Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কেয়ার আবির্ভাব

দুপুরে বৃষ্টি কমে গেছে। মেঘ ভেঙে রোদ্র ফুটেছে। কিন্তু কী হিম! এত হিম কলকাতায় কখনও পড়েনি। কর্নেল টেবিলে রঞ্জন মিত্রের ক্যালেন্ডারটা নিয়ে আবার বসেছেন। ১৭ এবং ২২ জুন ৫ আগস্ট, ১২ এবং ১৯ অক্টোবর, ১৫ ডিসেম্বর চিহ্নিত। ১৫ ডিসেম্বরে ঢ্যারাচিহ্ন। আতস কাঁচে খুঁটিয়ে অন্যান্য মাসগুলোর তারিখ দেখছিলেন কর্নেল।

১৫ ডিসেম্বর ঢ্যারাচিহ্ন কেন? বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন, অথবা কিছুর সমাপ্তি? হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, ডটপেনের কালি ফুরিয়ে গিয়েছিল কারণ ঢ্যারার নিচে বাঁদিকের অংশ পরিষ্কার ফোটেনি।

টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে আতস কাচ রাখলেন। কালিহীন রেখায় একটা হরফের দাগ ফুটে উঠল। ইংরেজি হরফে জে। কী হতে পারে এটা? কোনো নামের আদ্যাক্ষর?

কলিং বেল বাজল। দ্রুত ক্যালেন্ডারটা গুটিয়ে ড্রয়ারে ঢোকালেন। ষষ্ঠী বোধকরি ঘুমোচ্ছিল। দেরি করে দরজা খুলল। কেউ এলে তাকে বসিয়ে রেখে ষষ্ঠী খবর দেয় আগে। কিন্তু সে সে সুযোগ পেল না। কেয়া এসে ঢুকল ড্রইং রুমে। বিপর্যস্ত চেহারা। কর্নেল বললেন, বসো! কেয়া ধপাস করে বসে পড়ল সোফায়।

কর্নেল গিয়ে মুখোমুখি বসে বললেন, বলো, ডার্লিং!

কেয়া ভাঙা গলায় বলল, পুলিশ আমাদের বাড়ি সার্চ করেছে কিছুক্ষণ আগে সৌম্যদা সম্পর্কে জিগ্যেস করছিল। সৌম্যদা–

সৌম্য চৌধুরি! কর্নেল আস্তে বললেন। ওঁকে চিনি।

কেয়া বলল, সৌম্যদার সঙ্গে এখন আমার কিসের সম্পর্ক? পুলিশ আমাকে খুব থ্রেট করল। এ কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখুন তো? এ নিশ্চয় ওই মেয়েটার চক্রান্ত। আমার নামে আজেবাজে কথা বলে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে।

কর্নেল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, সৌম্যের সঙ্গে তোমার একসময় সম্পর্ক ছিল, কেয়া!

ছিল। কেয়া স্বীকার করল। কিন্তু সে তো অনেক আগের ব্যাপার। ওর পরিচয় পাওয়ার পর আর ওর সঙ্গে মিশতুম না। ও একটা লম্পট, মাতাল। বাবা পয়সা রেখে গেছে। দুহাতে ওড়ায়।

কেয়া, তুমি রঞ্জন মিত্র নামে কাউকে চেনো?

কেয়া চমকে উঠল। মাথাটা একটু নাড়ল।

কর্নেল শক্ত গলায় বললেন, কেয়া, তুমি রঞ্জনকে ভালই চেনো। সে তপেশ বসাক নামে ব্যাংকে টাকা জমা রাখত। কারণ পুলিশের রেকর্ডে ও ছিল ফেরারী পলিটিক্যাল আসামী। ওর নামে হুলিয়া ছিল।

কেয়া মুখ নামাল। ঠোঁট কামড়ে ধরল।

কর্নেল এবার একটু নরম হয়ে বললেন, তোমার দাদার খুনী কে সে জানত। তাকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করত। ব্যাংকে সেই টাকা তপেশ বসাক নামে জমা রেখে গেছে।

কেয়া মুখ তুলে ভাঙা গলায় বলল, একটা মানুষের জীবনের দাম টাকা নিয়ে যদি কেউ আদায় করে, সেটা খুব অন্যায় বলে আমি মনে করি না।

তোমার দাদা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।

যে খুন করেছিল, সে বিশ্বাসঘাতক নয়? কেয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল, সেও যে পার্টির সঙ্গে শেষে বিশ্বাসঘাতকতা করে সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে নিজে গুছিয়ে মহাপুরুষ সেজে বসে আছে, তার বেলা? সেও যে এখন জনদরদী নেতা বনে গেছে, ভোট কুড়িয়ে ঝুলি ভরছে–বিশ্বাসঘাতক নয় সে?

কর্নেল তাকালেন। তুমি চেন তাকে?

চিনি। সবাই চেনে। কেয়া চোখে জল নিয়ে বলল। কার সাধ্য তাকে ছোঁয় এখন? পুলিশ–পুলিশেরও সে-হিম্মত আছে?

বুঝলুম। কিন্তু তোমার স্বামী রঞ্জন মিত্র তাকে ব্ল্যাকমেইল করত।

হ্যাঁ, করত।

যদি সত্যিই সে এখন এত শক্তিমান, কীভাবে রঞ্জন তাকে ব্ল্যাকমেইল করত? কেন সে রঞ্জনকে ধরিয়ে দিত না পুলিশের কাছে? কেন সে চুপচাপ টাকা গুনে দিত রঞ্জনকে?

কেয়া একটু চুপ করে থেকে চোখ মুছে আস্তে বলল, রঞ্জন একা তাকে ব্ল্যাকমেইল করত না। রঞ্জনের কাছে দাদার রক্তমাখা পোশাক ছিল শুধু। খুনের সময় যারা সেখানে ছিল, তারাও নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করত। কেউ সরকারি কন্ট্রাক্ট আদায় করত। কেউ বাসের পারমিট। কেউ শুধু বিদেশী মদ আদায় করেই খুশি থাকত।

কর্নেল ঝুঁকে গেলেন তার দিকে।…তুমি নিশ্চয় শ্যামল মজুমদার, সৌম্য চৌধুরী এবং বিমলবাবুর কথা বলছ?

কেয়া চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, ওরা ব্ল্যাকমেইল করত নট ইন ক্যাশ, বাট ইন কাইন্ডস্।

আর সুভদ্র সিং?

বিশ্বাস করুন, তাকে আমি চিনি না।

কর্নেল নিভন্ত চুরুট জ্বেলে কিছুক্ষণ টানার পর ধোঁয়ার রিং পাকিয়ে বললেন, কিন্তু তুমি তোমার দাদার খুনীকে তো চেনো। সম্ভবত তিনি এখন একজন মিনিস্টার। ইজ ইট?

কেয়া দু হাত জোড় করে বলল, ক্ষমা করবেন। তার গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষমতা কারুর নেই। যদি আমি নামটা বলি, আপনি পুলিশকে বলবেন এবং উল্টে পুলিশ আমাদের মা-মেয়েকে পথে বসিয়ে ছাড়বে। এমন কি, গুলি করে মেরে একটা কেস সাজাবে।

আমি কথা দিচ্ছি কেয়া, পুলিশকে বলব না। আমি শুধু জানতে চাই তিনি কে।

ক্ষমা করবেন। আপনারও সাধ্য নেই আমাকে বাঁচানোর। আমাকে কেউ মেরে ফেললেও ওই নাম বলব না। বলতে পারব না।

কর্নেল ফের কিছুক্ষণ চুপচাপ চুরুট টানলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু শুধু রক্তমাখা পোশাক আর মুখের সাক্ষ্যের ভয় দেখিয়ে প্রভাবশালী একজন লোককে ব্ল্যাকমেইল করা যায় না। নিশ্চয় আরও কিছু নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ছিল। তুমি জানো, কী সেই প্রমাণ?

কেয়া আস্তে বলল, রঞ্জনের কাছে শুনেছি, একটা ফোটোগ্রাফ ছিল।

কিসের ফোটোগ্রাফ?

দাদাকে যখন খুন করছে, তখন ওদের কেউ একজন ক্যামেরায় ছবি তুলেছিল। এর বেশি এক বর্ণও জানি না। আপনি বিশ্বাস করুন।

কর্নেল চুপচাপ চুরুট টানতে থাকলেন। সুশোভনকে খুন করা হবে, সেটা যেমন ঠিক করা ছিল, তেমনি কে খুন করবে তাও যেন ঠিক করা ছিল। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, খুন করার সময় ছবি তুলে রাখার ব্যবস্থাও তৈরি ছিল। সমস্তটা যেন প্ল্যান করে সাজানো। তার মানে, (১) সুশোভনের খুনী কোনো বিত্তবান পরিবারের লোক এবং দলের নেতৃস্থানীয় ছিল। (২) সুশোভন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তারই বিরুদ্ধে। (৩) ফিল্মের নেগেটিভ থেকে কয়েকটা প্রিন্ট করা হয়েছিল। তা থেকে বিমলকুমারের মাথায় ওই বিমূর্ত ছবিটার আইডিয়া আসে। (৪) প্রেমিকার দাদা খুন হবে জানলে রঞ্জন আগেই সাবধান করে দিত। তার মানে, সে দৈবাৎ সেখানে উপস্থিত ছিল। (৫) খুনী টের পায়নি তার খুনের ছবি তোলা হচ্ছে। টের পাওয়ার কথাও নয়। হত্যার মুহূর্তে মানুষ অন্ধ হয়ে ওঠে। হিংসা তাকে অন্ধ করে। (৬) খুনী এখন দেশের নেতৃস্থানীয় এবং একজন মন্ত্রী। (৭) মোতিগঞ্জে তার ডেরা আছে একটা। গঙ্গার ধারে ওই ছোট্ট শহরটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে। সেখানে বিত্তশালী এবং নেতা লোকেরা একটা বাড়ি করতেই পারে। (৮) রক্তাক্ত পোশাক হারিয়ে বিপন্ন বোধ করাই রঞ্জনের আত্মহত্যার কারণ। কর্নেল ধোঁয়ার রিঙের দিকে তাকালেন। ফিল্মের নেগেটিভটা ছোট্ট জিনিস। সেটা কোথায়, কার কাছে আছে? বোঝা যাচ্ছে, কেয়াকে এর বেশি মুখ খোলানো যাবে না। সে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে এবার। বললেন, ঠিক আছে আমি পুলিশকে অনুরোধ করব, যাতে তোমাদের হ্যাঁরাস না করা হয়।

কেয়া আশ্বস্ত হয়ে চলে গেল। হু, কেয়ার বাড়ি সার্চ করার উদ্দেশ্য সম্ভবত পুলিশের সাহায্যে ফিল্মের নেগেটিভটা উদ্ধার। রঞ্জনের প্রেমিকা এবং বউয়ের কাছে সেটা থাকার সম্ভাবনা ছিল। নিশ্চয় নেই। থাকলে কেয়া মনে জোর পেত। খবরের কাগজের দ্বারস্থ হত। ঢি ঢি পড়ে যেত চারদিকে। আজকাল বহু কাগজ ও ধরনের স্ক্যান্ডালের জন্য ছোঁক ছোঁক করে ঘুরছে।

কর্নেল চুরুট নিভিয়ে অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিলেন। জট অনেকটা ছাড়ল তাহলে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress