কি ফেলছি কোথায় ফেলছি
ঘরের অব্যবহৃত অনেক কিছুই শিল্প নৈপুণ্যে আমাদের চোখে মনোরম করে তোলা যায়।কথায় আছে,কাক কে ও সাজালে সুন্দর দেখায়।আমরা সেই প্রচেষ্টা করি না কেন? বাজার থেকে আসা তেলের প্লাস্টিকজাতীয় তেলের ক্যানগুলোর মাথা আমরা নানান ঢংএ কেটে তাতে বাজারে পাওয়া যায় পুতী বা চুমকি জাতীয় নানান চোখ জুড়ানো দ্রব্য পাওয়া যায় সেগুলো আঠা দিয়ে নানান ডিজাইনএর ফ্লাওয়ার ভাস্ বানাতে পারি।ছোট বড়ো নানা আকারের।তাতে ছোট্ট ছোট্ট পাতা বাহারি গাছ,বনসাই বসিয়ে দেওয়ালের অসামঞ্জস্যকে ভরাট করতে পারি।কিছু কিছু পাতা বাহারি ঘরে রাখলে ঘরে ঘরে অক্সিজেন এর প্রবাহ রাতে বহাল থাকে।এভাবে অনেক কিছুই আমরা রুপ পাল্টে অপরুপ এবং কাজে লাগাতে পারি।যেটা কারোর বাড়িতে নেই সেটা আমাদের মেয়েদের কাছে মহামূল্যবান। এরপর আসছি ফলের খোসার কথায়।ফলের খোসায় অত্যাধিক পেকট্রিন থাকে।পেকট্রিন সহজেই জমাট বাঁধে।এর থেকে সহজেই জেলী হতে পারে।বিশেষ করে কমলা লেবু,শশা,পেঁপে,পাতি লেবু ইত্যাদির খোসা তো ফেলারই নয়।এ গুলো থেঁতো করে মুখে মাখার একটা চমকপ্রদ ‘ফেসপ্যাক’,যা ত্বক কে উজ্জ্বল ও পেলব করে তোলে।এটা আমার ওয়ার্ক এডুকেশন ট্রেনিং থেকে জেনেছি। এবার আগের পর্বে যে আলোচনায় ছিলাম সেখানেই ফিরে যাচ্ছি।সেই ময়লা ফেলার কথায়।আমার খুবই জানা একজায়গা।বেশ নামকরা জায়গা সবাই জানবে আশাকরি।জায়গাটা ম্যাডাক্সস্কোয়ার।সেখানে আমার জানা এক বাড়ির রাস্তায় পাশের বাড়ি থেকে রোজই চুল আঁচরে পাশের বাড়ির রাস্তায় মানে আমার জানা সেই বাড়িতে ফেলে দিত। আসলে আমরা খুব পরিস্কার থাকতে ভালোবাসি।তাই নিজের ঘর পরিস্কার করে ময়লা পাশের বাড়িতে ফেলে দিই।যাই হোক যে কথা বলছিলাম সেই পাশের বাড়িতে চুল ফেলে দেওয়া। আমার জানা সেই মহিলা তার পথে চুল পড়ে থাকা দেখে রেগে গিয়ে আবার সেই চুলের দলা ছুঁড়ে দিলো যথারীতি পাশের বাড়ির রাস্তায়।এটা অভিজাত পাড়া তাই এঁরা অসভ্যের মতো ঝগড়া না করে এই ভাবেই চুলোচুলি করেন। গুনীজন ও সুধীজনের দৃষ্টি ফেরাতে এবার অন্য ধরণের ছবির উপস্থাপন করছি।এটা তখন একটা ‘ডেভেলপিং এরিয়া ‘।সেখানে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং এর ছড়া ছড়ি।প্রতিটি বাড়িতে কম করে বারো থেকে চোদ্দ টা পরিবারের বাস।লোক সংখ্যাটা সহজেই অনুমান করা যায়।একটা তিন রাস্তার মোর দিয়েই বাসিন্দাদের যেতে হয় নানাবিধ এ—কর্ম স্থলে,স্কুল, কলেজ এ।এছাড়া আরো অনেক কাজে।এর মধ্যে নানা রকম রোগী ও আছেন।এই রাস্তা খালের পাশ দিয়ে গেছে। পরিবেশ পরিস্কারকরা ঠেলায় করে আবর্জনা অর্থাৎ ময়লা ফেলে দেয় এক্কেবারে ঠেলা কাত করে নালা রুপী খালে।চাকা লাগানো ঠেলাটা রাস্তার ওপরেই একটু কাত করে সব ময়লা ঢেলে দেয়।কিছু ময়লা খালের জলে,কিছুটা খালের পাড়ে,বাকিটা পুস্পবৃষ্টির মতো সমস্ত রাস্তা জুড়ে পড়ছে।সেই ময়লা ফেলার সময়টা অদ্ভুত ভাবে ম্যাচ করে যায় আমার চা খাওয়ার সময়ের সঙ্গে। আর ছোট শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সঙ্গে,বিশেষ করে ‘প্রি স্কুল চাইল্ড’দের স্কুলে যাবার সঙ্গে।হরির লুটের বাতাসার মতো পলিপ্যাক দখিনা পবনে উড়িয়ে নিচ্ছে। কখনও বা শিশুদের কাঁধে,কখনও বা মায়ের আঁচলে। মা তাড়াতাড়ি আঁচল টেনে,নাক চেপে উদ্ধয়শ্বাসে ছুটছেন গন্ধ থেকে বাঁচার তাগিদে।শিশুর হাত যদিও বা মায়ের হাতে,কিন্তু দৃষ্টি ঐ মহামূল্যবান ময়লায়।ওর অদম্য কৌতুহল ঐ ময়লার রাশিতে,কি জানি কোন দামি খেলার জিনিস আছে কিনা!বিনি পয়সার ভোগের লোভে অসংখ্য কুকুরের মারামারি সেখানে। পুরোকর্মী নিজেকে বাঁচায় ঐ ময়লা খোঁচানোর লাঠি দিয়ে।এরই মধ্যে ঐ রাস্তায় ট্যাক্সি,অটো,ম্যাটাডোর সবই আসে যায়।পথ ও ছাড়তে হয় ঐ পচা ময়লায় দাঁড়িয়ে।পুরোকর্মীর সারাদিনে একবারই শুধু কষ্ট তখন কার মতো।কিন্তু সকাল থেকে রাত এগারোটা অবধি লোক চলাচল করে।তাই যান চলাচল কালে ঐ ময়লায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের রাস্তা ছাড়তে হলে ঐ দুর্গন্ধে কষ্ট পেতে হয়। আমি বলি–আমার শারীরিক মানসিক দুটো কষ্ট ই আছে।কারণ ময়লার উল্টো দিকেই আমার আবাস।দক্ষিনের বাড়ান্দার এই ফ্ল্যাট নিয়েছিলাম। ঐ ময়লার কাছে ই বেদীতে পোশাকী ভদ্রলোকেরা বসে থাকেন।তারা বেকার কি সাকার তা আমার জানা নেই,তবে তারা ময়লার গন্ধে নির্বিকার,এটা আমার জানা। আমার মস্তিষ্ক ওদের নির্বিকারত্বের কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টায় সদাই মগ্ন।কারণ আমি জর্জরিত। কবি গুরু লিখেছেন —– “দক্ষিণ বায়ু আন পুস্প বনে,ঘুচাও বিষাদের কুহেলিকা” দক্ষিণ বায়ু আছে।পুস্প বন তো নেই।আছে পুতি গন্ধ, তাই আমার বিষাদের কুহেলিকা ঘোচার বদলে,আমার ফুসফুসে কুহেলিকার জালে শ্বাস রোধ করছে। যে কথাটা বলছিলাম,সেই বেদীতে বসা সুধীজনের কথা।পট পরিবর্তন হচ্ছে না বটে কিন্তু বেদীর পাত্রদের পরিবর্তন হচ্ছে।নাটকের মতো প্রবেশ,প্রস্থানের পালা চলছে।হয়তো বা সেটা ও একটা কারণ ঐ ময়লা নিয়ে চিন্তা না করার।তবে আমার জীবনের দখিনা বাতাস কেড়ে নেবার দায়ে আমার মস্তিষ্ক সদাই বেদীতে বসা নানা জনের দুর্গন্ধে কষ্ট বিহীনতার কারণ খুঁজতে ব্যস্ত। প্রশ্ন করি নিজেকে —ময়লা এতদিন তাদের ঘরের পাশে জমিতে ছিল,তাই কি তারা ময়লা খালের ধারে ফেলায় তৃপ্ত?তৃপ্ততার কারণটা বিদ্যুতের ঝিলিকের মতো উদয় হলো।হয়তো তারা অজানা খনির নতুন মনি পেয়েছেন! সেই পুরোনো আমলের ময়লা ফেলার অজানা খনির বদলে প্রোমোটারের দৌলতে রাশিরাশি মনি পেয়েছেন। তখন এই সব বাড়ির ময়লা বাড়ির জমিতে এক কোনে পড়ে থেকে মাটিতে পর্যবসিত হতো।এতেই তারা এতো তৃপ্ত কারণ খালরুপী দেবী না থাকলে এতো ফ্ল্যাট এর এতো ময়লা কোথায় যেত?তাই গন্ধটা নাকে লাগে না। খনি অজানাই ছিল,আর মনি?সে তো আমাদের জীবনের সার বস্তু।সেই মনির দৌলতেই আমরা সমাজের উচ্চবর্গে পৌঁছতে সক্ষম হই।আমাদের মনটা কিন্তু ক্ষুদ্রতার গন্ডিতেই সীমা বদ্ধ থাকে। শিশুকালে দেখেছিলাম ভোরে জলের পাইপ দিয়ে রাস্তা ধোয়ানো হতো।ভাবি আজ কাল কি জলের অভাব পড়েছে?কিন্তু রাস্তার কলের সারা দিন জল পড়তে দেখে তো মনে হয় না জলের অভাব পড়েছে? জন্ম কোলকাতা হলেও প্রথম জীবন বাবার চাকরি স্থলের জন্য,পড়ে স্বামীর চাকরি সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে।ভাবি—সে সব জায়গায় কি কোনো খোরাক দেয়নি এসব চিন্তা করার?আমি একজন অতি শিক্ষিতা অর্বাচীন,পরিবেশের ময়লা দূরীকরণের পন্থা খুঁজতে পন্ডশ্রম করছি।পুরসভার বা সরকারের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ প্রকাশের জন্য এই লেখা নয়। জনজাগরণের উদ্দেশ্যেই লেখা।
পরিবেশ,প্রকৃতি ও মানব বাঁচাও এর গ্রীন পীস্ বৈপ্লবিক সংগঠনের আশাবাদীরা মানব সভ্যতার চরম সংকট কাল আগত,তার আভাষ দিয়েছেন। স্বয়ংক্রিয় এই জতুগৃহের বিপদকাল আগত তা জানিয়ে দিলেন পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা। জেগে ঘুমোলে কি জাগানো যায়?আমরা সব জেনে ও স্রোতে গা ভাসাতে নিমগ্ন। তাই কোনো অবক্ষয়কে রোধ করা যাচ্ছে না। আমরা যতই উঁচু তলায় উঠছি ততোই সফিস্টিকেশন আনতে প্লাস্টিক,পি,ভি,সি র সম্ভারকে সমাদর করছি। ফটোর ফিল্ম থেকে শুরু করে বালতি, মগ,বোতল,ট্রে,টেবিল,চেয়ার,অফিসের আসবাব, চিকিৎসার উপকরণ,চামড়ার বিকল্প,পর্দা,মেঝের টালি, বৈদ্যুতিক সম্ভার,এমনকি শিশুদের খেলনা অবধি তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পি,ভি,সি, অর্থাৎ পলি ভিনাইল ক্লোরাইড থেকে। কিচেন এ থরে থরে সাজানো প্লাস্টিক এর সম্ভার।রঙ বেরঙ এর কৌটো সাজানো।সেই কৌটোর থেকে খাবারে মিশ্রিত বিষ প্রতিনিয়ত আমরা সংগ্রহ করছি। তবুও আমরা গা ভাসিয়ে চলেছি। তাই আজ সমাজ বিজ্ঞান নিয়ে কর্মরত জন দরদী গন, ,প্রকৃতি পরিবেশ মানব স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী ও সমাজ কর্মীরা প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহারে বিশেষ দুশ্চিন্তা গ্রস্ত।কারণ এই নির্বিরোধী পি,ভি,সি র সৃষ্টিকেন্দ্র কতোগুলো বিষাক্ত কারখানা। কলকাতার জনপথে,শ্মশানে প্রচুর পরিমাণে টায়ার ও পি,ভি,সি পোড়াতে দেখা যায়।পরিবেশ দূষিত হয় নির্বিরোধে।শিকার কিন্তু হন মানুষ।জেনেও মানুষ নির্বিকার। তাই দূষণ থেকে পরিবেশকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসতে হবে মানুষকে। আমার এই লেখা পুরসভা বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। জনজাগরণের উদ্দেশ্যেই এই লেখা।মনে আছে বাংলা একাডেমিতে সেমিনার হয়েছিল পরিবেশ দুষণের দূরিকরণের জন্য পলিপ্যাককে বর্জন করতে,”ইউজ এন্ড থ্রো”কথাটা বলা হয়েছিল।এও বলা হয়েছিল যে, পলিপ্যাক অতি বিষাক্ত।এ গুলো জমিতে পড়লে জমি দুষিত হয়।তাই ঘরে ঘরে মহিলাদের শপথ নিতে হবে পলিপ্যাক ব্যবহার বন্ধের। অবশ্য আরও একটি কাজে মহিলাদেরই অগ্রনী হতে হবে। তা হলো শক্ত ও পাতলা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করা।যেটা সব সময় হাত ব্যাগ বা পার্স এ রাখা যায়। এ ব্যপারে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা বলছি।মনে হয় মহিলাদের ঘরে ঘরে এমন অনেক সিন্থেটিক শাড়ি আছে,যেটা বহু ব্যবহারে আর পড়তে মন চায় না।ঐ রকম শাড়ি দিয়ে ব্যাগ তৈরী করলে ভার বাহি ও হবে আবার সহজে পকেটে চালান করা যাবে। আবার পুরোনো কথায় ফিরি।খনি বেচে যারা মনি পেয়েছেন,তাদের বলি,বিজ্ঞানের তো অনেক উন্নতি হয়েছে।সুতরাং তারাও এমন কিছু বৈজ্ঞানিক, চিন্তা করুন,কি ভাবে বাড়ির কমপাউন্ড এ প্রতিদিনের উদবৃত্ত বাড়িতেই ফেলা যায়।ব্যপারটার একটা সুষ্ঠু সমাধান করতে পারবেন।কারণ আবর্জনা জমতে জমতে খোলা আকাশের বায়ুকে দূষিত করবে। আমার অবৈজ্ঞানিক মন বলে —-যদি প্রতিটি ফ্ল্যাট এর ময়লা সম্মিলিত কূপ করা হয়?আর সেটা এমন ভাবে করা হয় যাতে কালে ঐ ময়লা মাটিতে পর্যবসিত হয়। আরও ভালো হয় যদি কিচেন থেকে ময়লা সরাসরি ঢাকনা যুক্ত কুপ এ পড়ে। আমরা যদি পুরোনো পদ্ধতি পরিবর্তন করে সেপ্টিট্যাঙ্ক বানালাম।জলাধার বানালাম।তাহলে কেন ময়লা ফেলার কূপ বানাতে পারব না?আর কাদের জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা? তারা আমাদেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম।আমাদের সন্তান। আমরা একদিন চলে যাব।রেখে যাব তাদেরকে এই নরক সম কুন্ডে।বিষাক্ত বাতাসে।জড়া পঙ্গু জীবন নিয়ে এদের বাঁচতে হবে।”প্রাণবায়ু বাহিরিবে না”। প্রকৃতি তাদের প্রশ্ন করবে—– “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু,নিবাইছে তব আলো। তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ তুমি কি বেসেছ ভালো”? আমি অতি সাধারণ। ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু ইচ্ছা অসীম।তাই বিশ্ব মাতার কাছে এই প্রণতি জানাই—- মাগো,দু’চোখ. মেলে চাও, দয়া করে বিশ্ব জনে খীরোদ ভরে দাও। ক্লেদাক্ত রীপুতে ভরা মানব হৃদয় শুদ্ধ কর চিত্ত সব হোক পূর্ণদয়। বিষাক্ত নিঃশ্বাসে ভরা মানবজনম অঞ্জলি ভরে লও অশ্রু জল মম পূনর্জন্মে পাই যেন আনন্দালয় পদে তব কোটি প্রণাম দিও আশ্রয়।।