এসে বলবেন
নেতাজী ফিরে এসে বলবেন তখন নির্বাচিত পুরবোর্ড গঠনের আগেও ব্রিটিশরা সব সময় শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগী ছিলেন। শহরের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন । যেমন, দিনে দু’বার রাস্তা ঝাঁট দেওয়া হত। কোথাও কোথাও জল দিয়ে রাস্তা ধোওয়া হতো। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে জঞ্জাল উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলা হত নির্দিষ্ট জায়গায়। এমনকি, মানুষ যাতে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ না করে, সে জন্য মোড়ে মোড়ে ছিল শৌচাগার। আর ছিল জঞ্জাল ফেলার ট্রেন। কিন্তু সেই ট্রেন ব্রিটিশ বাসিন্দাদের এলাকার পাশ দিয়ে যেত না। যেত উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে দিয়ে। সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হত। রাজাবাজার ও উল্টোডাঙা মোড়ে দুটি প্ল্যাটফর্ম ছিল।আবর্জনার রেলগাড়ি পরিষেবা বন্ধ করে সরাসরি ঘোড়ার গাড়িতে আবর্জনা ফেলা শুরু করি ধাপায়। এখন দেখছি যেখানে সেখানে জঞ্জাল। দেশের এই হাল?
পুরসভা যে সব পরিষেবা দেয় বা উন্নয়নের কাজ করত, তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ১৯২৪ সালের ১৫ নভেম্বরে প্রকাশ করি সংবাদপত্র ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট’। যার মূল কান্ডারি ছিলাম আমি সুভাষ।
ওই গেজেটে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, দরিদ্রদের জন্য চিকিত্সা, সস্তায় খাঁটি খাবার ও দুধ সরবরাহ, বস্তি এলাকায় উন্নততর পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা, দরিদ্রদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্প, সংযোজিত পুর এলাকার উন্নয়ন, যানবাহন ব্যবস্থার উন্নতি এবং খরচ কমিয়ে প্রশাসনের উন্নয়নের উল্লেখ ছিল।
এইরকম উন্নয়ন ব্যবস্থার কথা এখনকার দেশ নায়ককে ভাবতে হবে।এইভাবে পরিচালনা করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ঘোর বর্ষার মধ্যে একদিন গামবুট পরে অফিসে চলে এসেছিলাম।বৃষ্টি শুরু হতেই চলে এসেছিলাম ঠনঠনিয়ায়। আমাকে দেখে ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার, কর্মীরাও সাততাড়াতাড়ি এলেন সেখানে। জল নামাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু হল। মানুষের আস্থা কী করে আদায় করতে হয় এবং পুরসভার কর্মীদের কী ভাবে সর্বাত্মক ভাবে কাজে নামাতে হয়, সেই কৌশল জানা ছিল আমার। এখন দেশবাসী শুধু ঘটা করে জন্মদিন পালন করে মুখে আমার আদর্শ আওড়ায়।আদর্শকে মানতে পারে না জীবনে। মানুষের আস্থা কি করে আদায় করতে হয়, সকল কর্মীকে কিভাবে কাজে নামাতে হয় সেই কৌশল রপ্ত করতে পারেনি দেশবাসী। লজ্জা বোধ হচ্ছে আজ।
পুর পরিষেবার টাকার যোগান দিতে নিজের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছিলাম আমি কলকাতা পুরসভার কর্তা সুভাষচন্দ্র বসু। সারা বিশ্ব যাঁকে ‘নেতাজি’ বলে। কাউন্সিলর হওয়ার পর পুরসভার সিইও হলাম। পুরসভার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না । প্রয়োজনীয় খরচ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তা হত পরিষেবা দেব কিভাবে মানুষকে? তাই খরচে রাশ টানার জন্য নিজের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছিলাম। এই ভাবনা স্বাধীন ভারতে আজও দেখছি কেউ ভাবতে পারে না।