Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta » Page 6

একেনবাবু ও কেয়াদিদি || Sujan Dasgupta

সকালে কলেজে যাবার পথে দেখলাম নাদিয়ার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের লবির দরজা খোলা। আমি একেনবাবুকে বললাম, “নাদিয়ার ফোন নম্বরটা জানি না। ফোন করে যেতে পারলে বোধহয় ভালো হত।”

“সেটা ঠিক স্যার। কিন্তু বেশি দেরি করলে আর যাবার দরকার হবে না। তার আগে পুলিশই খবরটা দিয়ে দেবে।”

“তাহলে চলুন।”

উপরে উঠে বেল বাজালাম। নাদিয়া বাড়িতেই ছিল। দরজা খুলে আমাদের দেখে অবাক। মুখটা দেখেই বোঝা যায় খুব টেন্সড হয়ে আছে।

“না বলে হঠাৎ করে চলে এলাম। আর কোনো ডেভেলপমেন্ট হয়েছে কি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“না, আমি এখনো এজের কোনো ফোন পাইনি।”

এবার একেনবাবু মুখ খুললেন, “বুঝলেন ম্যাডাম, আপনার ওই ই-মেলটা নিয়ে আমরা একটু আলোচনা করলাম। মনে হল বাংলায় আপনাকে কেউ একটা ওয়ার্নিং দেবার চেষ্টা করেছে। তাই ভাবলাম বলে যাই।”

“ওয়ার্নিং!”

“হ্যাঁ”, এবার আমি বললাম, অশুদ্ধ বাংলায় লেখা– নাদিয়াকে ছাড়ো অথবা মৃত্যু। পয়লা এপ্রিলের এই চিঠিটা আমি ফাজলামি ভেবেছিলাম বলে আর কিছু তখন বলিনি।”

“মৃত্যু!” নাদিয়ার মুখ দেখলাম কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বলল, “আমি আজকে আবার বাংলায় ওরকম আরেকটা ই-মেল পেয়েছি।”

“আজকে পেয়েছেন ম্যাডাম?”

“বোধহয় আগেই এসেছে। এজে-র জাঙ্ক ফোল্ডারে পড়ে ছিল, আজকে সেটা খুলতে চোখে পড়ল। আপনাদের কী মনে হচ্ছে, এজেকে কি কেউ খুন করবার চেষ্টা করছে?”

“এটা কেন ভাবছেন ম্যাডাম? কারোর সঙ্গে কি ওঁর কোনো শত্রুতা ছিল?”

“ আই ডোন্ট নো, বাট সামথিং ইজ নট রাইট।”

“কেন ম্যাডাম?” নাদিয়া সেই অপরিচিত লোকের কাছ থেকে ফোন পাবার কথাটাই আবার বলল। “সেটা তো কালকে বলেছিলেন। এছাড়া আর কারোর কাছ থেকে?”

নাদিয়া চুপ করে রইলো।

“ম্যাডাম, আপনি যদি কিছু না বলতে চান, ঠিক আছে, আমরা বিরক্ত করব না।”

“না, না, না –বলার কিছু নেই। আসলে ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড। আপনারা ভেতরে আসুন, ব্যাপারটা খুলে বলি।”

আমরা ঘরে ঢুকে বসার পর নাদিয়া বলল, “এজে আমার সেকেন্ড হাজবেন্ড। আমার প্রথম হাজবেন্ড মারা গেছে প্রায় আট মাস হল।”

“আপনার প্রথম স্বামী কি এদেশের লোক ছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“ওঁর বয়স তো খুব বেশি হওয়া উচিত নয়, উনি কি অসুস্থ ছিলেন?”

“না। ওর স্বাস্থ্য খুবই ভালো ছিল। হঠাৎ বিষাক্ত মাশরুম খেয়ে অ্যাকসিডেন্টালি ও মারা যায়।”

“আই অ্যাম সো সরি ম্যাডাম।”

নাদিয়া একটু চুপ করে থেকে বলল, “আই থিঙ্ক ইউ শুড নো দ্য হোল স্টোরি।”

লম্বা কাহিনি। বলতে বলতে নাদিয়া বেশ ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিল। ইংরেজিতেও তেমন দক্ষ নয়। যেটুকু বুঝলাম সেটা হল- নাদিয়া মস্কোর মেয়ে। বন্ধুদের অনেকের মতে নাদিয়াও ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বরের খোঁজে। সেই সূত্রেই অলিভারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বছর পাঁচেক আগে। অলিভার স্মিথ ছিল অটো-মেকানিক। নাদিয়ার থেকে বেশ কয়েক বছরের বড়ো। অলিভার মস্কোতে নাদিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে দু’সপ্তাহ একসঙ্গে থেকে ওরা বিয়ে করবে ঠিক করে। ন্যাডেজডা নিকোলায়েভনা ভোলকোভা হয়ে যায় নাদিয়া স্মিথ। অলিভার ফিরে আসে। তার কিছুদিন বাদে নাদিয়ার ভিসা হয়ে যায়, সে-ও চলে আসে। ওদের একটি বাচ্চা হয়। তারপর হঠাৎ অলিভারের মৃত্যু। ছোটো একটা বাচ্চা, নিজে ইংরেজি ভালো জানে না, বেশ অথই জলে পড়েছিল নাদিয়া।।

অলিভারের বন্ধুদের নাদিয়া একেবারেই পছন্দ করত না। ওদের কয়েকজন, বিশেষ করে স্যাম গ্রোভার, অলিভার বেঁচে থাকতেই ওকে উত্যক্ত করত। অলিভার মারা যাবার ক’দিনের মধ্যেই ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নাদিয়া রিফিউজ করে। কিন্তু তাও নাদিয়াকে পাবার আশা ছাড়েনি। এ রিয়েল জার্ক। এই সময় এজে প্রচুর সাহায্য করে। এজে আর এজের বন্ধু সুব্রত এক সময় ওদের প্রতিবেশী ছিল। দু’জনেই খুব সুইট, কিন্তু অলিভারের বন্ধুরা ওদের ঘৃণা করত। এজেকে ওরা একবার এমন থ্রেট করেছিল যে ভয় পেয়ে ওরা কিংস্টনে চলে যায়। কিন্তু যোগাযোগটা ছিল। নাদিয়ার টাকাকড়ি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে দেখে এজে একটা রাশিয়ান ট্রান্সলেশন এজেন্সির সঙ্গে ওর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। নাদিয়া সেখানে ট্রান্সলেটরের কাজ করত। মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ বুঝতে অসুবিধা হলে এজের সাহায্য নিত। এই ভাবেই ওদের বন্ধুত্বের শুরু। অলিভারের মৃত্যুর মাস সাতেক বাদে নাদিয়া ওর বাচ্চাকে এক বান্ধবীর কাছে রেখে সুব্রত আর এজের সঙ্গে ক্রস-কান্ট্রি ট্যুরে বেরোয়।

নেভাডায় যাবার পর সুব্রতর হঠাৎ একটা কাজ এসে পড়ায় ওকে ক্যালিফোর্নিয়া যেতে হয়। এজে আর নাদিয়া তখন একা। এজে নাদিয়াকে প্রপোজ করে। নাদিয়া রাজি হয়। নেভেড়াতে বিয়ে করাটা সহজ, ওয়েটিং পিরিয়ড নেই। ওখানেই ওরা বিয়ে করে। অলিভারের বন্ধুদের ঝামেলা এড়াতে দু’জনে ঠিক করে ম্যানহাটানে এসে সংসার পাতবে। ফেরার পথে মা মরণাপন্ন খবর পেয়ে এজে দেশে চলে যায়। একসঙ্গে ওদের সংসারও করা হয়নি। প্রথমে এজে গিয়েছিল দু’সপ্তাহের জন্যে, পরে জানায় আরও দু’- সপ্তাহ থাকতে হবে। বিয়ের খবরটা বেশি জানাজানি হওয়ার আগেই নাদিয়া ঠিক করে ম্যানহাটানে চলে আসবে। সুব্রত ওকে সাহায্য করে বাড়ি ঠিক করা, জিনিসপত্র আনার ব্যাপারে। মোটামুটি এটাই ঘটনা।

“মিস্টার সুব্রত এখন কোথায় ম্যাডাম –কিংস্টনে?”

“না, বেশ কিছুদিন হল ও কুইন্সে মুভ করেছে।”

“আপনাদের ওখানকার বাড়িঘরগুলোর কী হল ম্যাডাম?”

“আমারটা ভাড়াবাড়ি ছিল।”

“আপনার স্বামীরটা নিশ্চয়ই ওখানেই আছে, হঠাৎ করে চলে গেছেন যখন?”

“হ্যাঁ ওর জিনিসপত্র সব ওখানেই, আমি আর এর মধ্যে ওখানে যাইনি।”

“থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম। আচ্ছা আপনার ই-মেল দুটোর কপি কি পেতে পারি?”

“নিশ্চয়ই। দুটোই আমি কপি করে রেখেছি। নাদিয়া ঘরে গিয়ে ই-মেল দুটো একেনবাবুকে দিল।”

“দেখুন, যদি আর কিছু উদ্ধার করতে পারেন এগুলো থেকে।”

“দেখব ম্যাডাম। তবে একটা কথা বলি, আপনার স্বামীর খবর যখন পাচ্ছেন না, একবার নিউ ইয়র্ক পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা যদি কিছু হদিশ দিতে পারে।”

ফেরার পথে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ই-মেলগুলো নিয়ে কী করবেন, যা হবার তো হয়েই গেছে?”

“তা ঠিক স্যার।”

“তাহলে?”

“আসলে স্যার, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।”

এটা একেনবাবুর একটা টিপিক্যাল লাইন। কোনো কিছুর উত্তর দিতে না চাইলে হয় চুপ করে থাকেন, নয় এ লাইনটা আওড়ান।

বাড়ি ফিরে আমার মনটা খারাপ লাগছিল। একটু বাদেই নাদিয়া জানতে পারবে এজের খবর। পর পর দুই স্বামীর মৃত্যু –প্রথমটা দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় জন খুন কী ট্র্যাজেডি! একেনবাবু নিজের ঘরে ঢুকে কী করছেন কে জানে! আমি কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছিলাম না। কতগুলো টার্ম পেপার জমে ছিল, গ্রেড করা হয়নি। সেগুলো দেখার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। তারপর ‘দুত্তোর’ বলে স্নান করতে ঢুকলাম। মাথাটা যদি একটু ঠান্ডা হয়! স্নান সেরে বেরিয়ে দেখি একেনবাবু কফি টেবিলে ঠ্যাঙ- দুটো তুলে চোখ বুজে কী জানি ভাবছেন। কোলের ওপর ই-মেল দুটো।

“আপনি যখন স্নান করছিলেন স্যার, তখন ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের সঙ্গে একটু কথা হল।”

“কী কথা –এজের সম্পর্কে?”

“হ্যাঁ স্যার। কিংস্টন পুলিশের চিফ টিম হোরে এজের মৃত্যুর ব্যাপারে নিজে ইন্টারেস্ট নিয়েছেন। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমাদের কথা ওঁকে বলেছেন। আমরা যদি এ ব্যাপারে কিছু খোঁজখবর চাই, তাহলে মিস্টার হোরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।”

“সেটা কি অনধিকার চর্চা হবে না, নাদিয়া তো আমাদের শুধু চিঠির অর্থ জিজ্ঞেস করেছিল। আর তো কিছু করতে বলেনি।”

“ট্রু স্যার।”

“তাহলে?”

“কী জানি স্যার –আসলে মাথার মধ্যে ঘুরছে, হোয়াই ওয়াজ মিস্টার এজে কিলড? এই ই-মেল দুটোর অর্থ কী –কে লিখেছেন এগুলো? জাস্ট রসিকতা, না এর সঙ্গে কি খুনের সত্যিই কোনো যোগাযোগ আছে? এইসব নানান প্রশ্ন।”

“সেটা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা তো ম্যানহাটানের ব্যাপার নয় আর কিংস্টনের পুলিশের কর্তা ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট নন। আপনাকে এতে ওরা নাক গলাতে দেবে কেন? আর যদি দেয়ও, রহস্যের কিনারা করে আপনার লাভটা কী হবে– কানাকড়িও তো পাবেন না!”

“কী যে বলেন স্যার, পয়সার কথা আসছে কেন। একজন ফেলো –বেঙ্গলি ডেড একটা দায়িত্ব তো সবারই আছে!”

“ঝেড়ে কাশুন না, আপনি কিংস্টন যাবার কথা ভাবছেন?”

“আমার ভাবা-ভাবিতে আর কী হবে স্যার, গাড়ি তো আপনার।”

“তা তো বুঝলাম, কিন্তু কিংস্টন যেতে আমার তো পেট্রল খরচা হবে। সেটা দেবে কে –আপনি?” বলেই হেসে ফেললাম।

“আপনি না স্যার, সত্যি!”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *