Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কবিতার হাতিয়ার || Sankar Brahma

কবিতার হাতিয়ার || Sankar Brahma

কবিতা হচ্ছে, কবির ভাষ্য। কবি সেই ভাষ্য তার পছন্দ মতো (যাতে তিনি স্বাছন্দ্যবোধ করেন), যে কোন আঙ্গিকে প্রকাশ করতে পারেন। যেমন – ছড়া, সনেট, লিমেরিক, গাথা, গীতি-কাব্য, গদ্য-কাব্য, শায়েরি, রুবাই, হাইকু, লতিফা প্রভৃতি যে কোন আঙ্গিকে।
কবি কোন আঙ্গিকে লিখলো, সেটা বড় কথা নয়, ভাষ্যটি কবিতা হলো কিনা সেটিই বিবেচ্য।

এবার আসি কবিতার গঠনপ্রণালীর (structure) কথায়। কবি তার লেখাটি সাজিয়ে তোলেন, পংক্তি, স্তবক এবং পংক্তি আর স্তবকের মধ্যে ব্যবধান – এইসব হলো গঠনপ্রণালীর অংশ। কবিতায় যতিচিহ্ন, কমা, দাড়ি, ব্যবধান (Space) দিয়ে কবিতার গড়ন তৈরী করা যায়।

আজকাল আবার যতিচিহ্ন ব্যবহার না করেও কবিতা লেখা হয়।

কবিতায় কোনও বিরাম চিহ্ন ব্যবহার না করার তাৎপর্য কী?
এটি একটি কবিতাকে শৈল্পিক পছন্দের দিকে নিয়ে যাওয়ার ভুল ধারণা থেকে, যা কিছু হতে পারে, যা সচেতনও হতে পারে বা নাও হতে পারে – কবি কবিতাটিকে যা ঘটছে অনুভব করেন এবং এটি কীভাবে ঘটাতে হবে তা অনুভব করেন। উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস কোন বিরাম চিহ্ন ছাড়াই কবিতা লিখেছেন। অনুমান তাঁর কবিতার নতুন বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গীর ছিল, এবং বিরাম চিহ্নের অভাবই তার কবিতাকে জীবন্ত করে তুলেছে। এটি সর্বদা হয় না, তবে – বিরাম চিহ্নের ব্যবহার না করা দুর্দান্ত কবিতাগুলি কোনও অহংকার নয় বরং কবিতাটিকে মনোজ্ঞ করার একটা উপায় খুঁজছে মাত্র।

অনেক মহান কবিতার ঐতিহ্যগত বিরাম চিহ্ন রয়েছে— আপনি মহান কবিদের কবিতা পড়তে পারেন এবং লক্ষ্য করতে পারেন যে তারা কীভাবে বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করেন (বা না করেন) কাব্য-প্রবাহের অনুভূতি পেতে, বিরতির জন্য। আপনি যদি একজন লেখক হন তবে আপনার নৈপুণ্য তৈরি করার জন্য যে কোনো কিছু বা সবকিছু চেষ্টা করতে পারেন। কবিতা যেহেতু সৃষ্টিশীল কাজ তাই এই গঠনপ্রণালীতে কবির স্বকীয় সষ্টিশীলতা দেখাবার সুযোগ থাকে।

কবিতার ভাষা এবং ভাষা প্রয়োগের কলা-কৌশল সম্পর্কে কবির অবহিত থাকা খুবই জরুরী প্রয়োজন বলে মনেহয়। কবিতার ভাষা শুধুমাত্র আক্ষরিক অর্থ প্রকাশ করেই তার দায় সারে না, কবিতার ভাষা আলঙ্কারিক ও কল্পনাশ্রিত ‘সান্ধ্যভাষা’। কবি শঙ্খ ঘোষ যাকে বলেছেন, ‘কবিতার অবগুন্ঠন’। যার ফলে ভাষার আক্ষরিক অর্থ ছাপিয়ে গিয়ে আর এক অন্তর্নিহিত গূঢ় অর্থে পৌঁছে দেয়। আনন্দ বর্ধন বলেছেন, ‘যে-বাক্যবদ্ধ থেকে নিতান্ত আক্ষরিক অর্থ ছাড়া আর কিছুই আমাদের লভ্য নয়, কাব্য বলে গণ্য হবার কোনও যোগ্যতাই তার নেই।’

তার জন্য কবিকে প্রতীকী ভাষার (Figurative language) ব্যবহার জানতে হয়। এজন্য কবি উপমা বা তুলনা(simile), রূপক (Metaphor), চিত্রকল্প (Imagery) অতিশয়োক্তি (Hyperbole), অনুপ্রাস (Alliteration) ব্যক্তিত্ব (Personification) ইত্যাদি কবিতার ভাষাকে প্রাত্যহিক বা রোজকার ব্যবহারের ভাষা থেকে আলাদা করে তোলে। এইগুলোর অভাব থাকলে একটা লেখা কবিতা না হয়ে, শুধুমাত্র পদ্যে রূপান্তরিত (converted) হতে পারে।

ওয়ার্ডসওয়র্থ আবার বলেছেন উল্টো কথা, ‘সেই ভাষাতেই কবিতা লেখা উচিত, যা মানুষের মুখের ভাষা।’ শঙ্খ ঘোষ একেই বলেছেন বোধহয়, ‘বাকছন্দ’।
কবির যেমন চিন্তা ও চেতনার এক নিজস্ব জগৎ আছে। বাস্তব অভিজ্ঞতাও তার চিন্তা চেতনাকে আলোড়িত করে, প্রভাবিত করে, এবং কবি তা প্রকাশ করেন, তার নিজস্ব কল্পনার মাধ্যমে। কার কাছে কবিতা কি ভাবে আসবে, সেটা নির্ভর করে কবির ব্যক্তি সত্তার উপর। তার মানসিকতা, রুচি,পাঠাভ্যাস,অধিত বিদ্যা, প্রিয় কবির প্রভাব, পারিপার্শিক পরিস্থিতি, সহযোগী সঙ্গ যাপন প্রভৃতি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

ভাষা হচ্ছে কবির ভাব প্রকাশের বাহন। কবিতায় সার্থক ভাষা ব্যবহার কবিতার প্রাণ সৃষ্টি করে। কবিতাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। যে কবির ভাষা ব্যবহার যত সুচারু গতিশীল সে কবির কবিতা পাঠকের কাছে ততো মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে, পাঠকের মনে জায়গা করে নেয় এবং দীর্ঘদিন তা পাঠকের স্মরণে থাকে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় , ‘শব্দকে ব্রহ্ম বলা হয়। কবিতায় কথাই (শব্দ) সব। কথায় কি না হয়? কবিতায় কথা মন্ত্রের মতো কাজ করে। কথার নড়চড় হলে কবিতা একদম দাঁড়ায় না। শব্দের মূল তত্ত্বের মধ্যেই নিহিত আছে কবিতার মূল কথা। কেননা, শব্দই হল কবিতার মূলাধার।’

মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কবিতার কথা বলতে গিয়ে একেই বলেছেন, ‘ শব্দে শব্দে বিবাহ বন্ধন।’ বিবাহ বন্ধন সুন্দর হলে যেমন সংসার সুখের হয়ে ওঠে , তেমনি শব্দ ও শব্দের মিলন সুন্দর হলে, কবিতাও সুখপাঠ্য ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বস্তুতঃ,শব্দ বাছাইয়ের উপর নির্ভর করে, তার পার্থক্য থেকেই এক কবিকে অন্য কবির থেকে আলাদা করে চেনা যায়।

জীবনান্দ দাশ যখন লিখলেন –

‘ফিরে এসো সুরঞ্জনা;
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে;’
‘নক্ষত্র, রূপালি, আগুন, ভরা, রাত’-এ সবই আমাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ। কবি তাকে সাজিয়ে তুললেন যে ভাবে, তাতে শব্দ হয়ে উঠল ব্রহ্মময়ী! কী অপরূপ শব্দ দ্যুতি-দীপ্ত!
কী অসামান্য কল্পনা-জাগানিয়া! প্রতিটি শব্দ যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল। নতুন অর্থ-বলয় তৈরি করে হয়ে উঠল অসামান্য। এমন-কবিতায় আলাদা কোনও ইঙ্গিত না-থাকলেও, জীবনানন্দ দাশের কবিতার ভাবনা অনুযায়ী, ‘তা আমাদের কল্পনার ও সৌন্দর্যবোধের পরিতৃপ্তি ঘটাচ্ছে।’
শব্দ যখন শক্তিমান রূপ-তপস্বীর হাতে না-পড়ে, কোনও আনাড়ি খোদাইকরের হাতে পড়ে, তা হয়ে ওঠে শব্দের জঞ্জাল। তিনি হয়ে উঠেন ‘শব্দ-দাস’ কিংবা ‘শব্দ-দানব’।

পাঠক যদি একটি কবিতার রূপক (Metaphor), ইঙ্গিতময়তা (suggestiveness), প্রতীক (symbol), চিত্রকল্প (imagery) প্রভৃতি বুঝতে পারেন, তবে তিনি কবিতার রস গ্রহণে সক্ষম হবেন।
শব্দের ধ্বনিমাধুর্য (Sweet-sound of words), স্পন্দন (vibratation), দোলান (swing), তাল (rhythm) এগুলি বজায় রেখে কবি সুচরুরূপে কৌশলে বিশেষভাবে সাজিয়ে একটা মায়াময় আবর্তন সৃষ্টি করেন, যা পাঠকের মনের মধ্যে একটা ঘোরের (illusion) সৃষ্টি করে। ফলে সে কবিতটা পাঠকের হৃদয়ের ভিতরে স্থান করে নেয় এবং তা দীর্ঘ দিন স্থায়ীভাবে অবস্থান করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *