Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গ্রন্থপরিচয়

ঘরে-বাইরে ১৩২২ সালের সবুজ পত্রে ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত ও ১৩২৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ-কালে সবুজ পত্রে-মুদ্রিত বহু অংশ বর্জিত হইলেও পরবর্তী ১৯২০ খৃস্টাব্দের পরিবর্ধিত সংস্করণে সে-সমস্তই পুনরায় গৃহীত হইয়াছে। বর্তমান মুদ্রণ উক্ত পরিবর্ধিত সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ এবং সবুজ পত্রের পাঠের সহিত অভিন্ন। উপন্যাসখানি যখন সাময়িকপত্রে ধারাবাহিক প্রকাশিত হইতেছিল তখনই ইহার নানারূপ বিরুদ্ধ সমালােচনা হইতে থাকে। ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে একখানি চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ ১৩২২ সালের অগ্রহায়ণের সবুজ পত্রে যে ‘টীকাটিপ্পনি’ লিখিয়াছিলেন তাহা নিম্নে মুদ্রিত হইল—

লেখার উদ্দেশ্য

আমি যা লিখে থাকি তা অনেকের ভালাে লাগে না। এই কথাটি আমাকে সাধারণত যে ভাষায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা হয় নানা স্বাভাবিক কারণে সে ভাষায় আমার দখল নেই। এইজন্য যথারীতি তার জবাব দেওয়া আমার পক্ষে অসাধ্য।

এমন অবস্থায় হঠাৎ একখানি চিঠি পেলুম, সেই চিঠিতে অভিযােগ আছে কিন্তু অবমাননা নেই। চিঠিখানি কোনাে মহিলার লেখা, তিনি আমার অপরিচিত। এই চিঠিতে তাঁর স্ত্রীজনােচিত সংযম ও সৌজন্য এবং মাতৃজনােচিত করুণা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি দুঃখবােধ করেছেন, কিন্তু দুঃখ দিতে চান নি।

তিনি নিজের কোনাে ঠিকানা দেন নি, অথচ কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন, এর থেকেই অনুমান করছি যে, এই প্রশ্ন তিনি সাধারণের হয়ে পাঠিয়েছেন এবং সাধারণের ঠিকানাতেই এর জবাব চান।

অতএব তাঁর ভর্ৎসনার উত্তরে যে-ক’টি কথা বলবার আছে সে আমি এই সবুজ পত্র -যােগে তাঁর কাছে সবিনয়ে নিবেদন করি। এই উপলক্ষে সাধারণত আমাদের দেশে যে ভাবে সাহিত্যবিচার হয়ে থাকে প্রসঙ্গত সে সম্বন্ধেও কিছু আলােচনা করব।

প্রথমত তিনি কিছু ক্ষোভের সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করেছেন— ঘরে-বাইরে উপন্যাসখানি লেখবার উদ্দেশ্য কী?

এর সত্য উত্তরটি এই যে, উপন্যাস লেখার উদ্দেশ্যই উপন্যাস লেখা। সাদা কথায়, গল্প লিখব আমার খুশি!

কিন্তু একে উদ্দেশ্য বলা যায় না। কেননা ‘খুশি’ বলাই উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করা। এবং যখন কোনাে-একটা উদ্দেশ্যই লােকে প্রত্যাশা করছে তখন সেটা নেই বললেই কথাটা স্পর্ধার মতাে শুনতে হয়।

কিন্তু অনেক সময় উদ্দেশ্য বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যায়। হরিণের গায়ে চিহ্ন আছে কেন হরিণ তা জানে না, কিন্তু হরিণ সম্বন্ধে যাঁরা বই লেখেন তাঁরা বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই-সমস্ত চিহ্নের দ্বারা বনের আলােছায়ার সঙ্গে সে বেমালুম মিশিয়ে থাকতে পারবে।

এই আন্দাজ সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্যটা যে হরিণের মনের নয় সে কথা সকলকেই মানতে হবে।

উদ্দেশ্য হরিণের নয়, কিন্তু হরিণের ভিতর দিয়ে বিশ্বকর্মার একটা উদ্দেশ্য তাে প্রকাশ পাচ্ছে। তা হয়তাে পাচ্ছে। তেমনি যে কালে লেখক জন্মগ্রহণ করেছে সেই কালটি লেখকের ভিতর দিয়ে হয়তাে আপন উদ্দেশ্য ফুটিয়ে তুলেছে। তাকে উদ্দেশ্য নাম দিতে পারি বা না পারি এ কথা বলা চলে যে, লেখকের কাল লেখকের চিত্তের মধ্যে গােচরে ও অগােচরে কাজ করছে।

