পর্ব- ২
শরশয্যায় শুয়ে গঙ্গাপুত্র ফিরে গেছেন তাঁর বাল্যকালে। তিনি মা গঙ্গার কাছে শুনেছিলেন তাঁর জন্মবৃত্তান্ত। সেই সময়ে কুরুবংশের রাজচক্রবর্তী রাজা ‘শান্তনু’ হস্তিনাপুরের সিংহাসনে আসীন। মহা-ধনুর্ধর রাজা মাঝে মধ্যেই মৃগয়া করতে বেরিয়ে পড়তেন। এমনই একবার মৃগয়ায় গিয়ে মহারাজ গঙ্গাতীরে একাকী ভ্রমন করছেন, তিনি সহসা দেখতে পেলেন এক পরমাসুন্দরী শুভ্রবসনা রমনী, নদী থেকে সিক্ত বসনে উঠে এলেন। তার মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হয়ে শান্তনু তার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হতে চাইলেন। গঙ্গাদেবী সম্মত হলেন, কিন্তু বললেন ‘রাজন, আমি আপনাকে পতিরূপে স্বীকার করতে সম্মত, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’
– ‘কি শর্ত দেবী?’
– ‘আমি আপনাকে বিবাহ করার পর আমার কোনো কার্যে আপনি কোনোরূপ বাধা প্রদান করতে পারবেন না। যে’দিন আপনি আমার কার্যে বাধা দেবেন- সেদিন আমি আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যাবো।’ শান্তনু সম্মত হলে দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। কিছুকালের মধ্যে গঙ্গার একটি একটি করে সাতটি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রতিবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর গঙ্গা সেই সন্তানকে গঙ্গা-নদীতে নিক্ষেপ করেন। শর্ত অনুযায়ী শান্তনু গঙ্গাকে কিছু বলতে পারেন না; যদি শর্তভঙ্গ হলে গঙ্গা তাকে পরিত্যাগ করেন, সেই আশঙ্কায়। কিন্তু মানুষের সহ্যের তো একটা সীমা আছে! শান্তনুরও একদিন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- ‘এইভাবে সব সন্তান বিসর্জন দিলে হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসবে কে? কুরুবংশের বংশধর আসবে কোথা থেকে? কুরুবংশ রক্ষা হবে কি ভাবে?’ গঙ্গা এরপর যখন অষ্টম পুত্রের জন্ম দেন, তখন শান্তনু গঙ্গার পথ আগলে দাড়ান ‘আমি তোমাকে এই সন্তান বিসর্জন দিতে দেব না। আরে সর্বনাশী- তুমি কেমন মা! নিজের সাতটা পুত্র বিসর্জন দিয়েও তুমি স্বস্তি পাওনি? এই পুত্রকেও তুমি হত্যা করতে চাও? আমি আমার এই পুত্রকে বিসর্জন দিতে দেব না।’ এই বলে শান্তনু গঙ্গার কাছ থেকে পুত্রকে ছিনিয়ে নিলেন।
– ‘হে মহারাজ, আপনি আপনার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। অতএব আপনার সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি চলে যাচ্ছি। আমি কোনো সাধারণ মানবী নই, আমি দেবলোকের দেবী- গঙ্গা। তবে আমি চলে যাচ্ছি এবং আপনার পুত্রকেও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। যথা সময়ে পুত্রকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যাবো। ওর নাম হবে দেবব্রত। ওর সমস্ত প্রকার শিক্ষা সম্পন্ন হলে ওকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেবো।’
গঙ্গা দেবব্রতকে নিয়ে চলে গেলেন।