বারেক এখনও কি রে দেখিবি না চাহিয়া,—
উন্নত গগন-পরে, ব্রহ্মাণ্ড উজ্জ্বল ক’রে
উঠেছে নক্ষত্র কত নবজ্যোতি ধরিয়া।
মানবে দেখায়ে পথ, চ’লেছে তড়িবৎ
প্রভাতিয়া ভবিষ্যৎ ভূমণ্ডল ভাতিয়া।
হেরে সে নক্ষত্র-ভাতি, দেখ রে মানব-জাতি
ছুটেছে তা’দের সনে আনন্দ উত্সাহ-মনে
নিজ নিজ উন্নতির জয়পত্র বাঁধিয়া।
চ’লেছে চাহিয়া দেখ, বোদ্ধা যোদ্ধা এক এক
কাল-পরাজয় করি দেবমূর্ত্তি ধরিয়া।
জলধি, পৃথিবী, মেরু, প্রতাপে হয়েছে ভীরু,
অবাধে পড়িছে পাশ পদতলে পড়িয়া।
চ’লেছে বুধ-মণ্ডলী নরে নরে কুতূহলী,
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ-তারা ছিঁড়িয়া আনিছে তারা
শূন্য হ’তে ধরাতলে জ্ঞান-ডোরে বাঁধিয়া।
আকাশ-পাতাল-গত পঞ্চভূত আদি যত
প্রকৃতি ভয়েতে দ্রুত দেখাইছে খুলিয়া।
দেবতা অসুরগণ ক্রমে হয় অদর্শন,
ঈশ্বরেরই সিংহাসন উঠিতেছে কাঁপিয়া।
সরস্বতী কুতূহলা, সাহিত্য-দর্শন-কলা
স্বহস্তে সহস্রমালা দিতেছে তুলিয়া।
কমলা অজস্র ধারে ভাঙ্গিয়া নিজ ভাণ্ডারে,
ধনরাশি স্তূপাকারে দিতেছেন ঢালিয়া।
কবিকুল কোলাহলে মুখে জয়ধ্বনি বলে
উন্নতি-তরঙ্গ সঙ্গে ছুটিছে অশেষ রঙ্গে,
স্বজাতি-সাহস-কীর্ত্তী উচ্চৈঃস্বরে গাহিয়া।
অই দেখ অগ্রে তার পরিয়া মহিমা-হার
চলেছে ফরাসী-জাতি ধরা স্তব্ধ করিয়া।
অস্হির বাসনানলে— স্থাপিতে অবনীতলে,
সমাজ-শৃঙ্খলামালা নব সূত্রে গাঁথিয়া।
চ’লেছে রে দেখ চেয়ে শত বাহু প্রসারিয়ে
অর্দ্ধ সসাগরা ধরা অলঙ্কারে ভূষিয়া,
আমেরিকা-বাসীগণ, নদ, গিরি, প্রস্রবণ,
জলনিধি উপকূল লৌহজালে বাঁধিয়া।
অই শোন্ ঘোর নাদে পূরাতে মনে সাধে,
পুরুষিয়া মল্লবেশে উঠিতেছে গর্জ্জিয়া।
বিনতা-নন্দন-সম ধ’রে নিজ পরাক্রম
দেখ্ রে আসিছে রুশ বসুমতী গ্রাসিয়া।
ইতালি উতলা হ’য়ে স্ব কিরীট শিরে ল’য়ে
আবার জাগিছে দেখ্ হুহুঙ্কার ছাড়িয়া।
বিস্তারিয়া তেজরাশি দেখ্ রে বৃটনবাসী
আচ্ছন্ন ক’রেছে ধরা, মরু দ্বীপ সসাগরা,
যত দূর প্রভাকর-কর আছে ব্যাপিয়া।
প্রকাশি অসীম বল শাসিছে জলধিতল,
শিরে কোহিনুর বাঁধা মদগর্ব্বে মাতিয়া।
তবুও বারেক কি রে দেখিবি না চাহিয়া—
হতভাগ্য হিন্দু জাতি!— শোভে কি নক্ষত্র ভাতি,
উন্নত গগন পরে ধরাতল ভাতিয়া।
ছিল সাধ বড় মনে ভারত(ও) ওদেরি সনে
চলিবে উজলি মহী করে কর বাঁধিয়া ;
আবার উজ্জ্বল হ’বে নব প্রজ্জ্বলিত ভবে
ভারত উন্নতি-স্রোতে চলিবে রে ভাসিয়া।
জন্মিবে পুরুষগণ বীর যোদ্ধা অগণন,
রাখিবে ভারত-নাম ক্ষিতি-পৃষ্ঠে আঁকিয়া।
সে আশা হইল দূর, নীরব ভারতপুর ;
একজন(ও) কাঁদে না রে পূর্ব্বকথা ভাবিয়া।
এ ক্ষিতিমণ্ডল-মাঝ আর্য্য কি রে নাহি আজ্
শুনায় সে রব কেহ উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া।
সে সাধ ঘুচেছে হায়!
আয় মা জননী আয়, লয়ে তোর মৃতকায়,
মিটাই মনের সাধ মনে মনে কাঁদিয়া!