আমি বলছি, এ কাজও শিল্পকাজ; শিক্ষাদানের কাজ নয়। কাল আমাদের মনের মধ্যে তার নানা রঙের সুতােয় জাল বুনছে, সেই তার সৃষ্টি; আমি তার থেকে যদি কিছু আদায় করতে চাই তবে সে উদ্দেশ্য আমারই।

আমাদের দেশের আধুনিক কাল গােপনে লেখকের মনে যেসব রেখাপাত করেছে ঘরে-বাইরে গল্পের মধ্যে তার ছাপ পড়েছে। কিন্তু এই ছাপার কাজ শিল্পকাজ। এর ভিতর থেকে যদি কোনাে সুশিক্ষা বা কুশিক্ষা আদায় করবার থাকে সেটা লেখকের উদ্দেশ্যের অঙ্গ নয়।

পৃথিবীর খুব একজন বড়াে লেখকের লেখা সামনে ধরা যাক। শেক্সপীয়রের ওথেলাে। কবিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় তাঁর উদ্দেশ্য কী, তিনি মুশকিলে পড়বেন। ভেবে চিন্তে যদি বা কোনাে উত্তর দেন, নিশ্চয়ই সেটা ভুল উত্তর হবে।

আমি যদি ব্রাহ্মণসভার সভ্য হই তবে আমি ঠিক করব, কবির উদ্দেশ্য বর্ণভেদ বাঁচিয়ে চলা সম্বন্ধে জগৎকে সদুপদেশ দেওয়া। যদি স্বাধীন জেনেনার বিরুদ্ধ-পক্ষ হই তা হলে বলব, পরপুরুষের মুখদর্শন পরিহার করতে বলাই কবির পরামর্শ।

কিংবা কবির বুদ্ধি বা ধর্মজ্ঞানের প্রতি যদি আমার সন্দেহ থাকে তা হলে বলব, একনিষ্ঠ পাতিব্রত্যের নিদারুণ পরিণাম দেখিয়ে তিনি সতীত্বের মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। কিংবা ইয়াগাের চাতুরীকেই শেষ পর্যন্ত জয়ী করে তুলে সরলতার প্রতি নিষ্ঠুর বিদ্রুপ প্রকাশ করাই তাঁর মতলব।

কিন্তু সােজা কথা হচ্ছে, তিনি নাটক লিখেছেন। সেই নাটকে কবির ভালাে-লাগা, মন্দলাগা, এমন-কি কবির দেশ-কালও প্রকাশ পায়, কিন্তু সেটা তত্ত্ব বা উপদেশরূপে নয়, শিল্পরূপেই। অর্থাৎ সমস্ত নাটকের অবিচ্ছিন্ন প্রাণ এবং লাবণ্য-রূপে। যেমন একজন বাঙালিকে যখন দেখি তখন মানুষটার সঙ্গে তার জাতিকে, তার বাপ-দাদাকে সম্মিলিত করে দেখি; তার ব্যক্তি এবং তার জাতি দুইয়ের মাঝখানে কোনাে জোড়ের চিহ্ন থাকে না; এও তেমনি। কবির কাব্যে স্বাতন্ত্রের সঙ্গে আর তার দেশকালের সঙ্গে একটা প্রাণগত সম্মিলন আছে।

তাই বলছিলুম, ঘরে-বাইরে গল্প যখন লেখা যাচ্ছে তখন তার সঙ্গে সঙ্গে লেখকের সাময়িক অভিজ্ঞতা জড়িত হয়ে পড়েছে এবং লেখকের ভালাে-মন্দ-লাগাটাও বােনা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেই রঙিন সুতােগুলাে শিল্পেরই উপকরণ। তাকে যদি অন্য কোনাে উদ্দেশ্যে প্রয়ােগ করা যায় তবে সে উদ্দেশ্য লেখকের নয়, পাঠকের। শৌখিন লােকে চমরির পুচ্ছ থেকে চামর তৈরি করে; কিন্তু চমরি জানে তার পুচ্ছটা প্রাণের অন্তর্গত— ওটাকে কেটে নিয়ে চামর করা অন্তত তার উদ্দেশ্য নয়, যে করে তারই।

গল্পের মত

তার পরে কথা হচ্ছে, আমার হৃদয়ভাবের সঙ্গে পাঠকের হৃদয়ভাবের যখন বিরােধ ঘটল তখন পাঠক আমাকে দণ্ড দিতে বাধ্য।

মাটির উপর পড়ে গেলে শিশু যেমন মাটিকে মারে তেমনি এমন স্থলে সাধারণ পাঠকে দণ্ড দিয়ে থাকে, এ কথা আমার বিশেষরূপ জানা। তাই বলে দণ্ড যে দিতেই হবে এমন কোনাে কথা নেই। ভূতকে না ভয় করতে পারি, এমন-কি, ভূতের ভয় অনিষ্টকর মনে করতে পারি, তবু ভূতের ভয়ের গল্প পড়বার সময়ে সে কথা মনে রাখবার দরকার নেই। এখানে মতামতের কথা নয়, রসের অনুভূতির কথা। খ্রিস্টান রসিক যখন কোনাে হিন্দু আর্টিস্টের আঁকা দেবীমূর্তির বিচার করেন তখন তিনি যদি বুঝতে পারেন যে তিনি মিশনারি তা হলেই ভালাে, যদি না পারেন তবে সেজন্যে হিন্দু আর্টিস্টকে দোষ দেওয়া চলবে না। কারণ হিন্দু আর্টিস্ট স্বভাবতই আপন মত বিশ্বাস সংস্কার অনুসারে ছবি আঁকবেই। কিন্তু যেহেতু সেটা ছবি সেইজন্যেই তার মধ্যে মত বিশ্বাস সংস্কারের অতীত একটি জিনিস থাকবে, সেটি হচ্ছে রস; সে রস যদি অহিন্দুর অগ্রাহ্য হয় তবে হয় রসবােধের অভাবে সেটা অহিন্দুর দোষ, নয় রসের অভাবে সেটা হিন্দু আর্টিস্টের দোষ। কিন্তু দোষটা মত-বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না। প্রদীপ ইংরেজের একরকম, এবং ডীট্‌জ্‌ লণ্ঠন চলিত হবার পূর্বে হিন্দুর অন্যরকম ছিল, তবু আলাে জিনিসটা আলােই।

দেশের হিতাহিত সম্বন্ধে আমার সঙ্গে পাঠকের মতভেদ থাকা সম্ভব; কিন্তু গল্পকে মত বলে দেখবার তাে দরকার নেই, গল্প বলেই দেখতে হবে।

গল্পের খাতির

কিন্তু মত যখন এমন বিষয় নিয়ে যেটা দেশের একেবারে মর্মের কথা তখন পাঠকের কাছ থেকেও অতটা বেশি নিরাসক্তর সহানুভূতি দাবি করা যায় না। তখন পাঠকের নিজের ব্যথা গল্পের ব্যথাকে ছাড়িয়ে ওঠে। অতএব সে জায়গায় রসের বিচারের চেয়ে রসের বিষয়বিচারটা স্বভাবতই বড়াে না হয়ে থাকতে পারে না।

আচ্ছা বেশ, তাই মানলুম। তা হলে এ স্থলে লেখকের প্রতি উপদেশটা কী? নিজে যেটাকে ভালাে মনে করি পাঠকের খাতিরে চেষ্টা করব সেটাকে মন্দ মনে করতে? পাঠক যদি গল্পের খাতিরে সে কাজ করতে না পারেন তা হলে লেখকই বা পাঠকের খাতিরে এমন কাজ কী করে করবেন?

বস্তুত খাতিরটা গল্পের, লেখকেরও নয়, পাঠকেরও নয়। সেই গল্পের খাতিরেই নিজের হৃদয়ভার সম্বন্ধে লেখককে নিজের হৃদয় অনুসরণ করতে হবেই এবং সেই গল্পের খাতিরেই পাঠককে গল্পের রস অনুসরণ করতে হবে।

যদি বলা যায় গল্পের খাতিরের চেয়ে দেশের খাতির বড়াে, তবে সে কথা পাঠক সম্বন্ধেও যেমন খাটে লেখক সম্বন্ধেও তেমনি। তাঁর সাময়িক একদল পাঠক তাঁকে বাহবা দেবে, এ কথা লেখকের ভাববার নয়; তিনি ভাববেন, তাঁর গল্পটি ঠিকমত হওয়া চাই; তাও যদি তাঁকে ভাবতে দেওয়া না যায় তবে দেশের ভালাে হয় এই কথাই যেন তিনি ভাবেন, দেশ তাঁকে ভালাে বলে এ কথা নয়।

আখ্যায়িকা

লেখিকার দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে, এই উপন্যাসের আখ্যায়িকা কি আমার কল্পনাপ্রসূত, না বাস্তবে কোথাও তার আভাস পাওয়া গেছে। যদি পেয়ে থাকি তবে সে কি আধুনিক ‘পাশ্চাত্যশিক্ষাভিমানী বিলাসী-সম্প্রদায়ে না প্রাচীন হিন্দুপরিবারে?’

