গান্ধর্বী (Gandharbi) : 21
প্রচুর টাকা আসছে। বড় বউ-এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা। বেণী নন্দনের বাড়ি পনের বছর পর আগাপাশতলা সারাই হচ্ছে। এতদিন হয়েছে খালি তালি মারা। ভেতরে চুনকাম। বাইরে এলা। টাকার অভাবে যতটা না, তার চেয়েও দৃষ্টির অভাবে। এ গলির প্রতি বাড়িই একই রকম ছ্যাতলা পড়া, নড়বড়ে, থেকে থেকেই ডাঁই করা আবর্জনার স্তূপ। কাজেই দরকার কী? আর বাড়ি তো মনোহর সঙ্গে নিয়ে যাবেন না। তিনি বললেন—‘তোরা দু ভাই দুজনের থাকবার মতো করে নে বাড়িটা।’ অপালা শিবনাথকে বলল—‘আমার নীচের গানঘরটা খুব সুন্দর করে দিও। প্লাস্টার উঠিয়ে। দেবে তো?’
শিবনাথ বলল—‘অবশ্যই।’ কিন্তু নীচের ঘরের একটা মুশকিল, বড্ড নোনা ধরে। মিস্ত্রি বলছে ইঁটের দোষ। আসলে এ বাড়ি বেড়েছে আস্তে আস্তে। যেমন যেমন সংসার বেড়েছে। বাড়িটার বাড় বদ্ধ জায়গায় একটা গাছের মতো। যেখানে ফাঁকা পেয়েছে, শাখা প্রশাখা বাড়িয়ে দিয়েছে। ছোটদের খুব মজা। তাদের হুটোপাটি করার, লুকোচুরি খেলার প্রচুর আনাচ কানাচ। কিন্তু এখন ওরাই নাক সেঁটকায়। সিলিঙের দিকে তাকালে বিচ্ছিরি লাগে। পরপর সব কাঠের, লোহার কড়ি, বরগা, বিচ্ছিরি হান্ডা-অলা ডি সি ফ্যান ঝুলছে। বড় ছেলের এসব মনে হত না। তার ছেলেবেলাকার স্মৃতিঘেরা ওই নিম গাছ, ওই উঠোন, লাল সিমেন্টের চকচকে মেঝের ঘর, পেছনের জমিতে নয়নতারার ঝোপ, গন্ধরাজ লেবুর গাছ, এসবের সঙ্গ তার বরাবর ভালো লাগে। অপালা উদাসীন। তার একটা নিভৃত গান করার জায়গা হলেই হল। রণো বরাবর দাদুর ঘরে শুতো, ইদানীং সে নিজস্ব ঘর দাবি করছে। টিটু বনি ঠাকুরমার সঙ্গে শোয়। তাদেরও মনোগত ইচ্ছে তাদের নিজস্ব একটা ঘর হোক। এ বাড়িতে এসে প্রথম নাক সিঁটকোলো ছোট বউ জয়া। সে বারে বারেই বিশুকে বলত নেহাত বিশুর কেরিয়ার আর চাকরিটা খুব ভালো তাই এ সংসারে সে এসেছে। নইলে এখানে কি থাকা যায়? বিশুর ভাগে দুখানা ঘর। সে আর্কিটেক্ট। ছোট ঘরখানায় তার নানারকম কাগজপত্র, যন্ত্রপাতি থাকে। বাড়ি আগাগোড়া সারানোর কথায় বিশু বলল—‘আফটার অল আমার তো কোনও ইস্যু নেই। এ বাড়ির ভবিষ্যতে আমার দায় কী?’
তার কথা শুনে তার বাবা অবাক হয়ে বললেন—‘দায় নেই মানে? এ বাড়ির অর্ধাংশ তো তোমারও প্রাপ্য! অংশ থাকলে দায়ও থাকে।’
বিশু বলল—‘ভবিষ্যৎ দাদার। দাদাই সামলাক। আমার দ্বারা ভস্মে ঘি ঢালা হবে না।’
বিশুর মা হঠাৎ বলে উঠলেন—‘ও তো একরকম ঠিকই বলেছে বাপু। ঘর দোর তো সব শেষ অব্দি শিবুরই দাঁড়াচ্ছে। এক কাজ কর বিশু, নিজের ঘরদুটো সারানোর খরচটুকু হিসেব করে ফেলে দে। কী বলো বউমা?’
অপালা জয়া উভয়েই উপস্থিত ছিলো, বউমা বলে তিনি কাকে সম্বোধন করলেন বোঝা গেল না। জয়া গুরুজনদের সামনে বড় একটা মুখ খোলে না। মুখে সব সময়ে একটা আলগা হাসি থাকে। শিবনাথ বললেন—‘এই এত বড় বাড়ি, আজকালকার দিনে এর সারানোর খরচ তো সাংঘাতিক! সেই সমস্তটা আমি একা!’
শিবনাথের মা নরম গলায় বললেন—‘তুই তো আর একহাতে রোজগার করছিস না শিবু! তোর চারখানা হাত! আমার অমন লক্ষ্মীমন্ত বউমা থাকতে তোর ভাবনা কি?’
শিবনাথের মাথা এইবার নিচু হয়ে গেল। মধ্যবিত্ত, রক্ষণশীল, পশ্চিমবঙ্গীয় সমাজের কতকগুলো মূল্যবোধ থাকে। মেয়েদের, বিশেষ করে বউদের উপার্জনের টাকা ব্যবহার করতে তাদের বরাবরই মাথা কাটা যায়। শিবনাথ সেই শ্রেণীর। এমনিতেই আজকাল তার অপালার কাছে একটা হীনম্মন্যতা জেগেছে, একটা অপরাধবোধও। তার ওপর সে জানে অপালা তার উপার্জনের একটা অংশ প্রথম থেকে শাশুড়ির হাতে তুলে দিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র তাঁর নিজের হাতখরচের জন্য। তা ছাড়াও অপালা দু হাতে দেয়। দিতে বড্ড ভালোবাসে। শিবনাথের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে। অপালা কিছুই বলছে না। সে রান্না ঘর থেকে এক গোছা রুটি এনে প্রত্যেকের পাতে দিয়ে চলে গেল।
ঘরে এসে শিবনাথ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন—‘অপু, মা কী করে বললেন, বিশু কী করে বলল— এতো বড় বাড়ি সারাবার দায়িত্ব একা আমার?’
টিটু ছিল কোথাও, সে বলে উঠল—‘তোমার একার হবে কেন বাবা, মারও। মা যে কত স্বাধীনতা পাচ্ছে। মার যে এখন দেশজোড়া নাম। শ্বশুরবাড়ি অ্যালাউ করেছে বলেই না এতো সব হতে পারল? কিছুদিন আগে পর্যন্তও তো শুধু শাঁখের ফুঁ-এর ওপর দিয়ে অপালা দত্তগুপ্তর দমের পরীক্ষা আর প্র্যাকটিস হচ্ছিল। তা এসবের দাম দিতে হবে না?’
অন্য সময় হলে শিবনাথ মৃদু ধমক দিয়ে উঠতেন। আজ তাঁর লজ্জা এবং দুঃখ এতো গভীর যে তিনি কিচ্ছু বলতে পারলেন না। টিটু বলল—‘সেদিন মনিরুল মিস্ত্রির কাছে দাদু এসটিমেট নিচ্ছিল। ডিসটেম্পার, কোথায় কোথায় যেন মোজেইক হবে। বাইরে স্নো-সেম দেওয়া হবে, ছাতের ওপর ঘর। এতো সব করতে হলে… বরং এক কাজ করো তোমরা মাকে বিক্রি করে দাও, নীলামে তোলো, এখন বাজার দর খুব বেশি…’
অপালা বলল—‘টিটু, চুপ কর।’
টিটু বলল—‘ওসব কিছু করতে হবে না। আমাদের কিছু চাই না। বনির শিগগির বিয়ে হয়ে যাবে, আমি তো বরাবর গভমেন্ট কোয়ার্টাসে থাকব। পশ্চিমবঙ্গে পোস্টিংই নেবো না। আর দাদা এ বাড়ির আদরের ছেলে, যথেষ্ট বোঝবার বয়স হয়েছে, সে সময় হলে বুঝে নেবে, এখন শুধু ছাতের ঘরটা করে দাও মোটামুটি, আর নীচে মায়ের গানের ঘরটা, অত বড় বড় লোক আসে, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়।’
এই সময়ে বাইরে বিশুর গলা পাওয়া গেল—‘দাদা!’
