ওদের জমানো কথা
হ্যাঁ ঠিকই বলেছ, আমি ওদের কথাই বলছিলাম। যারা প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে সবে উচ্চ বিদ্যালয় প্রবেশ করেছে। গুটি গুটি পায়ে বসত তাদের ক্লাসরুমে। কিছুদিনের মধ্যেই ওরা আমাদের কথাগুলো বুঝে যেত। নিয়মমতো প্রেয়ার লাইনে দাঁড়ানো, সময়ে স্কুলে প্রবেশ করা, ছুটিরঘণ্টা পড়লে হইচই করে বাইরে যাওয়া। কী মিষ্টি দেখতে ওদের। সবাইকে যেন এক মনে হয়। দুটো করে ঝুটি বাধা, সাদা সবুজ ড্রেস, সাদা মোজা। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জলের বোতল গলায় ঝুলিয়ে বন্ধুদের সাথে হাত ধরাধরি করে ছুটত। ক্লাসে ঢুকলে দিদিমণিকে একসঙ্গে নালিশ জানাত। কে আগে বলবে এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া । ধীরে ধীরে উঁচু ক্লাসে উঠে গেল। স্কুলে ওরা আজ বড়দিদি। ছোটদের শাসন করে। তারমধ্যে খুব খুশি হওয়া, ওরা ছোটদের বকতে পারছে, আবার আদরও করে। ছোটরা কেউ পড়ে গেলে, ছুটে গিয়ে তুলে হাত পায়ে জল দিয়ে আদর করে। এগুলো প্রতিদিন আমরা দেখতাম। দিদিমণিরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতাম। আমাদের খুব ভালো লাগতো ওদের এই বড় হওয়াটা। ধীরে ধীরে ওরাও স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে চলে যেত কলেজে। রাস্তায় দেখা হলে ছুটে এসে প্রণাম করত। কি অদ্ভুত সময় বয়ে যায়। আবার ছোটরা এসে স্কুলের ঘরগুলো ভরিয়ে তুলত। এভাবেই বছরের-পর-বছর কত মেয়ে স্কুলে আমাদের সামনে ধীরে ধীরে পরিণত হতো। স্কুল ছাড়ার সময় ওদের জন্য আমরাও কাঁদতাম। যদিও ওরা এগুলো জানতে পারত না। কতদিন পরে নানাভাবে তাদের ফিরে পাই।স্ব স্ব কাজে ওরা পারদর্শী হয়ে উঠেছে। কত ভালো কাজ জানে ওরা। বসে ভাবি, ওদের মধ্যে এই গুণ গুলো ছিল এতটা বুঝতে পারিনি। সুপ্ত থাকে ওদের সকল গুণ। নানা পেশায় ওদের যখন দেখি, আমি আপ্লুত হয়ে যাই। ওদের কচি মুখ গুলো মনে পড়ে। রোল কলের সময় নামগুলো মুখস্থ। তাই নাম আর মুখের মধ্যে মিল খুঁজে পাই। কত কথা ওদের মনের মধ্যে হত। সব দিদিদের সাহস করে বলতে পারত না। আমরা কয়েকজন ওদের সাথে খুব মিশতাম। কখনো কখনো ওদের মনের ইচ্ছা গুলো আমাদের বলতো। এইভাবে আজও ওদের সঙ্গে আমি মিশে আছি। স্কুলে শিক্ষিকা রূপে আমি সফল। আমার মেয়েরা আজও মনে রেখেছে আমায়। প্রতিটি টিচার্স ডে বিজয়াদশমীতে ওরা আমাকে প্রণাম জানায়। এখানে সফলতা।