উত্তর এই, আখ্যায়িকাটি অধিকাংশ গল্পের আখ্যায়িকার মতোই আমার কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু এইটুকুমাত্র বললেই লেখিকার প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর দেওয়া হয় না। ঐ প্রশ্নের মধ্যে একটি কথা চাপা আছে যে, এমন ঘটনা প্রাচীন হিন্দুপরিবারে অসম্ভব।

ঠিক একটা গল্পের ঘটনা সেই গল্পের অনুরূপ অবস্থার মধ্যেই ঘটতে পারে, আর কোথাও ঘটতে পারে না— প্রাচীন বা নবীন, হিন্দু বা অহিন্দু কোনো পরিবারেই না। অতএব কোনো বিশেষ পরিবারে কী ঘটেছে সে কথা স্মরণ করে গুজব করাই চলে, গল্প লেখা চলে না। মানবচরিত্রে যে-সমস্ত সম্ভবপরতা আছে সেইগুলিকেই ঘটনাবৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে গল্পে নাটকে বিচিত্র করে তোলা হয়। মানবচরিত্রের মধ্যে চিরন্তনত্ব আছে, কিন্তু ঘটনার মধ্যে নেই। ঘটনা নানা আকারে নানা জায়গায় ঘটে, একই ঘটনা দুই জায়গায় ঠিক একইরকম ঘটে না। কিন্তু তার মূলে যে মানবচরিত্র আছে সে চিরকালই নিজেকে প্রকাশ করে এসেছে। এইজন্য এই মানবচরিত্রের প্রতিই লেখক দৃষ্টি রাখেন, কোনো ঘটনার নকল করার প্রতি নয়।

সাহিত্যবিচার

তা হলে প্রশ্ন এই যে, প্রাচীন হিন্দুপরিবারে সর্বত্রই মানবচরিত্র কি মনুসংহিতার রাশ মেনে চলে? কখনো লাগাম ছিঁড়ে খানার মধ্যে গিয়ে পড়ে না?

আমরা বৈদিক পৌরাণিক কাল থেকে এইটেই দেখে আসছি যে, বুনো ওলের সঙ্গে বাঘা তেঁতুলের লড়াইয়ের অন্ত নেই। এক দিকে শাসনও কড়া, অন্য দিকে মানবের প্রকৃতিও উদ্দাম; তাই কখনো শাসন জেতে, কখনো প্রকৃতি। এই লড়াই যদি প্রাচীন হিন্দুপরিবারে সম্পূর্ণ অসম্ভব হয় তবে সেই প্রাচীন হিন্দুপরিবারের ঠিকানা এখনো পাওয়া যায় নি। তা ছাড়া এ কথাও মনে রাখা আবশ্যক, যেখানে মন্দ একেবারেই নেই সেখানে ভালোেও নেই। প্রাচীন হিন্দুপরিবারে কারো পক্ষে মন্দ হওয়া যদি একেবারেই অসম্ভব হয় তা হলে সেই পরিবারের লোক ভালোও নয়, মন্দও নয়, তারা সংহিতার ‘কলের পুতুল’। ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকে মানুষ ভাললাকে বেছে নেবে বিবেকের দ্বারা, প্রথার দ্বারা নয়, এই হচ্ছে মনুষ্যত্ব।

প্রাচীন সংস্কৃত উদ্ভট কবিতায় যে-সকল কুৎসিত স্ত্রীনিন্দা দেখতে পাই বর্তমান কোনো পাশ্চাত্যশিক্ষাভিমানীর লেখায় তার আভাসমাত্র পাওয়া যায় না। তার কারণ, আধুনিক কবিরা স্ত্রীজাতিকে আন্তরিক শ্রদ্ধা করে থাকেন। এ কথা নিশ্চিত সত্য যে, সেই-সকল প্রাচীন স্ত্রীনিন্দাগুলি স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে মিথ্যা, কিন্তু যদি স্ত্রীবিশেষ সম্বন্ধেও মিথ্যা হয় তবে সেই কবিতাগুলির উদ্‌ভব হল কোথা থেকে?

