এখানে সাগর নেই, আছে শুধু মখমল সবুজ পাহাড়।
কখনো ওখানে দূরে উত্তুঙ্গ পাহাড়পুরে স্তব্ধ হওয়া হিমানীর শুভ্র পারাবার।
এখানে দুরন্ত ঝড়ে গুরাসের পাপড়ি ঝরে কান্নাভেজা বনানীর মর্মবেদনায়,
ওখানে পাইন বনে, পাহাড়ের কোনে কোনে, মেঘ আর কুয়াশার প্রহেলিকা বয়।
এখানে যে দিকে চাই,নীল নবঘনে তাই, পৃথিবীর প্রান্তসীমা প’রে,
মেঘেদের লুকোচুরি,সূর্য্য ডুবে যায় বুঝি, ঘননীল পাহাড়ের গহীন কন্দরে।
পাখিদের কলরব শান্ত হয়ে আসে যবে, গুরাসের বনবীথিকায়,
প্রগাঢ আঁধার নামে, গুরাসের কুঞ্জবনে,মেঘ আর পাহাড়ের কানায় কানায়।
এখানে নিভৃত বনে,দেবশিশু কানে কানে বলে যায়, ভুলে যায়,কত কিযে কথা।
ফুলের বনানী ঘিরে, ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, বয়ে আনে শান্তির নিভৃত বারতা।
নিভৃতে, আকাশ তলে, পাথরের বেদীমূলে,বসে শুনি, পুরাতনী, আদি সেই গান,
জীবনে জীবন যোগে,প্রকৃতির অনুরাগে বহে চলে জগতের অনির্বাণ প্রাণ।
জমে থাকা অবসাদ,শহরের মল- মাস, সবই যেন তৃপ্তির প্লাবনে,
ধুয়ে মুছেচলে যায় দেবতার আঙিনায়, আর কিছু ভাবিনাকো মনে।
চেতনার গভীরে গোপনে, আজও নিয়ে বসে আছি নিভৃত যতনে, মায়াময় গুরাসের বিপুল সম্ভার।
বিধাতার হাতে গড়া কুসুমে কুসুমে ভরা,নিত্য যেথা ফোটে ফুল দেব দেবতার।
সুগভীর প্রেমে যেন লিপ্ত হয়ে আছে হেন জগতের প্রেমিকের বাসনার সনে।
দিন যায় রাত নামে ঝরণার কানে কানে কত কথা বলে তারা জোনাকিরা শোনে।
শীতের সকাল,আড়মোড়া ঘুম যেন চাদরের মতো শরীরে জড়িয়ে থাকে, কুয়াশার আলসেমী মতো।
তবুও সকাল, গুরাসের গন্ধমাখা, অচেনা সকালে, সোনালী আলোর আভা ঝরে
দুরন্ত শিশুর মতো ঝাঁপ দিয়ে পড়ে যেন পাহাড়ের চূড়ায় চুড়ায়, প্রেমানন্দ ভরে।
সারাদিন আনমনে গুরাসের কুঞ্জবনে, বয়ে চলে সময়ের বিলাপের গান।
কানপেতে অন্যমনে,মাতাল হাওয়ার সনে শুনি সেই অপরূপ তান,
সুনির্মলা প্রকৃতির প্রশান্ত নিরালায়, অবাধ শান্তি, রডোডেনড্রন ঝরে যায়,
অসীম আনন্দে ভাসি, গুরাসকুঞ্জতে বসি, নির্মল প্রকৃতির কুঞ্জছায়ায়।
গুরাস=রডোড্রেনড্রণ (সিকিমের ভাষায় গুরাস)
গুরাসকুঞ্জ সিকিমের Valley of flowers এ ভার্সে/ রেনচিংপং থেকে যাওয়া যায়।