দিনের হাওয়া যাবে কোথায়!

আচ্ছা, তুই ভাইদের জন্য এত করলি, মায়ের জন্যে যা করেছিলি সে তো নিজের চোখেই দেখেছি…মাঝখান থেকে শেষ বয়সেও তোর বাবাকে এত কষ্ট দিলি কেন?

তোকে কে বলল?

তোর পরের ভাই দুজনের মুখে শুনেছিলাম। খুব দুখ করছিল, শেষ সময়েও তুই নাকি অমানুষের মত ব্যবহার করেছিস।…কেন বল্ তো? শেষ পর্যন্ত তো মরেই গেল ভদ্রলোক

রুক্ষ জবাবটা ঠাস করে কানে লাগল আমার।-মরে তো সকলেই যাবে, কে আর চিরদিন বেঁচে থাকবে!

কলেজ স্ট্রীটের কাছে কিছু লোক উঠল। তাদের মধ্যে সাতজনের একটা গোটা পরিবারও আছে। স্বামী-স্ত্রী আর তেরো থেকে ছয়ের মধ্যে পাঁচটি ছেলেমেয়ে। তাদের পিছনে আরো পাঁচ-সাতজন লোক উঠেছে। ফাঁকা বাস, সকলেরই বসার জায়গা মিলেছে।

গাড়ি ছাড়ার ঘন্টি বাজিয়ে কণ্ডাক্টর টিকিট কাটতে এগলো। তারপর বচসা শুরু হল সেই পরিবারটির টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে। মাঝবয়সী সেই ভদ্রলোকটি পাঁচখানা কালীঘাটের টিকিট কেটেছে।

–এদের টিকিট? কণ্ডাক্টর ছোট ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখালো।

ভদ্রলোক বিস্ময়ের ভান করল, ওদের আবার টিকিট কী!

–ওদের তাহলে নামিয়ে দিই?

ফলে বাসসুদ্ধ লোকের কান খাড়া হল। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, ছেলেমেয়েগুলো রোগা-রোগা, ভদ্রলোক আর বউটাও রোগা। সকলেরই বেশ-বাসে দৈন্যের ছাপ।

ভদ্রলোক বলল, ওইটুকু ছেলেমেয়ে, নামিয়ে দেবেন কি-রকম!…ওদের তো কোনসময়ে টিকিট কাটি না।

-অন্যায় করেন। কাক্টর হাত বাড়ালো, আর দুটো টিকিটের দাম দিন।

নিরুপায় মুখ করে ভদ্রলোক পকেট থেকে আর একটা টিকিটের ভাড়া তার হাতে দিয়ে সুর পালটে বলল, আচ্ছা ওদের দুজনের জন্য আর একটা টিকিটি নিন..বুঝতেই তো পারছেন অসুবিধে হচ্ছে!

জবাবে অপ্রত্যাশিত রূঢ় ব্যবহার কণ্ডাক্টরের। বলল, অসুবিধে হলেও বাসে যখন উঠেছেন, আর একটা টিকিটের দাম দিতে হবে। দিন

এ রূঢ়তা অনেকের কানে বিধল। ছেলেমেয়েগুলো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে, বউটারও বিব্রত মুখ। একজন সহানুভূতিসম্পন্ন প্যাসেঞ্জার বলে উঠল, ভদ্রলোক মুখ ফুটে বলছেন, দিন না ছেড়ে

কণ্ডাক্টর তার দিকে ফিরল, তাহলে আপনি মুখ ফুটে বললে তো আপনার টিকিটও ছেড়ে দিতে হয়।

প্যাসেঞ্জারটির সঙ্গে সঙ্গে আরো দুজন বলে উঠল, খুব চ্যাটাং চ্যাটাং বুলি ঝাড়ছেন যে মশাই,খুব ডিউটি দেখাচ্ছেন, কেমন?

-আমি দেখাচ্ছি না, আপনারাই আমার ডিউটিতে বাধা দিচ্ছেন।

এ-ধার থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠল, কেমন ডিউটিফুল আপনারা খুব জানা আছে মশাই!

কণ্ডাক্টরের তামাটে মুখ কঠিন। কোনদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে তেমনি হাত বাড়িয়ে বলল, কী, আপনি আর একখানা টিকিটের দাম দেবেন, না আমি গাড়ি থামিয়ে দেব?

বেগতিক দেখে এবারে লোকটি বিমর্ষমুখে আর একখানা টিকিটের দামও দিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে এধার-ওধার থেকে নানা ধরনের টীকা-টিপ্পনী শুরু হল। কণ্ডাক্টরের কানে তুলো, থমথমে মুখে টিকিট দিয়ে সে আবার তার বন্ধুর সামনে এসে দাঁড়াল।

লোকটার এই হৃদয়হীনতা কারোরই ভালো লাগেনি। তার বন্ধুটিরও খুব খুশি মুখ নয়।

চাপা রাগে চাপা গলায় কণ্ডাক্টর গরগর করে উঠল, বাসে উঠে টিকিটের পয়সা দেবার মুরোদ নেই, তার চার-পাঁচটা ছেলেমেয়ে–লজ্জাও করে না!

জ্বলন্ত চোখে ওই পরিবারটির দিকে একদফা অগ্নিবর্ষণ করল সে।

ঠিক সেই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে একটা পর্দা সরে গেল। কণ্ডাক্টরের বেশবাসের আড়ালে এই প্রথম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষকে আমি দেখতে পাচ্ছি। …নিজের এতবড় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব বহন করেও কেন সেই লোকটা শুধু তার বাপকে কষ্ট দিয়েছে, মৃত্যুর পরেও ক্ষমা করেনি–এই রুক্ষ মুখের দিকে চেয়ে যেন সেই জবাবও স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress