Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কোরাপুটের জঙ্গলের পেত্নি -2

আমি দাদু কে বললাম । – হরেন কাকু বলল যে ,আমাদের সঙ্গে যে মহিলা এসেছিল তারা নাকি জমিদার । ওখানে জঙ্গল ও আছে । ঐ বুড়ি নাকি আমাদের যেতে বলেছে । দাদু বললেন- তাই নাকি? ঠিক আছে তাহলে ওখানেই যাওয়া যাবে। দিদার আপত্তি সত্ত্বেও আমরা চাঁদের গাঁয়ে রওনা দিলাম । দাদুর টাটা সুমো তে চড়লাম । আর উঠল দু’খানা টিফিন ক্যারিয়ার । দশ লিটার এর জলের পাত্র । দিদা আমাদের ছেড়ে দিতে ভয় পাচ্ছিল বলে আমাদের সঙ্গেই এলেন ।

চলেছি তো চলেছি । চাঁদের গাঁ আর আসে না । হরেন কাকু বলল- তাজ্জব কি বাত । মহিলার সাথে যখন এসেছিলাম তখন তো এত সময় লাগেনি ? যাই হোক, আমরা যখন পৌঁছলাম তখন জমিদার বাড়ির দরজায় কেউ নেই। দাদু বললেন- কৈ রে হরেন , কোথায় তোর পাইক, পেয়াদা আর দরোয়ান ? এ কেমন জমিদার? তখনই একটা লোক ছুটে এলো । বলল- আপনারা আসুন ভেতরে । ভেতর বাড়িতে কর্তা মা আছেন । লোক টার চোখ দুটো গর্তে ঢুকে আছে । গালের দিকে তাকানো যায় না । মনে হয় গালের মাংস খুবলে নিয়েছে কেউ ।

ভেতর বাড়ি যাবার আগে বাগান টা দেখলাম । হরেন কাকু ঠিকই বলেছে । সব গাছেই ফল ঝুলছে । কর্তামা যে ঘরে বসে আছেন সে ঘরটা সাজানো । কিন্তু মনে হচ্ছে এখানে কতদিন লোকের পা পড়েনি । ধুলো জমে আছে চারদিকে । আর সেই কর্তামা ঘোমটা টেনে মুখ ঢেকে বসে আছেন । সেই লোকটি বলল- আপনারা জল টল খান ।তারপর দুপুরে ভাত খাবেন । এখানেই রান্না হবে । দাদু বললেন- না না ,এখানে জলটল দরকার নেই । আমরা সঙ্গেই এনেছি সব ।

মাসী দিদা বললেন- দুপুরের খাওয়া আমরা ঘরে গিয়েই খাব । এবার সেই বুড়ি উঠে দাঁড়াল । মনে হল খটাখট করে হাড়ে হাড় জুড়ে গেল । বুড়ি বলল- এখানে এসে না খেয়ে যাবেন ? তাই কি হয় ? মাসী দিদা বললেন- ওরা পিকনিক করতে এসেছে । বুড়ি বলল- তা করুক । চলুন আপনাদের বাগান টা দেখিয়ে দেই । তাল গাছের ওপর তাল পাতার কুটির আছে । ওপরে উঠে দেখবেন কি হাওয়া ! সেই মহিলা হাওয়ার বেগেই ছুটছে । হঠাৎই কেমন যেন গুমোট হয়ে গেল । কিছুক্ষণ আগেও পাখি ডাকছিল। এখন সব নিস্তব্ধ । মহিলা দাঁড়িয়ে পড়ল । কেমন যেন ভয় করছে ওকে দেখে । আমাদের বললেন ,- দেখুন তাল গাছে তাল পাতার কুটির । আমার স্বামী করিয়েছিলেন । একটা কথা মনে রাখবেন । নিচে নামার সময় ভুলেও পিছু ফিরবেন না । আমি এবার আমি যাই ।

বুড়ি যাই বললেও তাকে আমরা যেতে দেখলাম না । আবার ও পাখি ডাকা শুরু হল । হরেন কাকুর হাতে সুজনি আর টিফিন ক্যারিয়ার । সুজনি পেতে দিল খুকো পিসি । এবার প্লেট এ খাবার বাড়তে লাগল। হরেন কাকু গাড়ির থেকেই জল নিয়ে এল । আমি, রনি, বনি দারুণ খুশি খাবার দেখে । কারণ প্লেট এ লুচি, ফুল কপির তরকারি সঙ্গে আবার মিষ্টি রয়েছে । মাসী দিদা বনি কে খাইয়ে দিচ্ছিলেন । দাদু বললেন- খাওয়ার পর বাগান টা দেখতে হবে । কি বলিস বাবলু বাবু ? আমি মাথা নাড়লাম । দাদু দিদা কে বললেন- ওদের ঘরের মেঝেটা কি ঠান্ডা দেখেছ? আমার দৃষ্টি তখন অন্য দিকে । কমলা লেবু গাছ তলে ঐ মহিলা হাত ছানি দিয়ে ডাকছিল আমায় । যাব কি যাব না! ভাবতে ভাবতেই নেমে গেলাম কমলা তলায় । ছায়ায় ছায়ায় বুড়ি কে কেমন মায়াবিনি মনে হল । লেবু গুলো ঝুলছে। তাতে হাত দিতেই বুড়ি বলে ওঠে- খবরদার খোকা হাত দিসনে লেবু তে ।

ওর গলার স্বরে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথাও কি ভূমিকম্প হচ্ছে ?কি সুন্দর গাছে ঝুলছে আঙ্গুর, আপেল। যা কোন দিন দেখিনি । হঠাৎই বুড়ি হাওয়া । তাহলে হাত দিতে কি দোষ ! ছিঁড়বে নাকি একটা কমলা ? যেমন ই হাত গেছে কমলায়। তখনই সেই বুড়ির হার কাঁপানো হাসি কানে এল । চমকে চার দিকে তাকালাম আমি । কিন্তু কোথায় গেল বুড়ি ? সত্যিই বুড়ি কি ভূত ? মনে মনে নারায়ণ কে স্মরণ করলাম । তখনই বাগান টা পাল্টে গেল। বাগানে নানা রকম পাখি উড়ছে । গান গাইছে পাখি। একটা হলুদ পাখি বসল কমলা গাছের ওপর। বাবলু যেই ধরতে গেল ফুরুৎ করে উড়ে গেল পাখিটা । আর তখনই অনেক গুলো শব্দ ফিসফিস করে কানে এল। ভয় পেয়ে গেলাম আমি । আবার ফিস ফিসানি আওয়াজ কানে এল ।- খোঁকা পাঁলা । খোঁকা পাঁলা তাঁড়াতাড়ি । এঁখানে থাঁকিস না । বাবলু ভাবলো- কোথায় পালাবো ? তারপর ছুটতে লাগল এদিক ওদিক । ভয়ে নেয়ে একসা জবজবে ঘামে। বার বার সেই ফিসফিসানি আওয়াজ । – আঁরে আঁমাদের ভঁয় কঁরিস না । আঁমরা তোঁদের কিঁছু ই কঁরবো নাঁ । ঐঁ জঁমিদার আর তাঁর বৌঁ টা মেঁরে ফেঁলবে তোঁকে । ওঁ রা রোঁজ রঁক্ত খাঁয় । ভয়ে বাবলু বলল- আমি তো রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। খুঁজে পাচ্ছি না । দিদা, দাদু কে খুঁজে পাচ্ছি না । ভূতের স্বর- ভঁয় নেই । তোকে আমরা বাঁচাবো । বাবলু বলল- তোমরা কে গো ? – আঁমরা এঁখান কাঁর প্রঁজা । রাঁজা আঁমাদের ভাঁলো ভাঁবলেও ঐ শঁয়তান জঁমিদার আঁমাদের খুঁব অঁত্যাচার কঁরত । পাঁলা খোঁকা । শোঁন এঁকটা কঁথা বঁলি । যঁদি কঁখনও বিঁপদে পঁড়িস, তঁবে মঁনে রাঁখিস। ঐ কঁমলা গাঁছের এঁকটা কঁমলা ছিঁড়তে পাঁরলেই ওঁরা আঁর তোঁর কোঁন ক্ষঁতি কঁরতে পাঁরবে নাঁ । আবার নিঃশব্দ হয়ে গেল চার পাশ । পাখির গান বন্ধ হয়ে গেল । একটা টুনটুন শব্দ হতেই দেখলাম ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামলেন একজন । তবে বুঝি এই সেই জমিদার । জঙ্গলে যেন ঝড় উঠল । হুঙ্কার করে উঠল সে ।

– বৌঁ, কঁচি মাংসের গঁন্ধ পাঁই ? কোঁথায় পেঁলে ? তখুনি বুড়ি কে দেখলাম তাল পাতার পাতার কুটিরের ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে । আর সিঁড়ি দিয়েই উঠছে জমিদার । ঝড়টা পাক খাচ্ছে ঐ তাল গাছ কে বেড় দিয়েই । তখনই কানে মুখ দিয়ে কে যেন বলল- কিঁ রেঁ ওঁপরে আঁসবি ? এগোতে থাকে বাবলু । এগোতে এগোতে প্রায় উঠেই পড়ে তাল পাতার কুটিরের সিঁড়িতে । কিছুটা গিয়েই কানে আসে ঐ ফিসফিসানি- কিঁ রেঁ কোঁথায় যাচ্ছিস? যাঁস নেঁ পাঁলা । তখুনি হুঙ্কার? না বজ্রাঘাত? কেঁপে ওঠে বাবলু । এই বুঝি জমিদার! তখুনি জমিদার গিন্নি কে দেখতে পেল ,সেই তাল পাতার কুটিরের ওপরে দাঁড়ানো । আর সিঁড়ি দিয়ে উঠছে জমিদার । ঝড় টা ঘুরপাক খাচ্ছে ঐ তাল গাছ বেড় দিয়েই । তখনই কানে মুখ দিয়ে কে যেন বলল। – কিঁ রেঁ, ওঁপরে আঁসবি? বাবলু এগোতে থাকে সেই দিকে । এগোতে এগোতে উঠে পড়ল তাল গাছের ওপরের তাল পাতার কুটিরের সেই সিঁড়িতে। কিছুটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে, তখনই কানে এলো সেই ফিসফিসানি- কিঁ রেঁ! কোঁথায় যাঁচ্ছিস ? যাঁস নেঁ । পাঁলা ।

আবার সেই জমিদারের হুঙ্কার ।- ওঁ কেঁ ভঁয় দেঁখাচ্ছিস ? চাঁবকে এঁক এঁকটাকে লাঁল কঁরে দেঁব। বুঁঝলি? মনে পড়ে গেল প্রজাদের কথা ।” ওরা রোজ রক্ত খায় ” । সিঁড়ি ধরে নামতে থাকল বাবলু । ফিরে দেখে জমিদার এর পাল্কি, বেহারা কেউ নেই । বাবলু ভাবে, “আমার কি শরীর খারাপ লাগছে ? না ,আমি কিছুতেই ভয় পাব না । আমি তো মায়ের বাহাদুর ব্যাটা । ভুত কে ভয় পাই না । ভূত আমার পুত, পেতনি আমার ঝি, রাম লক্ষণ বুকে আছে করবি আমার কি” ? তখনই একটা আলোর ঝলকানি দেখলাম । বাগানে একটু আগেও পাখি ডাকছিল না । এখন পাখি শিশ দিয়ে উঠল । পাখির ডাকাডাকি শুরু হল । কমলা গাছ হাওয়ায় দুলতে শুরু করল । কমলা লেবু গাছে একটা হলুদ পাখি বসল । আমি ছুটতে শুরু করলাম পাখি টাকে ধরতে । যেই লেজ ধরতে যাব অমনি ফুরুত করে উড়ে গেল পাখিটা । আর তখনই কানে এল সেই হাসি । কোথায় গেল কমলা লেবু গাছ ? আরে এ তো দেখছি তাল গাছ। ওপরে দাঁড়ানো সেই বুড়ি । হলুদ পাখি টার ঘাড় মটকে রক্ত খাচ্ছে আর হাসছে । ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে । আমি রাম নাম করতে পারছি না । আমার চার পাশ থেকেই ফিসফিস করে শব্দ হচ্ছে- খোঁকা, পাঁলা । আঁজ অঁমাবস্যা । জঁমিদার এঁসে গেঁছে ।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *