কুড়ানো মা
পাড়ার ফাংশনে ১০৭ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রাঞ্জলদা বক্তৃতা দিচ্ছেন। খুব হাততালি পড়ছে। কেননা উনি সেন্ট্রিমেন্টাল সুড়সুড়ি দেওয়া কথা বলছিলেন। উনি জানেন দর্শকদের কাছে হাততালি পেতে গেলে এরকম স্ক্রিপ্ট পড়তে হয়। সাহেবদা অবশ্য লিখে দিয়েছেন।। কাউন্সিলর বলেছিলেন এই সাহেব এমন একটা লেখা লিখিস দর্শক খাবে।। গলা খ্যাকানি দিয়ে দেখে দেখে কাউন্সিলর বলতে শুরু করেন, #দিকে দিকে শুধু এক সমস্যা পুরানো জঞ্জাল সরিয়ে নবাগতের আহ্বান।যুগ পাল্টেছে তাই জিনিস পত্র শুধু জঞ্জাল নয়,এখন বৃদ্ধ বাবা ও বৃদ্ধা মা নব যুগে জঞ্জালসম।তাই তো জায়গায় জায়গায় গজিয়ে উঠেছে বৃদ্ধাশ্রম। বাচ্চাদের রাখার জন্য ক্রেস। কিন্তু ক্রেসে বাচ্চারা থাকে , বাবা ও মা কাজের শেষে সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে তা তো মাসে মাসে অন লাইনে টাকা পেমেন্ট হয়।মা , বাবা জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। শ্রোতাদের অসম্ভব হাততালি। সেরকম এক গল্প একজন শ্রোতার কর্ণকুহর বিদীর্ণ করে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা চিৎকার করে বলেএইরকম গল্প তৈরি করে এই কাউন্সিলর মতো লোকেরা। যারা বাবার মৃত্যুর পর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। তারপর মাসে মাসে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়। বৃদ্ধাশ্রম থেকে তারপর মা নিরুদ্দেশ। বৃদ্ধাশ্রমে কতদিন বিনা টাকায় খাওয়াবে! খাঁচা খুলে দেয়।ওই পাখি ফুড়ুৎ হয়ে যায়। বিভিন্ন পথ ঘুরে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। কাউন্সিলর সাহেব বলতে পারেন পনেরো বছর আপনার মা কোথায় ছিল!! আপনার মা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতেন। কাউন্সিলর বলে দাঁড়ান, ওখানে যিনি চিৎকার করে বলছেন,তাঁকে একবার মঞ্চে আনু্ন তো! কিন্তু আমার মা তো বহুবছর আগে মারা গেছেন! কিন্তু বাবা আমি তো কারর না কারর মা তো ছিলাম। কাউন্সিলর স্ক্রিপ্ট সরিয়ে বলেন মনে আছে আপনি কোন বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন! আপনার বাড়ি কোথায়!
সত্যি আপনার ছেলে যোগাযোগ করেন নি! চোখে ছানি পড়েছে বাবা। অপারেশন করিয়ে দেবে! ছেলেকে খুঁজে পেলে তাকে ভালো করে দেখব। কাউন্সিলর চিৎকার করে বলে আজ আমার মায়ের কথা মনে আসছে। ওনাকে আমি কোন বৃদ্ধাশ্রমে নয়, আমার বাড়িতে মাতৃপরিচয়ে রাখব। কাউন্সিলর এবার সব ভোট পাবে।কারণ নিজের মাকে আশ্রয় দেবার জন্য নিয়ে গেছে। ভগবান ছেলের মঙ্গল করুন। জনতার উল্লাস , চিৎকার।প্রাঞ্জলদা জিন্দাবাদ।৩১০ প্রাঞ্জল বাড়িতে নিয়ে যায় মাকে।আসলে বৌ ছমাস আগে মারা গেছে। তিতলির এখন বারো বছর বয়স। ঠাকুমাকে এখন দরকার। মায়ের সাথে এরকম ব্যবহার করেছে প্রাঞ্জল তিতলির মায়ের জন্য। কিন্তু সে এখন কোথায়! জন্মদাত্রী মাকে এরকম নাটকীয় ভাবে ঘরে আনে প্রাঞ্জল।
ভালো করে সেবা যত্ন করে।এখন তো স্বার্থে লাগবে মেয়েকে। অনেক বন্ধু বলেছে পুনর্বিবাহ করতে।
ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়।যা অভিজ্ঞতা প্রথম বিবাহে।মাকে বৃদ্ধাশ্রমে জোর করে রেখে আসে। প্রাঞ্জল তখন বৌয়ের কথায় ওঠাবসা করত। কেননা বৌ বড়লোক শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে। সারাক্ষণ মেয়েকে কুশিক্ষা দিয়ে যেত। প্রাঞ্জল শ্বশুর-বাড়িতে থাকে কোন প্রতিবাদ করতে পারত না।পার্টির কাজে শ্বশুরের সাথে এতটাই জড়িয়ে পড়ে মায়ের কথা ভুলে যায়।আজ তাই পাপের ফল পাচ্ছে। শ্বশুর, শাশুড়ি,বৌ সব চলে গেছে।তাই ভগবান মাকে খুঁজে দিয়েছেন। মাকে বলে মা তোমার চোখ অপারেশন করে দেব।সামনে ভোট হয়ে যাক। আরেকটা কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি,তবে সন্তানের মঙ্গলের স্বার্থে তুমি কাউকে বলো না। আমি তোমার ছেলে প্রাঞ্জল। তোমার প্রতি যে অবিচার করেছি ভগবান তার ফল তোমার সন্তানকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। তুমি আমার কুড়ানো মা জানলে সবাই আমার জয়গান করবে। পরবর্তী ইলেকশনে ঠিক জিতবে তোমার ছেলে। দিকে দিকে শুধু অসৎ স্বার্থপর লোকের বাস।