Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta » Page 8

একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta

টিম হোরে বা তিমির হোড় কেয়াকে দেখেই হইহই করে উঠল। মিডল স্কুল থেকে বন্ধু। কেয়া এদেশে এসেছে তেরো বছর বয়সে, কিন্তু তিমিরের জন্ম এদেশেই।

কেয়া বাংলাতেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল।

চমৎকার বাংলা বলে তিমির। সেটা বলাতে বলল,”না বলে উপায় আছে। বাবা-মা কেউই বাড়িতে ইংরেজিতে কথা বললে উত্তর দিত না। বাড়িতে সবসময়ই বাংলা আর রবীন্দ্রসঙ্গীত। ইংরেজি অক্ষর চেনার আগে বাংলা অ-আ-ক- খ চিনেছি।”

“অ্যামেজিং স্যার, ট্রলি অ্যামেজিং। দেশে এখন তার উলটো!”একেনবাবু মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন।

আমি তিমিরকে বললাম,”আপনি কিন্তু একেনবাবুর ‘স্যার’-টা ইগনোর করবেন,ওটা বারণ করেও থামাতে পারবেন না।”

তিমির কথাটা শুনে হেসে ফেলল। তারপর একেনবাবুকে বলল, “আপনার প্রশংসা ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের কাছে এত শুনেছি, যখন শুনলাম আপনি আসছেন- আই ওয়াজ সো এক্সাইটেড। সত্যি, ইট ইজ এ প্রিভিলেজ টু মিট ইউ।”

“কী যে বলেন স্যার, “ একেনবাবু লজ্জা পেলেন।

“আপনি জানেন কি না জানি না, আপনার মুনস্টোন মিস্ট্রি’র কেসটা এখন নিউ ইয়র্কের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে পড়ানো হয়।”

“তাই নাকি!” আমি অবাক হয়ে বললাম। একেনবাবুর লজ্জা লজ্জা মুখ দেখে বুঝলাম উনি বোধহয় সেটা জানেন।

“আমিও ওই কেস-হিস্ট্রিটা পড়েছি। ব্রিলিয়ান্ট অ্যানালিসিস আর সাবসিকোয়েন্ট ডিডাকশন।”

“আমার একার কৃতিত্ব নয় স্যার, বাপিবাবু আর প্রমথবাবুও ছিলেন আমার সঙ্গে।”

“মাই গুডনেস, সেটা তো আমি জানতাম না। আর কেয়া, তুমি যে এই বিখ্যাত ব্যক্তিদের চেনো এতদিন আমাকে বলনি কেন!”

“আমার কতগুলো সিক্রেটের মধ্যে এটা একটা।”কেয়ার মুখে দুষ্টু হাসি। “এবার আসল কথায় আসি স্যার, আমরা এসেছি অজয় দত্তের মার্ডারের ব্যাপারে কিছু জানতে।”

তিমির গম্ভীরভাবে বললেন, “অফিশিয়ালি, নো কমেন্ট। কিন্তু আপনারা এসেছেন স্টুয়ার্ট সাহেবের কাছ থেকে, তার থেকেও বড় কথা কেয়া নিয়ে এসেছে, সুতরাং কিছু তো বলতেই হবে…তবে সব কিছুই বলব আন- অফিশিয়ালি।”

“ঠিক আছে স্যার, আমরাও আন- অফিশিয়ালি আপনাকে সাহায্য করব।”

“বেশ, এবার বলুন কী জানতে চান।”

“অজয়বাবু কখন কোথায় এবং কীভাবে খুন হন? এছাড়া আর যা মনে হয় আমাদের কাজে লাগতে পারে –সেগুলোও স্যার বলুন।”

“খুন হয়েছিলেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে। রোববার সম্ভবত রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ। বডিটা পুলিশের চোখে পড়েছিল রাত দেড়টাতে রাউন্ড দিতে গিয়ে। একেবারে সামনে থেকে কেউ গুলি করেছিল। হি ওয়াজ ডেড অন দ্য স্পট।

এছাড়া দেখি আর কী কী ইনফরমেশন আপনার কাজে লাগতে পারে…। হ্যাঁ, অজয় দত্ত ‘বার্গার হাউস’ বলে একটা ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার ছিলেন। মায়ের অসুখ বলে দেশে গিয়েছিলেন। কিছুদিন বাদে ছুটি এক্সটেন্ড করিয়েছিলেন বিয়ে করবেন বলে। যেদিন মারা যান সেদিনই দুপুরবেলা ফিরেছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা দোকানে। এগুলো সব কনফার্মড দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে। দোকান বন্ধ হয়েছিল রাত সাড়ে এগারোটায়। দোকান বন্ধ করে বেরোতে বেরোতে প্রায় রাত বারোটা হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে নিজের গাড়ি ছিল না। দোকানের যে ছেলেটি ওকে রাইড দিয়েছিল, তার বাড়ি ছিল দোকান থেকে মাইল দশেক দূরে একটা মোড়ের মাথায়। সেখান থেকে অজয় দত্তের বাড়ি হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেক। অজয় দত্তকে যে খুন করে সে মনে হয় জানত ওই সময় অজয় দত্ত আসবেন। দরজার কাছে আসতেই দুটো গুলি।”

“অ্যাপার্টমেন্টের আর কেউ সেটা টের পায়নি।”

“ যে ছেলেটি রাইড দিয়েছিল….”

“সে ক্লিয়ার। তার কোনো মোটিভ নেই। অপরচুনিটিও ছিল না। ছেলেটার বাড়িটা তো বলেছি একেবারে মোড়ের ওপরে। ওর মা জেগেছিলেন। বারোটা পঁচিশেই সে ঘরে ঢুকেছে।”

“বুঝলাম স্যার।”

“তবে দুটো জিনিস আমাকে ভাবাচ্ছে।”

“সেগুলো কী স্যার?”

“এক নম্বর, রবিবার অজয় দত্ত দেশ থেকে ফিরেই আমাকে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বলল, কী একটা ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে চান। সে ব্যাপারটা কী, আমার কোনো ধারণা নেই। কিন্তু মনে হয় ব্যাপারটা ইম্পট্যান্ট, নইলে দেশ থেকে ফিরেই যোগাযোগ করতে চাইবেন কেন? দু’নম্বর হল, অজয় দত্ত দোকানের মালিককে বিয়ে করার নাম করে ছুটি বাড়ালেও উনি নাকি একটি রাশিয়ান বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে দেশে গিয়েছিলেন। খবরটা ঠিক, নেভাডাতে কাল রাত্রেই খোঁজ নিয়ে জেনেছি। প্রশ্ন হল, এ দুটোর মধ্যে কোনো কানেকশন আছে কি না!”

“ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার।”

“যাই হোক, সেই রাশিয়ান মহিলাকে আমরা আজ সকালে কনট্যাক্ট করেছি। শি ইজ শ। মনে হল এমন কিছু একটা শঙ্কা করছিলেন।

“ওঁর নাম নাদিয়া,” আমি বললাম।

“আপনারা তাঁকে চেনেন?” টিম জিজ্ঞেস করল।

“আমাদের নেইবার।”

“উনি নাকি দুটো থ্রেটনিং ই-মেল পেয়েছিলেন। তার কপিও আমরা সকালে পেয়েছি। কে ওটা পাঠিয়েছে ওঁর কোনো ধারণাই নেই। একটা নাম আমরা পেয়েছি যে ওঁকে বহুবার বিয়ে করতে চেয়েছিল। লোকটা এখানকার একটা মোটরবাইক গ্যাং- এর মেম্বার। গ্যাংটা রেসিস্ট। একটা সাদা মেয়ে ওকে বিয়ে না করে একটা বাদামি চামড়াকে বিয়ে করেছে, তার পক্ষে এ ধরনের বার্তা পাঠানো অসম্ভব নয়!”

“কোথায় থাকেন স্যার এই লোকটি?”

“দলের সবাই উডস্টকের কাছাকাছি থাকে। ইন ফ্যাক্ট, নাদিয়ার আগের স্বামীও ওই রেসিস্ট গ্যাং- এর মেম্বার ছিল। এখন আমাকে বার করতে হবে, এই লোকটার কোনো অ্যালিবাই আছে কি না।”

“একটা কথা স্যার, ম্যাডাম নাদিয়ার প্রথম স্বামী মারা যান কীভাবে?”

“সেও আরেকটা ব্যাপার। পয়েজনাস মাশরুম খেয়ে। ওঁর স্বামী যার নাম ছিল অলিভার, সে এমনিতে ছিল অটো-মেকানিক। কিন্তু সময় পেলেই জঙ্গলে জঙ্গলে গিয়ে মাশরুম সংগ্রহ করত। এদিক ওদিক কয়েকটা রেস্টুরেন্টে বিক্রিও নাকি করত। হয়ত বাছতে ভুল করেছিল। কিন্তু আমার মনে একটা সন্দেহ আছে।”

“কেন স্যার?”

“হয়ত জেনেশুনেই বিষাক্ত মাশরুম খেয়েছিল। কারণ ‘ডেস্ট্রয়িং এঞ্জেল’ মাশরুমকে চিনতে না পারা, যারা মাশরুম সংগ্রহ করে, তাদের পক্ষে অস্বাভাবিক। সুতরাং ডেথটা হয়তো অ্যাকসিডেন্ট নয়, সম্ভবত সুইসাইড।”

“খুন বলে মনে হয়নি স্যার আপনাদের?”

“ওই কেসটাতে আমি ছিলাম না। ধরে নিচ্ছি, সেটা সন্দেহ করার বিশেষ কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। তবে এও বলি –আগে যিনি চিফ ছিলেন, তিনি ওই দলটাকে একেবারেই পছন্দ করতেন না। সব ক’টা মরলেই বোধহয় খুশি হতেন….জাস্ট কিডিং!”

“বুঝলাম স্যার। আর একটা প্রশ্ন স্যার, অ্যাকসিডেন্ট না হয়ে সুইসাইড হলে তো ইন্সিওরেন্স কোম্পানির সুবিধা –তাই না?”

“এক্ষেত্রে নয়। অলিভার লাইফ ইন্সিওরেন্স করেছিল মারা যাবার বছর পাঁচেক আগে। সুতরাং সুইসাইড ক্লজটা অ্যাপ্লিকেব্ল হবে না।”

“তাহলে তো চুকেই গেল স্যার। আচ্ছা স্যার, আরও একটা কথা, অজয় দত্ত ওঁর স্ত্রীর কাছে ম্যানহাটানে না গিয়ে এখানে এলেন কেন?”

“সেটাই আমার কাছে রহস্য। তবে এরকম দু’-একটা কেস আমি দেখেছি। এখানে বিয়ে করে দেশে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আবার বিয়ে করা। হয় বাবা-মা’র চাপে পড়ে বা মেয়ের বাড়ি থেকে অনেক টাকা-কড়ি পাওয়ার লোভে। তারপর এখানকার পাট চুকিয়ে দেশে ভ্যানিশ হওয়া। আবার অন্যটাও হয়।”

“স্কাউন্ড্রেল!” কেয়া ভীষণ রেগে বলল।

“আই এগ্রি।”

“অজয়বাবুর একজন বন্ধু ছিলেন সুব্রত বলে, তিনি হয়তো স্যার এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন।”

“তার খবর আমরা পেয়েছি, উনি এখন নিউ ইয়র্কে একটা কোম্পানিতে কাজ করছেন। আজ সকালেই ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনিও খবরটা শুনে ভীষণ আপসেট। নাদিয়া আর এজের সঙ্গে উনিও নেভোডাতে গিয়েছিলেন। নাদিয়ার প্রথম স্বামী অলিভার ও তাদের বন্ধুদেরও উনি হাড়ে হাড়ে চেনেন। ওদের ভয়েই উনি আর এজে উডস্টক ছেড়ে কিংস্টনের দিকে চলে আসেন। ওদের তল্লাটে কেন বাদামি চামড়া ঢুকেছিল –তাতেই ওদের রাগ! রাত্রে বাড়ির সামনে এসে বিয়ারের বোতল ভেঙে রাখত, টেলিফোনে গালিগালাজ করত, অশ্রাব্য কুশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে ই-মেল পাঠাত! পুলিশে জানিয়ে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। যেদিন ওদের বাড়ির সামনে একটা পেট্রলের ক্যান জ্বালাল, সেদিনই ভয় পেয়ে ওরা দু’জন ঠিক করেন বাড়ি ছাড়বেন। এখন বুঝতে পারছেন, কেন আগের চিফ ওদের এত অপছন্দ করত।”

“এরকম এখনও এদেশে হয় স্যার?”

“নিশ্চয়ই কোনো কোনো জায়গায় হয়। আমি ভাবিনি এদিকে হতে পারে বলে। কল্পনা করতে পারেন, ছয়ের দশকে এটা ছিল হিপিদের স্বর্গ! বাবা- মায়ের কাছে শুনেছি জোন বায়াজ, জ্যানিস জপলিন, জিমি হেন্ড্রিক্স- এঁরা সব এখানে গান গেয়ে গেছেন! যাই হোক, এগুলো কয়েক বছর আগের ব্যাপার। এখন এই গ্যাং একেবারেই ঠান্ডা।”

“সুব্রতবাবুর সঙ্গে একটু কথা বলতে পারলে ভালো হত।”

“সুব্রত কাল নাদিয়াকে নিয়ে এখানে এজের ফিউনারেল অ্যারেঞ্জ করতে আসবেন। আজকেই চলে আসতেন, কিন্তু ওঁর গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে। মনে হল ভীষণ ফ্রাস্ট্রেটেড দুদিন আগে ডিলারকে দিয়ে গাড়ি সার্ভিস করিয়েছেন, দু’দিনের মধ্যে গাড়ি অচল! আবার পাঠাতে হয়েছে ডিলারের কাছে।”

“কী গাড়ি ওঁর?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“আমিও একই প্রশ্ন করেছিলাম। গাড়িটা তো খারাপ না –হন্ডা অ্যাকর্ড। খারাপ হচ্ছে ডিলারের সার্ভিস!”

“কবে ফিউনারেল হচ্ছে স্যার?”

“আমার কোনো ধারণাই নেই। ধরে নিচ্ছি দু’-এক দিনের মধ্যে। ইন্ডিয়ার কনস্যুলেটেও যোগাযোগ করেছি।”

আর বিশেষ কিছু জানার ছিল না। তিমিরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, আমরা কেয়াকে বাড়িতে নামিয়ে দিলাম। ওর ফোন কলের সময় হয়ে গেছে। তবে ও নামার আগে বার্গার হাউসের ডিরেকশনটা নিয়ে নিলাম।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress