Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta » Page 10

একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta

খাবার ঘরে সবাইকেই পাওয়া গেল। শুধু সত্য নেই। উপস্থিত সবার চোখে-মুখে হালকা টেনশন।

সারারাত তাণ্ডবের পর ঝড়ের দাপট ধীরে ধীরে কমছে। একেনবাবু বসলেন তুঙ্গনাথবাবুর পাশের চেয়ারে। খেতে খেতেই সবার উদ্দেশে বললেন, “আগেই বলেছি খাওয়া-দাওয়ার পর আপনাদের কয়েকটা প্রশ্ন করব, প্রত্যেককে আলাদা করে।” তারপর তুঙ্গনাথবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি প্রথম এলে অসুবিধা আছে, স্যার?”

“না, না, অসুবিধার কী আছে? যা দরকার তা তো করতেই হবে। তুমি কি এর মধ্যে কোনো ফাউল প্লে দেখছ?”

“জানি না স্যার, হয়তো নেই। সেটাই নিশ্চিত হতে চাই। এমনিতে আপনার ঘরে গিয়েই প্রশ্নগুলো করতাম, স্যার, কিন্তু এখন তার উপায় নেই। তাই আমার ঘরে একটু আসতে হবে।”

“বেশ।”

ব্রেকফাস্ট শেষ করে তুঙ্গনাথবাবুকে নিয়ে একেনবাবু নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেন।

“প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিই স্যার, আপনি আমার চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ। যদি মনে করেন প্রশ্নের বাইরেও আমার কিছু জানা উচিত, প্লিজ সেগুলো বলবেন… আমার প্রশ্নের অপেক্ষা করবেন না।”

“ঠিক আছে।”

“আমার প্রথম প্রশ্ন স্যার, সত্যবাবু কি রাতে আপনার ঘরে শুয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“কেন, স্যার?”

“ও খুব দুশ্চিন্তা করছিল যদি আমার ওপর আবার মার্ডার অ্যাটেম্পট হয়! রাতে জোর করে ওর ঘরে শুতে পাঠিয়ে দিল।”

“আমি একটু কনফিউজড স্যার, তার আগে তো ঋদ্ধিবাবু একই প্রোপোজাল নিয়ে আপনার কাছে গিয়েছিলেন, আপনি রাজি হননি।”

“ঋদ্ধি আমার ছেলে হতে পারে, কিন্তু ও কুলাঙ্গার। কতরকম ঠগ-জোচ্চুরি যে করেছে! কত বার ওকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে হয়েছে বলার নয়। অনেকদিন আগেই ত্যাজ্যপুত্র করতাম, শুধু অরুন্ধতীর কথা ভেবে করিনি। ওকে আমার ঘরে রাতে থাকতে দিলে কী যে চুরি করত কে জানে! আমার জীবন নিয়ে ও চিন্তিত? আমি মরলেই তো ওর লাভ। বাড়িটা প্রোমোটারকে দিয়ে দেবে।”

“কিন্তু সত্যবাবুর সঙ্গে তো মাত্র ক’দিন আগে আপনার প্রথম দেখা হয়েছে! তাঁকে থাকতে দিলেন স্যার?”

“সত্যর মাকে চিনতাম, অনারেবল মেয়ে ছিল নুর। শুধু সামাজিক বাধার জন্য ঘরে আনতে পারিনি। তাও যোগাযোগ রেখেছিলাম কিছুদিন।”

“বুঝলাম স্যার। কিন্তু কী করে আপনি বুঝলেন সত্যবাবু আপনার সন্তান?”

“প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা… ও যে জন্মাতে পারে সে সম্ভাবনা অবশ্যই ছিল, কিন্তু নুর কোনোদিন জানায়নি, আমিও কখনো জিজ্ঞেস করিনি। সত্য যখন জানাল ওর মায়ের নাম এবং মা আর বিয়ে করেনি, তখনই বুঝতে পারলাম। আর কী চমৎকার ছেলে!” তুঙ্গনাথবাবু মাথা নীচু করলেন।

“আমার খুব খারাপ লাগছে আপনাকে সত্যবাবু সম্পর্কে প্রশ্ন করতে। আপনি কত কষ্ট পাচ্ছেন অনুমান করতে পারছি, স্যার। আসলে…” বলতে বলতে একেনবাবু মাঝপথে থেমে গেলেন।

“যা প্রশ্ন করার করে নাও।”

“হ্যাঁ স্যার, আপনার কী মনে হয়, এটা খুন না সুইসাইড?”

“কী করে বলব বলো, কিন্তু খুন হল অথচ পাশের ঘর থেকে কোনো আওয়াজ পেলাম না… একটু অবিশ্বাস্য! আমি অবশ্য ঘুমের ওষুধ খাই, তাও।”

“আমিও তাই ভাবছি স্যার, কিন্তু সুইসাইড কি এভাবে করা যায়? মানে গলায় বেল্ট জড়িয়ে?”

“হুঁ।”

“আর বেল্টটাই-বা উনি পেলেন কোথায়?

“ঘরের আলনায় বেশ ক’টা পুরোনো বেল্ট ঝোলানো আছে। এককালে পরতাম, এখন আর পরি না। তারই একটা হয়তো নিয়েছিল।”

“যাক, এটা অন্তত জানা গেল স্যার। তবে সুইসাইড কেন করতে গেলেন, সেটাও একটা প্রশ্ন।”

“ওর নিজের পরিবারের সকলে মারা গেছে। মায়ের মৃত্যুতে মন খুব খারাপ ছিল। তা ছাড়া আমার পরিবারের সবাই ওকে হেনস্থা করছিল।”

“হুমম। ভালোকথা স্যার, কখন আপনারা ঠিক করলেন, ঘর পালটাবেন?”

“বেশ রাতে। ঝড়ের আওয়াজে ঘুম আসছিল না, সেইসঙ্গে আবার খট খট শব্দ… আগেও এরকম শুনেছি। বারান্দায় উঠে দেখার চেষ্টা করছিলাম কেউ ঢুকেছে-টুকেছে কিনা। আমার দরজা খোলার শব্দে সত্যও উঠে বারান্দায় এল। ওরও ঘুম আসছিল না। আবার খট খট আওয়াজ শুনেছি বলায় জোর করে বলল ওর ঘরে শুতে। ও আমার ঘরে শোবে। বুঝতে পারি, ওর আর কেউ নেই… ভয় পাচ্ছিল আমাকেও না হারায়! তখনই বলল ঝড় কমলেই চলে যাবে… অরুন্ধতী আর ঋদ্ধি কিছুক্ষণ আগে এসে ওকে নাকি শাসিয়ে গেছে! বললাম সেটা কখনোই ঘটতে দেব না।”

‘বুঝলাম স্যার, আরেকটা প্রশ্ন, আপনি কি রাতে জল খেয়েছিলেন?”

“না, কেন?”

“ঘরে জলের গ্লাসটা ফাঁকা ছিল বলে বলছি।”

“তাই নাকি? কল্পনা হয়তো রাতে জল দিয়ে যায়নি। সবারই হস্টাইল অ্যাটিচুড ছিল ওর ওপর।”

“আই সি।”

“এর আগে ঋদ্ধি একসময়ে অপমান করে ওকে বলেছিল সম্পত্তির লোভে

আমার ছেলে সেজে এসেছে।”

“সেটা কি গত রাতেই? যখন চলে যেতে বলেছিলেন?”

“না, তার আগে। কবে মনে নেই। সত্য সরল মনের ছেলে। জিজ্ঞেস করেছিল আমি উইলে কিছু লিখে না দিলে ও সম্পত্তি পাবে কেন! বুঝিয়েছিলাম অবৈধ সন্তান হলেও আমার সম্পত্তিতে ওর পুরো দাবি আছে। ও বলল সেসব কিচ্ছু চায় না!”

“উনি কি, স্যার, উইল নিয়ে চিন্তা করছিলেন?”

“না, তেমন কিছু না। জিজ্ঞেস করেছিল উইল লেখা খুব কঠিন কিনা। আসলে আমার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাইছিল।

“ভেরি ইন্টারেস্টিং, স্যার। আপাতত এই যথেষ্ট। অনেক ধন্যবাদ স্যার। এখন দেখি ম্যাডাম…। আর একটা কথা স্যার, আপনি ঘুমের ওষুধ খান বললেন। আপনার ওষুধ-বিষুধ কোথায় থাকে?”

“স্টিলের দেরাজে।”

“তার চাবি আপনার কাছেই থাকে?”

“হ্যাঁ, কেন বলো তো?”

“দেখলাম বন্ধ, তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“ওতে অনেক দরকারি কাগজ রাখি, তাই বন্ধ রাখি। চাবিও আমার সঙ্গে থাকে সব সময়ে।”

“এখনও আছে স্যার?”

তুঙ্গনাথ পকেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বললেন, “হ্যাঁ।”

“যাক স্যার। আমি ভাবছিলাম সত্যবাবুকে খুন করে কেউ কিছু চুরি করে নিয়ে গেল কিনা।”

“খুন! তুমি কি ভাবছ সত্য খুন হয়েছে?”

“না, না স্যার, তবে সব অ্যাঙ্গেল থেকেই তো ভাবতে হবে।”

“আর কিছু?”

“না, স্যার।”

তুঙ্গনাথ উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।

“সরি স্যার, এক মিনিট। আর একটা প্রশ্ন।” একেনবাবু দাঁড়িয়ে পড়লেন। সারা মুখে অসহিষ্ণুতা, তুঙ্গনাথ থামলেন। “বলো।”

“স্যার, সত্যবাবু কি সিগারেট খেতেন?”

“সিগারেট? নাঃ, কোনোদিন তো খেতে দেখিনি। কেন?”

“না, স্যার। মানে আজকালকার ইয়ং ছেলে তো!”

একটু যেন বিরক্ত হয়েই তুঙ্গনাথ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

সবাইকে নিজের ঘরে আসতে বললেও একেনবাবু নিজেই গেলেন অরুন্ধতী দেবীর কাছে। মহিলা অল্প কথা বলেন। এখন সব কিছু নিয়ে আরোই আপসেট। সত্যর ওপর খুশি ছিলেন না, দু-একটা কথাতেই স্পষ্ট হল। তবে সত্যর থেকেও রাগ তুঙ্গনাথবাবুর ওপর বেশি, এত বছর ধরে ওঁর জীবনে এই কপটতা চালিয়ে যাবার জন্য। তার থেকেও অপমানজনক সবার সামনে গলা চড়িয়ে সেসব ঘোষণা করেছেন। ডিগ্নিফায়েড মহিলা, আত্মমর্যাদায় লেগেছে।

একেনবাবুর প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করলেন, “হ্যাঁ, ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুব বিরক্ত। কিন্তু সেজন্য ছেলেটা যে সুইসাইড করবে ভাবিনি।”

“সুইসাইড ভাবছেন কেন ম্যাডাম?”

“তা না হলে কী?” অরুন্ধতী দেবীর দৃষ্টিতে শঙ্কা

“সেটা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে ম্যাডাম। …একটা প্রশ্ন, কাল কি সত্যবাবুর ঘরে গিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“কখন ম্যাডাম?”

“ঘড়ি ধরে বলতে পারব না। এই সাড়ে আটটা-ন’টা নাগাদ।”

“কেন ম্যাডাম?”

“ওর আসাতে কী হচ্ছিল দেখেছ তো! বেশ কড়া করেই বলেছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে। সংসারে আর অশান্তি বাড়াতে আমি দেব না।”

“সত্যবাবুর বডি পাওয়া গেল তুঙ্গনাথবাবুর ঘরে, সেটা কেন জানেন ম্যাডাম?”

“ওরা ঘর বদলাবদলি করেছিল, আজ সকালে এসে কথাটা বলল।” “তুঙ্গনাথবাবু?”

“হ্যাঁ।”

“ম্যাডাম, আমিও দেখলাম ওঁকে আপনার কাছে যেতে। আর কিছু বললেন?”

“নানান কথা, ঠিক তোমাকে শোনাবার মতো নয়। তবে ঋদ্ধিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিল। ছেলেটার সুইসাইড করার পেছনে ঋদ্ধি কোনোমতে জড়িয়ে আছে কিনা…

“সেটা কেন বললেন?”

“বুঝলাম না। জিজ্ঞাসাও করিনি। ওর সঙ্গে আমার সদ্ভাব নেই- এর মধ্যে লুকোচুরির কিছু নেই। তবে ঋদ্ধিকে নিয়ে আমাদের সবারই চিন্তা।”

“থ্যাংক ইউ, ম্যাডাম,” নমস্কার করে একেনবাবু বেরিয়ে এলেন।

এরপর ডাক পড়ল শিখার।

“বলুন কী জানতে চান, কানুদা।”

“প্রশ্ন করতে খুব খারাপ লাগছে শিখা, দেখো তো কী মুশকিল হল!”

“তা আর কী করা, কানুদা। আমার ভালো লাগছে আপনার পরিচয় পেয়ে এখানকার পুলিশের খপ্পরে পড়লে আমার হয়তো আর কাজেই ফিরে যাওয়া হবে না।”

“আরে না, তা কেন। ভয় তো শুধু যদি কোনো ক্রাইম হয়ে থাকে, তাই না? আচ্ছা, তুমি সত্যবাবুকে শেষ কখন দেখেছিলে?”

“ডিনার টেবিলে বাবা যখন হঠাৎ বলে উঠল, ‘সত্য আমার ছেলে।” মনে হল মা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে। তারপর থেকে মায়ের কাছেই ছিলাম, ওঁর দিকেই চোখ রাখছিলাম। আপনারা অতিথি, আপনাদেরও খোঁজ করিনি!”

“তাতে কী হয়েছে? আমরা একদম ঠিক আছি। আচ্ছা, কাল রাতে কোথায় শুয়েছিলে?”

“নিজের ঘরেই।”

“মা”র ঘর থেকে কখন গেলে?”

“একটু দেরি করেই প্রায় দশটা নাগাদ।”

“তোমার মা কি সারাক্ষণ ঘরেই ছিলেন?”

“না, কয়েক মিনিটের জন্য সত্যর ঘরে গিয়েছিলেন এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলতে।”

“নিজের থেকেই?”

“ঠিক তা না,” শিখা একটু ইতস্তত করল। “দাদা পাগলামি করছিল। মাকে বলছিল বাড়ি থেকে না গেলে সত্যকে খুন করবে। আমি জানি এগুলো মুখের কথা, কিন্তু মা একটু ঘাবড়ে গিয়েই সত্যকে চলে যেতে বলতে গিয়েছিলেন।”

“ঋদ্ধিবাবুর এত রাগের কারণ কী?”

“আপনাকে বলতে খারাপ লাগছে, দাদা একেবারে উলটে পালটে ঠাকুরদার স্বভাব পেয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল, কোনো রোজগার না করে বাবার টাকার ওপর বসে জীবন কাটাতে চায়। তাই বাড়িটা বিক্রি করতে উৎসুক। ওর ধারণা— সত্য ওর টাকায় ভাগ বসাতে এসেছিল!”

“তোমার তাতে কোনো সমস্যা নেই?”

“আমি নির্লোভ নই। বাইরের কেউ এসে ঠকিয়ে আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করবে তা মানব না। তবে তা নিয়ে সারাক্ষণ ভাবিও না। বাবার সঙ্গে আমার মনের মিল কোনোদিন হয়নি। এমনকী মায়ের সঙ্গেও আমার মানসিক বন্ধন তেমন শক্ত নয়। কিন্তু সবার সামনে মায়ের সম্মতি না নিয়ে হঠাৎ ওইভাবে সত্যকে সস্তানের স্বীকৃতি দেওয়া আমার অসহ্য লেগেছে।

“সত্যবাবু কি সম্পত্তির লোভে এখানে এসেছিলেন বলে তোমার মনে হয়েছিল?”

“জানি না। তবে বাবার সঙ্গে সত্যর এই দহরম-মহরম বিরক্তিকর।

“কী মনে হয়, সত্যবাবুর মৃত্যু কি আত্মহত্যা?”

“আমার কোনো ধারণাই নেই… তবে আত্মহত্যাই মনে হয়।”

“কেন বলো তো?”

শিখা ভেবে-চিন্তে সংযত উত্তর দিল। “যে রাতে সত্য এসেছিল, সেই রাতেই বাবার ঘরে কেউ ঢুকেছিল— নিশ্চয়ই কাগজপত্র দেখতে বা সরাতে। আমার ধারণা, সেই জন্যেই ও এসেছিল। বাবা জেগে যাওয়াতে ভয় পেয়ে গলায়…” কথাটা শেষ না করে বলল, “পরে প্রচণ্ড আত্মগ্লানিতে আত্মহত্যা করেছে। তা ছাড়া ও যে সত্যি বাবার ছেলে তাই-বা নিশ্চিত হব কেমন করে! আমার মনে হয় লোকটা ফ্রড।

একেনবাবু বিচক্ষণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। “হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে। ঠিক আছে— আমার আর কিছু জানার নেই। না, না আছে, তোমার বাবা কি ঘুমের ওষুধ খেতেন?”

“হ্যাঁ, নিয়মিত। গোপাল তো নিয়েও এল সেদিন – যেদিন খন্যান স্টেশনে কী একটা কাজে গিয়েছিল। বাবার থিয়োরি, ওখানেই নাকি ভালো ওষুধ পাওয়া যায়, এখানকার দোকানের ওষুধে ভেজাল।”

বাকি রইল ঋদ্ধি। ঘরে ঢুকেই একেনবাবুকে চার্জ করল, “আমাকে একবারে শেষে ডাকলেন কেন?

“একজনকে তো স্যার শেষে ডাকতেই হবে।”

“আবার ‘স্যার’ বলছেন কেন? স্যার তো আপনি।”

‘কী যে বলেন, স্যার! হ্যাঁ, যে কথা নিয়ে আলোচনা করতে ডেকেছি… আপনি সত্যবাবুকে শেষ কখন দেখেছিলেন?”

“কাল রাতে।”

“কখন?”

“এই ন’টার পরে।”

“কেন স্যার?”

“মা কিছু বলেননি আপনাকে?”

“আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।”

“আসলে আমাদের মধ্যে হঠাৎ এসে অশান্তি সৃষ্টি করায় মা সত্যর ওপর খুব রেগে গিয়েছিল। ওকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলতে মা ওর ঘরে গিয়েছিল। আমি মায়ের পেছন পেছন গিয়েছিলাম। প্রথমে মা কথা বলল, তারপর আমি ঘরে ঢুকেছিলাম।”

“দাঁড়ান স্যার, দাঁড়ান, আপনি রাগ করেননি?”

“নিশ্চয় করেছিলাম, নইলে গেলাম কেন?”

“আপনার রাগের কারণটা কী?”

“ও বাবাকে ঠকিয়ে সম্পত্তি বাগাবার চেষ্টা করছিল। কোত্থেকে না কোত্থেকে এসে বাবাকে দিয়ে বলাল ও বাবার ছেলে? এটা হিপ্নোটিজম!”

“বুঝলাম। সত্যবাবু না থাকায় এখন তো সম্পত্তি ভাগ হওয়ার দরকার নেই।”

“আপনি কী ইমপ্লাই করছেন?” ঋদ্ধির গলায় ভয় আর রাগ।

“কথাটা ঠিক না?”

“সেটা অস্বীকার করছি না, কিন্তু তার জন্য আমি দায়ী নই।”

“সেটা তো পুলিশ এসে বিচার করবে।”

এটা শুনে একমুহূর্ত চুপ করে থেকে ঋদ্ধি ভেঙে পড়ল, “বিশ্বাস করুন স্যার, আমি সত্যিই কিছু জানি না। আমি ফিরে এসে মা আর শিখার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে শুতে চলে যাই। শিখা সাক্ষী দেবে। আমি জানতামও না সত্য যে বাবার ঘরে শুয়েছে।”

“আপনি কি সত্যবাবুকে খুন করবেন বলে শাসিয়েছিলেন?”

“না।”

“না? একটু ভেবে বলুন।”

“না… মানে হ্যাঁ… কিন্তু… কিন্তু সেটা রাগ করে মাকে বলেছিলাম… এরকম আমি অনেক সময়েই বলি, ওগুলো কথার কথা। আপনাকে এটা বিশ্বাস করতেই হবে কানুবাবু, প্লিজ!”

“আপনারও কি মনে হয় সত্যবাবু আত্মহত্যা করেছেন?”

“অবশ্যই। বাবাকে খুন করতে গিয়েছিল, আর দু-এক দিনে ধরা পড়ে যেত। সেই কেলেঙ্কারির ভয়ে।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *