Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কোরাপুটের জঙ্গলের পেত্নি -3

ভয়ে ছুটতে শুরু করলাম ঝোপ ঝাড় পেড়িয়ে । কিন্তু কোথায় ছুটছি তা ও জানিনা ? আমি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছি । সেই তাল গাছের আগে পিছে ঘুরছি । তখনই দেখলাম বুড়ির লম্বা হাত ওপর থেকে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । ঠিক সেই সময়ে খুব জোর হাওয়া বইতে লাগল । আর সেই ফিসফিসানি । – “ভঁয় পাঁসনে খোঁকা । আঁমরা তোঁকে বেঁড় দিঁয়ে থাঁকছি । তুঁই এঁকই জাঁয়গাতে দাঁড়া ” । আবার কানে এল – ভঁয় নেঁই । নেঁ, ছিঁড়ে ফেঁল কঁমলা লেঁবুটা । আরে! একটু আগেও তো লেবু গাছ টা এখানে ছিল না ! এখানে তো তাল গাছ টা ছিল ! আবার কানে এল। – নে, ছিঁড়ে ফেঁল কঁমলা লেঁবু টা । ছিঁড়তে পাঁরলেই ওঁরা আঁর তোঁর ক্ষঁতি কঁরতে পাঁরবে নাঁ । ধঁর লেঁবু টাঁ । আমার শরীর টা দুলে উঠল । আরে ঐ তো কমলা লেবু গাছ টা । কোন রকমে একটা কমলা লেবু ছিঁড়ে ফেললাম গাছ থেকেই । তার পর আর কিছুই মনে নেই । কমল সোম এর হঠাৎই খেয়াল হল বাবলু তো ধারে কাছে নেই । স্ত্রী কে বললেন- বাবলু কোথায় ? দেখছি না তো । স্ত্রী বললেন- কি জানি । প্লেট টা নিয়ে তো ওদিকে গেল । কমল সোম- একটু খেয়াল রাখবে তো । একবার জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেলে আর খুঁজে পাওয়া কষ্ট কর ।

এবার হরেন কে বলেন- বাবলু কোথায় গেল দেখেছিস ? হরেন- না বাবু । – যা , ভাল করে খোঁজ । দেখ, কোথায় গেল । হরেনের পাত্তা নেই । প্রায় ঘন্টা খানেক হল খুঁজতে গেছে বাবলু কে । বাধ্য হয়েই কমল সোম তাঁর ফরেস্ট রেজিস্টার বন্ধু পুলক ঘোষ কে ফোন করলেন । ফোন এ বললেন- আরে ভাই, চাঁদের গাঁয়ে এসেছি সবাই কে নিয়ে । কিন্তু নাতি কে খুঁজে পাচ্ছি না । একবার তোর লোকজন নিয়ে আসবি? ঠিক আছে চলে আয় । অপেক্ষায় রইলাম । হরেন ভয় পেয়ে গেল । প্রায় জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে দেখেছে । কোথাও নেই । বাবু কে কি বলবে ? বাগান বাড়ি র দিকে ছুটল । কিন্তু একটু আগেই যেখানে বাগান বাড়ি ছিল সেটার চিন্হ নেই । ভয়ে কাঁপুনি ধরছে হরেনের । গেল কোথায় বাবলু ? বাধ্য হয়ে ফিরে এল । আধ ঘণ্টার মধ্যেই রেঞ্জার সাহেব পুলক ঘোষ তার ফুল টিম নিয়ে এসে হাজির । খুঁজে বার করেছেন তাঁর বন্ধুর পুরো পরিবার কে । অলক বাবু তাঁর বন্ধুকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছেন ।- যাক্। এসেছিস তাহলে ।

পুলক বাবু বন্ধুকে বললেন- ওকে পেতে কতক্ষণ লাগবে ,তাতো বলা যায় না । তুই বরং বৌদি আর বাড়ির সবাই কে বাড়িতে পাঠিয়ে দে । কমল বাবু বললেন- দাঁড়া ,হরেন টা কে খুঁজতে পাঠালাম । ও ফিরলে ই পাঠাবো । হরেন সঙ্গে থাকা ভাল । ঐ তো হরেন এসে গেছে । এবার হরেনের দিকে ফিরে বললেন- কি রে কোথাও দেখতে পেলি ? ঠিক আছে তুই ওদের নিয়ে বাড়ি চলে যা । এবার স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন- তোমরা বাড়ি চলে যাও। পুলক চলে এসেছে , আর চিন্তার কিছুই নেই। আস্তে আস্তে সবাই মিলে একটু একটু করে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ল । সেই জমিদারের সাজান বাড়ি টা কে এখন ভূতুরে বাড়ি বলেই মনে হচ্ছে । ভাঙা চোরা ধংসাবশেষ বলেই মনে হচ্ছে । আকাশের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝেই মেঘ চেরা আলো এসে পড়েছে । আমরা অনেক টা ভেতরে ঢুকে গেছি তবুও বাবলুর দেখা নেই । কারো মুখে কোন কথা নেই । হঠাৎই হরেন ছুটে এল । ইশারায় গাছের তলায় নিয়ে এল । কমলা লেবু গাছের তলে বাবলু পড়ে আছে ।

পুলক বাবু বললেন- তোর কি হয়েছে রে বাবলু? কিন্তু বাবলুর সার নেই । হরেন অনেক ঝাকাঝাকি করে টেনে তুললো বাবলু কে । জ্ঞান ফিরতে বাবলু বলল- দাদু, আমি বাড়ি যাব । পুলক বাবু বললেন- তা তো যাবি ই । হরেন বাবলুর চোখে মুখে জল ছেটাতে বাবলু স্বাভাবিক হল । অনেক ক্ষণ পর বাবলু স্বাভাবিক হতে এবার টাটা সুমোয় বসানো হল ওকে । গাড়ি ছাড়ার পর অলক সোম বললেন- দ্যাখ তো, তোর জন্য ছুটে এসেছেন এই দাদু । দাদুর কথায় আমি লজ্জা পেলাম । এবার কমল দাদু বললেন- দ্যাখ তো, কেমন ভয় ধরিয়ে দিয়ে ছিলি আমাদের ? কি রে, ভয় পেয়েছিলি? লজ্জা পেয়ে বললাম- “আমি তো ,ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি ,রাম লক্ষণ বুকে আছে করবি আমার কি” বলেছি । পুলক দাদু বললেন- তার পর কি হল? আমি বললাম- তারপর প্রজা ভূতেরা আমাকে একটা কমলা লেবু ছিঁড়তে বলে । কমলা লেবু ছিঁড়লে নাকি জমিদার এর ভূত পেতনি রা আমার কিছুই করতে পারবে না । এই তো সেই গাছ টা । দাদু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তার আগেই পুলক দাদু বললেন- তুই ছিঁড়লি ? বললাম- হ্যাঁ। কিন্তু, তারপর আর কিছুই মনে নেই। তখনই অজ্ঞান হয়ে গেছি । পুলক দাদু বললেন- গাঁয়ের একমাত্র জমিদার গিন্নি ছাড়া বাকি সবাই কলেরায় মারা গেছে । জমিদার খুব অত্যাচারি ছিলেন । জমিদার গিন্নি বাপের বাড়ির থেকে ফিরে দেখেন চাঁদের গাঁয়ের কেউ বেঁচে নেই । তখনই ঐ তাল পাতার কুটিরের ওপর থেকে তিনি ঝাঁপ দেন । বাবলু কে তখন কার দুঃখী প্রজা রা ই হয়তো ঐ কমলা লেবু গাছ টা এগিয়ে দিয়েছিল কারণ ওটাই তন্ত্র বলে সিদ্ধ । দাদু বললেন – তারমানে ট্রেন এর ঐ মহিলা ই সেই গিন্নি মা ? । পুলক দাদু বললেন- হ্যাঁ। প্রতি বার ই এমন হয় । তবে বডি জঙ্গলের ভেতরে ও পাওয়া যায় নি । দাদু বললেন- আমরাও তো বাবলু কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না । হরেন ই তো দেখাল বাবলু কে । আমি বললাম- হরেন কাকু কোথায় ? দাদু বললেন- এখানেই তো ছিল ,গেল কোথায় ? ঠিকই তো ,গেল কোথায় ? ওকে তো আর দেখলাম না ! ফেলে এলাম নাকি হরেন কে ? বাড়ির কাছা কাছি যেতে গাড়ির হর্ন শুনে হরেন বেড়িয়ে এল ঘর থেকে । দাদু বললেন- তুই কখন এলি ? ওদের পরে কি করে বাড়ি পৌঁছে গেলি ? কিসে করে এলি ? হরেন- কেন? বৌদিদের সঙ্গেই এসেছি । দাদু বললেন- তবে বাবলু কে খুঁজে বার করল কে? তুই তো দেখালি বাবলু কে । হরেন কাকু- আমি না ,ওসব ঐ প্রজা ভূতের কাজ। ওরাই আমার রূপ ধরে বাবলু কে বাঁচিয়েছে । পুলক দাদু বললেন- কি হল বাবলু বাবু ,তোমার জঙ্গল দেখা হল ? না, হল না তো ,ঠিক আছে তোমাকে একদিন দিমসা নৃত্য দেখাবো । মোরগ লড়াই ও দেখানোর ব্যবস্থা করবো । কি বল অলক? দাদু বললেন- আরে, সে তো দারুণ ! এই অনারে এক কাপ চা হয়ে যাক । নামো গাড়ি থেকে । পুলক দাদু বললেন- আরে শুধু চা দিয়েই হবে না । একদিন ভাল করে ভুড়ি ভোজ করাতে হবে । দাদু বললেন- সে আর বলতে? এখানে তোমার সব সময়েই অবারিত দ্বার । ঘরে ঢুকতেই রনি, বনি, খুকু পিসি চেঁচিয়ে উঠল । – দাদা, এসেছে । দাদা এসেছে । রনি, বনির পেছনে মাসী দিদা আর খুকু পিসি । মাসী দিদা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । আমি বললাম- দিদা, আমি তোমার কথা না শুনে খুব অন্যায় করেছি । ঐ জঙ্গলে যাওয়ার বায়না করা আমার উচিত হয় নি ।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *