Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গান্ধর্বী || Bani Basu » Page 9

গান্ধর্বী || Bani Basu

ওরা তাকে সাদার ওপর ফিকে নীল, ফিকে গোলাপি আর সোনালির নকশা করা ঢাকাই বেনারসী পরাচ্ছে। অপু কালো, সে কিছুতেই লাল-টাল পরতে চায়নি। এই শাড়িটা তার জন্য বিশেষ করে পছন্দ করেছে দীপালিই। তার পছন্দের কোনও জবাব হয় না। সে চুপিচুপি বলল— ‘অপু, কত কনফারেন্সে গাইতে যাবি এর পর, এইটে পরে সন্ধের বা রাত্তিরের একটা জমকালো রাগ ধরবি। ধর তিলক কামোদ। বাস কামাল হয়ে যাবে। ‘দীপালিই তাকে অপরূপ কবরী সজ্জায়, অসাধারণ নকশার অলকাতিলকায় সাজিয়ে দিল। ফুলের মালা, গহনা, অপালা নিশ্চল-নিথর হয়ে বসে আছে। এতে সাজ-সজ্জা সত্ত্বেও যেন সে বৈরাগিণী, তপস্বিনী। মুখে বিষাদমগ্ন, তন্ময় ভাব। কোন অপ্রাপ্যের ধ্যানে যেন সে নিজেকে সম্পূর্ণ নিলীন করে দিয়েছে। বর আসতে দেরি। রাতের দিকে লগ্ন। হঠাৎ দীপালি তার পাশ থেকে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। অপালা অবাক হয়ে দেখল জেঠু ঢুকছেন, সঙ্গে প্রতাপবাবু, এবং পেছনে সোহম। আরও পেছনে একটা ঢাউস বাক্স নিয়ে ঢুকছে বনমালী। সোহম সাদা ধবধবে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরেছে। তাতে সাদা চিকনের কাজ। খুব হালকা বিস্কুট রঙের গরম জহরকোট তার গায়ে। কিন্তু জহরকোটের বোতাম সে আটকায়নি। অনেক রোগা হয়ে গেছে। চোখ দুটো স্তিমিত। সেই প্রাণবন্ত, পুরুষালি, গলা-ফাটিয়ে হোহো-করে-হাসা সোহম নয়। এ যেন তপস্যার আসন থেকে উঠে-আসা কোনও উদাসীন সন্ন্যাসী-যুবক। তার ঈষৎ দাড়ি হয়েছে। একটু সোনালি আভা তার দাড়ি গোঁফ চুল সবেতেই। ফ্যাকাশে ফর্সা রং এবং এই সোনালি আভার চুল-দাড়ি নিয়ে সোহমকে খানিকটা ইউরোপীয় দেখতে লাগছে। ফরাসি-ফরাসি।

সোহমের বাবা হাতের একটা প্যাকেট খুলে একটা বাক্স এগিয়ে দিলেন অপালার দিকে, খুলে দিলেন ডালাটা, পুরো মুক্তোর একটি সেট। বিশুদ্ধ মুক্তো। কানের টপ, গলার মালা, আংটি এবং সরু সরু চারগাছা চুড়ি। গলার স্বরে আদর মাখিয়ে বললেন— ‘মা, এই মুক্তো তোমাকে খুব ভালো মানাবে। আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি। পরো কিন্তু। জানি তোমার গুণই তোমার আসন্স অলংকার। সে তো সব সময়ে বাইরে থেকে দেখা যায় না! এই মুক্তোই তোমায় যথাযথ মানাবে মা।’

বনমালী এসে বাকস্‌টা নামাল। প্রতাপবাবু বললেন— ‘এই হার্মোনিয়ম সোহম তোমায় উপহার দিচ্ছে। নিজে চিৎপুরে গিয়ে দেখে শুনে কিনে এনেছে।’

অপালার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে।

জেঠু আর প্রতাপবাবু বাইরে বেরিয়ে গেলেন। যে সব নিকট আত্মীয় বন্ধু মেয়েরা দু-চার জন বসেছিল, তারাও এখন নিজেদের সাজগোজ সম্পূর্ণ করতে ও বাড়িতে চলে গেছে। দীপালি তো আগেই পগার পার। ঘরে এখন শুধু দুই বন্ধু। সোহম হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। অপালার কোলের খুব কাছে। বলল—‘অপু তোকে মহাশ্বেতার মতো দেখাচ্ছে। মাইনাস এই গয়নাগুলো। তুই বাণভট্টর কাদম্বরী পড়েছিস! আসলে না, অনুবাদে! তুই যে কী, তুই যে কতটা, তা আমার চেয়ে বেশি কেউ কোনদিন জানবে না। বাট আই ডু মাইন্ড!’

অপালা বুঝতে পারছে না। সে সজলচোখে চেয়ে রয়েছে সোহমের দিকে। সোহম বলল— ‘আমাকে বলিসনি কেন?’

অপালা আস্তে আস্তে বলল— ‘তুই বলার অবস্থায় ছিলি না সোহম। বলতেই তো গিয়েছিলাম।’

সোহম বলল— ‘ডু উই হ্যাভ টু পার্ট? তোর চেয়ে বড় বন্ধু আমার আর কেউ নেই।’

অপালা বলল— ‘না। আমরা গান গাইব দুজনে, আমরণ গান গেয়ে যাবো।’ সোহম বলল— ‘প্রমিস!’

অপালা চোখের জলের মধ্য দিয়ে হাসল একটু। যেন এ প্রতিজ্ঞা করা মানে হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিক সঙ্কল্পকে ছোট করা।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress