শব্দভেদী বাণ
আপনি চললেন নাকি?
গোলোকধামের গেট দিয়ে ঢুকে দেখি রণজিৎবাবু আসছেন। বাইরে পুলিশ দেখে বুঝেছি বাড়িটার উপর নজর রাখা হয়েছে।
আজ্ঞে হ্যাঁ, বললেন রণজিৎবাবু, নীহারবাবু বললেন আজ আর আমাকে প্রয়োজন হবে না।
উনি আছেন কেমন?
ডাক্তার এসেছিলেন। বললেন বাড়িতে এতগুলো ঘটনা একসঙ্গে ঘটাতে শক পেয়েছেন। প্রেসারটা ওঠানামা করছে।
কথা বলছেন কি?
হ্যাঁ হ্যাঁ, তা বলছেন, আশ্বাসের সুরে বললেন রণজিৎবাবু।
যে খামটা পাওয়া গেছে দস্তুরের ঘর থেকে সেটা একবার দেখব। আপনার খুব তাড়া না। থাকলে আর একবারটি চলুন ওপরে। আলমারিতে আছে তো। ওটা?
হ্যাঁ।
আপনাকে বেশিক্ষণ ধরে রাখব না কথা দিচ্ছি। এ বাড়িতে তো আর বিশেষ অ্যাস-টাসা হবে।
কিন্তু খাম তো সীল করা, কিন্তু-কিন্তু ভাব করে বললেন রণজিৎবাবু।
তা হলেও আমি জিনিসটা একবার শুধু হাতে নিয়ে দেখতে চাই।
রণজিৎবাবু আর আপত্তি করলেন না।
আজও বাড়ি অন্ধকার, দশটার আগে আলো আসবে না, এখন বেজেছে মাত্র সোয়া-ছটা। দোতলার বারান্দায় আর ল্যান্ডিং-এ কেরোসিন ল্যাম্প জ্বললেও আনাচে-কানাচে অন্ধকার।
রণজিৎবাবু আমাদের বৈঠকখানায় বসিয়ে সুবীরবাবুকে খবর দিতে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন যে নীহারবাবু যদি খামটা আলমারি থেকে বার করার ব্যাপারে আপত্তি করেন, তা হলে কিন্তু সেটা দেখানো সম্ভব হবে না।
সেটা বলাই বাহুল্য, বলল ফেলুদা।
সুবীরবাবুকে দেখে বেশ ক্লান্ত বলে মনে হল। বললেন। সারাদিন নাকি খবরের কাগজের রিপোর্টারদের ঠেকিয়ে রাখতেই কেটে গেছে। তবে একটা ভাল। এই যে, দাদার নামটা লোক ভুলতে বসেছিল, এই সুবাদে আবার মনে পড়ছে।
মিনিটখানেকের মধ্যেই রণজিৎবাবু এলেন, হাতে লম্বা সাদা খাম। বললেন, নীহারবাবু আপনার নাম শুনেই বোধহয় আপত্তি করলেন না। এমনিতে কাউকে দেখতে দিতেন না।
আশ্চৰ্য, ফেলুদা খামটা হাতে নিয়ে ল্যাম্পের তলায় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখে মন্তব্য করল। আমার চোখে মনে হচ্ছে সাধারণ লম্বা খাম, পিছনে লাল গালার সীল, সামনের দিকে ওপরের বা কোণে ছাপার হরফে লেখা ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োকেমিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান, মিশিগ্যান, ইউ এস এ। এতে যে আশ্চর্যের কী আছে জানি না। সুবীরবাবু আর রণজিৎবাবু বসে আছেন আবছা অন্ধকারে, তাঁদেরও মনের অবস্থা নিশ্চয়ই আমার মতো।
ফেলুদা সোফায় এসে বসল, তার দৃষ্টি তখনও খামটার দিকে। তারপর দুই ভদ্রলোককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে, শুধু আমাকেই উদ্দেশ করে কথা বলতে শুরু করল। ভাবটা স্কুলমাস্টারের। এই মেজাজে অনেক সময় অনেক বিষয়ে অনেক জ্ঞান দিয়েছে ফেলুদা আমাকে!
বুঝেছিস তোপ্সে, আশ্চর্য জিনিস এই ইংরেজি হরফ। বাংলায় সব মিলিয়ে গোটা দশ বারো ধাঁচের হরফ আছে, আর ইংরিজিতে আছে কম পক্ষে হাজার দুয়েক। একটা তদন্তের ব্যাপারে আমাকে এই নিয়ে কিছুটা পড়াশুনা করতে হয়েছিল। হরফের শ্রেণী আছে, জাত আছে, প্রতিটি শ্রেণীর আলাদা নাম আছে। যেমন এই বিশেষ ডিজাইনের হরফের নাম হল গ্যারামণ্ড।-ফেলুদা খামের উপর ছাপা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের দিকে আঙুল দেখাল। তারপর বলে চলল—
এই গ্যারামন্ড টাইপের উদ্ভব ষোড়শ শতাব্দীতে, ফ্রান্সে। তারপর ক্রমে এই টাইপ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইটজারল্যান্ড, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে শুধু যে এই টাইপের প্রচলন হয় তা নয়, ক্রমে এই সব দেশের নিজস্ব কারখানায় এই টাইপের ছাঁচ তৈরি করা শুরু করা হয়। এমনকী সম্প্রতি ভারতবর্ষেও এটা হচ্ছে। মজা এই যে, খুব ভাল করে দেখলে দেখা যায় যে এক দেশের গ্যারামন্ডের সঙ্গে অন্য দেশের গ্যারামন্ডের সূক্ষ্ম তফাত রয়েছে। কয়েকটা বিশেষ বিশেষ অক্ষরের গড়নে এই তফাতটা ধরা পড়ে। যেমন এই খামের উপরের হরফট হওয়া উচিত আমেরিকান গ্যারামণ্ড, কিন্তু তা না হয়ে এটা হয়ে গেছে ইণ্ডিয়ান গ্যারামন্ড। এমনকী ক্যালকাটা গ্যারামণ্ডও বলতে পারিস।
ঘরে থমথমে স্তব্ধতা। ফেলুদার দৃষ্টি খাম থেকে চলে গেছে রণজিৎবাবুর দিকে। লন্ডনে মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়ামে মোমের তৈরি বিখ্যাত লোকের মূর্তির ছবি দেখেছি, তার সব কিছু অবিকল মানুষের মতো হলেও, শুধু কাচের চোখগুলো দেখলেই বোঝা যায় যে মানুষটা জ্যান্ত নয়। রণজিৎবাবু জ্যান্ত হলেও, তার দৃষ্টিহীন চোখ দুটো দেখাচ্ছে অনেকটা সেই মোমের মূর্তি্র চোখের মতো।
কিছু মনে করবেন না রণজিৎবাবু, আমি এই খামটা খুলতে বাধ্য হচ্ছি।
রণজিৎবাবু তাঁর ডান হাতটা তুলে একটা বাধা দেওয়ার ভঙ্গির মাঝপথে থেমে গেলেন।
একটা তীক্ষ্ণ শব্দের সঙ্গে ফেলুদার দু আঙুলের এক টানে খামের পাশটা ছিঁড়ে গেল। তারপর সেই দু আঙুলেরই আরেকটা টানে খামের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল এক তাড়া ফুলস্ক্যাপ কাগজ।
রুল টানা ফুলস্ক্যাপ।
তাতে শুধু রুলই আছে, লেখা নেই। অর্থাৎ যাকে বলে ব্ল্যাঙ্ক পেপার।
কাচের চোখ এখন বন্ধ, মাথা হেঁট, দুহাতের কনুই হাঁটুর উপর, হাতের তেলোয় মুখ ঢাকা।
রণজিৎবাবু, ফেলুদার গলা গম্ভীর–আপনি গতকাল সকালে এসে যে চোর আসার ইঙ্গিত করেছিলেন, সেটা একেবারে ধাপ্পা, তাই না?
রণজিৎবাবুর মুখ দিয়ে উত্তরের বদলে বেরোল শুধু একটা গোঙানির শব্দ। ফেলুদা বলে চলল–
আসলে রাত্তিরে চোর এসেছে এমন একটা ধারণা প্রচার করার দরকার ছিল আপনার। কারণ আপনি নিজেই চুরির জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, এবং সন্দেহটা যাতে আপনার উপর না পড়ে সেদিকটা দেখা দরকার ছিল। আমার বিশ্বাস সকালে চোর আসার ধাপ্পাটা দিয়ে দুপুরের দিকে সুযোগ বুঝে আপনিই আলমারি খোলেন এবং খুলে দুটি কাজ সারেন—তেত্ৰিশ হাজার টাকা এবং নীহারবাবুর গবেষণার নোটস হস্তগত করা। আমার বিশ্বাস এই জাল খামটা কাল তৈরি ছিল না; এটা আপনি রাতারাতি ছাপিয়ে নিয়েছেন। এটার হঠাৎ প্রয়োজন হল কেন সেটা জানতে পারি কি?
রণজিৎবাবু এবার ফেলুদার দিকে চোখ তুললেন। তারপর ধরা গলায় বললেন, কাল বিকেলে দস্তুরের গলা শুনে নীহারবাবু ওকে সুপ্রকাশ চৌধুরী বলে চিনতে পেরেছিলেন! আমাকে বললেন, বিশ বছর পরে লোকটার লোভ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমার কাগজপত্র ওই সরিয়েছে। তখন…..
বুঝেছি। তখন আপনি ভাবলেন চুরিটা দস্তুরের ঘাড়ে চাপানোর এই সুযোগ। আপনিই তো পুলিশ চলে যাবার পর সেলেটেপ দিয়ে খামটাকে খাটের তলায় আটকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন—ঠিক এমনভাবে যাতে নিচু হলেই সেটা চোখে পড়ে তাই না?
রণজিৎবাবু প্ৰায় ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
আমায় মাপ করবেন! আমি ফেরত দিয়ে দেব! টাকা আর কাগজপত্র আমি কালই ফেরত দিয়ে দেব, মিঃ মিত্তির! আমি…আমি লোভ সামলাতে পারিনি!। সত্যি বলছি, আমি লোভ সামলাতে পারিনি!
ফেরত আপনাকে দিতেই হবে। না হলে আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেব সেটা বুঝতেই পারছেন।
আমি জানি, বললেন রণজিৎবাবু। তবে একটা অনুরোধ। নীহারবাবু যেন জানতে না পারেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। তিনি এ শক সহ্য করতে পারবেন না।
বেশ। তিনি জানবেন না এটা কথা দিচ্ছি। কিন্তু আপনি এত ভাল ছাত্র হয়ে এটা কী করলেন?
রণজিৎবাবু ফ্যালফ্যাল করে ফেলুদার দিকে চাইলেন। ফেলুদা বলে চলল—
আমি আপনার প্রোফেসর বাগচীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আপনার উপর আমার সন্দেহ পড়ে চাবির গর্তের পাশের দাগ দেখে। চোর অত অসাবধানে কাজ করে না। বিশেষত যেখানে ঘরে লোক রয়েছে, দরজার বাইরে চাকর রয়েছে। যাই হাক, আপনার ভবিষ্যৎ কত উজ্জ্বল ছিল সেটা উনি বললেন। পরীক্ষা দিলে আপনি ফাস্ট ক্লাস পেতেন এ বিশ্বাস তাঁর ছিল। হঠাৎ পড়াশুনা বন্ধ করে সেক্রেটারির চাকরিটা নেওয়া কি শর্ট কাটে নোবেল প্ৰাইজের লোভ? রণজিৎবাবু ভয়ে, লজ্জায়, অনুশোচনায় আর কথাই বলতে পারলেন না। ওঁর অবস্থা দেখে আমার মতো ফেলুদারও যে মায়া হচ্ছিল সেটা ওর পরের কথা থেকেই বুঝলাম।
আপনি এবার বাড়ি যেতে চান যেতে পারেন। কালকের জন্য আর অপেক্ষা করব না। আমরা। আপনি আজই আসল কাগজপত্র আর টাকা নিয়ে চলে আসুন। একটু অপেক্ষা করুন, আপনার সঙ্গে যাতে পুলিশ থাকে তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এতগুলো টাকা নিয়ে যাতায়াত করাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়লেন রণজিৎ ব্যানার্জি।
সুবীরবাবু তাঁর ছেলে সম্বন্ধে যাই বলে থাকুন না কেন, সে যে চুরি করেনি, সেটা জেনে তাঁর নিশ্চয়ই খানিকটা নিশ্চিন্ত লাগছে। অন্তত তাঁর চেহারা দেখে আর গলার স্বরে তাই মনে হল। বললেন, একবার দাদার সঙ্গে দেখা করে যাবেন কি?
নিশ্চয়ই, বলল ফেলুদা, সেটাই তো আসল কাজ।
সুবীরবাবুর পিছন পিছন আমরা নীহারবাবুর ঘরে গিয়ে হাজির হলাম।
আপনারা এসেছেন? চেয়ারে শোয়া অবস্থায় প্রশ্ন করলেন নীহারবাবু।
আজ্ঞে হ্যাঁ, বলল ফেলুদা।আপনার গবেষণার কাগজপত্রগুলো ফেরত পেয়ে নিশ্চয়ই খানিকটা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন?
ওগুলোর আর বিশেষ কোনও মূল্য নেই। আমার কাছে, নিচু গলায় ক্লান্ত ভাবে বললেন নীহারবাবু। এক দিনে একজন মানুষ এত ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে সেটা আমার ধারণাই ছিল না। কালকেও দেখে মনে হয়েছে ভদ্রলোক রীতিমতো শক্ত।
আপনার কাছে মূল্য না থাকলেও আমাদের কাছে আছে, বলল ফেলুদা।বিশ্বের অনেক বৈজ্ঞানিকের কাছে আছে।
সে আপনারা বুঝবেন।
আপনাকে শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই। কথা দিচ্ছি। এর পরে আর বিরক্ত করব না।
নীহারবাবুর ঠোঁটের কোণে একটা স্নান হাসি দেখা দিল। বললেন, বিরক্ত আর করবেন কী করে? বিরক্তির অনেক উর্ধের্ব চলে গেছি যে আমি।
তা হলে বলি শুনুন। কাল টেবিলের উপর দেখেছিলাম ঘুমের ট্যাবলেট দশটা। আজও দেখছি। দশটা। আপনি কি কাল তা হলে ঘুমের ওষুধ খাননি?
না, খাইনি। আজ খাব।
তা হলে আসি আমরা!
দাঁড়ান।
নীহারবাবু তাঁর ডান হাতটা ফেলুদার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। দুজনের হাত মিলল। ভদ্রলোক ফেলুদার হাতটা বেশ ভাল করে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন—
আপনি বুঝবেন। আপনার দৃষ্টি আছে।
বাড়িতে এসেও ফেলুদা গম্ভীর। কিন্তু তা বলে আমি অত রহস্য বরদাস্ত করব কেন? চেপে ধরে বললাম, ঢাকা ঢাক গুড গুড চলবে না। সব খুলে বলো।
ফেলুদা উত্তরে রামায়ণে চলে গেল। ওর সাসপেন্স বাড়ানোর কিছু কায়দা আমি সত্যিই বুঝে উঠতে পারি না।
রামকে বনবাসে পাঠানের ছদিন পর দশরথের হঠাৎ মনে পড়েছিল যে তিনি যুবরাজ অবস্থায় একটা সাংঘাতিক কুকীর্তি করে ফেলেছিলেন, আর সেই কারণেই আজ তাঁকে পুত্ৰশোক ভোগ করতে হচ্ছে। তোর মনে আছে সে কুকীর্তিটা কী?
রামায়ণটা টাটকা পড়া ছিল না, কিন্তু এ ঘটনাটা মনে ছিল। বললাম, অন্ধমুনির ছেলে রাত্রে নদীতে জল তুলিছিল কলসিতে। দশরথ অন্ধকারে শব্দ শুনে ভাবলেন বুঝি হাতি জল খাচ্ছে। উনি শব্দভেদী বাণ মেরে ছেলেটিকে মেরে ফেলেছিলেন।
গুড। অন্ধকারে শব্দ শুনে লক্ষ্যভেদ করার এই ক্ষমতাটা ছিল দশরথের। নীহারবাবুরও ছিল।
নীহারবাবু।—আমি প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম।
ইয়েস স্যার, বলল ফেলুদা।-রাত জগতে হবে বলে ঘুমের ওষুধ খাননি। সবাই যখন ঘুমে অচেতন, তখন খালি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে যান দস্তুর সুপ্রকাশের ঘরে। এই ঘরে এক কালে ওঁর ভাইপো থাকত। ঘর ওঁর চেনা। হাতে ছিল অস্ত্ৰ-রুপো দিয়ে বাঁধানো জাঁদরেল লাঠি! খাটের কাছে গিয়ে লাঠি দিয়ে মোক্ষম ঘা। একবার নয়, তিনবার।
কিন্তু…কিন্তু…
আমার এখনও সাংঘাতিক গোলমাল লাগছে। এ সব কী বলছে ফেলুদা? লোকটা তো অন্ধ!
একটা কথা কি মনে পড়ছে না তোর? অসহিষ্ণুভাবে বলল ফেলুদা।সুখওয়ানি কী বলেছে দস্তুর সম্পর্কে?
বিদ্যুতের ঝলকের মতো কথাটা মনে পড়ে গেল।–
দস্তুরের নাক ডাকত!
এগজ্যাক্টলি! বলল ফেলুদা।-তার মানে বালিশের কোনখানে মাথা.কোন পাশে ফিরে রয়েছে, এ সবই বুঝতে পেরেছিলেন নীহারবাবু। যার শ্রবণশক্তি এত প্রখর, তার আর এর চেয়ে বেশি জানার কী দরকার? এক ঘায়ে যদি না হয়, তিন ঘায়ে তো হবেই!
আমি কিছুক্ষণ। হতভম্ব হয়ে থেকে ভয়ে ভয়ে বললাম, এই অসমাপ্ত কাজটার কথাই কি বলেছিলেন নীহারবাবু? প্রতিশোধ?
প্রতিশোধ, বলল ফেলুদা, জিঘাংসা। অন্ধেরও দেহমানে প্রচণ্ড শক্তির সঞ্চার করতে পারে এই প্রবৃত্তি। এই জিঘাংসাই তাঁকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল। এখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। আর সেই কারণেই তিনি আইনের নাগালের বাইরে।
আরও সতেরো দিন বেঁচে ছিলেন নীহাররঞ্জন দত্ত। মারা যাবার ঠিক আগে তিনি উইল করে তাঁর গবেষণার কাগজপত্র আর জমানে টাকা দিয়ে গেছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত মেধাবী সেক্রেটারি রণজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।