তা হলে বােধ হয় তর্কটা এইরকম দাঁড়াবে; মানবপ্রকৃতির মধ্যে নিয়ম লঙ্ঘন করবার একটা বেগ আছে, কিন্তু সেটা কি সাহিত্যে বর্ণনা করবার বিষয়? এ তর্কের উত্তর আবহমান কালের সমস্ত সাহিত্যই দিচ্ছে, অতএব আমি নিরুত্তর থাকলেও ক্ষতি হবে না।

দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে অধিকাংশ সমালােচকের হাতে সাহিত্যবিচার স্মৃতিশাস্ত্রবিচারের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বঙ্কিমের কোন্ নায়িকা ‘হিন্দুরমণী’ হিসাবে কতটা উৎকর্ষ প্রকাশ করেছে তাই নিয়ে সমালােচক-মহলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ চলে থাকে। ভ্রমর তার স্বামীর প্রতি অভিমান করেছিল সেটাতে তার হিন্দুসতীত্বে কতটা খাদ ধরা পড়েছে, সূর্যমুখী স্বামীর প্রেয়সী সতিনকে নিজেরও প্রেয়সী করতে না পারাতে তার হিন্দুরমণীত্বের কতটা লাঘব হয়েছে, শকুন্তলা কী আশ্চর্য হিন্দুনারী, দুষ্যন্ত কী আশ্চর্য হিন্দুরাজা, এই-সকল বিচার-প্রহসন আমাদের দেশে সাহিত্যবিচারের নাম ধরে নিজের গাম্ভীর্য বাঁচিয়ে চলতে পারে— জগতে আর কোথাও এমন দেখা যায় না। শেক্‌স্‌পীয়র অনেক নায়িকার সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে ইংরেজ-রমণীত্ব কতটা প্রকট হয়েছে এ নিয়ে কেউ চিন্তা করে না, এমন-কি, তাদের খ্রিস্টানির মাত্রা নিক্তির ওজনে পরিমাপ করে পয়লা দোসরা মার্কা দেওয়া খ্রিস্টান পাদ্রিদের দ্বারাও ঘটা সম্ভব নয়।

আমি হয়তাে এ কথা বলে ভালাে করলুম না। কেননা, জগতে যা কোথাও নেই সেইটেই ভারতে আছে, এই হচ্ছে আধুনিক বাঙালির গর্ব। কিন্তু ভারত তাে বাঙালির সৃষ্টি নয়, আমরা সাহিত্য-সমালােচনা শুরু করবার পূর্বেও ভারতবর্ষ ছিল। সেই ভারতের অলংকারশাস্ত্রে নায়িকা-বিচার মনুপরাশরের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয় নি, মানবচরিত্রের বৈচিত্র্য-অনুসারেই তাদের শ্রেণীবিভাগের চেষ্টা হয়েছিল। আমি এরকম শ্রেণীবিভাগ ভালাে বলি নে। কারণ, সাহিত্য তাে বিজ্ঞান নয়; সাহিত্যে শ্রেণীর ছাঁচে নায়ক-নায়িকার ঢালাই হতে থাকলে সেটা পুতুলের রাজ্য হয়, প্রাণের রাজ্য হয় না। তবু যদি নিতান্তই শ্রেণীবিভাগের শখ সাহিত্যেও মেটাতে হয় তা হলে ধর্মশাস্ত্রনির্দিষ্ট হিন্দু ও অহিন্দু এই দুই শ্রেণী না ধরে যথাসম্ভব মানবস্বভাবের বৈচিত্র্য অনুসারে শ্রেণীবিভাগ করা কর্তব্য।

স্বদেশপ্রেম

লেখিকার কাছে আমার শেষ নিবেদন এই যে, গল্পের ভিতর থেকে গল্পের চেয়ে বেশি কিছু যদি আদায় করতেই হয় তা হলে অন্তত গল্পের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর-একটি কথা এই যে, আমিও দেশকে ভালােবাসি, তা যদি না হত তা হলে দেশের লােকের কাছে লােকপ্রিয় হওয়া আমার পক্ষে কঠিন হত না। সত্য প্রেমের পথ আরামের নয়, সে পথ দুর্গম সিদ্ধিলাভ সকলের শক্তিতে নেই এবং সকলের ভাগ্যেও ফলে না, কিন্তু দেশের প্রেমে যদি দুঃখ ও অপমান সহ্য করি তা হলে মনে এই সান্ত্বনা থাকবে যে, কাঁটা বাঁচিয়ে চলবার ভয়ে সাধনায় মিথ্যাচারণ করি নি। দুঃখ পাই তাতে দুঃখ নেই, কিন্তু আমার সকলের চেয়ে বেদনার বিষয় এই যে, যা সত্য মনে করি তাকে প্রকাশ করতে গিয়ে লেখিকার মতাে অনেক সরল শ্রদ্ধাবান স্বদেশবৎসল ও সকরুণ হৃদয়ে বেদনা দিয়েছি। সে আমার দুর্ভাগ্য, কিন্তু সে আমার অপরাধ নয়।
—সবুজ পত্র। অগ্রহায়ণ। ১৩২২

ঘরে-বাইরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হইবার পর বহুকাল পর্যন্ত ইহার বিরুদ্ধ সমালােচনা চলিয়াছিল। ১৩২৬ সালের চৈত্র মাসের প্রবাসীতে ‘সাহিত্যবিচার’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ এ সম্বন্ধে স্বীয় বক্তব্য প্রকাশ করেন; নিম্নে তাহা মুদ্রিত হইল—

সাহিত্যবিচার

ঘরে-বাইরে উপন্যাসখানা লইয়া বাংলার পাঠক-মহলে এখনাে কথা চলিতেছে। হৃদয়াবেগ যখন অত্যন্ত প্রবল হয় তখন মানুষ গদ্য ছাড়িয়া পদ্য ধরে। সম্প্রতি তাহারও সূচনা প্রকাশ পাইতেছে। এক জায়গায় দেখিলাম, ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে ক্ষোভ চোদ্দ অক্ষরের লাইনে লাইনে রক্তবর্ণ হইয়া ফুটিয়াছে। ইহাতে পদ্যসাহিত্যের বিপদ চিন্তা করিয়া উদ্‌বিগ্ন হইলাম। পাছে ইহা সংক্রামক হইয়া পড়ে, সেইজন্য এ সম্বন্ধে উদাসীন থাকিতে পারিলাম না।

পছন্দ লইয়া মানুষের সঙ্গে তর্ক চলে না। ভর্তৃহরির অনেক পূর্ব হইতেই কবিরা এ সম্বন্ধে অবস্থাবিশেষে হাল ছাড়িয়া বসিয়া আছেন। স্বয়ং কালিদাসও কবিতাই লিখিয়াছেন, কিন্তু দিঙ্‌নাগাচার্যের সহিত বাদ-প্রতিবাদ করেন নাই। সাধারণত কবিদের নিন্দা-অসহিষ্ণু বলিয়া খ্যাতি আছে; কিন্তু সেই অসহিষ্ণুতা লইয়া (দুই-একজন ছাড়া) তাঁহারা নিজেরাই ক্ষোভ অনুভব করিয়াছেন, সাহিত্যকে ক্ষুব্ধ করিয়া তােলেন নাই। যখন তাঁহাদের লেখার প্রতি কেহ কলঙ্ক আরােপ করিয়াছে তখন সেই কলঙ্কভঞ্জনের ভার তাঁহারা কালের হস্তেই সমর্পণ করিয়াছেন। তাহাদের মধ্যে যাঁহারা ভাগ্যবান তাঁহাদের লেখা সম্বন্ধে ইহাই প্রমাণ হইয়া গেছে যে, তাঁহাদের রচনার কলসে আলংকারিক ছিদ্র, একটা কেন, একশােটা থাকিতে পারে, কিন্তু তবু তাহা হইতে রস বাহির হইয়া যায় নাই; সাহিত্যে এই কলঙ্কভঞ্জনের পালা অনেক দিন হইতে অনেকবার অভিনীত হইয়াছে, যাঁহারা আলংকারিক তাহাদের গঞ্জনা হইতে কবিরা বার বার রক্ষা পাইয়াছেন।

ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে রসবােধ লইয়া যদি কথা উঠিত তবে সে কথা যতই কটু হউক নীরব থাকিতাম। কিন্তু যে কথা উঠিয়াছে তাহা সাহিত্যসীমানার বাহিরের জিনিস। তাহা যুক্তির অধিকারের মধ্যে, সুতরাং তাহা লইয়া তর্ক চলে, এবং তর্ক না চালাইলে কর্তব্যপালন করা হয় না; কারণ, যাহা অন্যায় তাহাকে সহ্য করিয়া গেলে সাধারণের প্রতি অন্যায় করা হয়।

ঘরে-বাইরে বাহির হইবার পরেই আমার বিরুদ্ধে একটা নালিশ শােনা গেল যে, আমি এই উপন্যাসে সীতার প্রতি অসম্মান প্রকাশ করিয়াছি। কথাটা এতই অদ্ভুত যে আমি আশা করিয়াছিলাম যে, এমন-কি, আমাদের দেশেও ইহা গ্রাহ্য হইবে না। কিন্তু দেখিলাম, লােকে উৎসাহের সহিত ইহা গ্রহণ করিয়াছে, এবং জনগণের নিন্দায় একদা সীতা যেরূপ নির্বাসিত হইয়াছিলেন এ গ্রন্থও সেইরূপ গণ্যমান্যদের সভা ও লাইব্রেরি ঘরের টেবিল হইতে নির্বাসিত হইতে থাকিল।

এটাকে সামান্য ব্যক্তিগত হিসাবে দেখিলে ইহাতে বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। কিন্তু যে-কোনাে প্রভাবে মানুষের বিচারবুদ্ধিকে বিকৃত করে সেই প্রভাব যদি ব্যাপক হইয়া উঠিতে থাকে, তবে সেটাকে সাধারণের পক্ষে ক্ষতিজনক বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। অতএব ঘরে-বাইরে গ্রন্থের যে অপরাধ বানাইয়া তুলিয়া আমার প্রতি কেবলই আক্রোশবর্ষণ চলিতেছে সেই অপরাধের অভিযােগটাকে বিশ্লেষণ করিয়া দেখা দরকার।

মহাকাব্যে নাটকে বা নভেলে যে আখ্যানবস্তু পাওয়া যায় তাহার নানা বৈচিত্র্য আছে। কিন্তু সকল বৈচিত্র্যসত্ত্বেও সেই-সমস্ত আখ্যানে একটি সাধারণ উপাদান দেখিতে পাই; সেটি আর কিছু নয়, সংসারে ভালাে-মন্দের দ্বন্দ্ব। তাই রামায়ণে দেখিয়াছি রাম-রাবণের যুদ্ধ, মহাভারতে দেখিয়াছি কুরু-পাণ্ডবের বিরােধ। কেবলই সমস্তই একটানা ভালাে, কোথাও মন্দের কোনাে আভাসমাত্র নাই, এমনতরাে নিছক চিনির শরবত দিয়াই সাহিত্যের ভােজ সম্পন্ন করা অন্তত কোনাে বড়াে যজ্ঞে দেখি নাই।

এত বড়াে মােটা কথাও যে আমাকে আজ বিশেষ করিয়া বলিতে হইতেছে সেজন্য আমি সংকোচ বােধ করিতেছি। শিশুরা যে রূপকথা শােনে সেই রূপকথাতেও রাক্ষস আছে; সেই রাক্ষস শুদ্ধ সংযত হইয়া কেবলই মনুসংহিতা আওড়ায় না, সে বলে ‘হাঁউ মাঁউ খাঁউ, মানুষের গন্ধ পাঁউ’। ধর্মনীতির দিক হইতে দেখিলে তাহার পক্ষে এমন কথা বলা নিঃসন্দেহই গুরুতর অপরাধ। আশা করি, যাহারা এই-সকল গল্প রচনা করিয়াছিল তাহারা নরমাংসাশী ছিল না এবং যাহারা এই-সব গল্প শােনে নরমাংসে তাহাদের স্পৃহা বাড়ে না। তাই বলিতেছি, মানুষের গন্ধে গল্পের রাক্ষসের লুব্ধতা উদ্রেক হওয়া ধর্মশাস্ত্রমতে অপরাধ সন্দেহ নাই, কিন্তু মানুষের গন্ধে গল্পের রাক্ষসের ভ্রাতৃপ্রেম যদি জাগিয়া উঠিত এবং সে যদি সুমধুর স্বরে বলিয়া উঠিত ‘অহিংসা পরমাে ধর্মঃ’ তবে সাহিত্যরসনীতি-অনুসারে রাক্ষসের সে অপরাধ কিছুতে ক্ষমা করা চলিত না। কোনাে শিশুর কাছে ইহার পরীক্ষা করিয়া দেখিলেই এক মুহূর্তেই আমার কথা সপ্রমাণ হইবে। কিন্তু সেই শিশুই কি বড়াে হইয়া এম. এ. পাস করিবামাত্র গল্পের রাক্ষসটা মরাল্-ফিলজফির নীচে চাপা পড়িয়া সরু সুরে শান্তিশতক আওড়াইতে থাকিবে?

যাই হউক, সকল ভাষার সকল সাহিত্যেই ভালাে মন্দ দুই-রকম চরিত্রেরই মানুষ আসরে স্থান পায়। পুণ্যভূমি ভারতবর্ষেও সেইরূপ বরাবর চলিয়া আসিয়াছে। এইজন্যই ঘরে-বাইরে নভেলে যখন সন্দীপের অবতারণা করিয়াছিলাম তখন মুহূর্তের জন্যও আশঙ্কা করি নাই যে, সেটা লইয়া আমাদের দেশের উপাধিধারী এক গণ্যমান্য লােকের কাছে আমাকে এমন জবাবদিহির দায়ে পড়িতে হইবে। এখন হইতে ভবিষ্যতে এই আশঙ্কা মনে রাখিব, কিন্তু স্বভাব সংশােধন করিতে পারিব না; কেননা আমাদের দেশের বর্তমান কাল ছাড়াও কাল আছে এবং গণ্যমান্য লােক ছাড়াও লােক আছে, তাহারা নিশ্চয়ই রাক্ষসের মুখ হইতে এই অত্যন্ত নীতিবিরুদ্ধ কথা শুনিতে চায়— হাঁউ মাঁউ খাঁউ! মানুষের গন্ধ পাঁউ! চন্দ্রবিন্দুর বাহুল্য প্রয়ােগেও তাহারা বাংলা ভাষা সম্বন্ধে উদ্‌বিগ্ন হইবে না।

জানি আমাকে প্রশ্ন করা হইবে, সন্দীপ যত বড়াে মন্দ লােকই হউক তাহাকে দিয়া সীতাকে অপমান কেন? আমি কৈফিয়ত-স্বরূপে বাল্মীকির দোহাই মানিব। তিনি কেন রাবণকে দিয়া সীতার অপমান ঘটাইলেন? তিনি তাে অনায়াসেই রাবণকে দিয়া বলাইতে পারিতেন যে, ‘মালক্ষ্মী, আমি বিশ হাতে তােমার পায়ের ধুলা লইয়া দশ ললাটে তিলক কাটিতে আসিয়াছি।’ বেদব্যাস কেন দুঃশাসনকে দিয়া, জয়দ্রথকে দিয়া, দ্রৌপদীকে অপমানিত করিয়াছেন? রাবণ রাবণের যােগ্যই কাজ করিয়াছে, দুঃশাসন জয়দ্রথ যাহা করিয়াছে তাহা তাহাদিগকেই সাজে। তেমনি আমার মতে, সন্দীপ সীতা সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছে তাহা সন্দীপেরই যােগ্য; অতএব সে কথা অন্যায় কথা বলিয়াই তাহা সংগত হইয়াছে। এবং সেই সংগতি সাহিত্যে নিন্দার বিষয় নহে।

যদি আধুনিক কালের কোনাে উপাধিধারী এমন কথা গদ্যে বা পদ্যে বলিতে পারিতেন যে, রাবণের পক্ষে সীতাহরণ কাজটা অসংগত, মন্থরার পক্ষে রামের প্রতি ঈর্ষা অযথা, সূর্পনখার পক্ষে লক্ষ্মণের প্রতি অনুরাগের উদ্রেক অসম্ভব, তাহা হইলে নিশ্চয় কবিগুরু বিচারসভায় হাজির থাকিলেও নিরুত্তর থাকিতেন; কেননা এমন-সকল আলােচনা সাহিত্যসভায় চলিতে পারে। কিন্তু তাহা না বলিয়া ইহারা যদি বলিতেন, এ-সকল বর্ণনা নিন্দনীয়, কারণ ইহাতে সীতাকে রামকে লক্ষ্মণকে অপমানিত করা হইয়াছে এবং এই অপমান স্বয়ং কবিকৃত অপমান, ধর্মশাস্ত্র-অনুসারে এই-সকল ভালােমানুষের প্রতি সকলেরই সাধু ব্যবহার করাই উচিত, তবে যে কবি সর্বাঙ্গে কীটের উৎপাত স্তব্ধ হইয়া সহ্য করিয়াছিলেন তিনিও বােধ হয় বিচলিত হইয়া উঠিতেন।

আমি অন্য দেশের কবি ও লেখকের গ্রন্থ হইতে কোনাে দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিলাম না। কেননা এমন কথা আমাদের দেশে প্রচলিত যে, অন্য দেশের সহিত ভারতবর্ষের কোনাে অংশে মিল নাই, সেই অমিলটাকেই প্রাণপণে আঁকড়াইয়া থাকা আমাদের ন্যাশনাল সাহিত্যের লক্ষণ— অর্থাৎ ন্যাশনাল সাহিত্য কুপমণ্ডুকের সাহিত্য।
—প্রবাসী। চৈত্র ১৩২৬

শ্রীঅমিয় চক্রবর্তীকে একটি চিঠিতে (২৯ ফাল্গুন ১৩২২) ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন—

প্রমথ চৌধুরী এই গল্পটিকে রূপক বলে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু সে বােধ হয় কতকটা লীলাচ্ছলেই করে থাকবেন। এর মধ্যে কোনাে জ্ঞানকৃত রূপকের চেষ্টা নেই, এ কেবলমাত্র গল্প। মানুষের অন্তরের সঙ্গে বাইরের এবং একের সঙ্গে অন্যের ঘাতপ্রতিঘাতে যে হাসিকান্না উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে এর মধ্যে তারই বর্ণনা আছে। তার চেয়ে বেশি যদি কিছু থাকে সেটা অবান্তর এবং আকস্মিক।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
Pages ( 19 of 19 ): « পূর্ববর্তী1 ... 1718 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress