ইতিহাসবিত ধর্মনগর
“মহাশয়। ইহাই সেই ইতিহাসবিত ধর্মনগর। এখন দেখিলে বিশ্বাস হয় না যে, এই জনবিরল, বসতিবিরল, শ্বপদসঙ্কুল, আগাছায় পরিপূর্ণ স্থানটিতে সুরম্য হ্যরাজি ছিল, বিশাল দীর্ঘিকাসমূহ, রাজপথ কাননাদিতে সুসজ্জিত এই নগরীর পশ্চিম প্রান্তে পরিখাবেষ্টিত প্রাসাদে রাজা মঙ্গল রায় বাস করিতেন। আজ সবই স্বপ্ন মনে হয়। অনুমান, দুইশতবার্ষিক বৎসর পূর্বের সেই নগর কালের নিয়মেই বিলীন হইয়াছে। আপনার ঊর্ধ্বতন অষ্টম পুরুষ সদাশিব এই নগরীতেই বাস করিতেন।”
গন্ধর্ব হতাশ মুখে সামনের দিকে চেয়ে জায়গাটা দেখছিল। বনবাদাড়, ঢিবি, গর্ত ইত্যাদিতে ভরা এক বিটকেল জায়গা। এখানে ধর্মনগর ছিল বলে বিশ্বাস করা কঠিন। সে একটা হাই তুলল।
শাসন ভট্টাচার্য হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, “মহাশয় কি জ্বম্ভন করিলেন?”
গন্ধর্ব জ্বম্ভন মানে জানে না। ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আজ্ঞে না।”
“ভাল। মহাশয়ের বোধ করি আমার বিবরণ বিশ্বাস হইতেছে না।”
লজ্জা পেয়ে গন্ধর্ব বলে, “আজ্ঞে, ঠিক তা নয়। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করার অভ্যাস নেই। ধর্মনগরের ধ্বংসাবশেষের কিছু চিহ্ন থাকলে ভাল হত। আর আমি ঠিক আমার পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটির সন্ধানেও আসিনি।”
“তাহা আমি জানি। লোকের মুখে শুনিয়াই আপনি একটি কিংবদন্তির পিছনে ঘুরিতেছেন।”
গন্ধর্ব মাথা নেড়ে বলে, “ঠিক তাও নয়। আমি একটা মিথকে ভাঙতে চাইছি।”
শাসন ভট্টাচার্য উদাস মুখে বলল, “ভাঙিয়া কী লাভ? পুরাকালে যেমন, বর্তমানেও সেইরূপ মানুষ নানা আজগুবিতে বিশ্বাস করে। আপনি একটি মিথকে ভাঙিবেন তো আর একটির সৃষ্টি হইবে। আরও একটি ব্যাপার হইল, মিথকে ভাঙা অতীব কঠিন। আপনি বিজ্ঞান ও যুক্তি দিয়া যদিবা ভাঙিলেন, মানুষ আপনাকে পরিহার করিয়া মিথটাকেই আঁকড়াইয়া ধরিবে। আপনি বৃথা শ্ৰম করিতেছেন মহাশয়।”
গন্ধর্ব হতাশভাবে বলে, “হয়তো তাই শাসনবাবু, দেশজোড়া অন্ধ কুসংস্কার, বিদঘুঁটে কিংবদন্তি আর প্রচলিত ভুল ধারণার সঙ্গে লড়াই করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমাকে তবু লড়াইটা করতে হচ্ছে নিজের স্বার্থে।”
“মহাশয়, ভাঙিয়া বলুন।”
“আমার পরিবারে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে যে, জাদুকর গজানন এখনও বেঁচে আছেন। তিনি মাঝে-মাঝে এসে হাজির হন এবং নানা অলৌকিক কাণ্ডকারখানা করে হঠাৎ উধাও হয়ে যান।”
শাসন হেসে বলল, “মহাশয়, আপনি বিজ্ঞানী, মানুষের ভুল ধারণা ঘুচাইয়া দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য করিবেন। কিন্তু জোর করিয়া কিছুই করিয়া উঠিতে পারিবেন না। এই সকল কার্যের জন্য ধৈর্য ও সহানুভূতি প্রয়োজন।”
“সেটা আমার আছে বলেই আমি গজাননের মিথ ভাঙতে চাইছি। গজাননের গল্পটা কি আপনি জানেন?”
“জানি মহাশয়, অনেকেই জানে। আপনার ঊর্ধ্বতন অষ্টম পুরুষ সদাশিব সেই বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া যান।”
“কিন্তু সদাশিবের পুঁথি তো পাওয়া যায়নি!”
“না মহাশয়, পুঁথিটি আমিও কম অনুসন্ধান করি নাই। কিন্তু পুঁথি বিলুপ্ত হইলেও সদাশিবের বিবরণ মানুষের মুখে-মুখে ফিরিয়া থাকে। সুতরাং পুঁথির কাহিনী বাঁচিয়া আছে। রাজা মঙ্গল রায় যে খুব অত্যাচারী রাজা ছিলেন তাহা বলা যায় না। তাঁহার রাজ্য সুশাসিতই ছিল। তবে রাজা মঙ্গল ছিলেন মহা বলশালী মল্লবীর। তাঁহার সমতুল্য মল্লবীর কেহ ছিল না। কিন্তু রাজার মস্ত দোষ ছিল, মল্লযুদ্ধে পরাজিত প্রতিপক্ষকে তিনি মল্লভূমিতেই বধ করিতেন। বধ না করিলে তাঁহার শান্তি হইত না। এই নরহত্যার পৈশাচিক আনন্দ তাঁহাকে এমনই উত্তেজিত করিয়া তুলিত যে, তিনি কয়েকদিন আনন্দে আত্মহারা হইয়া উন্মত্তের মতো আচরণ করিতেন।”
“হ্যাঁ, রাজা মঙ্গল একটি সাইকোটিক কেস। সম্ভবত ম্যানিয়াক।”
“হাঁ মহাশয়, মনোবিকলন গ্রন্থাদিতে এইরকম প্রবণতাযুক্ত মানুষের বিস্তর উদাহরণ পাওয়া যায়। প্রথম-প্রথম মোটা পুরস্কারের লোভে দেশ-দেশান্তর হইতে মল্লবীরেরা রাজা মঙ্গলের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করিতে আসিত। কিন্তু ক্রমে-ক্রমে তাহাদের সংখ্যা কমিতে লাগিল। প্রথমত, রাজা মঙ্গল অতি দুর্ধর্ষ মল্লযোদ্ধা, তাহাকে পরাজিত করিয়া পুরস্কার লাভ করা অতীব কঠিন। দ্বিতীয়ত, পরাজিত হইলেই বধ হইবার ভয়। ফলে যত দিন যাইতে লাগিল তো মল্লযোদ্ধাদের আগমন হ্রাস পাইতে পাইতে বন্ধ হইয়া গেল। কিন্তু রাজা মঙ্গল তাহাতে ক্ষান্ত হইবেন কেন? মল্লযুদ্ধে প্রবল আকর্ষণ ও বধাভিলাষ তাঁহার কাণ্ডজ্ঞান লুপ্ত করিয়া দিল। তিনি অতঃপর যাহাকে তাহাকে মাঠঘাট হইতে ধরিয়া আনিতে সান্ত্রীদের পাঠাইতেন। সান্ত্রীগণ নিরীহ পথচারী বা কৃষক-শ্রমিক যাহাকে হউক ধরিয়া আনিত। তাহারা মল্লযুদ্ধের ম-ও জানিত না। কিন্তু রাজা মঙ্গল তাহাদের মল্লভূমিতে ধরিয়া পৈশাচিক আনন্দে বধ করিতে লাগিলেন।”
“বিস্মিত হয়ে গন্ধর্ব বলল, “রোজ?”
একটু হেসে মাথা নেড়ে শাসন বলে, “না মহাশয়, প্রত্যহ নহে। পক্ষকালে একবার। পঞ্চদশ দিবস অন্তর অন্তত একটি নরহত্যা না করিতে পারিলে রাজা মঙ্গল অতিশয় অশান্ত ও অস্থির হইয়া পড়িতেন। রাজাকে সন্তুষ্ট রাখিবার জন্য অমাত্য ও রাজকর্মচারীগণ এই পৈশাচিক কর্মের সহায়তা করিত। নহিলে তাহাদের নিজেদের গাত্রচর্ম অক্ষত থাকে না।”
গন্ধর্ব বলল, “বুঝেছি। বলুন।”
“এইরূপে প্রজাদের মধ্যে ক্রমশ অসন্তোষ দেখা দিতে লাগিল। অনেকে বিশেষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল। প্রাপ্তবয়স্ক যুবা পুরুষরা প্রকাশ্য স্থানে বিচরণ করিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করিতে লাগিল। অনেকে রাজ্য ছাড়িয়া অন্যত্র বাস উঠাইয়া লইয়া গেল। ঠিক এই সময়ে এক অতি দুর্যোগের নিশায় আপনার পূর্বপুরুষ সদাশিবের কুটিরের দ্বারে করাঘাত শুনা গেল। সদাশিব দরিদ্র ব্রাহ্মণ, চোর-ডাকাইতের ভয় তাহার বিশেষ ছিল না। দুর্যোগে কোনও নিরাশ্রয় আসিয়াছে মনে করিয়া তিনি কপাট খুলিয়া অপরিচিত এক আগন্তুককে দেখিতে পাইলেন। মনুষ্যটি শীর্ণকায়, গুম্ফশ্মশ্রু সমন্বিত, পরিধানে ছিন্নবস্ত্র, বয়ঃক্রম পঞ্চবিংশতি হইতে পারে। আগন্তুক নিজের পরিচয় যাহা প্রদান করিল তাহা হইল, সে একজন জাদুকর। নানা স্থানে ঘুরিয়া সে জাদু প্রদর্শন করিয়া উদরান্নের সংস্থান করিয়া থাকে। উপস্থিত দুর্যোগে বিপন্ন হইয়া আশ্রয়প্রার্থী। বলা বাহুল্য, অতিথি-বৎসল সদাশিব তাহাকে আশ্রয় দিলেন।”
“ইনিই কি জাদুকর গজানন?”
“আজ্ঞা হ্যাঁ মহাশয়, ইনিই গজানন। নিরাশ্রয় বহিরাগত গজানন সদাশিবের গৃহেই আশ্রয় পাইয়াছিল। নগরে যে একজন জাদুকর আসিয়াছে তাহা রটিতেও বিলম্ব হইল না।”
“গজানন কীরকম ম্যাজিক দেখাত তা আপনি জানেন?”
“লোকের মুখে মুখে পল্লবিত হইয়া যাহা রটিত হইয়াছে তাহা জানি। বোধ করি অবহিত আছেন যে, সাধারণ মানুষের কল্পনাশক্তি তিলকে তাল করিয়া থাকে।”
“জানি বইকী, খুব জানি।”
“গজাননের জাদুবিদ্যা সম্পর্কেও নানা কিংবদন্তি আছে, যাহা সর্বাংশে বিশ্বাসযোগ্য নহে। সে নাকি প্রজ্বলিত অগ্নিতে হস্ত প্রবিষ্ট করাইয়া থাকিতে পারিত, হস্ত দগ্ধ হইত না। জাদুদণ্ডের আঘাতে মুত্তিকায় প্রস্রবণ সৃষ্টি করিতে পারিত। সে নাকি মৃত্তিকার ঈষৎ উপর দিয়া অর্থাৎ শূন্যে পদক্ষেপ করিয়া বিচরণ করিতে পারিত।”
“এসব তো গাঁজাখুরি।”
“এই ব্যাপারে আমি আপনার সহিত একমত। তবে গজাননের খ্যাতি শুধু জাদুবিদ্যায় নহে। শুনা যায় রাজ্যে কোথাও কোনও ব্যক্তি বিপন্ন বা আর্ত হইয়া পড়িলে গজানন সেখানে হাজির হইয়া যাইত। এক ব্যক্তি নিশাকালে অরণ্যমধ্যে ব্যাঘ্ৰকবলিত হইয়া পড়িয়াছিল। গজানন তাহাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা করে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত আর-এক ব্যক্তিকে সে কেবল স্পর্শ করিয়া নিরাময় করিয়াছিল। জলমগ্ন বালক-বালিকাকে উদ্ধার করা, সর্পাঘাতে অপমৃত্যু রোধ, ক্ষত পরিচর্যা ইত্যাদিতেই তাহার খ্যাতি
অধিক হইয়াছিল। গজাননের খ্যাতি ক্রমে তুঙ্গে উঠিতেছিল। রাজা মঙ্গলও তাহার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। বলা বাহুল্য, এইরূপ ব্যক্তিগণ তাঁহাদের খ্যাতিহরণের কারক বলিয়া রাজা গজারা ইহাদের বেশি পছন্দ করেন না। রাজা মঙ্গল সুতরাং গজাননের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। উপরন্তু এক দিবস রাজা এক কাঠুরিয়াকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান করিয়া যখন তাহাকে বধ করিবার উদ্যোগ করিতেছেন তখন অকস্মাৎ গজানন সেই মল্লভূমিতে আবির্ভূত হইয়া অসহায় ব্যক্তিটিকে রাজরোষ হইতে রক্ষা করিবার নিমিত্ত কহিল, “মহারাজ, এই ব্যক্তি মল্লযুদ্ধের কিছু জানে না। ইহাকে পরাজিত করিয়া হস্ত কলঙ্কিত করিবেন কেন! আমার সহিত মল্লযুদ্ধ করুন। মহাশয়, বলাই বাহুল্য, রাজা মঙ্গলের অমিত শক্তির নিকট গজানন নিমেষে পরাজিত হইয়া ভূমিশয্যা গ্রহণ করিল। গজাননের উপর রাজার সঞ্চিত ক্রোধ তো ছিলই, সুতরাং রাজা তাহাকে পাড়িয়া ফেলিয়া উপর্যুপরি আঘাত করিলেন। তাহাতেও মরিল না দেখিয়া শাসরোধ করিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গজানন মরিল না। রাজা যতই চেষ্টা করেন, যত ভয়ঙ্কর আঘাতই করেন, দেখা যায় গজানন দিব্যি বাঁচিয়া আছে এবং মুচকি-মুচকি হাস্য করিতেছে। তখন ক্রোধাবিষ্ট রাজা মঙ্গল সান্ত্রীদের একজনের কোষ হইতে তরবারি টানিয়া প্রথমে গজাননের মুণ্ডচ্ছেদ করিলেন। অতঃপর হস্তপদাদিও কর্তিত করিলেন। মল্লভূমি গজাননের শোণিতে রঙ্গিল হইয়া গেল।”
“আপনি কি এই গল্প বিশ্বাস করেন?”
“আমি আপনাকে কাহিনীটি শুনাইতেছি মাত্র, বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনার উপর।”
“তারপর কী হল?”
“সে এক আশ্চর্য কাহিনী। দেখা গেল, গজাননের ছিন্ন মুণ্ডের চক্ষুদ্বয় পিটপিট করিতেছে, কর্তিত হস্তের অঙ্গুলিগুলি দিব্য নড়িতেছে, ছিন্ন পদযুগলও কম্পিত হইতেছে। অকস্মাৎ মুণ্ডটি শুন্যে উঠিয়া হঠাৎ গোলার মতো রাজা মঙ্গলের দিকে ধাবিত হইল। ২২
“ওঃ, এ যে আষাঢ়ে গল্প!”
“হাঁ মহাশয়, আর শুনিবেন কি?”
“হ্যাঁ, শুনব।”
“আষাঢ়ে গল্প হইলেও চিত্তাকর্ষক, কী বলেন?”
“আমি গল্পটা শুনছি গজানন লোকটাকে বুঝবার জন্য।”
“তাহা অনুমান করিতে পারি। নহিলে এই খর দ্বিপ্রহরে বৃক্ষের ছায়ায় উপবেশন করিয়া রূপকথা শুনিবার মতো যথেষ্ট সময় যে আপনার হাতে নাই, তাহা না বুঝিবার মতো নির্বোধ আমি নহি।”
“তারপর কী হল বলুন।”
“কহিতেছি মহাশয়। গজাননের মুণ্ড নক্ষত্ৰবেগে ধাবিত হইয়া গিয়া রাজা মঙ্গলের উপর পড়িল। মল্লবীর মঙ্গল এতই বিস্ময়াভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন যে, ঘটনার আকস্মিকতায় নড়িতে পারেন নাই। প্রথম আঘাতেই তিনি ভূপাতিত হইলেন। তাহার পর মুণ্ডটি তাহাকে উপর্যুপরি আঘাত করিতে লাগিল। সেই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত রাজা ক্রমে অবসন্ন ইয়া পড়িলেন। তারপর ধীরে ধীরে চক্ষু বুজিলেন। তাঁহার প্রাণবায়ু নির্গত হইয়া গেল। অপরদিকে গজাননের হস্তপদাদিও বসিয়া নাই, বাম ও দক্ষিণ হস্ত ও দুই পদ শূন্যে ধাবিত হইয়া রাজার অমাত্য ও বশীভূত কর্মচারীদের ঘুষা ও পদাঘাত করিতে লাগিল। পিতা-মাতার নাম ধরিয়া চিৎকার করিতে করিতে তাহারা পলায়নপর হইল। কিন্তু বেশিরভাগই প্রহারে জর্জরিত হইয়া সংজ্ঞা হারাইয়া লুটাইয়া পড়িল। রাজার প্রিয় জল্লাদ নফরচন্দ্রকে গজাননের দক্ষিণ হস্ত স্বাসরোধ করিয়া হত্যা করিল। তাহার পর যাহা হইল তাহাও অপ্রত্যাশিত।”
“হাত-পা-মুণ্ডু সব জুড়ে গেল তো?”
“না মহাশয়। সেইখানেই বিস্ময়। গজাননের মুণ্ড ও হস্তপদাদি যে-যাহার নিজের মতো বিভিন্ন দিকে প্রস্থান করিতে লাগিল। কোনওটা বায়ু কোণে, কোনওটি নৈঋতে, কোনওটি পূর্বে, কোনওটি অগ্নি কোণে। সবশেষে ধড়টি ব্যোমমার্গে ধাবিত হইয়া অদৃশ্য হয়।”
“আসল ঘটনা বোধ হয়, গজানন রাজা মঙ্গলের হাতে মারা পড়ে। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে সে কোনওভাবে মঙ্গলকেও হত্যা করেছিল। সেটাই লোকের মুখে অতিরঞ্জিত হয়ে–”
“হইতে পারে। তবে আপনার পূর্বপূরুষ সদাশিব এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। অতিরঞ্জন যদি হইয়া থাকে তবে তাহাতে তাঁহারও অবদান আছে।”
“অতিরঞ্জন হতে পারে, আবার রূপকও হতে পারে।”
“সকলই সম্ভব। কিন্তু গজাননকে লইয়া আপনার কিছু সমস্যা দেখা দিয়াছে বলিয়া মনে হয়।”
“হ্যাঁ। সমস্যা গজাননের পুনরাবির্ভাব নিয়ে। অনেকেই দাবি করছে যে, জাদুকর গজানন বেঁচেবর্তে আছে। শুধু তাই নয়, গজানন তাদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করে থাকে।”
“মহাশয়, এই লোকশ্রুতি আমার কানেও আসিয়াছে।”
“আমি এই গাঁজাখুরি গল্পটার শেষ দেখতে চাই। আমার ছেলে গজাননের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়।”
শাসন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “পৃথিবী বিচিত্র স্থান।”
“আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি নিঃসশয় নন।”
“না মহাশয়, কোনও ব্যাপারে আমি চুড়ান্ত মনোভাব পোষণ করি। তাহাতে আখেরে ঠকিতে হয়।”
“গজাননের পক্ষে বেঁচে থাকা কি সম্ভব?”
“বাঁচিয়া থাকা কতরকমের আছে, আপনি কি জানেন?”