খোঁজ চলছে
গল্পটার নাম খোঁজ চলছে।হ্যাঁ সবাই পড়ুন।আমি এক বিশেষ মানুষ কে খুঁজছি।আপনারা খুঁজে দিতে পারেন।আমি আমার শৈশবের প্রেমকে খুঁজছি।আমি আমার স্বামীর অনুমতিতে খুঁজছি বিভিন্ন ভাবে।যে মানুষটা আমাকে ভরা নদীতে বাঁচিয়ে ছিল,যার থেকে “এক পশলা অনুভূতির ছোঁয়া “পেয়ে ছিলাম।সব কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। বৃদ্ধা বয়সে আমার কোন
আক্ষেপ নেই।তবু ও মরবার আগে জেনে যেতে চাই ,সে কেমন আছে।আমি ও যে পরপারের ডাক শুনতে পাচ্ছি।যতদিন শরীর রক্ত টানতে পারবে,ততদিন বাঁচব।ঠিকই ধরেছেন আমি রক্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত।ঐ ফাঁসির আগে শেষ ইচ্ছা যেমন জানতে চাওয়া হয়,ঠিক তেমনি আমার জীবনে শৈশবের ভালোবাসার খোঁজ।আবার ভাবি তাঁকে নতুন করে পুনরায় দুঃখ দেব।সে হয়তো আমার মতো স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
প্রিয়
ছোটবেলার বন্ধু রাজ,
কি রে কেমন আছিস? তোকে যখন শেষ দেখেছিলাম তোর বয়স একুশ আর আমি অষ্টাদশি হয়ত।
তখন তো ফোন ছিল না।তাই তোর খবর আজ ও পাইনি রে।তোদের বাড়িটা নেই ,খোঁজ নিয়ে জেনেছি,ওটা বেচে তোরা কোথায় চলে গেছিস।এখনতো বয়স হয়েছে আমার ,,মেয়ের ও বিয়ে হয়ে গেছে।একাকিত্ব জীবনে তোর কথা মনে পড়ছে।আমার বর বললেন ফেসবুকে লেখো তোমার চিঠি।রাজ পৃথিবীতে থাকলে সাড়া দেবে।
শোন রাজ ,আমি আমাদের ছোটবেলাটা তুলে ধরলাম।
সেদিন রাজ বললো, সোমা তোর বয়স কতো রে?
আমি বললাম, ঊনিশ
-তোর?
সামনের মাসে একুশ…
আমি বললাম, রাজ তোর মনে পড়ে সরস্বতী পূজোর আগের দিন আমরা নৌকা করে স্কুলে যাচ্ছিলাম… আমি নবম শ্রেণীতে আর তুই একাদশ শ্রেণীর ছাত্র, হঠাৎ মাঝগঙ্গায় নৌকা উল্টে যায়…
কি রে, বলনা, মনে পড়ে ???
আমি যখন অনুভব করলাম, একজনের সঙ্গে জড়িয়ে সাঁতার কেটে নদীর পাড়ে যাচ্ছি। তারপর তুই আমায় উবুড় করে চাপ দিয়ে জল বার করে দিয়ে ছিলিস 😂
বাড়ি ফেরার সময় আমি লজ্জায় তোর দিকে তাকাতে পারিনি সেদিন। সারারাত কি যে হল মনের মধ্যে ,পরদিন সরস্বতী পুজোর দিনে স্কুলে না গিয়ে আমরা আমবাগান, জামবাগান কত জায়গায় না ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। ওই “এক পশলা অনুভূতির ছোঁয়া “আমার ও তোর শরীরে শিহরন জাগায়।তারপর থেকেই তোর আমার প্রেম শুরু।
চার বছর আগের স্মরনীয় ঘটনা, যা আমাদের কে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল। আমার বি-এস -সি শেষ হতে চলল। তোর ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করতে তখনো দুবছর।
– ” সোমা, তোর কি সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে? *পারবি না আর পাঁচটা বছর অপেক্ষা করতে?”
“আমাকে কাল দেখতে আসবে, আটকানো যাবেনা।”
পরদিন বিকালে কিছুলোক সোমাকে *দেখতে এলেন, তাঁরা সোমাকে পছন্দও করে গেলেন।
বাড়িতে কাউকে বলতে পারলাম না, ‘আমি ভালোবাসি, তোমরা একটু অপেক্ষা করো’।
বাড়িতে দাদুর কথায় শেষ কথা। বংশের প্রথম মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে সম্পন্ন হল।
আমি লাল বেনারসী শাড়ী পরে নতুন বউ সেজেছিলাম। রাজ সজল চোখে বিদায় জানিয়েছিল।
কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেছিল, তবু বললাম, ‘রাজ আমি একটু পরে চলে যাবো রে…’
রাজ বলে গাছে ফুল ,ঘাসের ডগায় শিশির
পাখির পাখায় পালক থাকবে, শুধু আমার সোমা থাকবে না।
জানিস আজ থেকে রাজ একা, ভীষণ একা।
আজ ও সোমার কথাগুলি কানে বাজে।#পুরানো সেই দিনের কথা সেকি ভোলা যায়।
ঠিক লিখলাম তো রাজবাবু। এখন তো বয়স হয়েছে।চালশে ধরেছে।আমার ফোন নম্বর ৯২৩১৮৩৪৫৭৮ প্রকাশ্যে দিলাম।আপনি নিশ্চয় উওর দেবেন।
হাহাহা আমাদের ছিল বাছুরের ভালোবাসা।
আর কি?বন্ধু বিদায়।
ইতি
তোর অতীত সখি সোমা
হ্যাঁ এক সপ্তাহ বাদে ফেসবুকে নানান মানুষের খোঁজ পাচ্ছি।আমার শরীরে নতুন রক্ত যাচ্ছে।পাশেই টেলিফোন বেজে ওঠে,মেয়েলী কন্ঠস্বর।আচ্ছা সোমা দেবীর সাথে একটু কথা বলতে পারি।এক হাতে রক্ত যাচ্ছে,অপর হাতে টেলিফোন।
হ্যাঁ সোমা বলছি।আপনার রাজ একবছর আগে আপনাকে খুব খুঁজেছিল।সোমা বলে ও কি বাড়িতে আছে?না দিদি আট মাস আগে রক্ত ক্যান্সারে মারা গেছে।যাবার আগে আপনাকে খুব দেখতে চেয়েছিল।আমি বলি বোন আমিও এক রোগে মৃত্যু শয্যায়।তবে কথা দিচ্ছি বোন ওখানে গিয়ে রাজকে খুঁজে নেব।
ঐ বৈতরণী পার হচ্ছি রাজ।ডুবে যাচ্ছি রাজ বাঁচাও,বাঁচাও।