—‘বলো’, চিন্তিত মুখে শিবনাথ বাইরে এসে দাঁড়ালেন।
বিশু বলল—‘মোটামুটি হিসেব করে দেখলুম, আমার ঘরদুটো সারাতে হাজার তিনেকের মতো পড়বে। আমি কালই দিয়ে দেবো।’
শিবনাথ বললেন—‘হাজার তিনেক টাকা তোমাকে দিতে হবে না বিশু।’
—‘অ্যাজ ইউ প্লীজ’—বিশ্বনাথ চলে গেল। এবং এর পরই দুইভাইয়ের মধ্যেকার চিড়টা যেটা বাইরের লোকে চট করে ধরতে পারত না, সেটা প্রকট হয়ে উঠল।
অপালা বলল—‘বাবার অনেক দিনের শখ ডিসটেম্পারের। করিয়ে দাও। দালানের মেঝে ভেঙেচুরে গেছে, ওটারও ব্যবস্থা করো, রান্নাঘর সেই সাবেক কালের। বড় কষ্ট হয় মার। ওটাকে মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে ভালো করে আধুনিক করে দাও। ছাতে তো একটা ঘর তুলতেই হবে রণোর জন্যে। এর জন্য তুমি যা না পারবে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে নিশ্চয়ই নেবে। আমি খালি ভাবছি টিটু-বনির একটা আলাদা ঘর হলে বড্ড ভালো হত।’
শিবনাথ শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দুই মেয়ের বিয়ে আছে। ছেলেকে দাঁড় করাতে বেগ পেতে হবে। অপালার আয় অনিয়মিত। আজ হঠাৎ টাকা আসছে বলেই যে চিরকাল আসবে তার কোনও মানে নেই! অপালা তো মিতুলের মতো উদ্যোগী, করিৎকর্মা ধরনের মেয়ে নয়!
অপালা বলল ‘এক কাজ করতে পারো নীচের ঘরটা তো যথেষ্ট বড়। ওটাকে দুভাগ করে, একদিকে আমার গানের ঘর, আর একদিকে টিটু-বনির ঘর হোক।’
শিবনাথ গম্ভীর মুখে বললেন—‘তা হয় না অপু। দুটো মেয়েকে আমি প্রাণ গেলেও নীচে নির্বাসিত করতে পারব না।’
অপালা বলল—‘কেন, ওরা যেরকম ঠাম্মার কাছে শুচ্ছে শুক না। নীচে খালি ওদের নিজস্ব একটা আস্তানা থাকবে, যেখানে ওরা পড়াশোনা করবে, বন্ধুবান্ধব এলে গল্প-সল্প করবে।’ অপালার আসলে মনে পড়ছিল তাদের সেই কীর্তি মিত্র লেনের চিলেকোঠার ঘরখানা। যেখানে সে গান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ত। মা তুলে নিয়ে যেতেন। মায়ের কাছে অনেক প্রার্থনা করেও নিজের জন্য একটা ঘরের অধিকার পাওয়া যায়নি।
অথচ জেঠু দুখানা ঘর নিয়ে থাকতেন। বড় বড় ঘর। অনায়াসেই তার একটা দাদাকে দিয়ে, তাকে চিলেকোঠার ঘরটা দেওয়া যেতো। এখন তার বাপের বাড়িতে কতগুলো ঘর, খাঁ খাঁ করছে, থাকবার লোক নেই। যাদের যে সময়ে দরকার ছিল তারা পায়নি, ঘাড় ওঁজে কোনমতে বড় হয়েছে, তাদের সেই নিঃশব্দ অভিমান বোধহয় কীর্তি মিত্রর বাড়ির নির্জনতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
টিটু বলল—‘নীচের ঘরটা ছোট হয়ে গেলে, তোমার কাছে বেশি লোকজন এসে গেলে তো খুব অসুবিধে হবে মা!’
বনি বলল—‘তা কেন? মিতুল মাসির ঘরের মতো একটা পার্টিশন থাকবে, দরকারমতো সেটাকে গুটিয়ে রাখা যাবে!’
টিটু একটু তিক্ত হেসে বলল—‘ওহ্ বনি, মিতুল মাসির মতো!’
সিনেমা-পত্রিকাটার একটা পাতা উল্টে জয়া বলল—‘একটা ভীষণ মজার জিনিস দেখাবো তোমাকে, আন্দাজ করো তো!’
বিশু নিজের কাজে মগ্ন ছিল, বলল—‘গেস-ফেস আমার আসে না, দেখাতে ইচ্ছ হয় দেখাও।’ সাম্প্রতিক বাড়ি সারাইয়ের ব্যাপারটা নিয়ে সে একটা বিবেকের দ্বন্দ্বে ভুগছে। অন্যায় করছে বুঝতে পারছে, কিন্তু যে বাড়ির অধিকাংশই তার মা-বাবা দাদা-বউদি ও তাদের ছেলে-মেয়েরা ব্যবহার করছে সে বাড়ির সারাইয়ে আধাআধি অংশ দিতে তার হিসেবী মন কিছুতেই রাজি নয়।
টেবিলের ওপর একটা পত্রিকার পাতা খুলে রাখল জয়া, মস্ত একটা ব্লো-আপ। একজন নারী আর একজন পুরুষ দৃঢ় আলিঙ্গনে বদ্ধ। চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ফোঁটাগুলো শুদ্ধু উঠেছে। তলায় ক্যাপশন—‘কতদিন পরে এলে!’ বিস্তৃত বিবরণ। দুই গুরু ভাই-ভগিনীর কীভাবে বছর কুড়ি বাদে বিখ্যাত কনফারেন্সে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। সেখানে দুজনেই কিভাবে আবেগে অভিভূত হয়ে যান। ইত্যাদি ইত্যাদি। ছবির মধ্যে ফোকাসের বাইরে কিছু মুখ দেখা যায়। সেখান থেকে শিবনাথকে শনাক্ত করল জয়া। হেসে কুটিপাটি হয়ে গেল। বিশ্বনাথ সংযত হেসে বলল—‘দাদাটা বরাবর বড্ড কাপুরুষ। নইলে এটা হয়? বংশের একটা মান-ইজ্জত নেই? ছিঃ!’
জয়া বলল—‘কেন বাবা, তুমি তো বলতে বউদির জন্যে তুমি গর্ববোধ করো। ‘আশাবরী’র গান যখন বাজে তখন নাকি গর্বে তোমার বুক ফুলে ফুলে ওঠে! বউদি নাকি তোমাদের বাড়িকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে!’
বিশ্বনাথ অন্যমনস্কভাবে বলল—‘বাজে কথা বলিনি জয়া। কে চিনত সতেরর এক বেণীনন্দন স্ট্রীটকে যদি অপালা দত্তগুপ্ত এখানে না থাকত! আমাদের সবাইকার এখন পরিচয় অপালা দত্তগুপ্তর দেওর, অপালা দত্তগুপ্তর জা, …বউদি কিন্তু খুব সংযত স্বভাবের মেয়ে। এ ছবিটা ঠিক বউদির চরিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না।’
জয়া বলল—‘মিতশ্রী ঠাকুরকে দেখেছো? কী না পরে আর কী না করে! দিদির ফাস্ট ফ্রেন্ড তো ও-ই।
বিশ্বনাথ বলল—‘সঙ্গদোষ বলছো! এই বয়সে? তবে মিতশ্রী ঠাকুরটি কিন্তু দা-রুণ, যাই বলো!
জয়া মুখের একটা ভেংচি কাটার মতো ভঙ্গি করে বললো—‘দা-রুণ!’ হয়ে যাও না ওর অসংখ্য ক্রীতদাসগুলোর একটা, বউদিকে বললেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে’খন। আমার আর কি? গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে তো আর পড়ব না।’
বিশ্বনাথ বলল—‘বাজে বকো না জয়া।’ সে তার ড্রাফটগুলোর মধ্যে ডুবে গেল।
পত্রিকাটা জয়া বনির হাতে দিল—‘তোর মায়ের ছবি বেরিয়েছে রে। খুব ভালো এসেছে। মাকে দ্যাখা। সবাইকে দ্যাখা।’
ঘরে এসে ছবিটা খুলেই বনির চক্ষুস্থির হয়ে গেল। সিনেমার পোস্টারের মতো ছবি। তার মা, আর এটা তো সোহম চক্রবর্তী! সে অত্যন্ত অপ্রস্তুত অবস্থায় টিটুকে ডাকল। ‘টিটু টিটু! শুনে যা!’ ছবিটা দেখে টিটু বলল —‘হ্যাঁ সোহম মামার সঙ্গে বোধহয় মায়ের উনিশ-কুড়ি বছর পরে দেখা। মা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সোহম মামাই তো দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। —অপু অপু করে! আমরা সবাই ছিলাম।’
বনি বলল—‘পোজটা কিন্তু রোম্যান্টিক ফিলমের।’
টিটু বলল—‘বনি! তার গলায় রাগের সুর। এই সময়ে শিবনাথ ঘরে ঢুকলেন, বললেন, ‘কি রে টিটু, বকছিস কেন বনিটাকে?’ দুজনেরই অপ্রস্তুত অবস্থা। হাতে বইটা দেখে শিবনাথ বললেন—‘এসব ফিল্ম ম্যাগাজিন আবার কোথা থেকে হস্তগত হল!’ বনি বইটাকে লুকোবার চেষ্টা করতে শিবনাথ বললেন—‘দেখি! দেখি কী লুকোচ্ছিস অত?’
বনি বলল—‘ন্ না!’ তার মুখ লাল হয়ে গেছে।
টিটু ধমক দিয়ে বলল—‘এই বনি, দে না!’
শিবনাথ বইটা বনির শিথিল হাত থেকে তুলে নিলেন। ঠিক পাতায় তার আঙুল ছিল। ছবিটা শিবনাথের মুখের ওপর দড়াম করে একটা চড় মারল। ঘটনাটা যখন ঘটেছিল, তখনও তিনি বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যুক্তিনিষ্ঠ মানুষ। নিজেও গানবাজনা বোঝেন, ভালোবাসেন। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছিলেন এই বলে যে এরকম হতেই পারে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে। গুরু ভাই-বোনদের মধ্যে। কিন্তু এখন ছবিটা সম্পূর্ণ পূর্বপ্রসঙ্গবিহীন। ব্লো-আপ। অপুর মুখের হাসি, চোখের জল সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সোহমের ভারী কাঁধের ওপর। অপুকে এতো সুন্দর তিনি কমই দেখেছেন। সোহমের ঝাঁকড়া চুল-অলা মাথাটা অপালার পিঠের ওপর। আবেশে চোখ বোজা। পুরো মুখটাই প্রায় তার চুলে ঢেকে গেছে। সেই দেখা-না-দেখায় মেশা মুখের মধ্যে শিবনাথ এই মুহূর্তে অনেক কিছু আবিষ্কার করতে থাকলেন। তাঁর দুই মেয়ের রকম-সকম দেখে মনে হচ্ছে তারাও লজ্জা পেয়েছে খুব। তিনি প্রাণপণে নিজেকে সংযত করতে লাগলেন। মুখটা একেবারে রক্তহীন হয়ে গেছে।
টিটু বলল—‘বাবা, মায়ের ছবিটা কী সুন্দর এসেছে, না? তোমাকেও ব্যাক গ্রাউন্ডে দেখা যাচ্ছে। অথচ আমার ছবিটা আসেনি। আমি তো তোমার পাশেই ছিলুম!’
শিবনাথ কথা না বলে বইটা বনির হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। টিটু-বনি দুজনেই বুঝতে পারল বাবার কোথাও লেগেছে। বনির মধ্যে এখন একটা অপরাধী-অপরাধী ভাব। টিটু বলল—‘কী করলি বল তো?’
বনি বলল—‘কী হবে টিটু? বাবা কি মাকে খুব বকবে এখন?’
টিটু বলল—‘কি করে জানবো? আমি তো এখনও বিয়ে করিনি। তোর মতো গাদা গাদা বয় ফ্রেন্ডও আমার নেই। কোথায় পেলি বইটা?’
বনি বলল—‘কাকি দিল।’
টিটু খুব বুদ্ধিমতী, কাকিমা লাইব্রেরি থেকে যে সব বই আনায়, চুপি চুপি আনায়, চুপি চুপি ফেরত দেয়, চেয়ে পাওয়া যায় না। আর এইটের বেলাই নিজে থেকে সেধে এসে দিয়ে গেল? সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল—‘বিচ।’
—‘কী বললি?’ বনি জিজ্ঞেস করল।
টিটু বলল—‘কিছু না।’ তারপর ছবিটা সন্তর্পণে কেটে নিয়ে বলল—‘যা এটা ফেরত দিয়ে আয়, বলবি ছবিটা দারুণ সুন্দর এসেছে, তাই রেখে দিলাম। বলতে ভুলবি না। মার ছবিটা স্পেশ্যালি দারুণ সুন্দর এসেছে বলবি।’
রাত সাড়ে দশটা। নীচে একটা গাড়ির শব্দ হল। অপালা আজ সল্ট লেকে যায়। মিতুলের ড্রাইভার বা কোন কোন দিন সোহম তাকে পৌঁছে দিয়ে যায়। আজ খুব সম্ভব সোহম। গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দ হল। সোহমের গলা সামান্য একটু শোনা গেল। অপালা বলল—‘আচ্ছা!’
টেবিলের ওপর খাবার ঢাকা। শাশুড়ি এসে বসলেন। অপালা বলল—‘মা আপনি খেয়ে নিয়েছেন তো!’
—‘তাই কখনো পারি মা!’
—‘সাড়ে দশটা বাজল, আপনি এরকম না খেয়ে বসে থাকলে মা… আপনার তো বয়স হচ্ছে। আপনারটা আনুন।’
—‘আনি।’
—‘আপনি এরকম করলে তো আমাকে মাস্টারমশায়ের বাড়ি থেকে খেয়ে আসতে হয়। উনি তো রোজই জোর করেন!’
—‘তা খেয়ো না বউমা, তবে ঘরের বউ ঘরে খেলেই আমাদের ভালো লাগে।’
—‘সে তো আমারও লাগে! তাই-ই তো…’
অপালা বাড়ির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চায় না। বাড়ির বউ অর্ধেক দিন বাইরে থেকে খেয়ে আসছে, এটা তার মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না। তা ছাড়াও তাদের মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের একরকম রান্না, অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু মিতুলের বাড়িতে বাবুর্চি রয়েছে ওস্তাদ। অনবরত মিতুলের বন্ধু-বান্ধব, মাস্টার মশায়ের পরিচিত জনেরা যাতায়াত করছে। মাস্টারমশায়ের রাতের খাওয়া খই দুধ, কিংবা চিকেন সুপ, আর দু পীস রুটি হলে হবে কী প্রায় প্রতিদিনই মিতুলের বাড়িতে স্পেশ্যাল রান্না হয়। সে তিনদিন যায়। এক দিন ইমতিয়াজ, দু দিন সোহমের সঙ্গে রেওয়াজ। সোহমও খেতে চায় না, সে-ও না। আজও বলেছিল বাবুর্চি—‘পনীরের মালাই কোফতা করেছি দিদি, আর মাটনের ভিন্ডালু—একটু খেয়ে যান না।’ অপালার তিনটি মুখ মনে পড়ে রণো, টিটু, বনি। ওরা যখন ওদের রাতের প্রতিদিনের বরাদ্দ সেই এক বেগুনভাজা কি পটলভাজা, মাছের কালিয়া খাবে, সেই সময়ে এই সব চমৎকার নামের খাবারগুলো তার গলা দিয়ে নামবে না। আজকাল সে প্রায়ই ওদের তিনজনকে বাইরে খাওয়া-দাওয়ার জন্যে টাকাকড়ি দেয়, সাবধান করে দেয়—‘আজেবাজে জায়গায় খাসনি যেন!’ কিন্তু ওরা কথা শোনে কি না কে জানে! ছেলেমেয়েদের ফেলে ঠিক এই ধরনের ভোজ খেতে বিবমিষা আসে তার। কিন্তু শাশুড়ি মায়ের এই নিত্যদিনের জেদ! জনপ্রাণী না খেলে হাঁড়ি আগলে বসে থাকা। রণো তো একেকদিন ভীষণ দেরি করে ফেরে, বিশু-জয়া কিছু না বলেই বেরিয়ে যায়, ফেরে খাওয়া দাওয়া সেরে, হয়ত রাত বারোটায়, তখনও শাশুড়ি হাঁড়ি কোলে করে মুখ শুকিয়ে বসে আছেন। অপালা অনেক দিন ছেলের দেরি দেখে বলে—‘ঠিক আছে আমি বসে আছি। আপনি খেয়ে নিন মা।’
—‘ওরে বাবা, রণোজী না এলে গলা দিয়ে আমার খাবার নামবেই না!’
খেতে খেতে অপালা ঠিক করলো এরপর থেকে সত্যি-সত্যিই মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি থেকে খেয়ে আসবে। মাস্টারমশাইয়ের মতো চিকেন সুপ, সালাড আর রুটি রাখতে বলবে বাবুর্চিকে। তাহলে তার জন্য অন্তত মা এ কষ্টটা থেকে রেহাই পাবেন।
মায়ের সাড়া পেয়ে বনি আর টিটু বেরিয়ে এসে বসল। অপালা বলল—‘বনি, নতুন যে পাল্টাগুলো দিয়ে গেলুম, সেধেছিলি?’
—‘কি করে সাধব? রিয়া, বিল্টু, কাকলি সব এসে গেল যে!’
—‘ভোরে উঠতে পারবি না, বিকেলে বন্ধু এসে যাবে, তাহলে কখন করবি এগুলো?’
—‘দূর। তোমার গান শুনে আমার আর গানে বসতেই ইচ্ছে করে না। গলাটা যেন লাট্টুর মতো ঘোরে। কি করে অমন ঘোরাও কে জানে।’
অপালা বলল—‘তোর গলা আস্তে আস্তে খুব ভালো হয়ে উঠছে। ভারী জোয়ারিদার গলা। ক্লাসিক্যাল যদি নাই হয়, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবি। বেসটা করে নে! সেদিন ‘আকাশভরা সূর্যতারা’টা গাইছিলি। খুব ভালো লাগছিল। রণো কখন ফিরল?’
—‘অনেকক্ষণ। টাইম দেখিনি। হাঁড়ির মতো মুখ করে ওপরে উঠে গেল।’
অপালার এবার রুটিগুলো তেতো লাগতে লাগল। ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল তখন এতো সমস্যা ছিল না। তা ছাড়া তাকে তো কেউ ছেলেমেয়ের উপর কোনও অধিকারই দেয়নি। ওরা ছিল দাদু-ঠাম্মার। এখন প্রত্যেককে নিয়ে সমস্যা। টিটুর ভীষণ ভালো গলা। কিন্তু তার ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা সে গান গাইবে না। সে তার বাবার অঙ্কের মাথা পেয়েছে। জানিয়ে দিয়েছে সে আই.এ.এস হবে। হঠাৎ যদি সে অপালার কোনও গানের মুখটা গেয়ে ওঠে, কি সোহমের কোনও গজল, কিংবা মিতুলের নজরুলের দু-চার কলি, অপালা সাগ্রহে বলে—‘গা। গা। পুরোটা গা না রে টিটু। এতো সুন্দর তুলেছিস!’
টিটু দুম করে চুপ করে যায়। জোরাজুরি করলে বলে—‘এর চেয়ে বেশি আমি তুলিনি। জানি না।’ গানের প্রতি এই যুগপৎ অনুরাগ-বিরাগের ভাবটা বোধহয় ওর মার প্রতিও। কে জানে!
আর রণো! রণজয় কার ছেলে, রণজয় কে অপালা জানে না। চেনে না। প্রথম প্রথম তাকে ‘বউমা’ ডাকত। তার ঠাম্মাই জোর করে মা বলতে শিখিয়েছিল। কিন্তু মা বলে ডাকতে যেন এখনও রণো কিরকম লজ্জা পায়। ঠাম্মাই ওকে মানুষ করেছেন। কাউকে কোনরকম শাসন করবার অধিকার দেননি। রণো এবার বি.কম পাস করল। ভালো ভাবে নয়। পড়াশোনা করে কখন যে ভালোভাবে পাশ করবে? কোনক্রমেই তাকে এম.কমে ভর্তি করানো গেল না। কখনও বলে এম.বি.এ করবে, কখনও বলে ব্যাঙ্কিং-এর পরীক্ষা দিচ্ছে, সে যে কী করছে একমাত্র সে-ই জানে। এখন আর তার দাদু-দিদাও জানেন না। হালে পানি না পেয়ে মাঝে মাঝে শিবনাথকে, অপালাকে বলেন—‘কি রে শিবু, কি গো বড় বউমা! তোমরা কি ছেলেটার দিকে একটু তাকাবে না! ও যে বয়ে যাচ্ছে! উচ্ছন্নে যাচ্ছে!’ শিবনাথ, অপালা কেউই কথাবার্তায় তেমন পটু নয়। বলতে পারে না। রণার উচ্ছন্নে যাবার মূলে তার দাদু-দিদা। মনোহর আর পারুল। এখন রণো আর তাঁদেরও গ্রাহ্য করে না। বাবা-মার মতামতের মূল্য তো তার কাছে নেই-ই।
অপালা মনে মনে বলে—‘হে ঈশ্বর, তুমি আমায় গান ছাড়া কিছু দাও নি। ভাষা দাওনি, ব্যক্তিত্ব দাওনি, কন্যা-বধূ-মা হতে হলে যা যা গুণ দরকার কিছুই বোধহয় আমায় দাওনি। রণো যদি গানের ভাষা বুঝতো তাহলে আমি ওকে মালকোষ শোনাতুম। ওকে, ওর সমগ্র চেতনাকে মাতৃক্রোড়ে নিয়ে ওপরে, অনেক ওপরে চলে যেতুম যেখান থেকে সমস্ত পৃথিবীকে খেলনার মতো দেখায়। মেঘলোক, তারামণ্ডল, আকাশের নীলিমা—এ সব অনেক কাছের অনেক আপন বলে মনে হয়। একবার ওই লোকে মেঘ আর তারাদের সঙ্গে বিচরণ করতে শিখে গেলে ও কখনওই ওরকম চেইন স্মোক করে ঠোঁক কালো করে ফেলত না, অন্তঃসারশূন্য বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মেরে যৌবনের দামী সময়টাকে নষ্ট করে ফেলত না। কিন্তু রণো যে মালকোষের ভাষা বুঝবে না! কিছু করতে পারি না, অথচ মনের ভেতরটা ছটফট করে!
এইরকম মানসিক অবস্থা লালন করতে করতেই অপালা তার ঘরে ঢুকল। টিটু, বনি বলল—‘মা, গুড নাইট।’ অপালা হাসল—‘এতোক্ষণ শুসনি কেন? আমার জন্যে? যা শুয়ে পড়।’
শিবনাথ ঘুমিয়ে পড়েছেন ও পাশ ফিরে। অপালা শুধু হাত ধুয়ে খেতে বসে গিয়েছিল, শাশুড়ি খাননি বলে। এখন বাথরুমে গিয়ে মুখে-চোখে জল দিল, পা ধুলো ভালো করে সাবান দিয়ে। জামাকাপড় বদলালো। তার মেয়েরা নাইট-গাউন পরে শোয়, তার ছোট জা-ও। কিন্তু অপালার এখনও ব্যাপারটা রপ্ত হয়নি। সে একটা রঙচটা, মাড়হীন শাড়ি রেখে দেয় রাত্রের জন্য। পরে শুতে খুব আরাম। গায়ে পাউডার ঢেলে, আলগা একটা ব্লাউজ। চুলে আঁট করে একটা বিনুনি। বাস। এবার বিছানায় শোবে, আর ঘুমোবে। আজকে রেওয়াজ বড় ভালো হয়েছে। সোহম যে প্রোগ্রাম ঠিক করেছে তাতে সে পরিপূর্ণ সায় দিয়েছে। তাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেও, চমৎকার বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তাদের গান এগোচ্ছে। আজকে পুরোটা টেপ করা হয়েছে। শুনে আসতে দেরি হয়ে গেল। শিবনাথ আজকে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কাল সকালে প্রথমেই বলতে হবে আজকের আনন্দ আর সাফল্যের কথা। আহা, দিদি, জামাইবাবু যদি থাকতেন! কেন যে ভেনেজুয়েলায় যেতে গেলেন!
অপালা শুতে শিবনাথ একটু শব্দ করে এ পাশ ফিরে শুলেন। অপালা বলল—‘তুমি ঘুমোওনি? জানো, আজকের গান খুব ভালো হয়েছে, খুব ভালো। যুগলবন্দী গাইতে গেলে একটা বোঝাপড়ার দরকার তো! সেটা আমার আর সোহমের মধ্যে কিছুতে হচ্ছিল না। দুজনের মেজাজ সম্পূর্ণ আলাদা তো…’
শিবনাথ হঠাৎ অপালাকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরলেন। এত জোরে যে তার ভেতরের হাড়গোড় সব গুঁড়ো হয়ে যাবে মনে হল। অপালা বলল—‘উঃ কি করছো! কি করছো!’
শিবনাথ অর্ধস্ফুট স্বরে বললেন ‘তুমি কি করছো? তুমি কী করছো? ভাবো আগে।’ তারপর আর অপালার কথা বলার অবকাশ হল না। সেই প্রথম যৌবনের রাতের ক্ষিপ্ত শিবনাথ অনেক দিন পর অপালার উপর প্রচণ্ড আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। রাত্তিরটাকে মনে হল—বিভীষিকার রাত। স্বামীকে মনে হল পিশাচ। বর্বর। অপালা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল—‘তুমি আমাকে এতো কষ্ট কেন দাও? কেন?’ তার গলা বুজে যাচ্ছে কান্নায়।
টিটু পাশের ঘর থেকে সেই চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভয়ে কাঁটা হয়ে গেল। সে জানত কিছু একটা ঘটবে আজ।
শিবনাথ কোনও কথা বললেন না। কোনও সান্ত্বনার কথা না, কোনও ভালোবাসার কথা না, যেমন আগে আগে বলতেন। এমনকি কোনও ব্যবহারিক কথাও না। শুধু নিবার্ক, পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। অপালা অনেকক্ষণ ধরে ফোঁপালো। ছোট মেয়ের মতো। সে যেন এখন বনির চেয়েও ছোট। মনে মনে বলতে লাগল উঃ মা। মাগো! এই মা তার গর্ভধারিণী জননী নয়। তিনি তাকে তার কোনওরকম বিপদের সময়ে রক্ষা করতে পারেননি। চেষ্টাই করেননি। এ মা যে কে! এ এক যুগ-যুগান্তের অসহায় অভ্যাসের চিৎকার। যখন কেউ থাকে না, শারীরিক, মানসিক, কিংবা আত্মিক কষ্টে মানুষ যখন আর কিছুতেই নিজেকে নিজে শান্ত করতে পারে না, তখন এই জননীকে ডাকে। ইনি আছেন কি নেই, থাকলে এঁর মূর্তি কেমন, কতটা সমাধান উনি করতে পারবেন সমস্যার সে কথা ভাবে না। খালি আর্তনাদ করে ওঠে মা! মাগো! কোনদিন কোনও বিশ্বজননী এ আর্তনাদে সাড়া দেননি, গুটিকয় সাধুসন্তের অভিজ্ঞতায় ছাড়া। তবু অসহায় মানুষ আর্তনাদ করে এই মায়েরই নাম ধরে—মা! মা! মা!