Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কৃষ্ণা সত্যিই চটে গিয়েছিল

কৃষ্ণা সত্যিই চটে গিয়েছিল।

কারণ ইদানিং কিরীটীর রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিরীটীর খাওয়া বিশ্রাম সম্পকে সে অত্যন্ত সজাগ থাকত। এতটুকু অনিয়ম সে বরদাস্ত করতে পারত না।

দুজনকে ঘরে ঢুকতে দেখে কৃষ্ণা বলে, এই তোমাদের ঘণ্টা-দুই! তুমি একটা অঘটন না ঘটিয়ে ছাড়বে না দেখছি!

মরতে তো একদিন হবেই প্রিয়ে-তা সে মৃত্যু যদি করোনারী হয় তার চাইতে সুখের মৃত্যু আর কি হতে পারে!

ঠিক আছে, একটা মুহূর্ত কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললে, মনে থাকবে কথাটা আমার।

ভুল হয়ে গিয়েছে-মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছে, আর এমনটি হবে না—এবারটির মত ক্ষমা-ঘেন্না করে

থাক, থাক। কৃষ্ণা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

দিলি তো চটিয়ে ওকে! বললাম আমি।

কিরীটী মৃদু হাসল।

চল্ আর দেরি করিস না, সত্যিই অনেক রাত হয়েছে-খাবার টেবিলে গিয়ে বসা যাক।

তুই হ্যাঁ, আমি আসছি—আমায় একটা জরুরী ফোন করতে হবে।

এত রাত্রে কাকে আবার ফোন করবি?

পূর্ণ লাহিড়ীকে।

এই রাত পৌনে বারোটায়?

কথাটা জরুরী, তাকে জানানো দরকার এখুনি।

কথাটা বলে কিরীটী এগিয়ে গিয়ে ফোনের রিসিভারটা তুলে নিয়ে ডায়েল করে।

একটু পরেই বোধ হয় অন্য পাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল।

হ্যাঁ আমি কিরীটী, লাহিড়ী সাহেব। রেঙ্গুনগামী জলযান জাহাজটা কবে ছাড়ছে ক্যালকাটা পোর্ট থেকে একটা খবর নিতে পারেন? এখুনি পারবেন? ঠিক আছে, জেনে এখুনি এই রাত্রেই আমাকে জানান।

জাহাজটা তো পোলিশ জাহাজ, তাই না? হ্যাঁ যা-আচ্ছা—

ফোনটা রেখে দিয়ে কিরীটী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললে, চল্।

.

টেবিলে খেতে বসে দেখি দুজনার মত প্লেট।

বললাম সামনে দণ্ডায়মান কৃষ্ণাকে, কি ব্যাপার, তুমি খাবে না?

না। কৃষ্ণ বলে।

তাহলে আমিও খাব না। বললাম আমি।

আমি খেয়েছি। কৃষ্ণা জবাব দেয়।

বিশ্বাস করি না।

বাঃ, বিশ্বাস না করার কি হয়েছে, সত্যিই আমি খেয়েছি।

বিশ্বাস করব না কেন, সত্যিই তুমি খাওনি এখনও। বলি আমি, যাও তোমারটাও নিয়ে এস, একসঙ্গেই খেতে খেতে আজকের অভিযানের গল্প তোমায় শোনাব।

ও আমি শুনতে চাই না।

নাই শুনলে—কান বন্ধ করে খেয়ে যেও।

বলছি খেয়েছি আমি!

সত্যি তোমাকে নিয়ে পারি না সুব্রত।

অনেক দেরিতে বুঝেছ দেবী। যাও, ক্ষিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে, ত্বরা কর দেবী।

কৃষ্ণা অতঃপর আর দেরি করে না-আমাদের সঙ্গেই বসে পড়ে। খাওয়া প্রায় যখন শেষ হয়ে এসেছে-পাশের ঘরে ফোন বেজে উঠল। ক্রিং ক্রিং ক্রিং…।

কিরীটী তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে রিসিভারটা তুলে নিল।

হ্যালো—হ্যাঁ কিরীটী, কি বললেন, কাল সকালে ভোর পাঁচটায় ছাড়বে জাহাজ! যেমন করে হোক আপনাকে পোর্ট পুলিসের সাহায্যে বাটোরির ডিপারচারের সময় অন্ততঃ ঘণ্টা কয়েক পিছিয়ে দিতে হবে। আরে পারবেন পারবেন—সবই জানতে পারবেন—শুনুন, ভোর পাঁচটা নাগাদ আপনি এখানে চলে আসবেন। আঁ হ্যাঁ, এই গরীবের গৃহে। ঠা, দুজন আর্মড কনস্টেবল নেবেন ও নিজে আগ্নেয় অস্ত্রের দ্বারা শোভিত হয়ে আসবেন। কিছু মুশকিল নয়-আপনি অনায়াসেই ঐ ব্যবস্থাটুকু করতে পারবেন মিঃ লাহিড়ী। আচ্ছা, আপাততঃ গুড নাইট।

কিরীটী ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রেখে খাবার ঘরে আবার ফিরে এল।

সুব্রত!

কি?

রাত এখন সাড়ে বারোটা—ঠিক তিন ঘণ্টা সময় দেব-যা শুয়ে পড় গিয়ে—একটু ঘুমিয়ে নে—ঠিক ভোর চারটেয় উঠতে হবে।

ব্যাপার কি? অত ভোরে কোথায়ও যেতে হবে নাকি?

হ্যাঁ!

কোথায়?

কালই জানতে পারবি। হ্যাঁ, শুয়ে পড় গে।

কিরীটী কথাগুলো বলে আর দাঁড়াল না। ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

লাহিড়ীর সঙ্গে ফোনে একটু আগে কিরীটীর যে কাটা-কাটা একতরফা কথাগুলো হল তাতে এইটুকু বুঝতে পেরেছি, কোন একটি জাহাজের সিডিউল ডিপারচার যাতে ক্যানসেল করা হয় সে সেইমত লাহিড়ীকে নির্দেশ দিল।

কিন্তু কেন? তবে কি ঐ জাহাজেই মুক্তা-চোর পগারপার দেবার মতলব করেছে? কিন্তু সে কে? লোকটা কে? সেই চ্যাপাটা মুখ-ভোতা নাক-কুতকুতে চোখ লোকটা যে ডি’সিলভার সঙ্গে এসেছিল ময়নার সওদা করতে ইউসুফের দোকানে, সে-ই তাহলে সকল নাটের গুরু?

কিরীটীর চোখমুখের চেহারা দেখে মনে হয় সে কোন একটা স্থির সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে পৌঁচেছে। কোন রহস্যের শেষ মীমাংসার কাছাকাছি এসে চিরদিন কিরীটী সহসা অমনি গম্ভীর হয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি নিয়ে নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে শয্যায় আশ্রয় নিলাম, কিন্তু ঘুম আসে না।

বাইরে আবার বৃষ্টি জোরে শুরু হল। হয়ত কালকের রাতের মত আজও সারাটা রাতই বৃষ্টি ঝরবে।

এখন অন্ততঃ বুঝতে পারছি-মা’থিনের সেই বহুমূল্যবান মুক্তোর মালার সঙ্গেই জড়িত আছে সেই আশ্চর্য ময়না পাখীটির চুরি যাওয়া এবং হতভাগ্য ইউসুফের হত্যা।

কিন্তু যোগসুত্রটা কোথায়? কোথায় মুক্তোর মালার সঙ্গে সেই ময়না পাখীটীর যোগাযোগ রয়েছে? কোন্ অদৃশ্য সূত্রে দুটি ব্যাপার ঘনিষ্ঠভাবে পরস্পরের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে?

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত যেন একটা সম্ভাবনা মনের পাতায় উঁকি দিয়ে যায়।

তবে কি—

কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হয় অত গুলো মুক্তো–

তাছাড়া–

নাঃ, সব যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকে।

চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একে দুপেগের নেশা—তার উপরে ভরপেট গরম খিচুড়ি ও মাংসের কোর্মা—আপনা থেকেই কখন দু চোখের পাতা ঘুমে ভারী হয়ে বুজে এসেছিল।

কিরীটীর ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল।

এই সুব্রত, ওঠ ওঠ!

ধড়ফড় করে শয্যার ওপর উঠে বসলাম।

তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে-কৃষ্ণার চা রেডি-এখনি হয়ত লাহিড়ী সাহেব এসে যাবেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *